আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জবস কে একটু লিখলাম :-( :-( :-(

আমার বিদ্রোহী হতে ইচ্ছে করে। দেশ নিয়ে খুব চিন্তায় আছি দত্তক সন্তান হিসেবে সিলিকন ভ্যালি এসে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পুরোটা সম্পন্ন না করে শেষ পর্যন্ত পুরো বিশ্ব ঠিকই জয় করেছিলেন স্টিভ জবস। সম্পদ ও পেশাগত সাফল্যে উজ্জ্বল স্টিভ জবস সারাজীবনই সিলিকন ভ্যালির সবচেয়ে বেপরোয়া অভিযাত্রীর খেতাবটা পেয়েছিলেন। উচ্চাকাক্সক্ষী স্টিভ জবসের সঙ্গে কাজ করাটা বেশ কঠিন বলে অনেকে মন্তব্য করলেও, তার উচ্চাকাক্সক্ষাই অ্যাপলকে এ গ্রহের সবচেয়ে বেশি পরিচিত ব্র্যান্ডগুলোর একটিতে পরিণত করেছে বলে বিবিসি জানায়। ১৯৫৫ সালের ২৪ ফেব্র"য়ারি যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ফ্রান্সিসকোতে অবিবাহিত দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সিরীয় বংশোদ্ভূত আব্দুল ফাত্তাহ জান্দালি ও মা জোয়ান সিবিলের সন্তান হিসেবে স্টিভ জন্মগ্রহণ করেন।

জন্মের পরেই স্টিভকে দত্তক দেওয়া হয়। জান্দালি ও জোয়ান পরবর্তীতে বিয়ে করেন। ওই দম্পতির বিবাহিত জীবনে মোনা নামে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তবে ভাই স্টিভের কথা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে জানতে পারেন নি মোনা। পেশায় শ্রমিক দত্তক বাবা-মা পল ও ক্লারা জবসের সঙ্গেই যুক্তরাষ্ট্রের ইলেক্ট্রনিক শিল্পের প্রাণকেন্দ্র ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে আসেন স্টিভ।

১৯৭১ সালে হাই স্কুলের শেষবর্ষে পড়ার সময় পালো আলতোয় অবস্থিত হিউলেট-প্যাকার্ডের একটি কারখানায় গ্রীষ্মের ছুটিতে কাজ নেন স্টিভ। এখানেই অ্যাপলের আরেক প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়াকের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। এরপর ১৯৭৪ সালে øাতক পড়ার প্রথম পর্যায়েই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে ভিডিও গেমস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান 'অ্যাটারি'তে কাজ নেন জবস। উদ্দেশ্য ছিলো ভারতে আসার জন্য অর্থ জোগাড় করা। উপমহাদেশ থেকে দেশে ফেরেন মুড়ানো মাথা, ভারতীয় পোশাক আর মাদকদ্রব্য এলএসডি'র অভিজ্ঞতা নিয়ে।

এরপর সারাজীবন বুদ্ধধর্মের অনুসারী এবং নিরামিশাষী ছিলেন তিনি। ভারত থেকে ফিরে আবারো অ্যাটারিতে যোগ দেন জবস। এছাড়া পুরনো বন্ধু ওজনিয়াকের সঙ্গে স্থানীয় একটি কম্পিউটার ক্লাবেও যোগ দেন। এসময় নিজস্ব একটি কম্পিউটারের নকশা তৈরি করছিলেন ওজনিয়াক। ১৯৭৬ সালে ওজনিয়াকের নকশা করা কম্পিউটারগুলোর ৫০টি তৈরির আগেই স্থানীয় একটি কম্পিউটার বিক্রয়কেন্দ্রে বিক্রি করার অর্ডার পান।

ওজনিয়াকের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ বিনামূল্যে অগ্রিম সরবরাহ করার জন্য স্থানীয় এক ইলেক্ট্রনিকস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকেও রাজি করিয়ে ফেলেন তিনি। কোনো অর্থ ধার নেওয়া ছাড়াই এ কম্পিউটারগুলো 'অ্যাপল ১' নামে বাজারে আনেন জবস আর ওজনিয়াক। অ্যাপেল থেকে বিতাড়িত জবস নিজের প্রিয় ফলের নামে প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করার পিছনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান অ্যাটারির নামের আগে ফোনবুকে নিজেদের নাম নিয়ে আসার একটা কারণ ছিলো বলে মনে করা হয়। প্রথম অ্যাপল কম্পিউটারের মাধ্যমে হওয়া মুনাফার পুরোটাই আরো উন্নতমানের 'অ্যাপল ২' তৈরিতে কাজে লাগানো হয়। ১৯৭৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি কম্পিউটার মেলায় এ কম্পিউটার প্রথম বাজারে নিয়ে আসা হয়।

