ভালো লাগে...ভালোবাসতে... আজ সকাল সকালই ভার্সিটিতে চলে এসেছে সৃজন। আজকে একটা বিশেষ দিন। কিন্তু সকাল থেকেই মনটা খারাপ সৃজনের। আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টের সিঁড়িতে চুপচাপ বসে আছে সে।
আজ প্রায় দুই বছর হতে চলল এখনো নীলা কে তার মনের কথা বলতে পারেনি সৃজন।
এই দুই বছরে সৃজনের অসংখ্যবার মনে হয়েছিল,এখনি গিয়ে নীলাকে জানিয়ে দিই মনের যত কথা আছে স...ব। কিন্তু পরক্ষণেই পিছিয়ে এসেছে ভয়ে। নীলাকে হারানোর ভয়ে। নীলার বন্ধুত্ব হারানোর ভয়ে।
ভাবতে ভাবতে অতীতে চলে গেলো সৃজন।
এইতো সেদিনের কথা! সেকেন্ড ইয়ারের প্রথম ক্লাস ছিল সেদিন। নোটিশ বোর্ডের কাছে সবার ভীঁড়। ফার্স্ট ইয়ার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। সৃজন রেজাল্ট দেখে সিঁড়িতে বসে আসিফের সাথে হাসাহাসি করছিল। হঠাৎ দেখলো-নীলা কাঁদতে কাঁদতে সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে! নীলার চোখে চোখ পড়তেই নীলা চোখ সরিয়ে নিলো।
কিন্তু......কি থেকে যেন কি হয়ে গেলো!!! মায়াভরা ওই চোখজোড়া সৃজনের মনে গেঁথে গেলো! দুপুরের কড়া রোদে বসে বসে বারবার সে নীলার কথা ভাবছিলো। নীলার ওই নিষ্পাপ টলটলে চোখজোড়া সে কিছুতেই ভুলতে পারছিলোনা!
“প্রহর শেষের আলোয় রাঙ্গা সেদিন চৈত্রমাস,
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ। ’’
হ্যাঁ। আসলেই...
নীলার চোখে সেদিন কি দেখেছিলো জানেনা সৃজন। শুধু জানে যে, তার বাকিটা জীবন সে ওই চোখের দিকে তাকিয়েই পার করে দিতে পারবে।
সেদিনই সৃজন মনে মনে ঠিক করে ফেলল ওই চোখে আর কখনো পানি আসতে দিবেনা সে। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত নীলার পাশে থেকেছে,নীলার প্রতিটা সুখ-দুঃখের সংগী হয়েছে সৃজন। এভাবে দু’টি বছর কেটে গেল। অথচ আজো নীলাকে মনের কথাটা বলতে পারলোনা...
হঠাৎ আসিফের ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এলো সৃজন। “ কিরে! ক্লাসে যাবিনা? সময় হয়ে গেছে তো!...আর ওইদিকে নীলাও তোকে খুঁজছে।
’’
আজ নীলার জন্মদিন। সৃজন আজ নীলার জন্য একুশটি গোলাপ কিনেছে। বিশটা সাদা গোলাপের মাঝে একটা লাল গোলাপ। হঠাৎ কি মনে হতে সে আসিফকে জানিয়ে দিলো যে সে ক্লাস করবেনা আজ, বাসায় চলে যাবে। আসিফ কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সৃজন গটগট করে হেঁটে চলে গেলো!
