আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরিচিত বৃত্তের ছবি

আমার 'কলম' আজো আছে আমার সাথে, আমার কষ্টের সঙ্গী হয়ে,আমার সুখের ভাগ নিয়ে দেনা-পাওনা চুকিয়ে,এক চিলতে হাসি হয়ে... নাজিম সাহেব চিন্তায় এতোটাই মশগুল হয়ে আছেন যে চায়ের কাপটা মুখে দেবার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত তার মনে ছিলো না,চা টা সদ্য বানানো! মুখে দিতেই তাই চেঁচিয়ে উঠলেন,কিন্তু একবার চিৎকার করেই তিনি সাথে সাথে চুপ হয়ে গেলেন,কারন পাশের রুমে ছোট মেয়ে দিশা পড়ছে,কাল থেকে তার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু। কিন্তু গরম চা মুখে দিয়ে জ্বিহবা পুড়ে গেছে তার,এখন বাকী চা টুকু খাওয়ার কোন মানে হয় না,বিস্বাদ লাগবে। ইজি চেয়ার থেকে উঠে আশেপাশে তাকালেন,বাসার আর কাউকেই চোখে পড়ছে না,অগ্যত নিজেই কাপ হাতে নিয়ে উঠে দাড়ালেন। ডায়েনিং টেবিলে একদাগা শাক,মরিচ বিছিয়ে চেয়ারে বসে একটা একটা করে সেগুলো ঠিক করছেন নাসরিন বেগম। চায়ের কাপ হাতে নাজিম সাহেবকে দেখে বললেন, -এতো দ্রুত চা খাওয়া শেষ?টেবিলে রেখে যাও নাজিম সাহেব গম্ভীর মুখে বললেন, -আমার চা খাওয়া নিয়ে তো এ সংসারে শক্রুর অভাব নেই! নাসরিন ভ্রু কুঁচকালেন,কাজ করতে করতে বললেন, -আবারো গরম চা মুখে দিয়ে মুখ পুড়িয়েছো?! চা টা রেখে আসার সময় বার বার বলে এসেছিলাম গরম চা,সাবধানে খেয়ো,কথাটা শুনেছিলে? -আমি বই পড়ছিলাম দেখোনি?কি দরকার ছিলো গরম চা দেবার? -বাহ!!!চা দাও,দাও করে চেঁচিয়ে অস্থির হয়ে গেলে,তাই দ্রুত চা করে দিলাম,এখন আবার বলছো,ঠান্ডা করে কেন দিলাম না?আমি তোমার মতো অতো অবসর নিয়ে বসে নেই,যে চা ঠান্ডা করে দিবো! -আমার কোন কাজ ঠিক মতো করে দেবার সময় তোমার কোন কালে ছিলো শুনি?হুহ নাসরিন বেগম এবার মুখ তুলে তাকালেন,মানুষটা এমন হয়ে যাচ্ছে কেন দিন দিন!! রিট্যায়ার্ড করার পর থেকে এমন একটা বেলা নেই যে নাজিম সাহেব তার সাথে ঝগড়া করেন না!সকাল-বিকেল খিটমিট করতেই থাকেন, কিছু হলেই হলো,শুরু হয়ে যায়,উফফ!!! কিন্তু এখন ঝগড়া করার কোন ইচ্ছে নেই নাসরিন বেগমের।

