আমি আমাকে চিনি না কে আছে এমন, যে পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব, প্রিয়জন কিংবা কোন নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুতে শোকাহত হয়নি, চক্ষুদ্বয় অশ্রু বিসর্জন করেনি; ভর দুপুরেও গোটা পৃথিবী ঝাপসা হয়ে আসেনি; সুদীর্ঘ, সুপ্রশস্ত পথ সরু ও সংকীর্ণ হয়ে যায়নি; যৌবন সত্ত্বেও সুস্থ দেহ নিশ্চল হয়ে পড়েনি; অনিচ্ছা সত্ত্বেও অপ্রতিরোধ্য ক্রন্দন ধ্বনি তুলতে তুলতে গলা শুকিয়ে আসেনি; অবিশ্বাস সত্ত্বেও মর্মন্তুদ কঠিন বাস্তবতা মেনে নিতে বাধ্য হয়নি; এই বুঝি চলে গেল, চির দিনের জন্য; আর কোন দিন ফিরে আসবে না; কোন দিন তার সাথে দেখা হবে না; শত আফসোস ঠিকরে পড়ে, কেন তাকে কষ্ট দিয়েছি; কেন তার বাসনা পূর্ণ করিনি; কেন তার সাথে রাগ করেছি; কেন তার থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি।
কে আছে এমন, যে পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব, প্রিয়জন কিংবা কোন নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুতে শোকাহত হয়নি, চক্ষুদ্বয় অশ্রু বিসর্জন করেনি; ভর দুপুরেও গোটা পৃথিবী ঝাপসা হয়ে আসেনি; সুদীর্ঘ, সুপ্রশস্ত পথ সরু ও সংকীর্ণ হয়ে যায়নি; যৌবন সত্ত্বেও সুস্থ দেহ নিশ্চল হয়ে পড়েনি; অনিচ্ছা সত্ত্বেও অপ্রতিরোধ্য ক্রন্দন ধ্বনি তুলতে তুলতে গলা শুকিয়ে আসেনি; অবিশ্বাস সত্ত্বেও মর্মন্তুদ কঠিন বাস্তবতা মেনে নিতে বাধ্য হয়নি; এই বুঝি চলে গেল, চির দিনের জন্য; আর কোন দিন ফিরে আসবে না; কোন দিন তার সাথে দেখা হবে না; শত আফসোস ঠিকরে পড়ে, কেন তাকে কষ্ট দিয়েছি; কেন তার বাসনা পূর্ণ করিনি; কেন তার সাথে রাগ করেছি; কেন তার থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি।
আরো কত ভয়াবহ স্মৃতির তাড়না তাড়িয়ে বেড়ায়, শোকাতুর করে, কাঁদায়। কত ভর্ৎসনা থেমে থেমে হৃদয়ে অস্বস্তির জন্ম দেয়, কম্পনের সূচনা করে অন্তরাত্মায়। পুনঃপুন একই অভিব্যক্তি আন্দোলিত হয় মুখের ভাষা যা ব্যক্ত করতে অক্ষম।
হাতের কলম যা লিখতে অপারগ।
হ্যাঁ, এ কঠিনতম মুহূর্ত, হতাশাময় পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করে শক্তি, সাহস ও সুদৃঢ় মনোবল উপহার দেয়ার মানসে আমাদের এ প্রয়াস। আমরা মুসলমান। আমাদের মনোনীত রব আল্লাহ। আমাদের পছন্দনীয় ধর্ম ইসলাম।
