ল্যাপটপটা কোলে নিয়ে মন খারাপ করে বসে আছে জামি। বাইরে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, ঝড় হতে যাবে, প্রচন্ড বাতাস হচ্ছে; তবুও কেন যেন খুব গরম লাগছে ওর। হয়তবা মনের মধ্যে যে ঝড় সেতার জন্য বাইরের ঝড় ওর গায়েই লাগছেনা। বেলা ২;৩২ বাজে, মোবাইলে সময়টা দেখে নিল জামি। ইন্টারনেটেও কানেক্ট হতে পারছেনা।
একটা ফাইল আপলোড করতে হবে, টেনশন হচ্ছে। আউটসোর্সিংয়ে কাজ করে, আর তাই পরের দিন ফাইনাল পরীক্ষা থাকা সত্তেও কাজ করতে হচ্ছে। কারন, ঐ ইনকাম দিয়েই ওকে ম্যানেজ করতে হয় সবকিছু। গত ছয় মাসে ওর বাবা আর ও নিজে বড় ধরনের অসুস্থ হয়ে পড়ায় পরিবারের আর্থিক অবস্থাও ভাল যাচ্ছেনা। আর তাই টাকা চায়ও না, হয়তবা চাইলেও পাবেনা এই ভেবে।
এসব ভাবতে ভাবতে ইন্টারনেট কানেকশন পেয়ে গেল। যাক, ফাইলটা আপলোড করে হাফ ছেড়ে বাচলো। এমনিই গতদিন ১০ ডলারের লোভ সামলাতে না পেরে পরীক্ষার হলে মোবাইল দিয়ে ফাইল আপলোড করতে যেয়ে বহিষ্কার হয়।
হঠাৎ মনে পড়লো সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে কিছুই খায়নি, সেই গতরাতে পরোটা আর ডাল খেয়েছিলো। ড্রয়ার খুলে দেখে তিন টুকরা ব্রেড আছে।
বাইরে গিয়ে কিছু কিনবে এ টাকাও নেই হাতে তাই পানিতে ভিজিয়ে এগুলো খেয়েই পড়তে বসলো জামি।
কাল শেষ ফাইনাল পরীক্ষা, এখনো কোনো প্রিপারেশন নেয়নি অথচ এই সাবাজেক্টেই ওর অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। পড়ার আগে ফেইসবুকে একটু ডু মারলো। একটা স্ট্যাটাস দিয়েছে ও কিছু ছবি আপলোড করেছে; হয়তোবা কেউ কমেন্ট করে বসে রয়েছে। ঢুকে দেখলো কোনো নোটিফিকেশ্ন নেই।
আবার মনে পড়লো জুম্মার কথা। ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট পাঠিয়েছিল ৬/৭ দিন আগে। প্রোফাইলে ঢুকে দেখে ২ দিন আগেও ও ফেইসবুকে ঢুকেছে কিন্তু তার রিকোয়েষ্ট একসেপ্ট করেনি আবার ইগনোরও করেনি। অথচ জুম্মার অনুরোধেই সে রিকোয়েষ্ট পাঠিয়েছিলো, মনটাই খারাপ হয়ে গেলো ওর।
ফেইসবুক থেকে বের হয়ে পড়তে বসলো।
নাহ, পড়তে পারছেনা। এইতো ক’দিন পর ভার্সিটি শেষ, তারপর হয়ত জুম্মার সাথে দেখা হবেনা, কথা হবেনা। সেই কবে থেকে সে ভালোবেসে আসছে, মিনমিনিয়ে একবার বলেছেও একথা, কোনো ডেফিনিট উত্তর পায়নি। জুম্মার কথায় সে জামিকে শুধুই বন্ধু হিসেবে দেখেছে। কিন্তু জুম্মা জানেনা আজ তার জন্য জামির জীবনটাই থেমে গেছে, ভয়াল হয়ে গেছে।
কেমন অমনোযোগী সবকিছুতেই। মা-বাবা, ভাই-বোন, বন্ধু এমঙ্কি ভার্সিটিতে টিচারদেরও বকা খায়। নিজেকে যেন এলিয়েনের মত মনে হয় তার। ফ্রেন্ড সার্কেলের ভীড়ে ওকে খুজে পাওয়াই যেতোনা অথচ এখন কেমন যেন ল্যাপটপ আর মোবাইল কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে তার জীবন।
চেয়ার-টেবিল ছেড়ে জানালার পাশে গিয়ে দাড়ালো, বৃষ্টি হচ্ছে, সাথে ঝড়ও; অথচ জামি কিছুই টের পেলনা।
আজব তো! কিন্তু এভাবে আর কতদিন থাকবে। নিজেকে না হয় গুঠিয়ে রাখা গেল কিন্তু পরিবারের, মা-বাবা, ছুত ভাই-বোন, ওদের কি হবে? কয়দিন পরই তো বাবা পেনশনে জাবে, তারপর তাকেই সব ম্যানেজ করতে হবে। আলফ্রেড টেনিসনের ইউলিসিস কবিতার শেষ লাইন মনে পড়লো ওর-
“To strive, to seek, to find, and not to yield.”
হ্যা, তাকে পারতেই হবে। চোখে হাত দিয়ে দেখে পানি চলে এসেছে। কত ভালই হত যদি বৃষ্টির পানির সাথে তার অশ্রুও ধুয়ে যেত, যদি ঝড় রাস্তার কাগজের প্যাকেটের মত সব কষ্টকে উড়িয়ে নিয়ে যেত।
বাইরে ঝড় থেমে গেছে, একটা সিগারেট জালিয়ে ঠোটে নিয়ে জামিও পড়ার টেবিলের দিকে এগুলো। তাকে যে পারতেই হবে, যদিও জানে একরাতে এতবড় দুই দুইটা নোবেলের কিছুই করতে পারবেনা; তবুও বসছে রবার্ট ফ্রস্টের প্রেরনা নিয়ে-
“And miles to go before I sleep”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।