আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিদেশে পড়ালেখা প্রসঙ্গে কিছু কথা

দৈনিক পত্রিকার অসখ্য এজেন্সিও কনসালটিং ফার্মের নামে বিজ্ঞাপন দেখা যায় SPOT ADMISSION IN U.S.A, U.K, CANADA, IRELAND, POLAND, SINGAPORE, MALAYSIA, AUSTRALIA ইত্যাদি। এসব বিজ্ঞাপন দেখে যতটা সহজ মনে হয় বাস্তবে কিন্তু তা নয়। সেই অভিজ্ঞতার কথা জানাতেই আমার এ লেখা। ছোট ভাইটা যাবে অস্ট্রেলিয়াতে পড়তে। গুলশানের এক কন্সালটেন্সি ফার্মের মাধ্যমে দুই পর্বে ৬+৬=১২ হাজার টাকা জমা দেয়া হলো ভাইয়ের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ।

প্রায় একমাস পর সংবাদ আসে UNIVERSITY OF SOUTH AUSTRALIA -†Z M.S.C. IN Telecommunication Engenuring পড়ার সুযোগ পাওয়ার। এবার অ্যাডমিশন ফি ও ভিসা পাওয়ার পালা। সেই কন্সালটেন্সির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কন্সলারের কাছে গিয়ে আমি আমাদের যৌথ মালিকানার বাড়ির দলিলসমূহ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, এমনকি বছরখানেক আগে পত্রিক বাড়ি বিক্রি করে পাওয়া টাকাটা একটা ব্যাংকে FDR করে রাখলাম তার স্টেটমেন্টসহ সবকিছু দেখালাম। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, সেই কন্সালটেন্সির কর্মকর্তা আমার কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে আমাকে জানালেন- ‘বড় ভাই, এতে হবে না। এতে আপনার ভাই ভিসা পাবে না।

’ প্রশ্ন করলাম কেন? উত্তর। ‘ব্যাংকে FDR অঙ্কের হিসাবে ডিস্কন্টিনিউটি হয়েছে। কাগজে-কলমে ৬ মাসের হলেও বাস্তবে তা কাউন্ট হবে না। কারণ দু’মাস আগে আপনি দশ লক্ষ টাকার একটা ব্যাংক গ্যারান্টি আপনার ভাগ্নেকে দিয়েছেন। ব্যাংক গ্যারান্টি দেয়া আর টাকা দেয়া দুটোই সমান।

’ আমি অবাক! জানতে চাই তাহলে এখন কী করতে হবে? উপায় একটাই। আর তা হলো স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে ৩৪ লক্ষ টাকা জমা রাখার পর সেই টাকাই আবার তাদের কাছ থেকে ৩-৫ বছরের লোন নিতে হবে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক-এ গিয়ে জানতে পারলাম, ঐ পরিমাণ টাকা রাখার আগে লোনের জন্য একটা দরখাস্ত করতে হবে। এটা কেন করবো? আমি তো লোন নিচ্ছি না বা ব্যাংক আমাকে লোনও দেবে না। আমি নিজের কস্টার্জিত ৩৪ লক্ষ টাকা ব্যাংকে জমা দেবে।

ব্যাংক তো আমাকে একটি পয়সাও লোন দিচ্ছে না, তাহলে এ নিয়ম কেন? এটাই নিয়ম আপনি ব্যাংকে ৩৪ লক্ষ টাকা জমা রেখে লোন নিয়েছেন দেখিয়ে আমরা একটা সার্টিফিকেট আপনাকে দেবো। সেটা আপনি কাঙিক্ষত কন্সালটিং ফার্মে জমা দিলে তারা অস্ট্রেলিয়া অ্যাম্বেসিতে তা জমা দেবে এবং আপনার অন্য কোনো কাগজপত্র বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট অ্যাম্বেসি চেক করবে না। সহজেই ভিসা পেয়ে যাবে আপনার ভাই। তবে ৩৪ লক্ষ টাকা জমা দেয়ার পর এবং ছেলে ভিসা পাওয়ার পরপরই আপনি সমস্ত টাকা তুলতে পারবেন না। যেটুকু তার পড়ালেখার জন্য বর্তমানে দরকার ৫-১০ লক্ষ টাকা তা তুলতে পারবেন আর বাকি টাকা তিন মাসপর।

তবে সুদ ৯-১১% হিসাবে ৩-৫ বছরে যা হয় তা আমাদেরকে অর্থাৎ ব্যাংককে দিয়ে বাকিটা ফেরত পাবেন। ৯-১১% সুদের লক্ষাধিক টাকা কাকে দেবো এবং কেনইবা দেবো? আমি তো ব্যাংক থেকে কোনো লোন নেইনি। তারপরও উপায় না দেখে তাই করলাম। কিন্তু কথা হচ্ছে একসঙ্গে ৩৪ লক্ষ টাকা ৬ মাসের জন্য ব্যাংকে FDR করে রাখা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে ওপেন সিক্রেট হচ্ছে আমরা সাধারণত কোনো ধনী আত্মীয়কে স্পন্সার হিসাবে দাঁড় করাই।

তা বিদেশি অ্যামবেসি মেনে নিয়ে স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া সহজ করে দেয়। কিন্তু ব্যাংক থেকে অভিভাবক স্বল্প হারের সুদে কাঙিক্ষত টাকা লোন না পেলে এদেশ থেকে শুধু ধনীদের ছেলেমেয়েরাই বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে। এ ব্যাপারে ব্যাংলাদেশ সরকার ও বিদেশি অ্যামবেসিগুলো তাদের সহযোগিতার হাত বাড়াবেন। তবে আমাদের দেশে এজেন্সি বা কন্সালটিং ফার্মের মালিক ও কর্মকর্তারা যেন অ্যামবেসির সহজ করা নিয়মের সুযোগ নিয়ে স্টুডেন্ট ভিসাতে অন্য কোনো অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়ে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ না করে-এটাই আমাদের প্রত্যাশা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।