আমাদের একমাত্র আদর্শ মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। পক্ষান্তরে কাফেরদের জীবন সংকীর্ণ, তারা হতাশাগ্রস্ত, কারণ, আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক, কাফেরদের কোনো অভিভাবক নেই।
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পার্থিব জগতে মুমিনদের অবস্থার একটি উদাহরণ পেশ করেছেন। তিনি বলেন :
“একজন মুমিনের উদাহরণ একটি শস্যের মত, থেকে থেকে বাতাস তাকে দোলায়। তদ্রুপ একের পর এক মুসিবত অবিরাম অস্থির করে রাখে মুমিনকে।
পক্ষান্তরে একজন মুনাফিকের উদাহরণ একটি দেবদারু বৃক্ষের ন্যায়, দুলে না, কাত হয়েও পড়ে না, যতক্ষণ না শিকড় থেকে সমূলে উপড়ে ফেলা হয় তাকে। ” [মুসলিম : ৫০২৪]
আবু হুরায়রা (রা.)-র সূত্রে বর্ণিত আরেকটি উদাহরণে আছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
“ইমানদার ব্যক্তির উদাহরণ শস্যের নরম ডগার ন্যায়, বাতাস যে দিকেই বয়ে চলে, সেদিকেই তার পত্র-পল্লব ঝুঁকে পড়ে। বাতাস যখন থেমে যায়, সেও স্থির হয়ে দাঁড়ায়। ইমানদারগণ বালা-মুসিবত দ্বারা এভাবেই পরীক্ষিত হন। কাফেরদের উদাহরণ দেবদারু (শক্ত পাইন) বৃক্ষের ন্যায়, যা একেবারেই কঠিন ও সোজা হয়।
আল্লাহ যখন ইচ্ছা করেন, তা মূলসহ উপড়ে ফেলেন। ” [বুখারী : ৬৯১২]
শস্যের শিকড় মাটি আঁকড়ে ধরে। তার সাথে একাকার হয়ে যায়। যদিও বাতাস শস্যকে এদিক-সেদিক দোলায়মান রাখে। কিন্তু ছুঁড়ে মারতে, টুকরা করতে বা নীচে ফেলে দিতে পারে না।
তদ্রুপ মুসিবত যদিও মুমিনকে ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত ও চিন্তামগ্ন রাখে, কিন্তু সে তাকে হতবিহ্বল, নিরাশ কিংবা পরাস্ত করতে পারে না। কারণ, আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস তাকে প্রেরণা দেয়, তার মধ্যে শক্তি সঞ্চার করে, সর্বোপরি তাকে হেফাজত করে।
এ পার্থিব জগৎ দুঃখ-বেদনা, দুর্যোগ-দুর্ঘটনা, সংহার ও জীবন নাশকতায় পরিপূর্ণ। এক সময় প্রিয়জনকে পাওয়ার আনন্দ হয়, আরেক সময় তাকে হারানোর দুঃখ। এক সময় সুস্থ, সচ্ছল, নিরাপদ জীবন, আরেক সময় অসুস্থ, অভাবী ও অনিরাপদ জীবন।
মুহূর্তে জীবনের পট পালটে যায়, ভবিষ্যৎ কল্পনার প্রাসাদ দুমড়ে-মুচড়ে মাটিতে মিশে যায়। অথবা এমন সংকট ও কর্মশূন্যতা দেখা দেয়, যার সামনে সমস্ত বাসনা নিঃশেষ হয়ে যায়। শেষ হয়ে যায় সব উৎসাহ-উদ্দীপনা।
কারণ এ দুনিয়ায় নেয়ামত-মুসিবত, হর্ষ-বিষাদ, হতাশা-প্রত্যাশা সব কিছুর অবস্থান পাশাপাশি। ফলে কোন এক অবস্থার স্থিরতা অসম্ভব।
