আমি জীবনের সাথে যুদ্ধ করতে চাই না, জীবনেক সুন্দর ভাবে গড়ে তুলতে চাই।
(আফরোজা আকতার রনি। স্কুল হতে ফেরার সময় সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যু- ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১০)
আজ ২৮ সেপ্টম্বর ২০১১। কেন এই তারিখটা আজ এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল? আমরা কি কখনো ভেবেছি ২৮ সেপ্টেম্বর হয়ে যাবে আমাদের জন্য একটি শোকাবহ দিন, না ভোলার দিন?
গত বছরের ঠিক এই দিনে আমাদের পরিবারের ছোট মেয়ে আমাদের সবার আদরের ছোট দুষ্টু বোন রনি রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। কত সহজ ভাবেই কথাটি বলে ফেললাম ‘মারা যায়’।
মারা যাওয়া কি খুব সহজ ? অবশ্যই সহজ। সহজ না হলে যে বোন ছিল আমাদের সবার চোখের মধ্যমণি যাকে নিয়ে ছিল আমাদের অনেক আশা, অনেক স্বপ্ন যে সবাইকে আনন্দের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে পারত, তার মৃত্যুর কথা কিভাবে এমন সহজ ভাবে বলতে পারলাম?
রোড এক্সিডেন্টে মারা গেল কত সহজ একটি কথা । কিন্তু এই সহজ কথার ভেতর কত যে নির্মমতা লুকিয়ে আছে তাকি কেউ বুঝে? এই একটি এক্সিডেন্টের কারণে কত স্বপ্নের মৃত্যু হয়েছে তাকি কেউ উপলব্ধি করতে পারি?
আমার ছোট দুষ্টু বোন যে কিনা সামান্য রক্ত দেখলে আর্তনাদ করত, কান্না করতে করতে ঘরে হুলস্থূল বাধিয়ে দিত, আর তার শরীর থেকে এক ফোটা রক্ত পড়লে ‘‘আমার সব রক্ত শেষ হয়ে গেল’’ বলে চিৎকার করত, সে মৃত্যু বরণ করল তার নিজের রক্তের স্রোতে। তার মৃত্যুর পর মনে হয় তার শরীরে এক ফোটা রক্তও ছিলনা। আমার এই বোনটার মৃত্যু নিয়ে আজ আমাকে ভাবতে হবে লিখতে হবে তা আমি কখনো কল্পনা করিনি।
কিন্তু তার মৃত্যুর দায়ভার কে নেবে? একটি বেপরোয়া ট্রাক ওভার টেক করতে গিয়ে কেড়ে নিল আমার বোনের জীবন। তাদের কি কখনো এই চেতনা হবেনা যে “আমার সামান্য দায়িত্বহীনতা, অসচেতনার কারণে অন্যের কত বড় ক্ষতি হবে”। আর কত বোন হারলে, আর কত ভাই হারালে, বাবা মা হারালে, স্ত্রী তার স্বামী, স্বামী তার স্ত্রী হারালে এই রোড এক্সিডেন্ট কমবে? কখন তারা চেতনায় ফিরে আসবে আর বলবে “আমাদের সচেতন হওয়া উচিত”?
রনি আমরা তোমাকে প্রতিনিয়ত স্মরণ করি। এমন একটি দিন, এমন একটি ঘণ্টা আমাদের কাটেনা যখন আমরা তোমাকে স্মরণ করিনা। এমন স্মরণ তো আমরা তোমাকে করতে চাইনি।
আমরা চেয়েছি তুমি আমাদের মাঝে থেকে বড় হবে, মানুষের মত মানুষ হবে। কিন্তু ঘাতক ট্রাক তোমাকে তা হতে দিলনা। গত বছর তোমার জন্মদিন পালন করার জন্য কত পরিকল্পনাই না করেছিলে কিন্তু সেই আশাটা ও পূরণ করতে দিলনা ওই ঘাতক ট্রাক ।
রনি ছিল আমাদের পরিবারের সবচেয়ে মেধাবী সদস্যা। স্কুলেও সে ছিল তুখোড় মেধাবী।
অষ্টম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়ার আশায় সে রাতে দিনে পড়ত। ভবিষ্যতে ডাক্তার হবে এই স্বপে বিভোর আমার ছোট বোনটি একটা মুহুর্তও অপচয় করতো না। তবুও সে গান, নাচ অভিনয়, খেলাধূলা ইত্যাদিতে ছিল স্কুলের সেরা পারফর্মার। বড় হওয়ার সব গুণ থাকা সত্তেও, মেধাবী আর কঠোর পরিশ্রমী হওয়া সত্তেও সে অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় বেপরোয়া ঘাতক ট্রাক ড্রাইভার তার প্রাণ কেড়ে নিল।
প্রিয় পাঠক, আমি আমার অনুভূতি প্রকাশ করলাম এলোমেলো ভাবে।
ভাষাগত ভুলগুলো ক্ষমা করবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।