আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজকের "পি,এস,সি"র রেজাল্ট, একটি মূলা এবং রাজনীতির নোংরা খেলা

স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি......কিন্তু কেন যেন পরিশ্রম করা হয় না দুই দিন আগেই পিএসসির চেয়ারম্যান ঘোষনা দিল যে এক মাসের মধ্যেই নতুন ভাবে প্রিলির রেজাল্ট দিবে। তো কি এমন ঘটল যে মাত্র দুইদিন এর মধ্যেই রেজাল্ট দিল?? এখানে কিছু কথা বোঝার আছে এবং ভাবার বিষয় আছে। আমার চিন্তাতে যে বিষয়টা আসছে তা আপনাদের সাথে শেয়ার করব। এখানে সরকার একটা বিশাল চাল চেলেছে। খালি চোখে তা দেখতে পাবেন না, একটু গভীর দৃষ্টিতে তা দেখতে হবে।

আমি আজ যে কথা গুলা বলবো বা যে পয়েন্ট গুলা বলবো তা সব একই সূতায় গাঁথা। খুব গভীর ভাবে না ভাবলে সেটি বুজবেন না। তবে আস্তে আস্তে আমি তা ক্লিয়ার করব। ১। প্রথমেই আসি শাহাবাগ প্রসঙ্গেঃ আমরা যারা বিসিএস এ কোটার সংস্কারের পক্ষে তারা যখন আন্দোলনের জন্য শাহবাগে স্থান নির্ধারন করেছেন, দ্বিতীয় দিন কি আন্দোলন করতে পেরেছেন? পারেন নাই, বিনিময়ে পেয়েছি পুলিশের গুলি, টেয়ারশেল আর রাবার বুলেট।

পেপারে শিরোনাম হল “ঢাকা জুড়ে তিব্র জানজট”। একটা নৈতিক, যৌক্তিক এবং সম্পূর্ন অরাজনৈতিক আন্দোলকে দেওয়া হল জামাত-শিবিরের ট্যাগ। অথচ কি সুন্দর ভাবে আজ অবলীলায় বর্তমানে সেখানে অবস্থান করছেন ইমরান এইচ সরকার। নেই কোন পুলিশের গুলি, টিয়ারশেল বা রাবার বুলেট। উল্টো সরকারের পক্ষ থেকে আছে বিরায়ীনির প্যাকেট।

২। গোলাম আজমের রায়ঃ প্রথমেই বলি আমি যুদ্ধপরাধীদের সাজার পক্ষে। দেরিতে হলেও এদেশের মাটিতে তাদের সাজা হবে যা গর্বের বিষয়। তবে আমার আজকের লেখা শুধুমাত্র কোটাপদ্ধতি সংস্কারে পক্ষে। কিন্তু এই আন্দোলনের ভেতর এই রায় প্রদান করা হচ্ছে বলে আমি এই রায়কে আন্দোলনের একটা প্রভাবক হিসেবে দেখছি এবং আমার লেখাতে এজন্য তার অবতারনা করছি।

কেউ যদি অন্য কিছু ভাবেন এবং আমার লেখাকে “জামাত-শিবির” বলে ট্যাগ দেওয়ার চেষ্টা করেন তাহলে আমি বুঝবো আপনারা বৈষম্যকেই পচ্ছন্দ করেন এবং তার জন্য সাপোর্ট দিছেন। আর আমার লেখায় কোন মুক্তিযোদ্ধাদের বা তাদের সন্তানদের ছোট করা হচ্ছে না। এখানে যুক্তিই প্রধান। আপনারা জানেন যে, রমজান মাসে বড় দুই দলই সহিংস আন্দোলন থেকে ইস্তফা দিয়েছে। বিএনপি বলেছে তাদের আন্দোলন শুরু হবে ঈদের পর থেকে।

আওয়ামিলীগও ছিল চুপচাপ। শুধু পিএসসির ভুয়া রেজাল্টের কারনেই ছাত্র আন্দোলন শুরু হল। এরপর কি হল হঠাৎ সরকার এমন হার্ড লাইনে গেল? এবং আন্দোলন শুরুর ৩ দিনের মাথায় গোলাম আজমের রায়?? ফলাফল জামাত শিবিরের হরতাল, সহিংসতা। আর এক সপ্তহা পরে কি দেয়া যেত না রায়টি। কাল কেন গোলাম আজমের রায় দেয়া হবে তা আমি পরে আলোচনা করছি এবং একটা সামারি টানার চেষ্টা করব।

