আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সৎ দানে প্রাচুর্য আনে

‘সৎ দান এমন একটি শস্যবীজ, যাতে উৎপন্ন হয় ৭টি শীষ, আর প্রতিটি শীষে থাকে শত শস্যদানা। আল্লাহ্‌ যাকে চান, তাকে বহুগুণ প্রবৃদ্ধি দান করেন। ’ দান সর্বোত্তম মানবীয় গুণ। মানুষ ও পশুর পার্থক্য হচ্ছে মানুষ দিতে জানে আর পশু শুধু নিতে জানে। দান করার সামর্থ্যের কারণেই পশুর স্তর থেকে মানুষের উত্তরণ ঘটেছে মানবীয় স্তরে।

প্রচলিতভাবে, আমরা দান বা সদকা বলতে কেবল আর্থিকভাবে পরিমাপযোগ্য দানকেই বুঝি। কিন্তু এটি হলো দানের সংকীর্ণ অর্থ। যেকোনো ভালো কাজই দান। মমতা জড়িত সেবার নাম-ই দান। এ সেবা হতে পারে একটু শুভ কামনা, একটু সুন্দর ব্যবহার, একটা সুপরামর্শ, আর্থিক দান, পথিককে আন্তরিক সাহায্য কিংবা পথ থেকে কলার খোসা ছাড়িয়ে ফেলা।

অর্থাৎ অন্যের কল্যাণে অর্থ মেধা শ্রম ও সময় দেয়াই দান। পেশাও চমৎকার দান হিসেবে শতগুণ প্রতিদান আনতে পারে যদি কাজটি কল্যাণের জন্যে করা হয়। যে ডাক্তার রোগীকে শুধু অর্থ উপার্জনের জন্যে দেখে না- বরং চিন্তা করে রোগীকে কতো দ্রুত সুস্থ করা যায়, একটু আরাম দিতে চেষ্টা করেন সেই ডাক্তারও দান করছেন। আন্তরিকভাবে ফুটপাথে জুতো সেলাই করে কেউ হয়েছেন লাখপতি মুচি, পেয়াজু বিক্রি করেই কেউ বানিয়েছেন বিল্ডিং, হোডিং পেইন্টারের সহকারী থেকে কেউ হয়েছেন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী। একজন শিক্ষার্থী যদি মানুষের কল্যাণের জন্যে কাজ করার চিন্তা করে নিয়মিত লেখাপড়া করে তবে লেখাপড়া করাটাও দান।

তবে সর্বোত্তম সাদাকা হচ্ছে সেবার মনোভাব নিয়ে নিজের মেধাকে বিকশিত করা। নিজের এবং অন্যের জন্যে কল্যাণকর, মঙ্গলকর প্রতিটি কাজ সাদাকা। আবার উল্টোটাও সত্য- নিজের জন্য এবং অন্যের জন্য অকল্যাণকর কাজ করা থেকে বিরত থাকাও সাদাকা। দান কীভাবে প্রাচুর্য সৃষ্টি করেঃ প্রাচুর্যবান হতে হলে আপনাকে দাতা হতে হবে বা আপনাকে দান করতে হবে। আপনি যা পেতে চান তা-ই আগে দিতে হবে।

অর্থ চাইলে অর্থ দিতে হবে। সম্মান পেতে হলে অন্যকে সম্মান করতে হবে। হাসিমুখ দেখতে হলে আগে নিজেকে হাসতে হবে। যা দান করবেন প্রাকৃতিক নিয়মেই তা বহুগুণ ফিরে আসবে আপনার কাছে। কারণ এর পেছনে রয়েছে প্রকৃতির এক অপূর্ব প্রতিদান।

দানের এ প্রতিদান সার্বজনীন। জাতি-ধর্ম- গ্রোত্র নির্বিশেষে সবার জন্যে। আপনি যখন দান করবেন তখন সেখানে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়। প্রাকৃতিক আইন অনুসারে সে শূন্যতা পূরণের জন্যে চারপাশ থেকে প্রতিদানের প্লাবন আসতে শুরু করে। কারণ প্রকৃতি কখনো শূন্যতা রাখে না।

যেভাবে বাতাসের শূন্যতা ঝড় সৃষ্টি করে, একইভাবে সৎ দান প্রতিদানের প্লাবন সৃষ্টি করে। যখন কোনো পণ্যের অভাব সৃষ্টি হয়, নিশ্চিতভাবে ঐ পণ্যের প্লাবন সৃষ্টি হবে। কারণ সবাই তখন ঐ পণ্য আমদানি করবে। তখন পণ্যের সরবরাহ এত বেশি হয় যে, পণ্যের দাম কমে যায়। আসলে প্রকৃতিতে যখনই অভাব সৃষ্টি হচ্ছে তখন ঐ অভাব পূরণ করার জন্যে চারদিক থেকে প্লাবন আসতে থাকে।

