আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইতিহাসের সঠিক ব্যাখ্যা নেই

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কিছু মন্তব্য নিয়ে সম্প্রতি জোর আলোচনা লক্ষ করা যাচ্ছে। এটাই স্বাভাবিক। কারণ মন্ত্রী তো বটেই, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ক্ষমতাসীন দলের মুখপাত্রের ভূমিকাও তাকেই পালন করতে হচ্ছে। মুখপাত্র হলে যে কোনো দলের নেতাকেই কথা একটু বেশি বলতে হয়। কেউ কেউ এমনকি বেশি বলার জন্য তুমুল নিন্দার মুখেও পড়েন।

পাঠকরা সৈয়দ আশরাফের ইমিডিয়েট পূর্বসূরি আবদুল জলিলের কথা স্মরণ করে দেখতে পারেন। বিশেষ করে লগি-বৈঠার হত্যা-সন্ত্রাসে ভরা ভীতিকর সেই দিনগুলোতে গৃহযুদ্ধের ভয় দেখিয়ে ১/১১-এর অবৈধ অভ্যুত্থানকে অনিবার্য করে তোলার ব্যাপারে আবদুল জলিলের ‘অবদান’ তো রীতিমত ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবেই স্বীকৃতি পেয়েছে! অমন এক নেতার উত্তরসূরি বলে শুধু নয়, আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হিসেবেও সৈয়দ আশরাফকে এগিয়ে থাকতে হচ্ছে। এজন্যই তার বাগাড়ম্বরে আর যা-ই হোক, বিস্মিত হওয়া অনুচিত। তা সত্ত্বেও ঝামেলা বেধেছে আসলে তার বক্তব্যের বিষয়বস্তুর জন্য। গত ১০ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ এক উপলক্ষে তিনি বলে বসেছেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের নাকি ঐতিহাসিক, ঐতিহ্যগত ও সাংস্কৃতিক ‘মিল’ রয়েছে! বাংলাদেশ যে ভারতের অংশ ছিল, সে কথাও বিশেষ জোর দিয়ে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন সৈয়দ আশরাফ।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরে বাংলাদেশের কথিত প্রাপ্তি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন যখন উত্তপ্ত, তেমনি এক সময়ে হঠাত্ ইতিহাস শেখানোর চেষ্টা করেছেন বলেই প্রশ্ন উঠেছে, সৈয়দ আশরাফ কি ইতিহাসের বিকৃতি ঘটিয়েছেন, নাকি অন্তরালে আসলেও কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তর অবশ্য অল্পকথায় দেয়া যাবে না। সে উত্তর দিতে হলে ইতিহাস পর্যালোচনার পাশাপাশি উল্লেখ করতে হবে সৈয়দ আশরাফেরই অন্য একটি মন্তব্য। মন্তব্যটি মাত্র ক’দিন আগের। এতে সৈয়দ আশরাফ বলেছিলেন, তিনি ‘হিন্দুও নন, মুসলমানও নন’! কথা কিন্তু সেদিন ধর্ম নিয়ে হচ্ছিল না। গত ১৩ জুলাই তার কাছে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পর্কে ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছিল।

সেদিন সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের সম্মানে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় নিজের আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজের অনুষ্ঠানে বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আশরাফ বলে বসেছেন, তিনি ‘হিন্দুও নন, মুসলমানও নন’! তার জবাব শুনে লা-জবাব হয়ে গিয়েছিলেন এমনকি আওয়ামী লীগপন্থী সাংবাদিকরাও। কারণ বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের গুণধর এই পুত্রের কাছে এ ধরনের জবাব কেউ আশা করেননি। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছিল, নামে মুসলমান এই ‘সৈয়দজাদা’ যদি মুসলমান বা হিন্দুও না হয়ে থাকেন, তাহলে তিনি ঠিক কোন ধর্মে বিশ্বাসী? সেটা কি তাহলে শিখ ধর্ম? কারণ, শোনা যায়, সৈয়দ আশরাফ ভারতীয় এক শিখ রমণীকে বিয়ে করেছেন এবং তাদের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। মা ও মেয়ে বসবাস করেন লন্ডনে—যেখানে প্রায়ই উড়াল দিয়ে চলে যান সৈয়দ আশরাফ। প্রশ্ন ওঠার অন্য এক কারণ হলো, বাংলাদেশসহ এই উপমহাদেশের সব মানুষই কঠিনভাবে ধর্মে বিশ্বাসী।

