ব্লগে আর আগের মতো মজা নাইরে মমিন! [ ১৬ই জুলাই ১৯৭১ ইং
মামণি আমার,
তুমি যখন ইনশাল্লাহ পড়তে শিখবে, বসতে শিখবে তখনকার জন্য আজকের এই চিঠি লিখছি। তোমরা (...) নিশ্চয়ই। অনেক অভিমান জমা, আব্বু তোমাকে দেখতে কেন আসে না? মামণি, আব্বু আজ তোমার জন্মদিনে তোমাকে বুকে নিয়ে বুক জুড়াতে পারছি না, এই দুঃখ তোমার আব্বুর জীবনেও যাবে না। ।
কী অপরাধে তোমার আব্বু আজ তোমার কাছে আসতে পারে না, তোমাকে কোলে নিয়ে আদর করতে পারে না, তা তুমি বড় হয়ে হয়তো বুঝবে, মা।
কারণ আজকের অপরাধ তখন অপরাধ বলে গণ্য হবে না। আজকে এ দেশের জনসাধারণ তোমার আব্বুর মতই অপরাধী, কারণ তারা নিজেদের অধিকার চেয়েছিল। অপরাধী দেশবরেণ্য নেতা, অপরাধী লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক – এ দেশের সব বুদ্ধিজীবী কারণ তারা এ দেশকে ভালোবাসে।
হানাদারদের কাছে, শোষকদের কাছে এর চেয়ে বড় অপরাধ আর কিছুই নেই। এই অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
সেই দণ্ড এড়াবার জন্য লাখ লাখ লোক দেশ ত্যাগ করেছে। সেই দণ্ড এড়াবার জন্য তোমার আব্বুকে গ্রামে – গ্রামে, পাহাড়ে – জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। তাই আজ বুক ফেটে গেলেও আব্বু এসে তোমাকে নিয়ে আদর করতে পারছে না। মনের মণিকোঠায় তোমার সেই ছোট্ট মুখখানি সব সময় ভাসে, কল্পনায় তাকে চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দিই। আর তাতেই তোমার আব্বুকে সান্ত্বনা পেতে হয়।
আব্বু, নামাজ পড়ে প্রত্যেক ওয়াক্তে তোমার জন্য দোয়া করি। আল্লাহ রহমানুর রাহিমের কাছে মোনাজাত করি, তিনি যেন তোমার আম্মুকে আর তোমাকে সুস্থ রাখেন, বিপদমুক্ত রাখেন।
মামণি, তোমার আম্মু লিখেছে, তুমি নাকি এখন কথা বলো। তুমি নাকি বলো, 'আব্বু জয় বাংলা গাইত। ' ইনশাল্লাহ সেই দিন আর বেশি দূরে নয় আব্বু আবার তোমাকে জয় বাংলা গেয়ে শোনাবে।
যদি আব্বু না থাকি, তোমার আম্মা সেদিন তোমাকে জয় বাংলা গেয়ে শোনাবে। তোমার আম্মু আরো লিখেছে তুমি নাকি তোমাকে পিট্টি লাগালে আম্মুকে বের করে দেবে বলে ভয় দেখাও।
তোমার আম্মু না ভীষণ বোকা। খালি তোমার আর আমার জন্য কষ্ট করে। বের করে দিলে দেখো আবার ঠিক ঠিক ফিরে আসবে।
আমাদের ছেড়ে থাকতে পারবে না। তোমার আম্মু দুঃখ পেলে এখন আর কাউকে বলবে না। একা একা শুধু কাঁদবে। তুমি আদর করে আম্মুকে সান্ত্বনা দিও কেমন? তুমি আমার অনেক অনেক চুমো নিও।
ইতি
আব্বু
------------
ওয়াসেকা তখন ছোট্ট মেয়ে।
এতই ছোট যে পড়তে পর্যন্ত পারে না। তারপরেও মেয়েকে উদ্দেশ্য করে এই চিঠি লিখেছিলেন চট্টগ্রামের রাজনীতিবিদ আতাউর রহমান খান। কারণ মনে শঙ্কা ছিল, মেয়ে বড় হওয়া পর্যন্ত দুনিয়ার আলো-হাওয়া দেখার সুযোগ নাও পেতে পারেন তিনি।
সৌজন্যে:
মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোন[A Page totally based on liberation war'71 ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।