নতুন কম্পিউটারটি বেশ দামী ছিলো। তবে এজন্য আড়াই লাখ ডলার বিনিয়োগ করার জন্য স্থানীয় এক বিনিয়োগকারী মাইক মারকুলাকে রাজি করিয়ে ফেলেন জবস। জবস, ওজনিয়াক আর মারকুলা মিলে প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাপল কম্পিউটার। অ্যাপল ২ ছিলো একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ কম্পিউটার যা কিনেই ব্যবহার করা যেতো। অন্যান্য কম্পিউটারের মতো এগুলো কেনার পরে আবার জোড়া দিতে হতো না।

নতুন ও সহজ এ কম্পিউটারগুলো বাজার আসার পরপরই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং ১৯৯৩ সালে উৎপাদন বন্ধের আগে পর্যন্ত এ জনপ্রিয়তা ধরে রাখে। এ কম্পিউটারের মাধ্যমেই 'পার্সোনাল কম্পিউটারে'র ধারণা ছড়িয়ে পড়ে। তবে জবসের অভিজ্ঞতার অভাবের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে প্রতিষ্ঠান চালিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে পেশাদার নির্বাহী নিয়োগ দেওয়া হয়। অ্যাপলের পরিচালনা পর্ষদের একজন বলেছিলেন, জবসের মাথায় কোনো চিন্তা উদয় হলে প্রতিষ্ঠানের জন্য তা ভালো বা খারাপ হবে কি না, তা চিন্তা না করেই কাজটি করার পিছনে ছোটেন তিনি। ১৯৮৪ সালে বাজারে ম্যাকিনটোশ কম্পিউটার আনার পর আর্থিক সঙ্কটে পড়তে হয় প্রতিষ্ঠানটিকে।

এসময় জবসের বিরুদ্ধে কর্মীদের অসন্তোষের কারণে জবসকে অ্যাপল থেকে বিতাড়িত করা হয়। টয় স্টোরি বসে থাকার পাত্র ছিলেন না স্টিভ জবস। অ্যাপল থেকে বেরিয়ে এসে ১৯৮৫ সালে নেক্সট কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন। এর এক বছর পর স্টার ওয়ারস চলচ্চিত্রের পরিচালক জর্জ লুকাসের প্রতিষ্ঠান গ্রাফিক্স গ্র"প কিনে নেন তিনি। এর নতুন নামকরণ করেন 'পিক্সার'।

অ্যানিমেশন তৈরিতে ব্যবহৃত অত্যন্ত দামী কম্পিউটার উৎপাদন করতো এ প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্বখ্যাত অ্যানিমেটেড কার্টুন নির্মাতা 'ডিজনি'সহ বহু চলচ্চিত্র নির্মাতা এসব যন্ত্র ব্যবহার করতো। পরবর্তীতে কম্পিউটার উৎপাদন থেকে সরে এসে কম্পিউটারে অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র তৈরিতে মনোযোগ দেন জবস। ১৯৯৫ সালে 'টয় স্টোরি' চলচ্চিত্রটি মুক্তি দিলে বিশ্বব্যাপী ৩৫ কোটি ডলার ব্যবসা করে সেটি। এরপরে পিক্সার তৈরি করে এ বাগ'স লাইফ, ফাইন্ডিং নিমো এবং মনস্টারস ইনকরপোরেটেড।