(মনে রাখবেন আমার সামারি সম্পূর্ন আমার নিজস্ব চিন্তা, কিন্তু বাস্তবের সাথে মিলে কিনা তা বের করবেন আপনারা, আমি শুধু ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করব যে সব একই সূতায় গাঁথা) ৩। পিএসসির রেজাল্ট এবং রিটঃ আজ ৩৪ তম বিসিএস এর আবার রেজাল্ট দিছে। এবার সর্বমোট টিকিয়েছে ৪৬২০০ জন কে, যা রিতিমত হাস্যকর। এরকম আর একটা বিসিএস এ টিকেয়েছিল ২৪তম তে। সেবার পোস্ট ছিল ৫০০০+ সেই বিসিএস এ আমার ভাইয়ের এবং চাচুর শিক্ষা ক্যাডারে হয়েছিল।

কিন্তু ৩৪তম তে পোস্ট মাত্র ২০০০+ যার বিপরীতি ৪৬২০০!!! যা অবিশ্বাস্য। মূলত কোটাধারীদের যে কাট মার্ক সেটিই সবার জন্য ধরে যতজন হয় সবাইকে টিকিয়েছে। যা সবার সামনে পিএসসির ঝুলানো মূলা ছাড়া আর কিছুই নয়। এরপর রিটেন এ যে কোটা এপ্ল্যাই করবে না তার কোন গ্যারান্টি নেই, আর ভাইভা তো আছেই। পিএসসির নীতি নৈতিকতা বলতে কিছুই নেই।

যারা প্রথমে প্রিলির রেজাল্ট কোটাধারী এবং কোটাছাড়া দুই গ্রুপের জন্য দুইটি কাট মার্ক রেখে প্রকাশ করল এবং ৫ দিনের মাথায় আবার একটা কাট মার্ক(কোটাধারীদের কাট মার্ক) রেখে প্রকাশ করল তারা পৃথিবীর সব পারবে। সুতরাং, যারা এই মূলা খেয়েছেন তারা মরেছেন। মনে রাখবেন আপনি বিসিএস নামক সোনার হরিণ তথা চাকরি পাবেন না, আমি আবার বলছি আপনি বিসিএস নামক সোনার হরিণ তথা চাকরি পাবেন না। কারন পোস্ট মাত্র ৯০০+(কোটাধারীদের বাদে) মনে করুন এই ৪৬০০০+ এর মধ্যে ১০০০০ কোটাধারী আর বাকি ৩৬০০০ কোটা ছাড়া, এই ৩৬০০০ লড়াই করবে ৯০০+ পোস্টের জন্য। আর মাত্র ১০০০০ জন লড়াই করবে ১১০০ পোস্টের জন্য।

এখন আপনিই বলুন আপনি সোনার হরিণ পাইলেন না মূলা পাইলেন?? এবার আসি রীট প্রসংগেঃ আপনারা সবাই জানে আজ রীট হয়েছে। কিন্তু যে বিষয় টা জানেন সেটি আপনাদের জানাবো। আপনারা কী জানেন রীট আজ করা হলেও তার দিন আগামীকাল ধার্য করা হয়েছে। কেন করা হয়েছে এটা কি জানেন?? কোটা বাতিলের দাবিতে আজকের রীট যার রুল হওয়ার কথা ছিল আজ কিন্তু সেটি আজ হয় নাই। কারন কোটা বাতিলের পাশাপাশি রীটে ৩৪ তম বিসিএস এর প্রিলির রেজাল্ট এর উপর স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়েছিল।

এখন আজ রেজাল্ট দিবে তা সবাই জানে আর এ কারনেই রীট আগামীকাল এর নতি ভুক্ত হয়েছে। কারন রেজাল্ট হয়ে গেলে পিএসসির জন্য একটা আইনের ফাক তৈরী হয়ে গেল। আর আন্দোলনে অনেকের পিছুটান চলে আসবে। তারা মনে করবে আমাদের তো হয়ে গেছে, আন্দোলন না করে বরং পড়াশোনা করি। এবার এক সূতায় গাথুনঃ (এটা সম্পূর্ন আমার নিজস্ব মত) হঠাৎ কালকেই কেন গোলাম আযমের রায় দিতে হবে?? এটা একটা বিশাল প্লান।