পরিচ্ছন্নতার অনুচর পঙ্কিলতা, সুখের সঙ্গী দুঃখ। হর্ষ-উৎফুল্ল ব্যক্তির ক্রন্দন করা, সচ্ছল ব্যক্তির অভাবগ্রস্ত হওয়া এবং সুখী ব্যক্তির দুঃখিত হওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
এ হলো দুনিয়া ও তার অবস্থা। প্রকৃত মোমিনের এতে ধৈর্যধারণ বৈ উপায় নেই। বরং এতেই রয়েছে দুনিয়ার উত্থান-পতনের নিরাময় তথা উত্তম প্রতিষেধক।
হাদিসে এসেছে :
“ধৈর্যের চেয়ে উত্তম ও ব্যাপকতর কল্যাণ কাউকে প্রদান করা হয়নি। ” [বুখারী : ১৭৪৫]
অন্যত্র এরশাদ হয়েছে :
“মুমিনের ব্যাপারটি চমৎকার, নেয়ামত অর্জিত হলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, যা তার জন্য মঙ্গলজনক এতে কৃতজ্ঞতার সওয়াব অর্জিত হয়। মুসিবতে পতিত হলে ধৈর্যধারণ করে, তাও তার জন্য কল্যাণকর এতে ধৈর্যের সওয়াব লাভ হয়। ” [মুসলিম : ৫৩১৮]
আল্লাহ তাআলা আমাদের ধৈর্য্যধারণের নির্দেশ দিয়েছেন এবং একে তার সাহায্য ও সান্নিধ্য লাভের উপায় ঘোষণা করেছেন। বলা হচ্ছে :
“হে মুমিনগণ, ধৈর্য্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও।
নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। ” [সূরা আল-বাকারা : ১৫৩ ]
আরো বিশেষভাবে জানিয়ে দিয়েছেন পার্থিব জীবন একটি পরীক্ষাগার, আমি তোমাদেরকে ভয়-ভীতি, ক্ষুধা-দারিদ্র, ধন-সম্পদ, জনবল ও ফল-মূলের স্বল্পতার মাধ্যমে পরীক্ষা করব। হে রাসূল! আপনি ধৈর্য্যশীলদের সুসংবাদ দিন। এরশাদ হচ্ছে :
“আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জানমাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।
যারা, তাদেরকে যখন বিপদ আক্রান্ত করে তখন বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। তাদের উপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত। ” [সূরা আল-বাকারা : ১৫৫-১৫৭]
বস্তুত নিজ দায়িত্বে আত্মোনিয়োগ, মনোবল অক্ষুণ্ন ও কর্ম চঞ্চলতার জন্য ধৈর্য অপরিহার্য। কেউ সাফল্য বিচ্যুত হলে, বুঝতে হবে ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতার অভাব রয়েছে তার মধ্যে। কারণ ধৈর্য্যের মতো শক্তিশালী চাবির মাধ্যমে সাফল্যের সমস্ত বদ্ধ কপাট উম্মুক্ত হয়।
পাহাড়সম বাধার সম্মুখেও কর্মমুখরতা চলমান থাকে।
মানব জাতির জীবন প্রবাহের পদে পদে ধৈর্যের অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য বিধায় এ নিবন্ধের সূচনা।
কেন ধৈর্যধারণ করব?
কী তার ফল?
কীভাবে ধৈর্যধারণ করব?
কী তার পদ্ধতি?