হাতে অনেক কাজ,দুপুরে মেয়েরা আসবে জামাই সহ,রান্না করতে হবে। -শোন,আমার হাতে অনেক কাজ,এখন তোমার সাথে অযথা ঝগড়া করার কোন ইচ্ছে আমার নেই। -হুম,আমার তো আর কাজ নেই,তোমার সাথে ঝগড়া করা ছাড়া!যত্তসব! নাজিম সাহেব রাগ করে এসে নিজের ইজি চেয়ারে বসলেন। বেশ কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে রেখে,নিজের ডায়েরিটা হাতে নিলেন,কলমটা নিয়ে লিখতে শুরু করলেন, ''কর্ম জীবন থেকে মানুষ অবসর কেন নেয়?স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করার জন্য?নাকি পরিবারে অবসর নেয়া একটা মানুষ যে কতোটা একলা তা বোঝার জন্য!! ছাত্র জীবনে অবসর পেলে ঘুম আর আড্ডা দেয়া যেতো,কিন্তু এখন?না ঘুম হয় না গল্প করার মানুষ পাওয়া যায়। অথচ একটা সময়,অফিস থেকে দু'দিনের ছুটির জন্য কতো চেষ্টা করতে হয়েছে,সারা সপ্তাহ ধরে অপেক্ষায় থাকতাম,কবে ছুটির দিনটা আসবে?কবে বাসায় থাকবো,সবার সাথে সময় কাটাবো?... আর এখন?অফুরন্ত সময় কিন্তু সবাই আর নেই সাথে,দেখতে দেখতে মেয়েরা বড় হয়ে গেছে,বিয়ে-শাদী করে যার যার অবস্থানে ব্যাস্ত আছে,মাঝে মাঝে আসে,নিজেদের জীবনের গল্প করে,কখনো শুনতে ভালো লাগে,কখনো লাগে না।

কখনো ইচ্ছে করে ওদের সাথে বসে নিজের মনের ভাব ব্যাক্ত করতে,নিজের দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতা গুলো শেয়ার করতে কিন্তু ওদের শোনার সময় বা আগ্রহ খুব একটা হয় না!...'' এটুকু লিখে একটু থামলেন নাজিম সাহেব। ডায়েরীটা রেখে ডায়নিং এ গেলেন,নাসরিন খুবই ব্যাস্ত!তবুও বললেন, -চা টা একটু গরম করে দেওয়া যাবে? নাসরিন কিছু না বলে কাজ করতে লাগলেন,নাজিম সাহেব ও আর কিছু বললেন না। ফিরে আসতে আসতে শুনলেন, নাসরিন কাজের মেয়েটাকে চূলা খালি করতে বলছে,চা গরম করে দেবার জন্য! রুমে এসে আবারো ডায়েরী লিখতে শুরু করলেন, ''নাসরিনকে দেখলে এখন আমার হিংসে হয়! সারাটা দিন কতো কাজ তার... আর আমার?বাজার করা,নামাজ পড়তে যাওয়া আর বই পড়া ছাড়া তেমন কাজই নেই!অথচ একটা সময়,আমি নাসরিনকে কতো বলতাম,বাসায় তোমার কাজটা কি?! এখন বুঝতে পারছি,আসলে আমি আর বাইরে কতো টুকু কাজ করতাম তার থেকে বহুগুন কাজ নাসরিন করে বাসায়। এই যে দিশা!পাশের রুমে পড়ছে,মেয়েটার পরীক্ষা বলে শ্বশুড় বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি এসেছে,পরীক্ষা শেষ করে আবার চলে যাবে,কি অবস্থা! বিয়ে হয়ে গেছে কই বাবার বাড়ি বেড়াতে আসবে তা না,আসলে সেই সুযোগটাই ওর কোথায়? একবার সংসারে ঢুকলে কি আর মেয়েদের ছুটি মেলে?! ক'দিন পর বাচ্চা-কাচ্চা হবে তখন আরো ব্যাস্ত হয়ে যাবে,নাসরিনের মতো সেও রান্নাঘর,সংসার নিয়ে দিন পাড় করতে থাকবে। '' 'তোমার কি ডায়েরী লেখার অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে নাকি?!' নাসরিনের কথা শুনে চমকে উঠলেন নাজিম সাহেব! দ্রুত ডায়েরী বন্ধ করে টেবিলে রাখলেন,তা দেখে হাসলেন নাসরিন! -নাও,তোমার চা,গরম বেশি না।

