আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

( ধারাবাহিক ঊপ্যনাস )

মিতুর আজ ক্লাস নেই। সে বসে আছে তার পড়ার ঘরে। ক্যাসেট প্লেয়ারে ন্যান্সির গান চলছে। কিরে ভাত খাচ্ছিসনা কেন? তিনটা বেজে গেল। চেচিয়ে বলে উঠেন তার মা সিমা বেগম।

পরে খাব। এত কষ্ট করে নিজে রান্না করলি আর তুই নিজেই খাচ্ছিসনা! প্রচন্ড মাথা ব্যাথা লাগছে। পরে খাব। কথা শেষ নাহতেই হুট করে বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো। সাথে জোরে বাতাসও বইতে শুরু করলো।

জানালার কপাট আছড়ে পড়ছে। মিতুর বিষণœ মন আরো বেশি বিষণœ হল বৃষ্টিতে । আর কোন আশাই নেই। সে আসবেনা। কেন যে তারে এত ভালোলাগে? কেন যে তারে ভালবাসতে গেলাম! সে যে কথায় কথায় আঘাত করে।

কষ্ট দিয়ে নির্বিকার থাকে, যেন কিছুই হয়নি। তারমত নিঃষ্ঠুর আর কি কেউ আছে! আপন মনে এসব কথা ভাবতে ছিল মিতু। মিতুর মনটা সকাল থেকে খুব খারাপ হয়ে আছে । “ভালবাসা দিয়ে যারা ভালবাসা পেলনা তাদের চেয়ে অভাগা আর কেউ নেই .. ..! ” কবির কথাটাকে তার খুব সত্যি মনে হচ্ছে। মইন মিতুর খালাতো ভাই।

একই পাড়ায় তাদের বাসা হবার সুবাদে মইন প্রায়ই তাদের বাসায় আসে। সে অবশ্য খুবই হেল্পফুল স্বভাবের ছেলে। বাসার অনেক কাজও করে দেয়। ছাত্রবস্থায় ভাল ছাত্র ছিল। দুই বছর আগে রাষ্ট্রবিজ্ঞান হতে মার্স্টাস শেষ করেছে।

মইনের বন্ধুরা বেশির ভাগই চাকুরি খুজে নিয়েছে। কিন্তু মইন চাকুরি খুজছে না। ছোট খাটো চাকুরি তার পছন্দ না। দিনভর ছন্নছাড়ার মত ঘুরে বেড়ানোই যেন তার কাজ। চাকুরি খোজার ব্যাপারে তার রয়েছে এলার্জি।

এজন্য প্রায়ই মিতু মইনকে গাল-মন্দ করে। কিন্তু মইন তা হেসে উড়িয়ে দেয়। মইনের মা স্থানীয় হাই স্কুলের হেড মাষ্টার। বাবা মারা গিয়েছে সে যখন হাইস্কুলে পড়ে তখন। শক্ত হাতে মইনের মা সাজেদা বেগম সংসারের হাল ধরে ছিলেন বলেই সব ঠিক আছে।

সাজেদা বেগমের রিটার্য়াড করার সময় চলে এসেছে। কিন্তু মইনের সেদিকে খেয়াল আছে বলে মনে হয়না। সবার উপদেশ কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সে চলছে বাউন্ডুলের মত। সে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে জানালা আটকানোর জন্য চেয়ার থেকে নামলো। জানালা বন্ধ করতে গিয়ে মিতু দেখলো মইন দৌড়ে আসছে।

মিতু পুরো কপাট না লাগিয়ে মইনকে দেখতে লাগলো। বৃষ্টিতে ভিজে ওর র্শাটটা শরীরের সাথে লেগে গিয়েছে। বুকের কালো লোম দেখা যাচ্ছে। ক্লিনসেভ করা শ্যামলা মুখ। দেখতে খুবেই আকষর্নীয় লাগছে।