…ইত্যাদি বিষয়ের উপর কিছু উপদেশ উল্লেখ করা হবে। যা প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর বিশেষ উপকারে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস। মুসিবত আর প্রতিকূলতায় নিত্যদিনের মত স্বাভাবিক জীবন উপহার দিবে।
শোককে শক্তিতে পরিণত করে এগিয়ে যাবে সাফল্যমণ্ডিত জীবন লাভে।
# যে কোন পরিস্থিতি মেনে নেয়ার মানসিকতা লালন করা
প্রত্যেকের প্রয়োজন মুসিবত আসার পূর্বেই নিজকে মুসিবত সহনীয় করে তোলা,অনুশীলন করা ও নিজেকে শোধরে নেয়া। কারণ ধৈর্য কষ্টসাধ্য জিনিস, যার জন্য পরিশ্রম অপরিহার্য।
খেয়াল রাখতে হবে যে, দুনিয়া অনিত্য, ভঙ্গুর ও ক্ষণস্থায়ী। এতে কোনো প্রাণীর স্থায়িত্ব বলে কিছু নেই।
আছে শুধু ক্ষয়িষ্ণু এক মেয়াদ, সীমিত সামর্থ্য। এ ছাড়া আর কিছুই নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পার্থিব জীবনের উদাহরণে বলেন :
“পার্থিব জীবন ঐ পথিকের ন্যায়, যে গ্রীষ্মে রৌদ্রজ্জ্বল তাপদগ্ধ দিনে যাত্রা আরম্ভ করল, অতঃপর দিনের ক্লান্তময় কিছু সময় একটি গাছের নীচে বিশ্রাম নিল, ক্ষণিক পরেই তা ত্যাগ করে পুনরায় যাত্রা আরম্ভ করল। ” [মুসনাদে ইমাম আহমাদ : ২৭৪৪]
হে মুসলিম! দুনিয়ার সচ্ছলতার দ্বারা ধোঁকা খেওনা, মনে করো না, দুনিয়া স্বীয় অবস্থায় আবহমানকাল বিদ্যমান থাকবে কিংবা পট পরিবর্তন বা উত্থান-পতন থেকে নিরাপদ রবে। অবশ্য যে দুনিয়াকে চিনেছে, এর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছে, তার নিকট দুনিয়ার সচ্ছলতা মূল্যহীন।
মোট কথা, যে পার্থিব জগতে দীর্ঘজীবি হতে চায়, তার প্রয়োজন মুসিবতের জন্য ধৈর্য্যশীল এক হৃদয়।
# তাকদিরের উপর ঈমান
যে ব্যক্তি মনে করবে তাকদির অপরিহার্য বাস্তবতা এবং তা অপরিবর্তনীয়। পক্ষান্তরে দুনিয়া সংকটময় ও পরিবর্তনশীল, তার আত্মা প্রশান্তি লাভ করবে। দুনিয়ার উত্থান-পতন সুখ-দুঃখ স্বাভাবিক ও নগন্য মনে হবে তার কাছে। আমরা দেখতে পাই, তাকদিরে বিশ্বাসী মুমিনগণ পার্থিব মুসিবতে সবচে’কম প্রতিক্রিয়াশীল,কম অস্থির ও কম হতাশাগ্রস্ত হন।
বলা যায় তাকদিরের প্রতি ঈমান শান্তি ও নিরাপত্তার ঠিকানা। তাকদির-ই আল্লাহর কুদরতে মুমিনদের হৃদয়-আত্মা নৈরাশ্য ও হতাশা মুক্ত রাখে। তদুপরি চিরসত্যবাদী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে বিশ্বাস তো আছেই :
“জেনে রেখ, সমস্ত মানুষ জড়ো হয়ে যদি তোমার উপকার করতে চায়, কোনও উপকার করতে পারবে না, তবে যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। আবার তারা সকলে মিলে যদি তোমার ক্ষতি করতে চায়, কোনও ক্ষতি করতে পারবে না, তবে যততুটু আল্লাহ তোমার কপালে লিখে রেখেছেন। কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, কিতাব শুকিয়ে গেছে।
” [তিরমিযী : ২৪৪০]
