আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রবি ঠাকুরের 'ব্লগ' বিড়ম্বনা !!

(c) নাসিফ চৌধুরী (এটি একটি 'প্যারানরমাল' গল্প । এই টাইপের হাল্কা রসিকতায় যাদের এলারজি আছে, দয়া করে তারা প্রবেশ করবেন না ) চৈত্র মাসের শেষের দিক। বাংলা ব্লগের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্লগার রবি ঠাকুর বেশ বিপাকে পড়ে গেছেন । তার কম্পিউটারে অভ্র সফটওয়ারটা কাজ করছে না । এদিকে দারুন দু লাইন মাথায় ঘুরঘুর করছে।

এখনি লিখে ফেলতে হবে । হাতের কাছে এখন আর কাগজ কলম খুজে পাওয়া দুষ্কর । মাথায় থাকা দুই লাইন জপতে জপতেই কবি অভ্র সফটওয়ার ডাউনলোড করে ইন্সটল করলেন । এরপর গরম কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে লিখলেনঃ 'প্রহর শেষে আলোয় রাঙ্গা সেদিন চৈত্র মাস... ' (পরের লাইন গুলোও 'ঝপাৎ' করে মাথায় চলে এসেছে ) তবে এটুকু লিখতেই টুং টুং করে সেল ফোন বেজে উঠল । ম্যাসেজ এসেছে ।

অনেক আগ্রহ নিয়ে ম্যাসেজ চেক করতে গিয়ে কবি হতাশ হলেন । 'gp info' থেকে আসা ম্যাসেজ । একটা গালি দিতে গিয়েও তিনি দিলেন না । কবিদের মুখে গালি মানায় না আর যদি দিতেও হয় তবে কাব্যিক কোন গালি দিতে হয় ! অনেক খুজে, কবি Gp অপারেটরকে কাব্যিক একটা গালি দিলেন 'বিরক্তিপটু' । অর্থাৎ, যে বিরক্ত করিতে পটু !!! সেলফোন রেখে রবি ঠাকুর আবার লেখায় মনযোগ দিলেন ।

কবিতার পরের লাইন দুটো এখন আর মাথায় আসছে না । কবিদের কাছে কবিতার লাইন মাঝখানে এসে আটকে থাকার চেয়ে যন্ত্রনাদায়ক কিছু আর নেই । ছন্দ মেলাতে কবি লিখে দিলেনঃ 'প্রহর শেষে আলোয় রাঙ্গা সেদিন চৈত্র মাস ডেকে নিয়ে শেয়ারবাজার দিল মোরে বাঁশ' লাইনগুলো লিখে কবি নিজের উপরই বিরক্ত হলেন। কি লিখছেন এসব তিনি ? প্রেমের কবিতায় শেয়ারবাজার কেন ? তিনি তো আর অর্থনীতি নিয়ে কবিতা লিখছেন না । তিনি এখন ভয়ংকর প্রেমের কবিতা লিখতে বসেছেন ।

আরো কিছুক্ষন চিন্তা করলেন কবি । নাহ পরের লাইন দুটো মাথায় আসছেনা । রবি ঠাকুর এই অস্থির যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে কাজী নজরুল ইসলাম সাহেবকে ফোন দিলেন । কাজী সাহেব আবার ফুর্তি প্রিয় মানুষ । ফোন ধরেই তিনি এক ঝাঁক উচ্ছাস নিয়ে বললেনঃ বল হে কান্ডারি , কি করিতে পারি? কবি বললেন - ''ইয়ে কাজী , দুইটা লাইন এসে মাথায় আটকে আছে , দফারফা হচ্ছে না , 'প্রহর শেষের আলোয় রাঙ্গা সেদিন চৈত্র মাস' পরের দুটো লাইন কি হতে পারে একটু বল দেখি...'' বিদ্রোহী কবি তৎক্ষণাৎ পরের দুই লাইন শুনিয়ে দিলেন- ''এবার যদি মিথ্যে বলিস ফেলব তোদের লাশ'' - ধুর , এইটা তো প্রেমের কবিতা , বিপ্লবের কথা বার্তা বলছ কেন ? - ''আসলে গুরুজী , দেশের যে অবস্থা , মাথা সবসময় গরম থাকে , আচ্ছা দেখি কিছু পাই কিনা ।

আপনি বস মানুষ, একটু চিন্তা করলেই পেয়ে যাবেন। '' কবিতার লাইন না পেয়ে কবির মাথা উত্তপ্ত হয়ে আছে। যে করেই হোক আজকে রাতে লিখাটা শেষ করে ব্লগে দিতে হবে । রাত ১২ টায় আবার ইন্টারনেটের প্যাকেজ শেষ । নতুন করে প্যাকেজ এক্টিভ করতে একটু দেরী হবে ।

