আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই লিখার সবকয়টি চরিত্র এবং স্থান কাল্পনিক। বাস্তবের কোন কিছুর সাথে সাদৃশ্য পাইলে লেখক দায়ী নয়।

--- আজ “কুয়েত” লাইফের শেষ প্রান্তে এসে মনের কিছু জমানো কথা চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে। হাতে কোন কাজ নাই-অফুরন্ত সময়। ৭০ দিনের বেশী হয়ে গেছে লাস্ট পরীক্ষা দিসি। আমাদের শ্রদ্ধেয়(!) শিক্ষকমণ্ডলী তাদের দাবি আদায়ের জন্য লাস্ট রিসোর্ট হিসাবে আমাদের ঘাড়ের উপর বন্দুক রেখে গুলি করছেন। দাবিগুলো কি তাও মনে নেই-খুব সম্ভবত ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি, ছাত্ররা শিক্ষকদের যথার্থ সম্মান দেয় না-সে সম্মান ফিরিয়ে আনার দাবি।

দাবি আদায়ের জন্য এ পর্যন্ত কতগুলো মিটিং করেছেন তার হিসাব নাই। মিটিং এর কথা শুনলেই এখন হাসি পায়। কিছু বন্ধু অপেক্ষার পর হতাশ হয়ে বাড়ি চলে গেছে। তাদের নাকি অনেকে সন্দেহ করছে যে তারা পরিক্ষায় ফেল করেছে-তাই পাস করতে দেরী হচ্ছে, কিছুই বলার নাই। আর কত অজুহাত দিবে? অনেকেরই পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল না।

যখন স্যার দের একথা বলা হল তারা বললেন,”আমরা মিটিং এ এসব নিয়ে আলোচনা করেছি”। হায়রে মিটিং!!! এদিকে চাকুরীর সার্কুলার পাওয়া গেলেও হা..................... করে তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছু করার নেই। স্যার দের সম্মানের দাবি নিয়ে কিছু কথা বলি। সেই ফাস্ট ইয়ার থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত হতাশার চোরাবালিতে হাবুডুবু খাচ্ছি। ফাস্ট ইয়ার ফাস্ট সেমিস্টার এ আইসাই ৫ টা থিওরি আর ৫ টা সেশনাল ধরাইয়া দিল।

পুলাপাইন একে আইসে নতুন, হল এ সিট পায় নাই, চরম প্রেসার এর উপরে থেকে ফাস্ট সেমিস্টার পরীক্ষা দিল, আশানুরূপ ফল পাইল না। শুরু হইল হতাশা, শিক্ষকরা কই আশার আলো দেখাইবেন, ভাল কথা শুনাইবেন, তা-না, ঝারি দিতে সবাই পটু। এই পারনা, ওই পারনা-আপনাদের পড়ানোর মান নিয়ে কোন কথা বলব না। আপনারা বিশ্ব মানের শিক্ষক-ক্লাস এ আসেন, বোর্ড এ লিখেন, যা লিখবেন তা কষ্ট করে মুখে বলবেন, সামনের বেঞ্চে জিনিয়াস(!) পুলাপাইন যারা আছে সবাই গপাগপ লেকচার টুকবে, আর বাকি ব্যাকবেঞ্চার হতাশাগ্রস্থ গরুরা ঘুমাবে, গল্প করবে, মোবাইলে গেম খেলবে, আরটিসটিক ড্রয়িং করবে-এটাই তো প্রকৃতির নিয়ম। কখনও কি চিন্তা করেছেন যে ছাত্রদের কাছে কিভাবে পড়াটা আনন্দময় করে তোলা যায়? কিভাবে তার মনে আপনার বলা কথাগুলো দাগ কেটে রাখবে? এই “কুয়েতে” পড়াশুনা করে চোথাবাজ আবাল ছাড়া আর কিছুই হইতে পারি নাই।

সিজি টাইনা-টুইনা ভালাই করসি-কিন্তু আসলে কিছুই শিখি নাই। আপনারা সম্মানের কথা বলেন, সম্মান জোর করে আদায় করার জিনিস না-এটা হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে আসে, যেমন আসে ঘৃণা। নাসিম স্যারের আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তুলবে এমন ছাত্র খুজে পাওয়া দুস্কর। সেকেন্ড ইয়ারে রিয়াজ স্যারের এস এম ক্লাস পেয়েছিলাম, থার্ড ইয়ারে খুব স্বল্প সময়ের জন্য মাহফুয স্যারের মেশিন ডিজাইন ক্লাস পেয়েছিলাম, আরও কিছু শিক্ষকের সংস্পর্শে আসার সৌভাগ্য হয়েছিল-তাঁদের কথা সব সময় শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করব। একটা সাবজেক্টে একটা ব্যাচের ৮০ জন এ+ পায়-প্রায় ১০০% পাস, আর পরের ব্যাচই ওই একই সাবজেক্টে ৩০-৩৫ তা লগ পায়, বাকি গুলা টাইনা-টুইনা পাস করে, আর ২-১ জন এ+ পায়।

দোষটা আসলে কার? এই এক বছরের মধ্যে ছাত্রদের অবনতিই কি এর জন্য দায়ী? নাকি অন্য কিছু? আমার মনে হয় সেটা একজন শিক্ষকের ব্যর্থতা, ছাত্রের নয়। একজন শিক্ষক যখন ক্লাসে এসে গল্প করেন যে এই সাবজেক্টে তো এতগুলা লগ পায়-তখন একজন ছাত্রের আত্মবিশ্বাসের লেভেল কই পৌছায় সেইটা নিশ্চয় বলে দিতে হবেনা-হোকনা সেইটা মশকরা। থিসিসের সময় যখন একজন ছাত্রকে কাঁদিয়ে রুমে পাঠায়-সে শিক্ষকের জন্য সম্মান কখনই মন থেকে আসবে না। এক জন ছাত্র শিক্ষকের সাইকেলে লাথি দিল। সেই দোষটা কি সব ছাত্রের উপর দেয়া উচিৎ? ০৮ ব্যাচের গুটিকয়েক ছাত্রের ভুলের জন্য পুরো ০৮ ব্যাচের ছাত্রের পেটে লাথি দিচ্ছেন-এটা কেমন বিচার? যাক...ছাত্ররা চাকুরী পাবেনা,বেকার থাকবে, না খেয়ে থাকবে-ব্যাপার না, বিয়েটা কয়েক বছর দেরিতেই হল-ব্যাপার না, হতাশার অতল গহবরে ডুবে যাবে-ব্যাপার না, এই সমস্যা গুলো বাড়িতে গিয়ে বাপ মারে বলার জিনিস না, হয়ত রুমে যখন কেউ থাকবে না, তখন এক পশলা কেঁদে নিবে, প্রাণের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবে।

কুয়েতে এই একটাই প্রাপ্তি-বন্ধু। কিন্তু যদি আপনারা ছাত্রদের হক নষ্ট করে থাকেন সেটার ফল পাবেন, কিছুদিন দেরীতে হলেও পাবেন। আর যদি ছাত্র দের ভাল চেয়ে তাদের হক পুরোপুরি আদায় করে থাকেন, সে পুরস্কারও পাবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সূক্ষ্ম বিচারক। (সংগ্রিহিত) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।