কি বলব সুন্দরী তরুণীদের মেলা। সবার পরনে স্বল্প বসনা। কেউ এসেছেন জিন্স-টি শার্ট পরে, কেউবা শর্টস। মুখে কড়া মেকআপ। হাতে বিয়ারের বোতল।
রুমভরা দর্শক। ছোট রুমগুলো সিগারেট, গাঁজা আর সিসার ধোঁয়ায় অন্ধকার। ঘরময় রঙবেরঙের আলো, লেজার রশ্মি আর কান ফাটানো মিউজিক। চলছে গান, আই অ্যাম এ ডিসকো ড্যান্সার আলো-আঁধারিতে বেসামাল নারী-পুরুষের জড়াজড়ি। এ চিত্র বহুল আলোচিত ফুওয়াং বোলিং ক্লাবের।
বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ক্লাবে অবস্থান করে এ চিত্র দেখা গেছে। রাজধানীর গুলশান-তেজগাঁও লিংক রোডে অবস্থিত আলোচিত এ ক্লাব। বৃহস্পতিবার থাকায় সাপ্তাহিক ছুটির আগের দিন ফুওয়াংয়ে ছিল উপচেপড়া ভিড়। ক্লাব কর্তৃপক্ষও প্রতি বৃহস্পতিবার রাজধানীর নামকরা হাই সোসাইটি কলগার্ল, ক্যাবারে ড্যান্সার আর ডিজেদের জড়ো করে ক্লাবে। তারা নাচ, গান আর হাস্যরস দিয়ে ফুওয়াং ক্লাবকে পরিণত করে মধুকুঞ্জে।
আগন্তুকদের বেশির ভাগের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। ক্লাবের দোতলায় ৫টি রুম। এগুলোকে ডিসকো রুম হিসেবে ডাকা হয়। ডিসকোগুলোতে নানা রঙিন আলো। দুদিকে সোফা বসানো।
মাঝখানে উচ্চ শব্দের হিন্দি মিউজিকের তালে তালে পালা করে নাচছেন স্বল্প বসনা তরুণীরা। প্রতিটি নাচের ভঙ্গি অশ্লীল। রুমগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সোফার সামনে সারি করে রাখা মদের বোতল, গ্লাস আর বরফের টুকরো। মদপান করছেন দর্শকরা।
নাচে মুগ্ধ হয়ে তারা ১০০/৫০০ ও হাজার টাকার নোটের বাণ্ডিল রাবার খুলে ছুড়ে দিচ্ছেন নর্তকীর দিকে। নর্তকীর সহকারীরা টাকা কুড়িয়ে নিচ্ছেন মেঝে থেকে। এভাবে প্রতিটি ড্যান্সের সঙ্গে এক একজন নর্তকীর দিকে ছুড়ে মারা হচ্ছে কয়েক লাখ টাকা। এর মধ্যেই কয়েকজন অতিরিক্ত মদ খেয়ে মাতাল হয়ে পড়লেন। তারা সুন্দরী একজন তরুণীকে একান্ত করে পেতে চান।
এ নিয়ে বেধে যায় হট্টগোল।
ছুটে এলেন ক্লাবের বেতনধারী বাউন্সাররা। কিন্তু হট্টগোলে সক্রিয় বেশি নানা জায়গা থেকে আসা মাস্তান আর দাগি সন্ত্রাসীরা। এদের মধ্যে গুলশানের স্থানীয় যারা তারা আরও বেশি উত্তেজিত। একেকজন তেড়ে যাচ্ছেন আরেকজনের দিকে।
এদের মধ্যেও আছে বড় ভাই নেতা। তাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। আবার শুরু হয় নাচ। রাত গভীর হতেই তরুণীর সংখ্যা কমতে থাকে। রহস্য কি? একজন ক্লাব কর্মচারী জানালেন, অনেক মেয়ে এখন প্রাইভেট ডিউটিতে চলে গেছে।
জানা গেছে, ক্লাবেই বিশেষ কিছু শয়ন কক্ষ আছে। যেখানে পছন্দের তরুণীকে নিয়ে একান্তে কিছু সময় কাটানো যাবে। এ জন্য ক্লাব কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে ঘণ্টায় ১৫ হাজার টাকা। আর তরুণীকে দিতে হবে চুক্তি অনুযায়ী টাকা। দোতলার ডিসকোর পাশেই আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ হট ডিজে পার্টির।
নিচ তলায়ও চলছে হট ডিজে। সেখানে ঢুকতে হলে টিকিট কাটতে হবে। জনপ্রতি টিকিট ১ হাজার টাকা। টিকিট কেটে ডিজে পার্টিতে ঢোকার পর দেখা গেছে ভিন্ন এক চিত্র। এ ডিজে পার্টি আর ১০টা সাধারণ ডিজে পার্টি নয়।
এখানে উঁচু মঞ্চের ওপর কয়েকজন পুরুষ ডিজে কান ফাটানো শব্দে মিউজিক বাজাচ্ছে। আর মঞ্চের সামনে যুবক-যুবতীরা একে অপরের বাহুবন্ধনে। কেউ কেউ তরুণীদের কোলে নাচছেন। এসব তরুণীকে নিয়ে নাচতে হলে নির্দিষ্ট অংকের টাকা দিতে হবে। আর চাহিদা মত টাকা দিলে বিশেষ বিশেষ অঙ্গও স্পর্শ করা যাবে।
প্রতিটি পার্টিতেই মদ আর বিয়ারের ছড়াছড়ি। এক ক্যান বিয়ারের দাম এখানে ৫শ’ টাকা। মদ প্রতি পেগ ব্র্যান্ড ভেদে ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতারাও এখানকার নিয়মিত খদ্দের। ক্লাবের এক কর্মকর্তা জানান, প্রশাসনকে মোটা অংকের মাসোহারা দিয়েই চালানো হচ্ছে ব্যবসা।
এর বাইরে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাদের দিতে হয় মোটা অংকের টাকা। শিল্পাঞ্চল থানার ওসি ওমর ফারুক বলেন, যদি ফুওয়াংয়ে অবৈধ কিছু চলে তবে সেখানে অবশ্যই অভিযান চালানো হবে। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চলের গুলশান সার্কেলের ইন্সপেক্টর আবদুল আজিজ বলেন, আমরা মাঝে মাঝেই সেখানে অভিযান চালাই। অবৈধ মদ বিয়ারও উদ্ধার করা হয়। ক্লাবটির মালিক নূর ইসলাম বলেন, ঢাকায় চিত্তবিনোদনের জায়গা খুবই কম।
মানুষ একটু বিনোদনের জন্য আমাদের এখানে আসে। তিনি বলেন, দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি থেকে সমাজের সম্মানিত অনেক ব্যক্তি এ ক্লাবের সদস্য। এখানে অসামাজিক কার্যকলাপ চলার অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি বলেন, আমাদের লাইসেন্স রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী লাইসেন্সের শর্ত মেনেই মদ, বিয়ার বিক্রি করা হয়
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।