আমি হান্নাহ। থাকি ইংল্যান্ড। ছোটবেলায় আমার সঙ্গে জিন ছিল। মা ব্যস্ত থাকতেন বলে আমি আর আমার বোন নানির কাছে থাকতাম। নানির বাড়িতে রুম ছিল তিনটি_ একটিা খালি রুম, নানা-নানির রুম, আর একটা ছোট রুম।
নানা কাজের জন্য অনেক সময় বাইরে থাকতেন। আমার বোন তখন নানির সঙ্গে ঘুমাত। ছোট রুমটায় থাকতাম আমি। সে রুমে খাট ছিল দুটি। আমি দেয়ালের লাগোয়া খাটে ঘুমাতাম।
তিন বছর বয়সে জিনটির অস্তিত্ব প্রথম টের পাই আমি। সে কথা মায়ের কাছে শুনেছি। অত বাচ্চা বয়সের কথা তো আর মনে নেই! আমি ঘুমিয়ে থাকলে জিনটা আসত। পুরুষ ছিল ওটা। বয়স ত্রিশ-চলি্লশ।
ওর চেহারা কখনও দেখিনি আমি। হতে পারে জিনের কোনো চেহারা থাকে না। আমি শুধু তার অবয়বই দেখতে পেতাম। জিনটা ঘুমন্ত আমাকে দেখত। ঘুম ভেঙে যেত আমার।
কিন্তু ওকে বুঝতে দিতাম না। ফলে চোখ খুলতাম না। চোখ মিটিমিটি করে একটু তাকাতাম অবশ্য। জিনটা আমাকে এমনভাবে তুলে ফেলত, যেন কোলে নিচ্ছে। কখনই সে শক্ত করে ধরেনি আমাকে।
আলতো করে কোলে নিয়ে আমাকে দেখত শুধু।
মা বলেছেন, তার অস্তিত্ব টের পাওয়ার পর প্রথম প্রথম নানিকে গিয়ে বলতাম। মা আর নানী পরস্পর চোখাচোখি করতেন। কিন্তু কিছু বলতেন না। তারা জানতেন, এটা স্বপ্ন নয়।
তিন বছর বয়স হওয়া সত্ত্বেও আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না এরকম কোনো গল্প বানানো; কারণ জিন-প্রেত সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল না।
নানির বাড়িতে থাকাকালে জিনটা আমাকে প্রায়ই দেখতে আসত। আমি যখন ঐ ছোট রুমটাতে থাকতাম, ঠিক তখনই কেবল আসত সে। সঙ্গে আমার বোন থাকলে কিংবা আমি অন্যকোনো খাটে ঘুমালে সে আসত না। এক সময় আমার কেমন যেন অভ্যাস হয়ে গেল।
তার কোলে নেওয়াটা খুব ভালো লাগত। তাই আমি সবসময় ঐ খাটে ঘুমানোরই চেষ্টা করতাম। আমার বয়স পাঁচ হওয়া পর্যন্ত তার অস্তিত্ব টের পেয়েছি আমি।
ছোট থাকায় সে ঠিক কতবার এসেছিল আর কতক্ষণ ধরে পাশে থাকত, সে কথা এখন আর ঠিকঠাক মনে নেই। শুধুু একবারের কথা আমি কোনোদিনই ভুলব না।
সে রাতে আমি নানির বাড়িতে সেই খাটে শুয়ে ছিলাম, আর যথারীতি সে আমাকে দেখতে এসেছিল। আমার চোখ বন্ধ ছিল, তাই তাকে বুঝতে দেইনি যে আমি সজাগ আছি। তবে মিটিমিটি চোখে তাকে উঁকি দিয়ে তাকে দেখছিলাম। আমাকে কোলে তোলার প্রায় এক মিনিট পর আমার মা সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসছিল। এটা তাকে ব্যাঘাত ঘটাল, আর সে খুব আলতোভাবে আমাকে বিছানায় নামিয়ে রাখল এরপর অদৃশ্য হয়ে গেল।