ওদিকে ক্লাস ততক্ষণে শুরু হয়ে গেছে।
আসিফ আর দেরী না করে ক্লাসের দিকে পা বাড়ালো। ক্লাসে ঢুকতেই নীলা জিজ্ঞেস করলো,“সৃজন কই?” “কি জানি! হঠাৎ বল্ল,ভালো লাগছেনা,বাসায় চলে যাবে! এই বলে গটগট করে হাঁটা দিলো!”-উত্তরে আসিফ জানালো।
এই কথা শুনে অভিমানে নীলার ফর্সা গাল দু’টো লাল হয়ে গেলো। কিছু না বলেই এভাবে সৃজন চলে গেলো! আর একটি কথাও না বলে সারা ক্লাস চুপচাপ বসে থাকলো।
ক্লাস শেষে সৃজনকে ফোন করলো কিন্তু সৃজন ফোন ধরছেনা।
ওপাশে রিং হচ্ছে তো হচ্ছে কিন্তু কোনো সাঁড়া শব্দ নেই! কি হলো সৃজনের? কখনো তো এমন করেনা! আজ হঠাৎ কি হলো! সৃজন কি ভুলে গেছে আজ নীলার জন্মদিন? কেন আজ এরকম করছে ও? রাগে-দুঃখে নীলা কেঁদে ফেলল। কিন্তু কেউ যাতে না দেখে তাই ক্লাস থেকে দ্রুত সরে আসলো। ওর প্রিয় জায়গাটিতে এসে বসলো। বসে বসে কাঁদতে লাগলো।
ওদিকে বাসায় চলে যাবে বললেও বাসায় গেলোনা সৃজন।
বলা যায়, যেতে পারলো না। আজকের দিনে নীলাকে দেখা ছাড়া যেতে ইচ্ছে করছেনা ওর। সকাল থেকে নীলাকে ও অনেক কষ্ট দিয়েছে। কল রিসিভ করেনি। জন্মদিনের শুভেচ্ছাও জানায়নি এখন পর্যন্ত।
নীলার আজ অনেক প্ল্যান ছিল। নীলার নিশ্চই খুব মন খারাপ। নাহ! এভাবে আর নীলাকে কষ্ট দিতে পারবেনা। নীলাকে খুঁজতে প্রথমে সে ক্লাসে গেলো। ওখানে গিয়ে পেলো না।
খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ মনে পড়লো নীলা কোথায় থাকতে পারে! নীলার সেই প্রিয় জায়গাটাতে নিশ্চই।
ওখানে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো সৃজন। নীল একটা শাড়ি পরেছে আজ নীলা। কপালে দিয়েছে একটা নীল টিপ আর হাতে নীল রঙের কাঁচের চুড়ি। এটা কি নীলা? বিশ্বাস হচ্ছেনা সৃজনের! মনে হচ্ছে, স্বর্গ থেকে কোন এক পরী নেমে এসেছে...আর সেই পরীর চোখ থেকে অনবরত মুক্তো ঝরছে।
নীলার চোখে পানি! আর সহ্য করতে পারলোনা সৃজন। দৌড়ে গিয়ে নীলার পাশে বসলো। “ নীলা! এই নীলা! কাঁদছিস কেন?” কোন উত্তর না দিয়ে নীলা ফোঁপাতে লাগলো। রাগে-অভিমানে সৃজনের দিকে ফিরেও তাকালোনা। সৃজন তখন ব্যাগের ভিতর থেকে ফুলের তোড়া বের করে নীলার চোখের সামনে ধরলো।
বলল-“শুভ জন্মদিন,নীলা। ’’
ফুলগুলোর দিকে অদ্ভূত দৃষ্টিতে তাকিয়ে সাথে সাথে সৃজনকে জড়িয়ে ধরলো। “কোথায় চলে গিয়েছিলি তুই? কেন এরকম করলি? তোর সাথে কোনো কথা নাই। ’’ বলে আবার কাঁদতে থাকলো। হঠাৎ কান্না থামিয়ে বলে উঠলো-“তোর না নীল রঙ প্রিয়? দেখ,তোর জন্য আজ আমি নীল শাড়ি পরেছি।
আর তুই আজ এরকম করলি...?” বলে আবার ফোঁপাতে লাগলো।
এটা কি বাস্তব নাকি স্বপ্ন কিছুই বুঝতে পারছেনা সৃজন। এই কি সেই মেয়ে যার জন্য এতগুলো দিন অপেক্ষা করেছে সে? নিজেকে সামলে নিয়ে আস্তে আস্তে নীলাকে বলল-“নীলা প্লীজ কাঁদিস না...তোর চোখের পানি আমি একদম সহ্য করতে পারিনা। ’’ “কেন? কেন সহ্য করতে পারিস না?”-ঝাঁঝাঁলো কন্ঠে নীলা জিজ্ঞেস করলো।
“কারণ...কারণ আমি তোকে ভালোবাসি”-ফিসফিস করে নীলার কানে কথাটি বলল সৃজন
হঠাৎ করেই যেন নীলার চারপাশের সবকিছু নিস্তব্ধ হয়ে গেলো! নীলার মনে হলো-ঠিক এই কথাটা শোনার জন্যই সে যুগ যুগ ধরে অপেক্ষা করছিলো।
আজ তার অপেক্ষার পালা শেষ হলো। জন্মদিনে এর চেয়ে বড় উপহার আর কি হতে পারে?
"ভালোবাসি তোমায়"...বলবো না! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।