হৃদয়ে থাকুক বসন্ত আজ অনেকদিন পর সুমনের সাথে দেখা হয়ে গেলো। অফিস শেষে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম। কাছেই একটি ছেলে সিগারেট হাতে দাঁড়িয়ে ছিলো। একটু খেয়াল করতেই চিনে ফেললাম। সুমন! আমাকে দেখে সিগারেট লুকানোর কথা ছিলো।
কিন্তু লুকায়নি। তার মানে খেয়াল করেনি। সরে গেলাম। পরের বাসে যাওয়া যাবে। বাসস্টপ ছাড়িয়ে সায়েন্সল্যাব ওভারব্রিজের উপর দাঁড়ালাম।
এখান থেকে সুমনকে দেখা যায়না। সুমনও আমাকে দেখবেনা। আমি যেনো পালিয়ে গেলাম! কেন?
সুমনকে আমি পড়াতাম। মিথ্যে নয়। কিন্তু, এটা সুমনের পরিচয় নয়।
সুমনের আরো অনেক বড় একটা পরিচয় ছিলো। সে অপর্নার ভাই। অপর্নার সাথে আমার প্রেম ছিলো। কিংবা অপর্নাকে আমি ভালো বাসতাম। সেও আরো অনেকদিন আগের কথা।
বছর পাঁচেক আগের ঘটনা।
অপর্না আর আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। কিভাবে যেনো আমাদের বন্ধুত্ব প্রেম হয়ে গিয়েছিলো। আমরা আলাদা হয়ে গেলাম। সবার কাছ থেকে।
ছুটিয়ে প্রেম করি। মাঝে বাবা মারা যান। বাবার পেনশনের টাকাটাও ঝুলে ছিলো। নিদারুন আর্থিক কষ্টে দিন যাচ্ছিল। অপর্না একদিন নিজেই প্রস্তাব দিলো, আমার ছোট ভাইটাকে পড়াবি? আমি হাসলাম।
- হাসির কথা নয়। ওর জন্য টিউটর খোঁজা হচ্ছে। তোর কথা বাবাকে বলেছি।
- কি বললি? আমাকে ভালো বাসিস?
-ফাজলামি রাখ। বলেছি, আমার একজন বন্ধু আছে।
ভালো পড়ায়। বাবা দেখা করতে বলেছেন।
- গিয়ে কি বলবো? আশির্বাদ চাইবো? বলবো, আপনার পর্বতের মত খাড়া নাকের মেয়েটাকে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিন। কন্যাদায় থেকে মুক্তি নিন।
অপর্নার চোখ ছলছল করছিলো।
খাড়া নাকের অপবাদে তাকে মাঝে মাঝে রাগানোর লোভ থেকে নিজেকে বঞ্ছিত করিনি।
- তোর পড়ানো লাগবেনা। সেদিন তুই বললি, একটা টিউশনির দরকার। তাই...................
নিজেকে সামলাচ্ছিলো অপর্না। আমি হেসে, তার হাত ধরলাম।
- আচ্ছা বাবা, যাবো।
অপর্নার বাবা বেশি কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। কবে থেকে পড়াবো জানতে চাইলেন শুধু। পরের শনিবার থেকে পড়াতে শুরু করলাম।
একদিন পড়াতে গিয়ে শুনি, সুমন আজ পড়বেনা।
বাসায় অতিথি আসবে। আমি চলে এলাম।
পরের দিন, ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখি অপর্না আগেই এসেছে। আমাকে দেখে বললো, তোর সাথে কথা আছে। অপর্নার মুখ জুড়ে আঁধার ভর করেছে।
আমরা মাঠে গিয়ে বসলাম।
- জয়, কালকে আমাকে দেখতে এসেছিলো।
আমি চমকে উঠলাম।
- মানে?
- কালকে আমাকে দেখতে এসেছিলো। চল, আমরা পালিয়ে যাই।
অপর্নার কথাগুলো এলোমেলো মনে হয়। নিজেকে সামলে নেই। বলি,
- তোর মাকে বল, আমাদের কথা।
- বলেছি। মা বাবাকে বলেছে।
বাবা অনেক রাগারাগি করেছেন। উনি, মেনে নেবেননা। আমাকে বের হতে মানা করেছিলেন। তবু, এলাম। চল, আমরা পালিয়ে যাই।
আমি কিছু বলতে পারিনি। আমার পরিবার। আমার মা। আমার ছোটবোন। সবাই এসে আমার কন্ঠে এসে ভর করেছিলো।
আমাকে আরো অনেকদূর যেতে হবে। এখন, পাগলামির সময় নয়।
- দেখ, এই অবস্থায় পালিয়ে কোথায় যাবো? আরো কিছুদিন বিয়েটা ঠেকিয়ে রাখ। আমাকে আরো কিছুটা সময় দে।
- বাবা যখন জেনে গেছেন, দেরী করবেন না।
আমাকে আর বের হতে দেবেন কিনা জানিনা। প্লিজ, আমাকে ফিরিয়ে দিসনা।
আমি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। আমার কোন উপায় ছিলো না। সুমনের কাছে বড় জানতে ইচ্ছে হয়, অপর্না কি ভালো আছে? এতোক্ষন সুমন থাকবেনা জানি।
তবু জানতে ইচ্ছে হয়।
সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে। আমি ব্রিজ থেকে নেমে, বাসের জন্য লাইনে দাঁড়ালাম। বাসায় মৌমিতা আমার অপেক্ষায় আছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।