আপনারা সবাই জানেন আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ দাবিতে আন্দোলন করছি যা বর্তমানে প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয় এ ছড়িয়ে পড়েছে এবং যে দাবির প্রতি সমর্থন সারা বাংলাদেশ এর মানুষ এখন দিচ্ছে। মূলত এখন এই টপিক্স টি ধামাচাপা দিতেই এই রায়। আর দেখেন যেখানে আমাদের নৈতিক এবং যৌক্তিক আন্দোলনের জন্য শাহবাগে একটা দিন থাকতে পারলাম না সেখানে তারা এসে কি সুন্দর ভাবে দিব্যি দখল নিয়ে নিল!! আবার আর একটা বিষয় দেখেন কাল থেকে আন্দোলন করলে কিছু চেতনা ব্যবসায়ী এবং মুক্তিযুদ্ধএর পক্ষের শক্তি ( প্রকৃত যারা যেকোন যৌক্তিক আন্দোলন কে জামাত শিবিরের আন্দোলন বলে আন্দোলন কে দূর্বল করে) এই আন্দোলন এর বিরুদ্বে কথা বলবে। মনে রাখবেন আমাদের আন্দোলন পুরোপুরি আরাজনৈতিক আন্দোলন এবং যৌক্তিক আন্দোলন। আমি নিজে দেখেছি কেন আমরা এই যৌক্তিক দাবীতে শাহবাগে গেলাম মেধা চত্বর নাম দিলাম তাতে ফেসবুকে অনেকই নাখোশ, এবং তার সচিত্র প্রমান ঢাবির ছাত্রলীগও দিয়েছে।

মূলত এই আন্দোলকে নষ্ট করার জন্যই সরকার উঠেপড়ে লেগেছে। আর পিএসসি সব পরীক্ষার্থীর সামনে একটা মূলা ঝুলিয়ে দিয়েছে যে, বাবারা এখন পড়তে যাও। ওনেক আন্দোলন করেছো, চাকরি তোমাকে খুজছে। তুমি প্রিলিতে টিকেছো, সোনার হরিণ আর মাত্র হাত দুয়েক, একটু চেস্টা করলেই হবে। আর সবাই বিশাল আত্মবিশ্বাস নিয়া পড়বেন, রিটেনও হয়ত হবে, ভাইবাও দিলেন তার পর দেখবেন আপনার নাম আর হারিকেন ধরিয়েও খুজে পাচ্ছেন না।

আবার আগের কোটার ফাদে পড়লেন বর্তমানেr মত। এবং জীবনে সোনার হরিণ ডুমুরের ফুলই হয়ে থাকবে। কিন্তু বর্তমানে যে আন্দোলনের লোক পাচ্ছেন সেটি আর তখন পাবেন না। আমার পরিচিত এক বড় ভাই খুলনা ইউনিভার্সিটি থেকে ইংলিশ এ মাস্টার্স করেছেন, তিনি চারবার বিসিএস ভাইবা দিয়েও চাকরি পাননি শুধুমাত্র এই কোটার জটিলতার কারনে। মনে রাখবেন প্রিলির রেজাল্ট তুলনীয় হতে পারে ক্লাস ফাইভে আপনি পাশ করেছেন না ফেল করেছেন তার সাথে, কারন তারপর রিটেনে যে আপনি টিকবেন তার গ্যারান্টি নাই , তারপর তো ভাইবা আছেই।

এজন্য এখন কোটা সংস্কারের দাবিই মূখ্য, রেজাল্ট দিল কি দিল না তা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। যদি কোটা ঠিক হয় তাহলে পরবর্তী সকল বিসিএস এ সবাই উপকার পাবেন। এজন্য এখন একটাই দাবি কোটা সংস্কার চাই। ছোট একটা সাজেশনঃ আমি মনে করি যাদের এই বিসিএস শেষ বিসিএস শুধুমাত্র তারা ধুম পড়াশোনা করেন। কিন্তু যাদের এটা প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় তারা রেজাল্টকে প্রত্যাখ্যান করুন।

কারন কোটা ঠিক হলে সামনের সব বিসিএস এ এর সুবিধা ভোগ করবেন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এর সুফল পাবে। কিন্তু মূলা খেয়েছেন তো মরেছেন। (বানান ভূল মার্জনীয়। অভ্র দিয়ে লিখতে কষ্ট হয়। ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।