-ধন্যবাদ। -তো কি লিখেন এতো ডায়েরীতে শুনি? হাসলেন নাজিম সাহেব। -অবসর আছি,তাই লিখি এলো-মেলো কথাবার্তা,তোমার মতো অতো গুছিয়ে তো আর লিখতে পারিনা!তবুও লিখি আর কি! -হুম,চান্সে খোঁচাটা মারলা না?আমি যখন লিখতাম তখনতো কতো টিটকারি দিতে,আর এখন?...হাহাহা!ওকে,যাই আমি,কাজ আছে,তুমিও ওঠো,নামাযের সময় হয়ে আসছে,গোসলে যাও। -হুম,চা শেষ করে উঠছি। বারডেম থেকে ডায়াবেটিকস টেষ্ট করিয়ে রমনায় হাঁটছেন নাজিম সাহেব,২ঘন্টা হাসপাতালে বসে থাকার চেয়ে এখানে প্রকৃতির মাঝে বসে থাকা অনেক ভালো।

যদিও চারপাশের পরিবেশ এর দিকে তাকালে এই পার্কে তার আসা চলে না,তবুও আসলেন। এখন বলতে গেলে সব জায়গাতেই একই অবস্থা,সুতরাং ভালো-মন্দের অতো হিসেব কষে কি হবে! -নজু মিয়া এই বয়সে এখানে কি করা হচ্ছে শুনি?! চমকে উঠলেন নাজিম সাহেব!!ঘাড় ঘুড়িয়ে পেছনে তাকালেন,হোহো হাসিতে ফেটে পড়লেন তিনি... পেছনে দাঁড়িয়ে আছে তার বহুদিনের পুরোনো কলেজ বন্ধু সাদিক। -আসসালামু আলাইকুম,চান্দু তুমি এইখানে কি করো শুনি?হাহাহা সাদিক সাহেব কোলাকুলি শেষে হাসতে হাসতে বললেন, -ঐ তুই যেই কাজ করিস,সে কাজই... বিশ্রাম নেয়া!আছিস কেমন?কি খবর সবার? -হুম,আছি,ভালোই আল্লাহ রেখেছেন যেমন আর কি। মাস ছ'য়েক হলো রিট্যায়ার্ড করেছি,আপাততো বাসায় আছি। তুই? -আমিও সাত-আট মাসের বেশি হলো চাকরী ছেড়েছি,শেয়ারে একটা ব্যাবসা শুরু করেছিলাম বছর দু'য়েক আগে এখন ওটাই দেখছি।

