নারায়ণগঞ্জে রাজনীতি ব্যবসার পয়সায় ঠিক কতগুলো পরিবার চলে?
টেন্ডারবাজির সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের কয়টি পরিবার জড়িত?রাজনীতি ব্যবসার অন্নে যারা লালিত হচ্ছেন তারা দলীয় প্রার্থীদের ভোট দেবেন আমি নিশ্চিত। কিন্তু তাদের সংখ্যা খুব বেশী নয় সে আশা নিয়ে লিখছি।
নারায়ণগঞ্জের মেয়র পদে যে ছয়জন প্রার্থী লড়ছেন, তাদের বিতর্ক দেখলাম। বাংলাদেশ বেতার,টেলিভিশন আর বিডিনিউজটুয়েন্টিফোরডটকমের কল্যাণে নারায়ণগঞ্জের প্রত্যেকটি ভোটার এই ছয়জনকে দেখেছেন।
ধারণা করা যাচ্ছে এ লড়াই আইভী-তৈমুর শামীমের মধ্যে হতে যাচ্ছে।
বিতর্কে আইভী বললেন, যে প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারবেন শুধু সেরকম বাস্তবসম্মত প্রতিশ্রুতিই তিনি দিতে চান। নারায়ণগঞ্জের মানুষ আইভীকে ৮বছর ব্যবস্থাপক হিসেবে দেখেছেন। তিনি সাদা মনের মানুষ এটা নারায়ণগঞ্জবাসী জানেন।
অন্যদিকে শামীম ওসমান বলিউড মানের পারফরমেন্স দেখিয়েছেন বিতর্কে। আমার মনে হয়েছে উনার যে গ্ল্যামার তা মন্ত্রী হবার মত।
নারায়ণগঞ্জের সামান্য মেয়র পদটির জন্য তাকে ওভার কোয়ালিফায়েড মনে হয়েছে। তৈমুর খন্দকারও মন্ত্রী হবার মত লোক। বিতর্কে বড় বড় কথাগুলো এই দুজন হবু মন্ত্রী বলেছেন। আইভী ছোটখাট মানুষ বলেছেন কাজের কথা।
নারায়ণগঞ্জের ভোটাররা গ্ল্যামারাস শামীম, বিক্ষুব্ধ তৈমুরকে দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন এদের ভবিষ্যত সরাসরি হাসিনা-খালেদার ভাগ্যের সঙ্গে জড়িত।
এই দুই টপগানকে ভোট দেওয়া মানে ভোটগুলোকে অনিশ্চিত হাতে দেয়া। শামীমকে ভোট দিলে উনি দুবছরে অন্তত দেয়ালে আকাশী রঙ করে স্কাইসিটি বানিয়ে দেবেন। কিন্তু উনার হাসিনা আপা পরের নির্বাচনে হেরে গেলে শামীমকে আকাশপথে পিঙ্কসিটিতে চলে যেতে হবে। কারণ উনি টপগান। আবার তৈমুরকে ভোট দেওয়া মানে এই দুবছর খুব খারাপ কাটবে নারায়ণগঞ্জের,আর সামনে নির্বাচনে খালেদার জামায়াত-ঘনিষ্ঠতার কারণে ভরাডুবি হলে একি অবস্থা।
কিন্তু আইভীকে ভোট দেওয়া মানে মনে মনে দুই আপাই খুশী। কারণ নারীরা মনের গভীরে একজন নারীকেই বিজয়ী দেখতে চায়। এই মুহূর্তে নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি নারী ভোটার এরকমি ভাবছেন, কিন্তু বলছেন না, কারণ পুরুষ শাসিত ও রাজনৈতিক দল শাসিত সমাজে আইভীর প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন জানালে বিপদ হতে পারে।
নারায়ণগঞ্জের ডিজুস প্রজন্মের কাছে শামীমএর গ্ল্যামার আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। কিন্তু মিডিয়ায় যেহেতু এদের এক্সপোজার আছে,শামীমের ইমেজ অন্তত নায়কের নয় তা তারা জানে।