যত বিলিয়ে দেবেন তত সে শূন্যস্থান পূরণের জন্যে চারপাশ থেকে সৌভাগ্য আপনার দিকে আসতে থাকবে। যত যক্ষের মতো আকড়ে রাখবেন তত অভাববোধ ও নিরাপত্তাহীনতা বাড়তে থাকবে। আসলে দান সম্পদ সৃষ্টি করে, প্রাচুর্য আনে। Affluence always comes as a by-product of providing useful goods and services. অর্থাৎ সম্পদ বা প্রাচুর্য কখনও সরাসরি আসে না। এটি সবসময় ব্যবহার উপযোগী সেবা প্রদানের মাধ্যমেই আসে।

যত সেবা দিতে পারবেন তত আপনার প্রাচুর্য বাড়তে থাকবে। আর্থিক সাদাকা বা দান কীভাবে প্রাচুর্য আনে- একটা চমৎকার বিবরণ রয়েছে মুসলিম শরীফে। দানের বৈষয়িক সমৃদ্ধির একটি বিবরণ রয়েছে- মুসলিম শরীফে। এক লোক পাহাড়ে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো। এমন সময় মেঘ এলো।

মেঘের ওপর থেকে গায়েবী আওয়াজ এলো- অমুকের বাগানে পানি দাও, বৃষ্টি শুরু হলো। সে দেখলো নালা বেয়ে বৃষ্টির পানি একটা বাগানে ঢুকছে। সে গিয়ে ঐ বাগানের মালিককে জিজ্ঞেস করলো, তোমার নাম কী? নাম শুনে সে চমকে উঠলো। কারণ এই নামই সে গায়েব থেকে বলতে শুনেছে। সে তখন জিজ্ঞেস করলো, তুমি এমন কি কাজ করো যে প্রকৃতি তোমাকে পানি দিচ্ছে? সে বললো, আমি এই ক্ষেত থেকে যে সম্পদ উপার্জন করি, এই বাগান থেকে যে ফসল হয় তার তিন ভাগের এক ভাগ দান করি, একভাগ পরিবারের জন্যে ব্যয় করি, এক ভাগ এই বাগানে বিনিয়োগ করি।

এজন্যেই হয়তো আল্লাহ্‌ আমাকে এভাবে সাহায্য করেন। দান কীভাবে প্রাচুর্য আনে? ১. দান উপার্জনকে শুদ্ধ করে। ২. দান পাপ মোচন করে। ৩. দান বালামুসিবত ও রোগ দূর করে। ৪. দান দারিদ্র বিমোচন করে ও দাতার অন্তরে তৃপ্তি প্রদান করে।

৫. দান সম্পদে বরকত আনে। আর্থিক দানের ক্ষেত্রে ভ্রান্ত ধারণা আয় না থাকলে ব্যয় কমিয়ে দান করুন। একটা টাকা যদি আপনার থাকে এবং তা থেকে আপনি যদি পঁচিশ পয়সা দেন সেটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দান। কারণ কতটুকু দিচ্ছেন তা নয়, আল্লাহ্‌ দেখছেন আপনি কোন নিয়তে দিচ্ছেন। প্রতিদিন ৫০ পয়সা দান করেন আর মাসে একদিন ১০০০ টাকা দান করেন, আল্লাহ্‌র কাছে পছন্দনীয় নিয়মিত দান।

সচ্ছল হয়ে পরে দান করবোঃ এ দৃষ্টিভঙ্গি একেবারেই ভ্রান্ত। বরং বলা হয় সচ্ছল হওয়ার জন্যেই দান করা প্রয়োজন। আপনার সময় বা শ্রমও দানঃ সময়ের ব্যাপারে একটা সত্য হলো, হয় আপনি ভালো কাজে সময় দিবেন নয়তো খারাপ কাজে। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই। অর্থাৎ আপনি যদি এখন ভালো কাজ না করেন তো খারাপ কাজ করবেন।

অন্যকে ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করাও দানঃ আপনি অন্যকে ভালো কাজের কথা বলেন। একজন অসুস্থতায় কষ্ট পাচ্ছে, তার জন্য দোয়া করুন। এতে যদি সে উপকার পায় তবে আপনিও বরকত পাবেন। বিদায় হজের ভাষণে নবীজী (সাঃ) বলেছিলেন, যারা এখানে নেই তাদের কাছে আমার কথাগুলো পৌঁছে দিও। দানের প্রতিদান শতগুণ পেতে হলে নিমোক্ত বিষয়ে সচেতন হোনঃ ১. দয়া বা করুনা নয় গ্রহীতার প্রতি মমতা অনুভব করুন।

বিরক্তি দানের বরকত নষ্ট করে দেয়। ২. নিজের পছন্দীয় ভালো জিনিস থেকে শুধু আল্লাহ্‌র সন্থুষ্টির জন্যে দান করুন। ৩. দান বা সেবা করে খোঁটা দেবেন না। ৪. বিনিময়ে কোনো প্রশংসা বা আনুকুল্য বা সমীহ প্রত্যাশা করবেন না। দানের ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র কাছে পছন্দনীয় হলো সেই হাত, যে হাত সবসময় উপরে থাকে।

পরম করুণাময় আল্লাহ্‌ আমাদের সবার হাত সবসময় উপরে রাখুন। তথ্যসূত্র ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।