আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভূমিকম্প অথবা একটি বেদনাবিধুর কাহিনী!

স্বপ্ন ছুঁয়ে চিৎকার শুনে মনে হল, কেউ মারা গেছে অথবা আমি মারা যাচ্ছি! চিৎকার করছে আমার ছোট বোন। আমি অবশ্য চিৎকারের চেয়ে বেশি মনোযোগী হলাম এই ভেবে যে আমার মাথা ঘুরছে কেন এভাবে? আসলে মাথা ঘুরছিল না, ভূমিকম্প হচ্ছিল! সবাই যখন বাড়ির নিচে নেমে আতঙ্কে অথবা স্বস্তিতে কান ঝালা পালা করে দিচ্ছে কথা আর চেঁচামেচিতে ততক্ষনে আমি ধীরে সুস্থে নেমে এলাম নিচে! বাবা আমাকে দেখে মুখ খিঁচিয়ে বললেন, কোথায় ছিলি? ভূমিকম্প হচ্ছে শুনতে পাস না? আমি খুবই বিনীত ভাবে বললাম বাবা, ভূমিকম্প শুনতে পাওয়া যায় না, টের পাওয়া যায়! তবে আমাদের বাড়িটা ভেঙ্গে পড়লে হয়ত কিছু শুনলেও শুনতে পেতাম! বা্বা, আর কথা না বাড়িয়ে আমার সামনে থেকে সরে গেলেন। আমি যে খুব সাহসী তাই ভূমিকম্প এর তীব্রতা টের পেয়েও আর সবার মত দৌড়াদৌড়ি না করে এরকম শান্ত থাকলাম তা কিন্তু না! আসলে আমি ছিলাম বাথরুমে ! না পারি বের হতে না পারি ভেতরে থাকতে! আমার মনে হয় ভূমিকম্পের সময় সবেচেয়ে আতঙ্কে থাকেন বাথরুমে অবস্থান কারীরাই! বেচারাদের অবস্থা হয় শ্যাম রাখি না কূল রাখির মত! বস্ত্র সামলাবো নাকি বাথরুম থেকে বের হব! যাই হোক, একটু পরেই শুরু হল যথারীতি ফোন পর্ব। কিন্তু ফোনে নেটওয়ার্ক নেই! যাক, স্বস্তি পেলাম আমি! ফোনে নেটওয়ার্ক থাকলে এতক্ষনে আমার সমস্ত ব্যালান্স হাওয়া হয়ে যেত দুই বোনের কল্যানে! এদিকে ভূমিকম্পের সময় আমার বাথরুমে থাকার কথা ততক্ষনে বিবিসি ওয়ার্ল্ড আকারে সম্প্রাচারিত হতে শুরু করেছে! সম্প্রচারের দায়িত্বে আছে আমার ছোট ও মেজো বোন! কিছুক্ষন পর পাশের বাসার মিলি এসে বলল, " হাসিব ভাই, আপনি নাকি ভূমিকম্পের সময় বাথরুমে আটকা পড়ে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছিলেন?"। কি আর বলব! ঘটনার নাকি ডালাপালা গজায়! কিন্তু আমার ঘটনাকে বটগাছ বানিয়ে ফেলেছে ঝুমু, আমার ছোট বোন।

দুঃখিত এবং একই সাথে রাগান্বিত চোখে তাকালাম মিলির দিকে! এর মাঝেই মিলির ছোট ভাই টিংকু এসে বলল, "ভাইয়া আপনার জিপার খোলা!", মানুষ অধিক শোকে পাথর হয়, আমি স্টেইনলেস স্টীল হয়ে গেলাম রাতের বেলায় ফোন করল, ঝুমুর এক বান্ধবী। নিশি নাম। "হ্যালো হাসিব ভাইয়া, আপনি নাকি আজ ভূমিকম্পের সময় বাথরুমে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন ভয়ে? এখন কেমন আছেন? ", কথা শেষ হওয়ার আগেই ওপাশ থেকে শুনতে পেলাম আরো কয়েকটি নারী কণ্ঠের হাসি! ঝুমু, আজ তোকে আমি যদি আছাড় না মারছি, এই প্রতিজ্ঞা করে ঝুমুর রুমে ঢোকার আগেই মা এসে হাজির। "তুই এত গাধা কেন বলতো? ভূমিকম্পের সময় কেউ বাথরুমে যায়? "। হতভম্ব আমি বলার সুযোগই পেলাম না যে, আমি তো আর ভূমিকম্প হচ্ছে এই আনন্দে বাথরুমে যাইনি! পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানে গেলাম পরদিন বিকেলে।

জুনিয়র পোলাপান আইসা বলতেছে , "ভাইয়া আপনি নাকি ভূমিকম্পের সময় ভয়ে বাথরুমে ঢুকে গেছিলেন?" মুখ খিঁচিয়ে ওদের ভাগাতেই বন্ধুরা এসে হাজির! "কিরে দোস্ত, তুইতো এখন টক অব দ্যা মহল্লা! আরে জেসমিন কি কইছে জানস তোরে নিয়া ( জেসমিন, আমাদের পাড়ার সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে! )?"। কি কইছে ?, সমস্ত আগ্রহ এক সাথে নিয়ে জানতে চাই আমি! "কইছে যে তোর মত ছাগল নাকি সে জীবনেও দেখে নাই! যে নাকি ভূমিকম্পের সময় বাথরুমে লুকায়! "। বন্ধুরা অট্টহাসি হাসছে! চার বছর বয়সের ভাতিজা জিজ্ঞেস করল,চাচ্চু ভূমিতপ্প কি? এই পুঁচকাকে আমি কিভাবে বুঝাই ভূমিকম্প কি! যাই হোক, আমার রুমে নড়বড়ে একটা টেবিল আছে । সেটার উপর ওকে বসিয়ে জোরে কয়েকটা ঝাঁকুনি দিলাম! আর বললাম এইটা হচ্ছে ভূমিকম্প! সে মহাখুশি! বলল, "ভূমিতপ্প খুব মজা! আমাকে আরো ভূমিতপ্প দাও! "। দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমি ও বললাম, হ্যাঁ ভুমিকম্প খুবই মজা ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।