ইন্টারনেট প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা আইভীকে ভোট দেবে এটা আশা করা যায়।
কিন্তু দিনের পর দিন যারা একটা দলকে ভোট দিয়েছেন, তাদের অবস্থা গলায় ঘন্টা বাঁধা খরগোসের মত। অভ্যাসের দাস হয়ে পড়েছেন তারা। উনারা এইবার রুচি পাল্টাতে পারেন। নৌকা-ধানের শীষ মার্কার ভোট তো এটা নয়।
এমনতো না শামীম হারলে হাসিনা গদিচ্যুত হবেন বা তৈমুর জিতলে খালেদা গদিনসীন হবেন। এই নির্বাচন বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনীতিতে আঘাত হানতে পারে আইভী জিতলে। কারণ হাসিনা বুঝবেন ভাল সাদা ইমেজের প্রার্থী ছাড়া জেতা কঠিন। খালেদা হাসিনা উভয়েই সামনে সংসদ নির্বাচনে আইভীর মত সহজ সরল ভালো মানুষদের টিকেট দেবেন।
এই নির্বাচনে যদি শামীম বা তৈমুর জিতে যান, তাহলে সামনে সংসদ নির্বাচনে টপগানরা টিকেট কিনবেন।
নারায়ণগঞ্জের মানুষ যদি অন্ধের মত মার্কা খুঁজে, মানুষ না খুঁজে তাহলে গণতন্ত্র হেরে যাবে। ভবিষ্যতের সাংসদরা আইভীর মত আমজনতার মুখ হয়ে উঠবে যদি নারায়ণগঞ্জের মানুষ হাসিনা এবং খালেদাকে শোধরাতে আইভীকে ভোট দেন।
নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী শামীম, তৈমুর দুজনের বিরুদ্ধেই মামলা আছে, আইভীর ক্লিন ইমেজ। তাহলে আর সিদ্ধান্ত নিতে ভুল হবার কথা কী!
নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী সমর্থকদের বোঝা উচিত শামীম ওসমানের ইমেজ অন ক্যামেরা রেকর্ডকৃত। কবরী সারোয়ারের দিকে তেড়ে আসার যে ভঙ্গীটি সেটি না বদলানো পর্যন্ত উনার গ্রহণযোগ্যতা তৈরী হবেনা।
সময় বদলেছে, সে কারণে উনি বিতর্ক অনুষ্ঠানে যে রকম ভদ্র আচরণ করেছেন এটা দুবছর নারায়ণগঞ্জের মানুষের সঙ্গে চর্চা করলে উনার গ্রহণযোগ্যতা ফিরে আসবে।
শামীম-তৈমুর-আইভীর মাঝ থেকে আইভীকে বেছে নিতে কাজে আসতে পারে বিএনপির ভোটদাতারা। তৈমুর একবিংশের নগরপিতা হবার জন্য প্রস্তুত নন। নারায়ণগঞ্জে বিএনপির এর চেয়ে ভালো প্রার্থী থাকা উচিত ছিল। চট্টগ্রামের বিএনপির মেয়র প্রার্থীর ক্লিন ইমেজের কারণে উনি জিতেছিলেন।
আওয়ামী লীগের ওপর বিরক্ত আমজনতার ভোট আইভীর পক্ষে যাবে বলেই মনে হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের মানুষ আইভীকে জেতাতে পারলে সারা দেশের মানুষ খুশী হবে। দেখবে সততার জয় হয়েছে।
আর ধর্ম ব্যবসায়ীরা বিএনপিতে ভোট না দিয়ে আইভীকে ভোট দেওয়া উচিত। আইভী হেরে গেলে মনে হবে গড এখন কালো টাকা এবং পেশীশক্তির পক্ষে কাজ করছেন।
ধর্মের ওপর আস্থা চলে গেলে আর ব্যবসা হবে কিভাবে? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।