আমাদের আরো বিশ্বাস, মানুষের হায়াত, রিযিক তার মায়ের উদর থেকেই নির্দিষ্ট। আনাস রাদিআল্লাহু আনহুর সূত্রে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“আল্লাহ তাআলা গর্ভাশয়ে একজন ফেরেস্তা নিযুক্ত করে রেখেছেন, পর্যায়ক্রমে সে বলতে থাকে, হে প্রভু জমাট রক্ত, হে প্রভু মাংস পিণ্ড। যখন আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করার ইচ্ছা করেন, ফেরেস্তা তখন বলে, হে প্রভু পুঃলিঙ্গ না স্ত্রী লিঙ্গ? ভাগ্যবান না হতভাগা? রিযিক কতটুকু? হায়াত কতটুকু? উত্তর অনুযায়ী পূর্ণ বিবরণ মায়ের পেটেই লিপিবদ্ধ করে দেয়া হয়। ” [বুখারি : ৬১০৬ মুসলিম : ৪৭৮৫]
একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহধর্মিনী উম্মে হাবিবা রাদিআল্লাহু আনহা মুনাজাতে বলেন,
“হে আল্লাহ! আমার স্বামী রসূল, আমার পিতা আবু সুফিয়ান এবং আমার ভাই মুয়াবিয়ার দ্বারা আমাকে উপকৃত করুন। ”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
“তুমি নির্ধারিত হায়াত, নির্দিষ্ট কিছু দিন ও বণ্টনকৃত রিযিকের প্রাথর্না করেছ।
যাতে আল্লাহ তাআলা আগ-পাছ কিংবা কম-বেশী করবেন না। এরচে’ বরং তুমি যদি জাহান্নামের আগুন ও কবরের আযাব থেকে নাজাত প্রার্থনা করতে, তাহলে তোমার জন্য কল্যাণকর ও মঙ্গলজনক হত। ” [মুসলিম: ৪৮১৪]
ইমাম নববী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “হাদীসের বক্তব্যে সুষ্পষ্ট, মানুষের হায়াত, রিযিক আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত, তার অবিনশ্বর জ্ঞান অনুযায়ী লিপিবদ্ধ এবং হ্রাস-বৃদ্ধিহীন ও অপরিবর্তনীয়। ” [মুসলিম : নববীর ব্যাখ্যা সহ]
ইবনে দায়লামী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি উবাই ইবনে কাব রাদিআল্লাহু আনহুর নিকট আসেন এবং বলেন,
আমার অন্তরে তাকদির সম্পর্কে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। আমাকে কিছু বর্ণনা করে শোনান।
হতে পারে আল্লাহ আমার অন্তর থেকে তা দূর করে দিবেন।
তিনি বলেন, আল্লাহ আসমান এবং জমিনবাসীদের শাস্তি দিলে, জালেম হিসেবে গণ্য হবেন না। আর তিনি তাদের সকলের উপর রহম করলে, তার রহম-ই তাদের আমলের তুলনায় বেশী হবে। তাকদিরের প্রতি ঈমান ব্যতীত ওহুদ পরিমান স্বর্ণ দান করলেও কবুল হবে না। স্মরণ রেখ, যা তোমার হস্তগত হওয়ার তা কোনভাবেই হস্তচ্যুত হওয়ার সাধ্য রাখে না।
এটা ছাড়া অন্য আকিদা নিয়ে মৃত্যুবরণ করলে জাহান্নাম অবধারিত।
তিনি বলেন, অতঃপর আমি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ এর কাছে আসি। তিনিও তদ্রুপ শোনালেন। হুযাইফাতুল য়ামান এর কাছে আসি, তিনিও তদ্রুপ বললেন। যায়েদ বিন সাবিত এর কাছে আসি, তিনিও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করে শোনালেন।
”
[আবু দাউদ : ৪০৭৭ আহমাদ : ২০৬০৭]
# রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আদর্শ পূর্বসূরীদের জীবন চরিত পর্যালোচনা
পরকালে বিশ্বাসী আল্লাহ ভীরু গোটা মুসলিম জাতির আদর্শ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আল্লাহ তাআলা বলেন :
“অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে। ” [সূরা আহযাব : ২১]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাত চিন্তাশীল, গবেষকদের উপজীব্য ও শান্তনার বস্তু। তার পূর্ণ জীবনটাই ধৈর্য ও ত্যাগের দীপ্ত উপমা। লক্ষ্য করুন, স্বল্প সময়ে মধ্যে চাচা আবু তালিব, যিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কাফেরদের অত্যাচার প্রতিহত করতেন; একমাত্র বিশ্বস্ত সহধর্মিনী খাদিজা; কয়েকজন ঔরসজাত মেয়ে এবং ছেলে ইব্রাহিম ইন্তেকাল করেন।
চক্ষুযুগল অশ্রসিক্ত, হৃদয় ভারাক্রান্ত, স্মায়ুতন্ত্র ও অস্থিমজ্জা নিশ্চল নির্বাক। এর পরেও প্রভুর ভক্তিমাখা উক্তি
“চোখঅশ্রুসিক্ত, অন্তর ব্যথিত, তবুও তা-ই মুখে উচ্চারণ করব, যাতে প্রভু সন্তুষ্ট, হে ইব্রাহিম! তোমার বিরহে আমরা গভীর মর্মাহত। ” [বুখারী : ১৩০৩]
আরো অনেক আত্মোৎর্সগকারী সাহাবায়ে কেরাম মারা যান, যাদের তিনি ভালবাতেন, যারা তার জন্য উৎসর্গ ছিলেন। এত সব দুঃখ-বেদনা তার শক্তিতে প্রভাব ফেলতে পারেনি। ধৈর্য-অভিপ্রায়গুলো ম্লান করতে পারেনি।
তদ্রুপ যে আদর্শবান পূর্বসুরীগণের জীবন চরিত পর্যালোচনা করবে, তাদের কর্মকুশলতায় অবগাহন করবে, সে সহসাই অবলোকন করবে, তারা বিবিধ কল্যাণ ও উচ্চ মর্যাদার অধিকারী একমাত্র ধৈর্যের সিঁড়ি বেয়েই হয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
“নিশ্চয় তোমাদের জন্য তাদের মধ্যে (ইবরাহীম আ. ও তাঁর অনুসারীদের মধ্যে) উত্তম আদর্শ রয়েছে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রত্যাশা করে, আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয়, (সে জেনে রাখুক) নিশ্চয় আল্লাহ তো অভাবমুক্ত, সপ্রশংসিত। ” [সূরা মুমতাহিনা : ৬]
উরওয়া ইবনে জুবায়েরের ঘটনা, আল্লাহ তাআলা তাকে এক জায়গাতে, এক সাথে দুটি মুসিবত দিয়েছেন। পা কাটা এবং সন্তানের মৃত্যু। তা সত্ত্বেও তিনি শুধু এতটুকু বলেছেন, “হে আল্লাহ! আমার সাতটি ছেলে ছিল, একটি নিয়েছেন, ছয়টি অবশিষ্ট রেখেছেন।
চারটি অঙ্গ ছিল একটি নিয়েছেন, তিনটি নিরাপদ রেখেছেন। মুসিবত দিয়েছেন, নেয়ামতও প্রদান করেছেন। দিয়েছেন আপনি, নিয়েছেনও আপনি। ”
উমর ইবনে আব্দুল আজিজ এর একজন ছেলের ইন্তেকাল হয়। তিনি তার দাফন সেরে কবরের পাশে সোজা দাঁড়িয়ে, লোকজন চারপাশ দিয়ে তাকে ঘিরে আছে, তিনি বলেন, “হে বৎস! তোমার প্রতি আল্লাহ রহমত বর্ষণ করুন।
অবশ্যই তুমি তোমার পিতার অনুগত ছিলে। আল্লাহর শপথ! যখন থেকে আল্লাহ তোমাকে দান করেছেন, আমি তোমার প্রতি সন্তুষ্টই ছিলাম। তবে আল্লাহর শপথ করে বলছি, তোমাকে এখানে অর্থাৎ আল্লাহর নির্ধারিত স্থান কবরে দাফন করে আগেরচে’ বেশি আনন্দিত। আল্লাহর কাছে তোমার বিনিময়ে আমি অধিক প্রতিদানের আশাবাদী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।