আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার স্টেডিয়ামে গিয়ে প্রথম খেলা দেখার অভিজ্ঞতা!!

কি লিখি!!! জীবনে দ্বিতীয়বারের মতো আবার ভার্সিটির বাসে চড়ে বসলাম। একটু টেনশনে ছিলাম কারণ আমার ভার্সিটির বাসে চড়ার অভিজ্ঞতা তেমন একটা সুবিধার না। বাস ছাড়বে বেলা একটায়। আর আমাকে স্টেডিয়ামে পৌঁছতে হবে দুইটার মধ্যে। তের তারিখের ঘটনা।

আমি বাংলাদেশ – ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ দেখতে যাচ্ছিলাম। রিকি পন্টিং আমাকে আগেই বলে রেখেছিল মিরপুর দশে নামতে। আমি রাজী হয়ে গেলাম। তারপর কিছুক্ষণ পর রিদু কল দিয়ে বলল, মিরপুর দুইয়ে নামতে। আমি ভাবলাম, ঘটনা কি ??এরা দুই জন আমাকে দুই জায়গায় নামতে বলে কেন ? আজিব!!! শেষ পর্যন্ত অনেক কাহিনী করে ঠিক করলাম মিরপুর দুইয়ে নামবো।

আর এই কাহিনী শেষ হবার পর দেখি আমার মোবাইলে মাত্র একটা চার্জ। আর কিছুক্ষণ কল আসলে- গেলে মোবাইল বন্ধ যাবে!! মোবাইল বন্ধ হয়ে গেলে ফ্রেন্ডদের সাথে যোগাযোগ করবো কিভাবে এই দুশ্চিন্তা পেয়ে বসল। কারণ আমার কাছে টিকেট ও নাই। টিকেট রিদুর কাছে। এইজন্যই গুণীজনেরা বলেন কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তাড়াহুড়া না করার জন্য।

অথচ আমি বোধহয় আমার জীবনের যাবতীয় সিদ্ধান্ত তাড়াহুড়া করে নিয়েছি। আমার খেলা দেখতে যাওয়ার কথা ছিল না। ছিল কেবল রিকি পন্টিং , রিদু, আর সন্দিপুর। মাঝখান থেকে আমিও লাফাতে লাফাতে খেলা দেখতে চলে গেলাম। একটা বাজতে দেরি নেই, বাস ছেড়ে দিল।

রোদে বসে খেলা দেখলে প্রচুর পানির পিপাসা পাবে এই আশঙ্কায় আমি তিরুর পানির বোতল থেকে কিছু পানি ধার নিলাম। কিন্তু ওই পানি আর খাওয়া হয় নি। সেটার ইতিহাস কিছুক্ষণ পর বলব। ওইদিকে রিদুকে কল দিয়ে বললাম, মনিপুর স্কুলের সামনে আমি থাকবো, তুই এসে নিয়ে যাবি। কারণ আমি কিছু চিনি না।

কিসের কি?? উল্টা আমাকে কি জানি কি ইন্সট্রাকশন দিল। কিন্তু আমি শো শো আওয়াজ ছাড়া কিছুই শুনতে পেলাম না। রিদু যখন সিরিয়াস এবং হাউকাউ করে ফোনে কথা বলে তখন এক শো শো আওয়াজ ছাড়া কিছুই শোনা যায় না। আমি খট করে ফোন রেখে দিলাম। চার্জ সংরক্ষণ করতে হবে।

পরে অবশ্য রিদু তার বিখ্যাত ইন্সট্রাকশন এসএমএস করে পাঠিয়ে আমাকে নিস্তার দিয়েছিল। মণিপুর স্কুলের সামনে নামলাম। আশেপাশে কোটি কোটি পোলাপান দেখে বুঝলাম স্টেডিয়াম ধারে কাছেই। আস্তে আস্তে গেটের সামনে গেলাম। এদিকে রিকি পন্টিং ফোন দিয়ে বলল যে সে আসছে।

আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। একজন এসে আমাকে বলল, “ আপু , গালে একটা পতাকা এঁকে দেই। “ আমি নিষেধ করতে গিয়ে ভুলে বোধহয় হাত ও একটু নাড়িয়ে ফেললাম। লোকটা কি বুঝল কে জানে? এইবার আমাকে বলল, “ তাহলে হাতে এঁকে দেই!” আমি হতাশ চোখে তাকালাম। অনেকক্ষণ পর স্টেডিয়ামের ভেতরে ঢুকলাম।