বুঝিসইতো,বুড়ো বয়সে এসে আর ছেলেদের ঘাড়ে বোঝা হতে চাই না,তাই টুকটাক ইনকাম করে যাচ্ছি আর কি! -হুমম!শেষ বয়সে এসে আসলে চাইলেও ইন্ডিপেন্ডেন্ট থাকা যায় নারে!আমাদের ব্যাচের শহীদুলের কথা মনে আছে তোর?পুলিশের ডিট্যাক্টিভ ব্রাঞ্চে ছিলো যে। ক'দিন আগে শুনলাম এখন নাকি ওল্ডহোমে থাকা শুরু করেছে,বউ মারা গেছে বছরখানেক আছে,ছেলে-মেয়েরা কেউ দেশে নেই,তাই একা একা আর কি করবে,চলে গেছে ওখানে... সাদিক সাহেব সাথে সাথে কোন কিছু বললেন না,খানিকটা সময় চুপ থেকে বললেন, -দিনে দিনে জীবনের আরেক কঠিন অবস্থানের দিকে যাচ্ছিরে,তোর ভাবি এখনো আছে বলে রক্ষে,না হলে আমাকেও এতোদিনে ওদিকেই যেতে হতো!একা একা এই বয়সে দিন পাড় করা যায় নারে! -হুম,আমার কপালে কি আছে জানিনা,তিন মেয়েরই বিয়ে হয়ে গেছে,যার যার সংসারে আছে,এখনো দু'জন আছি সে জন্য আল্লাহর শুকরিয়া! কিন্তু এক সময় একলা হয়ে গেলে কি করবো,কোথায় যাবো জানিনা! শহীদুলের অবস্থা দেখে খারাপই লেগেছে অনেক,বেচারা সারা জীবন পেশার কারনে ব্যাস্ত থেকেছে,ভেবেছিলো শেষ বয়সে এসে সংসার,ছেলে-মেয়েদের সাথে কিছুটা সময় পাড় করবে,কিন্তু কি ভাগ্য দেখ!রিট্যায়ার্ড করার পরপরই বউটা মারা গেলো,আর ছেলে-মেয়েরা তো অনেক আগে থেকেই দেশ ছাড়া... -তো ও ছেলে-মেয়েদের কাছে চলে গেলেই পারতো! নাজিম সাহেব খানিকটা হেসে বললেন, -ওদের কাছে গেলেই কি ওরা তার জন্য সময় করতে পারতো?সবাই ব্যাস্তরে,বলেছিলাম,শোনেনি,বলে ওখানে যে কথা এখানেও সেই কথা!যায় বছরে একবার ছেলে-মেয়েদের সাথে দেখা করে আসতে... -হুম,সবাই আসলেই অনেক ব্যাস্ত,অবসর থাকার জো নেই! আলমারী থেকে বিদ্যুতের পুরোনো কাগজগুলো বের করতে যেয়ে হঠাত পুরোনো একটা অ্যালবামটা চোখে পড়লো নাজিম সাহেবের। নাসরিন সাধারনত সব অ্যালবাম গুলো কাবার্ডেই রাখে,আলমারিতে তাহলে এটা কিসের অ্যালবাম?! খুব কৌতুহল নিয়ে হাতের কাগজ গুলো রেখে অ্যালবামটা নিয়ে বারান্দায় এসে বসলেন। অ্যালবামটা খুলেই কিছু সময় চুপ করে রইলেন তিনি,ধীরে ধীরে মুখে হাসি ফুঁটে উঠলো তার... এমন সময় নাসরিন বেগম দ্রুত পায়ে বারান্দায় ঢুকে বললেন, -কি ব্যাপার?তুমি আলমারী খুলে রেখে এসেছো কেন?!কাজ শেষ তো বন্ধ করে দিবে না!আজব!! নাজিম সাহবে সেদিকে কান না দিয়ে বললেন, -তুমি আমাদের অ্যালবামটা আলমারীতে রেখে দিয়েছো কেন?! এতোক্ষনে নাসরিন খেয়াল করলেন,নাজিম সাহেবের হাতে তাদের দু'জনের পুরোনো দিনের ছবির অ্যালবাম। তিনি মুচকি হেসে বললেন, -তো কি করবো?কাবার্ডে রাখবো?যাতে নাতি-নাতনি,মেয়ের জামাইরা দেখতে পারে?! নাজিম সাহেব হেসে বললেন, -দেখলে ক্ষতি কি? -নাহ কোন ক্ষতি নেই,বুড়ো-বুড়ির সেকালের ছবি দেখে সব গুলো হাসলে ভালো হয় তাই না! নাজিম সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, -কি আর হাসবে!দেখুক ওরা এক কালে আমরাও ওদের মতোই ছিলাম!হাহাহা নাসরিন হাসতে হাসতে বললেন, -হয়েছে,হয়েছে... ঐদিন পাড় হয়েগেছে সাহেব!আমি এখন যাই,কাজ আছে,তুমি ছবি গুলো দেখা শেষ হলে আলমারীতে রেখে দিতে ভুলে যেও না আবার,ওকে? নাজিম সাহেব মাথা নাড়লেন।

