সামুতে অর্থহীন অশুদ্ধ বাংলা ও বাংলিশ শব্দ পরিহার করি একাত্তরের রক্তাক্ত স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন ও সার্বভৈম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিলো। একাত্তরের রণকৌশলের অংশ হিসেবে সুষ্ঠু যুদ্ধ পরিচালনার জন্য সমগ্র ভূখন্ডকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়েছিলো।
১। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্রগ্রাম জেলা ও নোয়াখালী জেলার মুহুরী নদীর পূর্ব পর্যন্ত সমগ্র এলাকা নিয়ে গঠিত হয় ১নম্বর সেক্টর। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর শওকত, পরে এর দ্বায়িত্ব নেন মেজর রফিকুল ইসলাম।
২। নোয়াখালী, আখাউড়া-ভৈরব রেললাইন পর্যন্ত কুমিল্লা জেলা, সিলেটের হবিগঞ্জ মহকুমা, ঢাকা ও ফরিদপুরের কিছু অশং নিয়ে গঠিত হয় দুই নম্বর সেক্টর। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন খালেদ মোশাররফ। পরে এর দ্বায়িত্ব পান মেজর হায়দার।
৩।
উত্তরে সিলেটের চুড়ামনকাঠি (শ্রীমঙ্গলের কাছে) এবং দক্ষিনে বি.বাড়িয়া সিংলার বিল পর্যন্ত, আভ্যন্তরীণ অপারেশনাল এলাকা ছিলো সিলেটের মৌলভী বাজার মহাকুমার আংশিক, হবিগঞ্জ মহকুমা,বি.বাড়িয়া মহকুমার অংশ,নারায়নগঞ্জ মহকুমার অংশ, এবং কিশোর গঞ্চ মহকুমার অংশ বিশেষ। সেকাটর কমান্ডার ছিলেন মেজর কে এম শফিউল্লাহ।
৪। সিলেট জেলার পূবাঞ্চল খোয়াই-শায়েস্তাগঞ্জ রেললাইন ছাড়া পূর্ব ও উত্তর দিকে সিলেট ডাউকি সড়ক পর্যন্ত প্রায় ১০০ মাইল সীমান্ত এলাকা নিয়ে গঠিত হয়। প্রায় ১০০ চা বাগান এই সেক্টরের আওতাভূক্ত ছিলো।
সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর চিত্তরঞ্জণ দত্ত।
৫। সিলেট জেলার পশ্চিমাঞ্চল, সিলেট-ডাউকি সড়ক থেকে সুনামগঞ্জ-ময়মনসিংহ সড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো পাঁচ নম্বর সেক্টর। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মীর শওকত আলী।
৬।
রংপুর এবং দিনাজপূরের ঠাকুরগাঁও মহাকুমা নিয়ে গঠিত হয় ছয় নম্বর সেক্টর। উইংকমান্ডার এম,কে বাশার ছিলেন সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্বে।
৭। রাজশাহী, পাবনা বগুড়া ও দিনাজপুর জেলার দক্ষিণাঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় সাত নম্বর সেক্টর। উইং কমান্ডার মেজর নজমুল হক সেক্টর কমান্ডারের দ্বায়িত্ব পালন করেন।
সুবেদার মেজর এ রব ও ছিলেন এই সেক্টরের দ্বায়িত্বে।
৮। কুষ্টিয়া, যশোহর, ফরিদপুর এবং খুলনা জেলার দৌলতপুর-সাতক্ষীরা সড়ক পর্যন্ত। পরে এলাকা কিছু সংকুচিত করা হয়। সেক্টর কমান্ডারের দ্বয়িত্ব পালন করেন মেজর এম এ ওসমান চৌধুরী পরে মেজর মঞ্জুর।
৯। বরিশাল-পটুয়াখালী, গৌলতপুর-সাতক্ষীরা সড়ক থেকে খুলনা জেলার দক্ষিণাঞ্চল ও ফরিদপুর জেলার অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত হয় ৯ নম্বর সেক্টর। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর এম এ জলিল।
১০। দেশের সমগ্র নদীপথ ও বন্দরসমূহে গেরিলা তৎপরতা চালানোর জন্য গঠিত হয় ১০ নম্বর সেক্টর।
এই সেক্টরে কোন অধিনায়ক ছিলোনা। নিজ নিজ সেক্টর এলাকার অধিনায়কগণ অপারেশন পরিচালনা করতেন।
১১। কিশোরগঞ্জ মহকুমা ছাড়া ময়মনসিংহ এবং টাঙ্গাইল জেলা নিয়ে গঠিত হয় এগার নম্বর সেক্টর। সেক্টর কমান্ডার মেজর তাহের এবং পরে স্কোয়ার্ডন লিডার হামিদুল্লাহ।
একাত্তর সালের ৭ জুলাই মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ব্রিগেড "জেড ফোর্স" গঠিত হয়। মেজর জিয়ার নামের প্রথম ইংরেজী অক্ষর দিয়ে এই ব্রিগেডের নামকরণ করা হয়। প্রথম ইস্ট বেঙ্গল, তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল ও অষ্টম ইস্ট বেঙ্গলের সমন্বয়ে এই ব্রিগেড গঠিত হয়। মেজর মইনুল হাসান চৌধুরী প্রথম ইস্ট বেঙ্গলের অধিনায়ক নিযুক্ত হন। জেড ফোর্স কমালপুর, বাহাদুরপুর, চিলমারী, গোবিন্দগঞ্চ ও নকসী বি ও পি আক্রমনে বিশেষ সাফল্য অর্জন করে।
