যুদ্ধকালীন বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, উস্কানি, সহযোগিতা এবং হত্যা-নির্যাতনে বাধা না দেয়ার দায়ে সোমবার জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমকে টানা ৯০ বছর অথবা আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
পাঁচ ধরনের অপরাধের প্রতিটিতেই সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়ার যোগ্য হলেও বয়স ও স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় তাকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক এক বিবৃতিতে এই রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের কাছে আপিল করার দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় নারী-শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে মানুষ হত্যা করার সময় এই অপরাধীরা তাদের বয়স অথবা অন্য কোনো কিছুই বিবেচনা করেনি।
এতে বলা হয়, “গোলাম আযম একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে প্রধান বিরোধিতাকারী এবং পাকিস্তানিদের প্রধান সহযোগী হিসেবে রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনী গঠন করেছিলেন এবং তারই নির্দেশে দেশব্যাপী হত্যাযজ্ঞ চলেছিল।
“তাছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘটিত নির্দিষ্ট গণহত্যার ক্ষেত্রেও তার অপরাধ প্রমাণিত। সুতরাং তাকে কোনো বিবেচনায় রেহায় দেয়া যায় না। ”
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির এক বিবৃতিতে বলা হয়, “এই রায় জাতিকে চরমভাবে হতাশ করেছে। এই রায় ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। এই রায়ের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রতি অবিচার করা হয়েছে।
”
সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শাহ আলমের সই করা ওই বিবৃতিতে বলা হয়, “একাত্তরে বয়সের বিবেচনায় কি গণহত্যা থেকে রক্ষা পেয়েছিল কোনো বৃদ্ধ কিংবা শিশু? তবে কেন গণহত্যার জন্য দোষী প্রমাণিত গোলাম আযমকে বয়সের বিবেচনায় মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই দেয়া হবে?”
এই রায় জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “যুদ্ধাপরাধ সংগঠনের ক্ষেত্রে জামাতের আমীর হিসেবে গোলাম আযমের ভূমিকা ছিল কেন্দ্রীয়। তার বিরুদ্ধে আনা সবগুলো অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। অথচ বয়সের কথা বলে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়নি। এটা জাতি কিছুতেই মেনে নিতে পারে না।
”
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল কেন্দ্রীয় কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির এক বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৯২ সালের গণআদালতে গোলাম আযমের অপরাধকে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ হিসাবে সাব্যস্ত করা হয়েছিল। এটাই ছিল দেশবাসীর প্রকৃত প্রত্যাশা।
“কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রদত্ত রায় জনগণের প্রত্যাশার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। ”
রায় প্রত্যাখান করেছে দেশব্যাপী বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।
বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এক সংবাদ সম্মেলনে জোট সভাপতি নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, “এই রায়ে আমরা বিস্মিত, হতবাক ও ক্ষুব্ধ।
অপ্রত্যাশিত এই রায়ের বিরুদ্ধে সারাদেশের শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের পক্ষ থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় টিএসসিতে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেন তিনি।
জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ বলেন, “গোলাম আযমের মতো যুদ্ধাপরাধীর শিরোমণির সর্বোচ্চ শাস্তি না হলে মানবতা পরাজিত হবে, জাতি কলঙ্কিত হবে। ”
‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানে’র সভাপতি সাজ্জাদ হোসেনের সই করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, গোলাম আযমকে সর্বোচ্চ শাস্তি না দেয়ায় বিচারপ্রার্থী জনগণের প্রতি অবিচার করা হয়েছে।
“সুপিরিয়র রেসপনসিবলিটি প্রমাণিত হওয়ার পরও শুধুমাত্র বয়সের বিবেচনায় এ রায় এক ধরনের প্রহসন।
”
এছাড়া বাংলাদেশ যুবমৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের পক্ষ থেকেও বিবৃতি দিয়ে রায় প্রত্যাখ্যান করা হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।