মিতুর খুব ভালোলাগে মইনকে। তার ইচ্ছে হয় দৌড়ে গিয়ে তোয়ালেটা দিয়ে ওর শরীর মুছে দিতে। কিন্তু মিতু তা করলো না। হটাৎ করেই তার খুব অভিমান হয়। সে চুপ করে তার রুমে বসে থাকে।

কলিং বেল বাজলো দু’বার। সিমা বেগম চেচিয়ে বলে মিতু দেখতো কে এল? আমার মাথা ব্যাথা করছে তুমি দেখ। সিমা বেগম দরজা খুলে মইনকে দেখে অবাক হয়। ভ্রুকুচকে প্রশ্ন করে, কিরে তুই এই বৃষ্টির মধ্যে কোথা হতে এলি? কোন দোকান-টোকানে দাড়াতে পারতি, এভাবে ভেজার কি দরকার ছিল? মইন হাপিয়ে উঠে বলে, খালা প্রচন্ড খিদা লাগছে। মিতু কই ভাত খাব।

আগে বাথরুমে গিয়ে কাপড় বদলে আয়। এইনের কথা কানে আসলেও মিতুর কেন যেন খুব কষ্ট লাগে। খুব বেশি অভিমান হয় তার। সকালে সে মইনকে ফোন দিয়ে ছিল। বলেছিল মইন ভাইয়া তুমি কিন্তু আজ দুপুরে আমাদের বাসায় খাবে।

আমি আজ প্রথম গুরুর মাংস রান্না করবো। প্লিজ তুমি আসবে। জবাবে মইন তাকে যথেষ্ট অপমান সূচক ভাষায় বলেছিল, পেতিœ তোর রান্না খেলে নির্ঘাত ডায়রিয়ায় মারা পড়ব। মিতুর তখন খুব কান্না পেয়েছিল। তার গায়ের রং শ্যামলা।

দেখতে সে খারাপ নয়। মায়াবী সুন্দর চেহারা। ফিগারটাও সুন্দর আকষনীয়। ছাত্রী হিসেবেও সে খুব ভাল। ডাক্তারী পড়ছে ঢাকার একটি নামি মেডিক্যাল কলেজে।

কলেজের অনেক ছেলেরাই তার রুপে মুগ্ধ। অথচ মইন তাকে পাত্তাই দিতে চায়না। দেখলেই পেতিœ বলে ডাকবে। কষ্টে তার মরে যেতে ইচ্ছে করে। মাঝে মাঝে যখন তার মন খুব খারাপ হয়, তখন তার আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে করে।

তার কাছে এক বোতল বিষ আছে। দুই বছর আগে সে মায়ের সাথে রাগ করে বিষের বোতল কিনে এনেছিল। ধান খেতের পোকা মারার বিষ। খেলে নির্ঘাত মৃত্যু। আজযে তার জন্মদিন নিশ্চয় মইন তা ভুলে আছে।

অথচ মইনের জন্ম দিনে সে রাত বারোটায় ফোন করে উইশ করে ছিল। অনেক কষ্টে জমানো পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে মোবাইল কিনে দিয়েছিল মিতু। বিষের বোতলটা নেড়ে-চেড়ে আবার আগের জায়গায় রেখে দিল মিতু। দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে মইন। মিতু মইনের দিকে না তাকিয়েই বলে, মেয়েদের ঘরে ঢোকার সময় অনুমতি নেয়ার ভদ্রতা টুকুও শেখোনি তুমি? মইন হাসে।

অন্য সময় হলে মিতুর সে হাসি দেখতে খুব ভালোলাগত। এখন রাগে তার গা জ্বলে যাচ্ছে। কিওে ভাত বেড়ে দিবি না? ক্ষিদায় কিন্তু আমার পেট জ্বলে যাচ্ছে। মায়ের কাছে গিয়ে চাও। আমার খুব মাথা ব্যাথা করছে।

খালাতো দেখি নামাজ পড়ছে। অপেক্ষা কর। মইন বাধ্য ছেলের মত চুপ করে বসে থাকে। বাইওে মুষলধারে বৃষ্টি ঝরছে। মেঘের গর্জনও শোনা যাচ্ছে।