তবে সে একবারে হুট করে চলে গেল না; খুব ধীরে ধীরে তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত অদৃশ্য হয়ে গেল। আমার মা দরজা খুলে আমার দিকে তাকালেন; আমিও ঘুমের ভান করলাম_ ঠিক যেমনটা সবসময় করি। ফলে মামণি কিছুই বুঝতে পারলেন না।
একটা জিন আমার সঙ্গে দেখা করতে আসত, আমাকে আদর করত_ এ কথাটা আমার সারা জীবন মনে থাকবে। তবে জিনটা খুবই ভালো ছিল।
আমাকে একবারের জন্যও ভয় দেখায়নি ওটা। আমার কোনো ক্ষতি করারও চেষ্টা করেনি। ফলে আমি কখনও তাকে ভয় পাইনি। কিন্তু বয়স আমার পাঁচ হওয়ার পর থেকে কেন যে সে আসেনি_ সেটা বুঝতে পারিনি। তবে প্রতিরাতেই তাকে মিস করেছি ভীষণ।
বড় হওয়ার পর প্রায়ই নানা আড্ডায় জিনটার কথা তুলতাম। মা আমাকে বলেছিলেন, সেটা অলীক কোনো কল্পনা কিংবা স্বপ্ন ছিল না; সেটা সত্যি সত্যি জিন ছিল। আমার মাও একই বাড়িতে তার ভাইবোনদের সঙ্গে বড় হয়েছেন। শৈশবে তারা সবাই এটার অস্তিত্ব টের পেতেন। কিন্তু কখনও দেখেননি কেউ।
মা আরও জানিয়েছিলেন, মাঝেমধ্যে জিনিসপত্র হঠাৎ করেই হারিয়ে যেত, অনেক খুঁজেও পাওয়া পেত না; তবে কয়েক মাস পর হঠাৎ আবার দেখা মিলত সে সবের। আর, দেয়ালে টাঙানো ছবিগুলোও মাঝেমধ্যে পড়ে যেত। তবে কোনো এক কারণে জিনটা আমার মামাকে পছন্দ করত না। মামা একদিন বাসায় এসে দেখেন, তার রুমের সবকিছু এলোমেলো হয়ে আছে; যদিও কেউ ঐ রুমে যায়নি আর কোনো কিছু ধরেনি। তারা সবাই জানত, এটা জিনের কাজ।
আমার সঙ্গে যা যা ঘটেছে, তাও মামার সঙ্গে ঘটত। তবে মামার কথা কেউ বিশ্বাস করেনি। কারণ, মামা মাতাল ছিলেন। মা আরও বলেছেন, নানিও নাকি জিনটির অস্তিত্ব টের পেতেন।
আমিও জানতাম, জিনটা সত্যি ছিল।
আমি শুধু তাকে দেখিনি কিংবা অনুভবই করিনি; মা ও নানির ধারণা, আমাকে ও এত আদর করার কারণ, আমার মধ্যে হয়ত কিছু একটা খুঁজে পেয়েছিল। তবে সেটা কী_ তা জানি না আমরা। আরও জানি না, কেন আমার বোনের সঙ্গে দেখা দেয়নি সে। মা ও নানি আরও বলেছেন, আমিই নাকি জিনটিকে মুক্তি দিয়েছি। তাই সে অদৃশ্য হয়ে গেছে।
চিরতরে চলে গেছে পৃথিবী ছেড়ে। আর আসেনি।
আমি এই অভিজ্ঞতা নিয়ে অনেক গর্ববোধ করি। এমনতরো স্মৃতি আমার আছে বলে ভীষণরকম খুশি আমি। নিজেকে বেশ সৌভাগ্যবান মনে হয়।
আমি জানি অনেকেই বলবে এর কোনো ভিত্তি নেই বা যা ঘটেছে সব মিথ্যা; তবে আমি জানি, এটা সত্যি।
সূত্রঃ সমকাল। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।