আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পথই যেখানে পরম আশ্চর্যের

A passionate writer পথই যেখানে পরম আশ্চর্যের - হোসাইন আব্দুল হাই বিশ্বের নানা প্রান্তে নানা ধরনের মানুষ এবং নানা ধরনের সংস্কৃতি৷ চলন বলন সবকিছুতেই এক জাতি কিংবা দেশ থেকে আরেক জাতি ও দেশের বৈশিষ্ট্য আলাদা৷ জার্মানির এমন অনেক ভিন্ন ধারার মধ্যে বেশি করেই যেন নাড়া দেয় পথের নানা দৃশ্য৷ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে নানা দূর-দূরান্তের গ্রামে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ হয়েছে পেশাগত কারণেই৷ যানজট থেকে শুরু করে ভাঙাচোরা পথে চলা৷ পথের মাঝে সময়ের কিংবা গাড়ির থমকে দাঁড়ানো৷ দূর পাল্লার কিংবা স্বল্প দূরত্বের পরিবহনেও গাড়ি ভাড়া নিয়ে চিল্লাপাল্লা থেকে হাতাহাতি কিংবা খুনাখুনি৷ তুচ্ছ ঘটনা থেকেই গাড়ি ভাঙচুর৷ পরিবহন মালিক-শ্রমিক পক্ষের সাথে যাত্রীদের বচসা থেকে হরতাল-ধর্মঘট৷ পরিবহন আইন লঙ্ঘন করে বেপরোয়া গাড়ি দৌড়৷ ছোট থেকে বড় নানা দুর্ঘটনা৷ এমন বহু ঘটনা দেখতে, শুনতে কিংবা তার শিকার হতে হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে৷ সেকারণেই হয়তো জার্মানির পথেঘাটে এমন একটি ঘটনাও দেখতে না পেয়ে বেশ অবাক হয়ে থমকে দাঁড়াতে হয় বারবার৷ প্রতিনিয়তই আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে থাকতে হয় এদিক-ওদিক পথের বাঁকে৷ আর বারবার শুধু মনে হয় আমার প্রিয় জন্মভূমির পথ-ঘাটের সব স্মৃতি৷ সাইকেল, মটরসাইকেল, রিক্সা, গাড়ি, বাস, ট্রেন, ট্রাকসহ প্রতিটি যানবাহনেই বেল, বাঁশি অর্থাৎ ভেঁপু থাকতে হবে এটিই স্বাভাবিক৷ ছোট হোক বড় হোক প্রতিটি বাহনের প্রচণ্ড জোরে ভেঁপু বাজিয়ে পথ চেয়ে নেওয়ার অধিকার যেন শাশ্বত৷ আর পরিবহন যানটি যতো বড় হবে ততোই উচ্চ হবে ভেঁপুর জোর৷ এসব দেখে এবং জেনেই বড় হয়েছি সেই ছোট্ট বয়স থেকে৷ তাছাড়া কেউ পথ ছেড়ে না দিলে গালমন্দ থেকে শুরু করে মারামারি পর্যন্ত দেখতে হয়েছে৷ অথচ জার্মানির পথে চলতে গিয়ে দেখি কোথাও কোন গাড়ির ভেঁপুর আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না৷ তাহলে কি গাড়ি-ঘোড়া নেই? নাকি কোন গাড়িতেই ভেঁপু নেই? দু'টোর কোনটিই আসলে সঠিক নয়৷ বাস, কার, ট্রেন, ট্রাম, বিশালাকারের লরি থেকে সাইকেল, মোটরসাইকেল সবকিছুই রয়েছে পথে৷ সব বাহনেই ভেঁপু রয়েছে৷ অথচ কখনও কেউ ভেঁপু বাজাচ্ছে না৷ কেউ কাউকে ধাক্কা দিচ্ছে না৷ অথচ কেউ কারো পথও আটকে রাখছে না৷ সবাই ঠিকঠাক মতো এগিয়ে যাচ্ছে৷ আমাদের মতো ভিন্ন সংস্কৃতির কেউ যদি গাড়ির বাঁশি শোনার জন্য অনেকদিন অপেক্ষা করতে পারে, তবে অবশ্য কালেভদ্রে গাড়ির শব্দ শোনা যেতেও পারে৷ কিন্তু তা মোটেও স্বাভাবিক ঘটনা নয়৷ একটু গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, হয় কারো বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছে বরযাত্রীর দল৷ নতুবা বিয়ে করে ফিরছেন নতুন দম্পতি৷ নতুবা খুব বড় মাপের কোন জাতীয় উল্লাসের কারণে আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতেই গাড়ির বাঁশি বাজিয়ে একসাথে লম্বা লাইন ধরে যেতে থাকে অনেকগুলো গাড়ির বহর৷ তবে এর বাইরে আরো একটা কারণ থাকতে পারে গাড়ির বাঁশি বাজানোর৷ না, তা মোটেও কাউকে অপমান করার জন্য নয়৷ বরং পথে হয়তো খুব কাছের মানুষ কাউকে দেখা যাচ্ছে অথচ তিনি গাড়ি চালককে দেখেননি৷ তাই সেই চেনা মানুষটির দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য টুপ করে ছোট্ট একটা হর্ন দেওয়া হয়৷ আবার হয়তো কেউ না জেনে হোক কিংবা বেখেয়ালেই হোক এতোটুকু নিয়ম ভেঙে এগিয়ে গেছেন অথবা ভুল জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন তার জন্যও ছোট্ট করে একবার ভেঁপুর বোতামে চাপ দেওয়া যেতে পারে৷ কিন্তু এছাড়া তেড়ে বাঁশি বাজানোর মতো অভদ্রতা কিংবা অসৌজন্যতা কখনও চোখে পড়বে না কিংবা কানেও শোনা যাবে না৷

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।