নাসরিন বেগম রাতে শোয়ার আগে কিছুক্ষন বারান্দায় বসে থাকেন। বেশ কয়েক বছরের অভ্যাস তার। সারাদিন পর এই সময়টুকু বাইরে বাতাসে না বসলে তার ঘুম আসে না,এই সময়টায় কখনো বসে বসে তাসবীহ জপেন,কখনো নাজিম সাহেবের সাথে গল্প করেন,না হলে আপন মনেই কথা বলেন,ডায়েরী লিখেন। আজো চুপ করে বসে ভাবছিলেন,এমন সময় নাজিম সাহেব এসে তার পাশে বসলেন,কিছুটা চমকে উঠলেন নাসরিন! -কিছু বলবে? -হুম,ভাবছি... -কি ভাবছো?! -আজকে পুরোনো ছবি গুলো দেখার পর থেকে আমার মাথায় নানান চিন্তা খেলছে! একটু অবাক হলেন নাসরিন!!মুচকি হেসে বললেন, -কি চিন্তা?আরেকটা বিয়ে করার?!! নাজিম সাহেব হেসে বললেন, -পারমিশনটা আরো আগে দিলে কতো ভালোই না হতো ম্যাডাম! দু'জনেই হেসে উঠলেন একসাথে, -তাই না?এই চিন্তাই তুমি সারাদিন ধরে করেছো?! -আরে নাহ,ভাবছি,তোমাকে নিয়ে টিএসসিতে ঘুরতে যাবো একদিন! নাসরিন বেগম কিছুক্ষন তার স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন,সে ফান করছে নাকি সিরিয়াস সেটা বুঝার চেষ্টা করলেন!, -কই যাবা তুমি আমাকে নিয়ে?টিএসসি?!!এই বয়সে!!!পাগল নাকি! নাজিম সাহেব কপট রাগ দেখিয়ে বললেন, -তো কি হইছে!তুমি এখনো ডাকসুর ভোট দিতে,প্রীতি-মিলনিতে যোগ দিতে ভার্সিটি যাও না?আমরা এই ভার্সিটির স্টুডেন্ট ছিলাম না?গেলে সমস্যা কি? -তাই বলে তুমি টিএসসি যাবে?ছেলে-পুলে দেখলে হাসবে!ওখানে যায়,যারা বিয়েশাদী করেনি এখনো,কিংবা নতুন করেছে ওরা,ইয়াং ছেলে-মেয়েরা,আমাদের বুড়োরা না,বুঝলে? নাজিম সাহেব হেসে বললেন, -জানি আমি,কিন্তু ইয়াং কালে যদি তুমি আর আমি ওখানে যেয়ে বসে থাকতাম,তাহলে তোমার বাপ আর আমার বাপ কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিতো এতোদিনে!আর বিয়ের পর তো চাকরী-সংসার নিয়েই ব্যাস্ততা শেষ হলো না! -তো সে জন্য এখন,এই বয়সে তোমার বউ নিয়ে টিএসসি ঘুরতে যাওয়ার শখ হয়েছে?!!হাহাহা নাজিম সাহেব কৃত্রিম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, -নাহ,হইলো না...আমার শখ গুলো আর পূরন হইলো না!খালি তোমার জন্য,বুঝলা!!! নাসরিন ভ্রু কুঁচকে চোখ ছোট করে বললেন, -এসব ঢং ছাড়ো,বুড়ো বয়সে এসে মনে পড়েছে শখের কথা!হুহ নাজিম সাহেব আবারো কৃত্রিম নিশ্বাস ফেললেন। নাসরিন এবার হেসে বললেন, -শোন,আল্লাহর রহমতে এখন সংসারের সব ঝামেলা তো শেষ হয়েছে বলা যায়,এবার চলো,আরেকবার হ্বজ্জ করে আসি।

সেই কবে একবার গিয়েছিলাম,এখন চলো আরেকবার করে আসি। নাজিম সাহেব হেসে বললেন, -হুমম,আইডিয়া মন্দ না,কি্ন্তু কিন্তু এখন কি আর শরীর আগের মতো আছে? ওখানে যেয়ে আবার অসূস্থ হয়ে পড়ি কি না!তাই ভাবি,এতো কষ্ট করতে পারবে? -কি যে বলো না,অবশ্যই পারবো ইনশাআল্লাহ। -ঠিক আছে,তাহলে চলো নিয়ত করে ফেলি,এ বছরই যাবো ইনশাআল্লাহ!ওকে,এখন চলো শুয়ে পড়ি। নাসরিন একটু চুপ থেকে বললেন, -তুমি যাও আমি আসছি। নাজিম সাহেব শুয়ে পড়েছেন,নাসরিন ড্রয়িং রুমে বসে টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে ডায়েরী লিখছেন, ''আজ আমাদের সংসার জীবনের ত্রিশ বছর পূর্ন হলো।