ততক্ষণে দুইটা বেজে গিয়েছে। শুরু হল চেকিং পর্ব। এক মহিলা পুলিশ আমার ব্যাগটা নিল এবং সাথে সাথে পানির বোতলটা নিচে ফেলে দিল। আমি রাগের চোটে কি করবো কিছু বুঝতে পারছিলাম না। নিচে তাকিয়ে আমার চোখ ছানাবড়া!! দেখি চারপাশে ময়লা- আবর্জনা আর এর মাঝেই দুনিয়ার জিনিস নিচে ফেলে রেখেছে ওরা।

ইয়ার ফোন, সিঙ্গারার প্যাকেট, পানির বোতল, মেকআপ বক্স , ছাতা কি নাই সেখানে। তারপর আমার পেন্সিল বক্সটা বের করল। “ আরে কি করেন? কি করেন?” বলতে না বলতেই আমার কলম, পেন্সিল, ইরেজার,কাটার , স্কেল সব একটা একটা করে ফেলে দিল। আমি শেষ পর্যন্ত বলেই ফেললাম,” আমিতো ভার্সিটি থেকে সরাসরি এখানে এসেছি এইজন্য এইগুলো সাথে আছে। কিন্তু ফেলে দিলেন কেন? আমার তো আবার লাগবে।

“ ওই পুলিশ বলল,” এইগুলো সিস্টেম। এইগুলো নিয়ে ঢুকা নিষেধ। “ বলতে বলতে আমার চিরুনিটা পর্যন্ত ফেলে দিল। আমি “ আ ...আমার চিরুনি” বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। চিরুনি দিয়ে কি ক্ষতি হতে পারে ভেবে পেলাম না! তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে গ্যালারীতে গেলাম।

আমাদের যেখানে সিট সেখানে তিল ধারণের জায়গা পর্যন্ত নাই। কিন্তু বাম দিকে দেখি তিনটা সিট খালি। আমি বুঝে পেলাম না যে কেউ ওখানে বসে নি কেন? নাচতে নাচতে ওখানে গিয়ে যা দেখলাম সেটা খেলা প্রায় না দেখার মতোই। কি একটা পিলারের জন্য ওই জায়গা থেকে পিচ পর্যন্ত দেখা যায় না। আজীব !! আমি আবার রিদু আর সন্দিপুর কাছে ফিরে গেলাম।

রিকিপন্টিং উধাও। রিমন নামের একটা ছেলে আমাকে “ আন্টি , আপনি এখানে বসেন। “ বলে সিঁড়িতে একটু জায়গা করে দিল। আমি”আন্টি” শুনে অনেক অবাক হলাম এবং দুঃখ পেলাম। পরে অবশ্য জেনেছি যে রিমন রিদুর ভাইস্তা হয়।

চাপাচাপির মধ্যে বসে খেলা দেখা শুরু করলাম। এমন জায়গায় বসেছিলাম যে সব প্লেয়ারদের প্রায় পুতুলের মতো লাগছিল। আশরাফুলকে খুঁজে পাই না, তামিমকে খুঁজে পাই না, সাকিবকে খুঁজে পাই না এমন অবস্থা। শুধু উইকেটের পিছনে মুশফিকুর রহিমকে চিনতে পারছিলাম। উইকেটের পিছনে তো তাই!!আর বাউন্ডারির পাশে অলক কাপালি আর সফিউলকে দেখতে দেখতে টায়ার্ড হয়ে গেলাম।

রিকি পন্টিং জায়গা না পেয়ে অন্য জায়গায় বসেছিল। ওখানে আবার তিনটা- চারটা সিট খালি ছিল। পরে আমরা ওখানে গিয়ে বসেছিলাম। ওই জায়গা থেকে সবাইকে ভালমতোই চেনা যাচ্ছিল। অন্তত পুতুল পুতুল লাগছিল না।

ওখানে যাওয়ার পর পরই ওয়েস্ট –ইন্ডিজের চারটা উইকেট পড়ে। ঠিক সেই সময় আমি মাঠে খেলা দেখার আনন্দ আর উত্তেজনাটা বুঝতে পেরেছিলাম। অন্যরকম একটা ফিলিংস হয়। একটা উইকেট পড়ে , আর সবার সেইরকম চিৎকার, সেই রকম উন্মাদনা!!! কেমন জানি একটা শিহরণ লাগছিল। বাসায় খেলা দেখার সময় যে ফিলিংস হয় মাঠে মনে হয় সেটা দশগুন বেড়ে যায়।

তখন আমার মনে হল যে আমার মাঠে আসা সার্থক। আমি পুরো খেলা দেখি নি। বাসায় ফিরতে অনেক রাত হয়ে যাবে এই ভেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই বাসার উদ্দেশে রওয়ানা দেই। পুরো খেলা না দেখার দুঃখটা এখনও আছে। পরেরবার অবশ্যই আমি পুরো খেলা দেখে ছাড়বো।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।