এর এক বছর পরেই নেক্সট কম্পিউটারকে ৪০ কোটি ডলারের বেশি দামে কিনে নেয় অ্যাপল। নিজের পুরনো জায়গায় ফিরে আসেন জবস, এবং প্রথমেই অ্যাপলের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেন। অ্যাপলের স্বল্প লাভজনক অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য এরকিছু কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বন্ধ করে দিয়ে একে ক্রমবর্ধমান ইলেকট্রনিক পণ্যের বাজারের দিকে নিয়ে যান। ২০০১ সালে বাজারে আসা সাদা রংয়ের আভিজাত্যপূর্ণ চেহারার আইপড তাৎক্ষণিকভাবে সঙ্গীত পিপাসুদের স্টাইল আইকনে পরিণত হয়। জনপ্রিয়তায় বাড়তি ভূমিকা রাখে গাড়িতে সহজে ব্যবহারযোগ্য যন্ত্রাংশগুলো।

আইপডের ক্রেতাদের সহজে গান পাওয়ার জন্য আই টিউনস বাজারে আনেন জবস। আইফোন ২০০৩ সালে জবসের অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার ধরা পড়ে। তবে নিজের অসুস্থতার কথা জবসের ঘনিষ্ট কয়েকজন ছাড়া কাউকে জানতে দেন নি তিনি। অস্ত্রোপচার করতে অসম্মতি জানিয়ে বিকল্প বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা নিতে থাকেন জবস যার মধ্যে একটি ছিলো বিশেষ ধরনের খাদ্যাভ্যাস। অবশেষে ২০০৪ সালে অস্ত্রোপচার করাতে রাজি হন জবস।

২০০৫ সালে ৭০০ কোটি ডলার মূল্যে পিক্সার কিনে নেয় ডিজনি। এর ফলে ডিজনির সবচেয়ে বড় অংশীদার হয়ে দাঁড়ান জবস। এর দু'বছর পরে আইপডের চেয়েও বেশি জনপ্রিয় আইফোন বাজারে আনেন। পণ্যটি বাজারে উন্মুক্ত হওয়ার প্রায় এক দিন আগে থেকে স্থানীয় বিক্রয়কেন্দ্রগুলোর সামনে ক্রেতাদের বিশাল লাইন তৈরি হয়। ২০০৮ সালে বাজারে আসে অত্যাধিক হালকা ও পাতলা ম্যাকবুক এয়ার।

কালো টার্টেল নেক টিশার্ট এবং জিন্স পরিহিত চিরপরিচিত চেহারার জবস ২০০৯ সালে ক্ষীণকায় হয়ে আসতে থাকলে তার অসুস্থতার খবরটি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। সে বছর জবস ঘোষণা দেন, 'হরমোনজনিত অসুস্থতা' থেকে মুক্ত হতে ছয় মাসের ছুটিতে যাচ্ছেন তিনি। সে বছর এপ্রিলে জবসের যকৃৎ প্রতিস্থাপন করা হয়। তার চিকিৎসকরা জানান, অস্ত্রোপচারের পর জবসের প্রতিস্থাপিত যকৃত চমৎকার কাজ করছে। তবে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে অ্যাপল ঘোষণা দেয়, শারীরিক অসুস্থতার কারণে অবসরে যাচ্ছেন জবস।

প্রতিদ্বন্দ্বী সমসাময়িক আরেক তথ্যপ্রযুক্তি জায়ান্ট বিল গেটসের মতো নিজের সম্পদ দাতব্য কাজে ব্যবহারের আগ্রহ কখনো খুব একটা দেখান নি জবস। স্বঘোষিত এ বৌদ্ধধর্মের অনুসারী পরিবেশবাদীদের অনেক বিরোধিতা স্বত্ত্বেও সহজে পুনঃব্যবহারযোগ্য পণ্য উৎপাদনের ব্যাপারেও ছিলেন বরাবরই অনুৎসাহী। নিজের সক্ষমতায় পরিপূর্ণ আস্থা ছিলো স্টিভ জবসের, এবং তার মতের বিরুদ্ধে যাওয়াদের বিরুদ্ধে ছিলো অসহিষ্ণুতা। তবে বাজার বিশ্লেষণের দক্ষতা, ভোক্তাদের রুচি বোঝা এবং তাদের পছন্দসই নকশার পণ্য উদ্ভাবনের ক্ষমতা জবসকে করে তুলেছিলো অনন্য। জবস বলতেন, "ক্রেতা কি চায় তা ক্রেতার কাছে জানতে চেয়ে তা বানানো শেষ করার আগেই আপনার ক্রেতা নতুন কিছু চাইতে শুরু করবে।

" --- সংগৃহীত ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।