তবে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে মেজর জিয়ার কোন বীরত্বগাথার প্রমাণ পাওয়া যায় না। তৎকালীন সেনাবাহিনীর বাঙালী অফিসারদের মধ্যে মেজর সফিউল্লাহ, মেজর রফিকুল ইসলাম, মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর মঞ্জুর, মেজর আবদুল জলিল, একে খন্দকার, আবদুর রব প্রমুখের যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়ার অনেক বীরত্বগাথা আছে। কিন্তু মেজর জিয়ার কোন বীরত্বগাথা চোখে পড়েনি। মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথার হাজারো ঘটনার ওপর গ্রন্থ রচিত হয়েছে। কিন্তু মেজর জিয়া একটি বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন বা অংশ নিয়েছেন এমন কোন গ্রন্থ বা প্রবন্ধ আজও চোখে পড়েনি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জিয়া যেভাবেই হোক মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, কি উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধে গেছেন না বাধ্য হয়েছেন যেতে বা কতখানি যুদ্ধ করেছেন, তা আজও কুয়াশাচ্ছন্ন।
তবে একটা ষড়যন্ত্রের কথা শোনা যায়। মুক্তিযুদ্ধের মাঝে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বাদ দিয়ে পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশন করার যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলেন খন্দকার মোশতাক তার সঙ্গে তাহের ঠাকুর, মাহবুল আলম চাষী ছাড়াও জিয়ার নাম রয়েছে। পরবর্তীতে এই বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর খন্দকার মোশতাকই বঙ্গবন্ধু হত্যার প্লট তৈরি করে এবং শোনা যায় এই প্লটেও জিয়ার পরোক্ষ সাপোর্ট ছিল। যে কারণে জিয়া তার বিশ্বাসগত এবং অবস্থানগত কারণেই Politics of balance-এর কথা বলে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত, মুসলিম লীগ, নেজামী ইসলামী এবং ভাসানী ন্যাপের একাংশ নিয়ে রাজনৈতিক দল বানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
অর্থাৎ জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের শেল্টার দেয়। যুদ্ধাপরাধী জামায়াত, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামী স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়েছিল। তাদের রাজনীতি করার অধিকার ছিল না। বিচার হচ্ছিল। ৪০ হাজারের ওপর গ্রেফতার হয়েছিল যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে, তার মধ্যে ১১ হাজারের বিরুদ্ধে চার্জশীট দিয়ে বিচার শুরু হয়েছিল এবং বঙ্গবন্ধুর সময়েই প্রায় ৮শ' যুদ্ধাপরাধীর Capital punishment সহ মেয়াদী সাজা হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর এই মেজর জিয়াই দালাল আইন বাতিল করে বিচার বন্ধ করে এবং তাদের কারাগার থেকে মুক্তি দেয়। সাপদের দল আবার গর্ত থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে নাগরিকত্ব হারা গোলাম আযমকে পাকিস্তানী পাসপোর্টে বাংলাদেশে নিয়ে আসে তার রাজনীতির স্বার্থে। খালেদা জিয়ার সময় হারানো নাগরিকত্ব ফিরে পায় গোলাম আযম।
এই যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে অপরাধবোধ না জাগার আরেকটি কারণ হলো মুক্তিযুদ্ধে আমাদের কাছে পরাজিত পাকিস্তান তথা বহিঃর্শক্তি চীন, আমেরিকা, সৌদি আরবসহ কতিপয় মুসলিম দেশ এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী শক্তি তাদের পেছনে দাঁড়ায়, অর্থ ও অস্ত্র দেয়।
এর সুযোগ নিয়ে জামায়াত বাংলাদেশে তাদের শক্তি সঞ্চয় করতে শুরু করে। এরা নানান ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে এবং বিদেশী অর্থ এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মুনাফা দিয়ে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। হুজি, হিজবুত তাহরীরের যত সন্ত্রাসী এ পর্যন্ত ধরা পড়েছে বা শাস্তি পেয়েছে সবারই মূল সংগঠন জামায়াতে ইসলামী বলে প্রমাণিত হয়। বেগম খালেদা জিয়া বিগত ২৭ সেপ্টেম্বরের দলীয় সমাবেশে গ্রেফতারকৃত যুদ্ধাপরধীদের যারা পাকি-সামরিক জান্তার গণহত্যার মতো জঘন্য মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে এবং ৩০ লাখ মুক্তিকামী বঙ্গসন্তান হত্যার দায়ে অভিযুক্ত হয়। কেবল তা-ই নয়, এই অপশক্তি পৌনে তিন লাখ, মতান্তরে চার লাখ বাঙালী মা-বোনের সম্ভ্রম লুণ্ঠনেও পাকি সামরিক জানত্মাকে পথ দেখায়, সহযোগিতা করে এং নিজেরাও এই ঘৃণ্য চরম ইসলামবিরোধী কাজে অংশ নেয়।
এবং সবচেয়ে ঘৃণ্য হলো এই জামায়াতীরা পবিত্র ইসলাম ধর্ম রক্ষার নামে ওইসব বর্বরোচিত কাজে অংশ নেয়। বেগম খালেদা জিয়া তাদের মুক্তি দাবি করে প্রমাণ করেছেন তিনি বিএনপিকে পুরোপুরি জামায়াতী ধাঁচে-আদর্শে গড়ে তুলতে চান। যা বাংলার মানুষ কোন দিনই হতে দিবে না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।