মনে হচ্ছেনা সহষাই থামবে এই বৃষ্টি। আকাশের বুকে কত কান্না যে লুকিয়ে আছে কে জানে। চেয়ার থেকে মিতুর খাটে একটা পলেথিনের প্যাকেট ছুড়ে দেয় মইন মিতুর খাটে। কি এটার মধ্যে? আমারতো তোর মত অত টাকা নেই, তাই হুমায়ূন আহমেদের একটা বই আর একটা ডায়রি এনেছি তোর জন্য। শুভ জন্মদিন।

কত তম বলতো? হঠাৎ করেই যেন বিদুৎ তরঙ্গের মত একটা শিহরন বয়ে যায় মিতুর হৃদয়ে। খুব ভাললাগে তার। ইচ্ছে করে ওর হাতটা ধরতে। ওর ঠোটে ঠোট ছুয়ে দিতে। কিন্তু মিতু কিছুই করেনা।

সে চুপ করে খাট থেকে উঠে বলে, চল ভাত খাবে। ২. মইন ভাত খাচ্ছে খুবেই তৃপ্তি নিয়ে। মিতুর মইনের খাওয়া দেখতে খুবেই ভাললাগছে। খাওয়া থামিয়ে সে বলে, কিরে তুই খেয়েছিস? না আমার শরীর খারাপ লাগছে। পরে খাব।

তুমি খাও। রান্নাটা কিন্তু অসাধারণ হয়েছে। বহুদিন পর এতটা তৃপ্তি নিয়ে ভাত খাচ্ছি। তোরে অনেক ধন্যবাদ। সকালে বাসা থেকে ভাত খেয়ে বের হওনি বলেই তোমার কাছে ভাত এত ভাললাগেছে।

এত রান্নার বিশেষ কোন ভুমিকা নেই। মা বলেছে গরুর মাংসে নাকি কেমন হাম্বা হাম্বা ঘ্রান ভাসছে। খালার রান্নার চেয়ে ভাল হয়েছে বলে উনি হয়ত তোকে ঈর্ষা করছে। ঠিক আছে। তুমি খাও আমাকে আলু দিতে হবেনা।

মিতু উঠে জানালার পাশে দাড়ায়। বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ তার মনকে আরো বেশি বিষণœ করে দেয়। কেন যে এই মানুষটাকে দেখার জন্য উতালা হয়ে থাকে তার মন? জেদি মেয়ে হিসেবে মিতুর বদনাম আছে কিন্তু মইনের কাছে তার কোন কিছুরই যেন মূল্য নেই। সব ব্যাপারেই মইন নির্বিকার। অসহ্য! কিরে কি ভাবছিস? কিছুনা।

আমার ধারণা তুই আমার প্রেমে পড়েছিস। হঠাৎ করে আচমকা মইনের এমন কথা শুনে বুকের ভেতর ধাক্কা লাগে মিতুর। চমকে গিয়ে ম্লান মুখে মইনের দিকে তাকায় সে। মইন দাত বের করে হাসছে। নিজেকে সামলে নিয়ে মিতু প্রশ্ন করে, কেন এমন মনে হল তোমার? স্বাভাবিক কণ্ঠে মইন বলে, তুই ছাড়া এতটা আগ্রহ করে কেউ আমাকে ভাত খাওয়ায় না।

তারপর অকারনেই হাসে মইন। এমন উত্তর শুনতে ভাললাগেনা মিতুর। সে মুখ ঘুরিয়ে দীর্ঘঃশ্বাস লুকায়। কিছুক্ষন পর সিতু স্বাভাবিক গলায় বলে, মইন ভাই তুমি আমাকে বিয়ে কওে নিয়ে যাও আমি তোমাকে সারা জীবন এভাবেই আগ্রহ নিয়ে ভাত খাওয়াবো। মইন হাসতে হাসতে বলে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।