কাব্যচর্চায় সাময়িক ইস্তফা দিয়ে কবি রাত ৯ টার সংবাদ দেখতে চলে গেলেন । ইদানীং খবর দেখা খুব একটা আনন্দের কাজ মনে হয় না , তবুও দেখতে হয় । সেই একি খবর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রতিদিন । আজকের প্রধান শিরোনাম হচ্ছে 'বিরোধী দলীয় নেত্রি বলেছেন , ''এই সরকার দেশের সর্বনাশ করে দিচ্ছে'' 'সর্বনাশ' শব্দটা শোনার সাথে সাথেই কবির মাথায় কবিতার বাকি দু লাইন চলে এলো। 'প্রহর শেষে আলোয় রাঙ্গা সেদিন চৈত্র মাস তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ' ঝট পট করে কবি আরও কিছু লাইন লিখে ফেললেন ।

তৎক্ষণাৎ সেটা ব্লগেও পোস্ট করে দিলেন । সামুতে কবির নিক হচ্ছে 'ভানুসিংহ' । সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্লগার হিসেবে পোস্ট করার সাথে সাথেই হাজার হাজার অনুসারী পোস্টে ভিড় জমালো । কমেন্টে শুধুই কবির সুমিষ্ট তারিফ । এমন কবিতায় কমেন্ট না করে কি থাকা যায় ? মাইকেল মধুসূদন দত্ত লিখলেনঃ সেইরাম হইছে , পুত্তুম পিলাচ' 'পল্লীকবি' নিকের ব্লগার কবি জসীম উদ্দিন লিখেলনঃ অসাধারন হইসে বস, চালায়া যান' জীবনানন্দ দাস লিখলেনঃ অস্থির হইসে, পিলাচ দিলাম ! বনলতা সেনরে নিয়া একটা কবিতা মাথায় ঘুরছে , শিগ্রই পোষ্ট করব।

' রবি ঠাকুর জবাব দিলেন 'অপেক্ষায় থাকলুম' অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে 'অকালের কুমড়া' নিকের একজন 'নবীন ব্লগার' (আঁতেল টাইপের মূর্খ ব্লগার) কমেন্ট দিলঃ ''ভাল লাগে নাই , ছন্দ মিলে নাই!!'' একি সাথে 'অকালের কুমড়া' নিজের লেখা 'তোর বাসার চালে আমার হাতের ঢিল' নামক কবিতার লিঙ্ক দিয়ে বলল 'এই কবিতাটা পড়ে দেখতে পারেন , ছন্দ বিষয়ে অনেক কিছু শিখার আছে' (!!) 'বিদ্রোহী' নিকের কাজী নজরুল ইসলাম সাহেবের আবার 'অকালের কুমড়ার' কমেন্ট পছন্দ হলনা । 'বিদ্রোহী' লিখলেনঃ 'অকালের কুমড়া' আপনারে 'গদাম' । এই ব্লগে যদি আবার দেখা পাই , তবে তোমার রক্ষা নাই । হুশিয়ার সাবধান , বিদ্রোহী মোর নাম' বাকি সবাই কাজী সাহেবের সাথে ঐক্যমত পোষণ করলেন । এই 'অকালের কুমড়া' টাইপের কুমড়ারা আসলে ব্লগের পরিবেশটাই নষ্ট করে দিচ্ছে !! ব্লগেতে কবির পোষ্ট ব্যাপক হিট হইল।

এদিকে চাঙ্খারপুলের পাতিকবি 'শমছু' সেই পোস্টের লাইন হুবুহু মেরে দিয়ে ফেসবুকে নিজের নামে 'নোট' আকারে প্রকাশ করে দিল । শমছুর আবার ফেসবুকে ১০-১৫ হাজার সদস্যের ফান পেজ আছে । নিজের পেজ থেকে শমছু সেই 'নোট' শেয়ারও করে দিল । মুহূর্তেই অগ্নুৎপাত । কবিতা নিয়ে চারিদিকে হইচই পরে গেল।

শুধু শেয়ারের পর শেয়ার । অল্পদিনের মধ্যেই শমছুর খ্যাতি সারা দেশে ছরিয়ে গেল। বাংলা সাহিত্যের নতুন প্রবাদ পুরুষ হল শমছু । বাংলা একাডেমির একুশে পদক সহ শ'দুয়েক পদক তার ঝুলিতে এসে জমা হল । চাঙ্কখারপুল হইতে লিভারপুল পর্যন্ত তার নাম পৌঁছে গেল।

চারিদিকে এখন শমসুর জয় জয়কার । সামনের বই মেলায়ও নাকি শমছুর একক কবিতার বই বের হচ্ছে !! ও হ্যা, এই ঘটনার পর রবি ঠাকুর কি করলেন ??? এই ঘটনার পরে তিনি তার ব্লগের টেমপ্লেটে লিখে দিলেন 'দয়া করে অনুমতি ছাড়া লেখকের লেখা অন্যত্র প্রকাশ করিবেন না' ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।