এই দিনটার কথা মানুষটার কখনোই মনে ছিলো না!আজো নেই। কাল সকালে যখন আমি তার প্রিয় খাবাররান্না করে তার পাতে তুলে দিবো তখন অনেকক্ষন চেষ্টা করার পর তার মনে পড়বে! তারপর সেই একই দৃশ্য! নাহ,এ নিয়ে কোন্ রাগ এখন আর নেই আমার,বরং এই ত্রিশ বছর ধরে এই মানুষটা আমার সাথেই আছে এটাই আমার জন্য অনেক। মানুষ কাউকে জীবনে সঙ্গী হিসেবে চায় স্রেফ সামাজিকতা বা নিয়ম রক্ষা করার জন্য না,কাউকে জীবনে চলার পথের সঙ্গী,সুখে দুঃখের সঙ্গী হিসেবেই চায়,এমন কাউকেই চায় যার সাথে চিন্তায়,কাজে মিলে। সঙ্গী কখনো বাহ্যিক সুবিধা দেখে বানাতে নেই,বাহ্যিকতা মেইনটেন করা সঙ্গী বানানো যায় না,স্রেফ কাউকে একটা নাম দেয়া যায় হয়তো,সত্যিকারার্থে সঙ্গী মনের মিল,কাজের মিল দেখেই বানানো উচিত। যেদিন থেকে এ ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছি সেদিন থেকে জীবন সঙ্গী হিসেবে যেমন একজনকে চেয়েছিলাম,আল্লাহ তেমন একজনকেই দিয়েছেন।

ব্যাপারটা যে আমি একদিনেই বা ক'মাসেই বুঝে ফেলেছি তা না,সময় লেগেছে বুঝতে,দেখতে দেখতে মানুষটার সাথে আজ ত্রিশ বছর হলো আছি,কিন্তু শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত আল্লাহর কাছে চাইবো,ঐ জীবনে যেয়েও যদি আল্লাহ আমাকে কোন সঙ্গী দিতে চান,তাহলে যেনো নাজিমকেই দেন। অপ্রাপ্তি বা আক্ষেপ যে নাই তা না,কিন্তু প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির দায়টা মানুষের একান্তই নিজের,তার জন্য অন্য কাউকে দায়ী করা ঠিক না,মানুষের যতোটুকু চেষ্টা থাকবে,যতটুকু ভাগ্যে থাকবে ততোটুকুই সে পাবে। কারো জন্য তা আটকে থাকে না। '' পেছন থেকে দিশা এসে গলা জড়িয়ে ধরে, -মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্নস অফ দ্যা ডে আম্মু... অনেক অনেক দোয়া করি আল্লাহর কাছে তোমাদের জন্য। নাসরিন লেখা বন্ধ করে হেসে বললেন, -অনেক ধন্যবাদ মা,দোয়া করি তুইও যেনো এমন ত্রিশ বছর পাড় করতে পারিস! দেখতে পাচ্ছি,অস্পষ্ট আলোয় জড়িয়ে বসে আছে এক মাকে তার মেয়ে।

এখানে মা আর মেয়ে দু'জন না ভেবে একজন ভাবা যায়,কারন মায়ের পাশের মেয়েটাই ক'দিন পর মা হবে,এখন তার মা যে সব সম্পর্কের বাঁধনে জড়িয়ে আছেন,ক'দিন পর সেও এমনই কিছু সম্পর্কে জড়াবে। এই চেনা বৃত্তের মাঝেই জীবন এভাবে চলে যায়,যাচ্ছে,যাবে... দেয়া-পাওয়া,কষ্ট-সুখের ভেলায় চড়ে...  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।