তাছাড়া এমনিতেও দেশনির্বিশেষে মানুষ মাত্রই ধর্ম মেনে চলে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত ও আধুনিক দেশের প্রেসিডেন্টকেও শপথ নিতে হয় খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেল হাতে নিয়ে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেন ওবামাকেও বাইবেল হাতে নিয়েই শপথ পাঠ করতে হয়েছিল। অর্থাত্ যত উন্নত ও আধুনিক রাষ্ট্রের মানুষই হোন না কেন, প্রত্যেকেই যার-যার ধর্ম মেনে চলেন। এটাই স্বাভাবিক।

কারণ ধর্ম থাকে না কেবল গরু-ছাগল ও ভেড়া ধরনের পশু ও প্রাণীদের। কথাটা অকারণে স্মরণ করতে হচ্ছে না। একটু খোঁজ-খবর করলেই জানা যাবে, ভারতের শিখ রমণীকে বিয়ে করতে গিয়ে সৈয়দ আশরাফকে হয়তো তার বাপ-দাদার ধর্ম পরিত্যাগ করতে হয়েছিল। কারণ, এ বিয়েরও পেছনে রয়েছে মুসলিমবিরোধী সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। সৈয়দ আশরাফই একমাত্র ব্যক্তি নন; বাংলাদেশে মুসলমানবিরোধী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ব্যাপারে ভারতের পাশাপাশি পাশ্চাত্যের কয়েকটি রাষ্ট্রও অনেকদিন ধরে পা বাড়িয়ে চলেছে।

সে কারণেই এদেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের একাধিক বিশেষজনের কীর্তিমান পুত্ররা একের পর এক ইহুদি রমণীদের বিয়ে করছেন। তাদের ঘরে সন্তানও জন্ম নিচ্ছে। বাড়ছে বাংলাদেশী ইহুদি নাগরিকের সংখ্যা। একসময় এই ইহুদি নাগরিকদেরই উত্তরাধিকার সূত্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার পরিকল্পনা রয়েছে ভারত এবং পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রগুলোর। দেশপ্রেমিকদের মধ্যে উদ্বেগ এমনি এমনি বাড়ছে না।

বিভিন্ন সময়ে একই ধরনের বক্তব্য এসেছে আরও অনেকের পক্ষ থেকে। এসবের মূলকথায় আওয়ামী লীগের ইসলাম ও মুসলমানবিরোধী উদ্দেশ্যের দিকটি প্রাধান্য পেয়েছে। একটি বড় প্রমাণ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী। বিরোধী দলগুলোকে বাইরে রেখে পাস করা এই সংশোধনীর মাধ্যমে অন্য অনেক বিষয়ের সঙ্গে মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপরও কঠিন আঘাত হেনেছে সরকার। যেমন সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ রাখা হলেও ব্র্যাকেটে দুটি অনুবাদ দেয়া হয়েছে, যার দ্বিতীয়টি অশুদ্ধ এবং মুসলমানদের জন্য আপত্তিজনক।

ক্ষমতাসীনরা ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’-এর অনুবাদ করেছেন ‘পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে’। অথচ রাহমান বা রাহিমের অর্থ ‘করুণাময় সৃষ্টিকর্তা’ নয়। এর পাশাপাশি সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’কেও বাদ দিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। পঞ্চদশ সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত এ ধরনের বিধিবিধানের পাশাপাশি যদি সৈয়দ আশরাফের কথাগুলোকে মিলিয়ে দেখা হয়, তাহলে ভীত ও আতঙ্কিত না হয়ে পারা যায় না। এমন অনেক ঘটনাও ঘটছে, যেগুলোর কারণে মানুষের মুখে মুখে এখন একটি জিজ্ঞাসাই ঘুরে ফিরছে— আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চায়? সংক্ষেপে বলা দরকার, উদ্দেশ্য অন্যরকম বলেই সত্য বলেননি সৈয়দ আশরাফ।

একই কারণে ইতিহাসের সঠিক ব্যাখ্যাও নেই তার বক্তব্যে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।