আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তিন সন্তানসহ আত্মহত্যার চেষ্টা

সরাইল থেকে: সরাইলের সাবিনা ও তার স্বামী হারুনের দাম্পত্য জীবনের একমাত্র বাধা এখন ফতোয়া। স্থানীয় মৌলভীর ফতোয়া তামিল করতে গ্রাম্য সর্দার-মাতব্বররা এখন মরিয়া। স্বামীর আয়ে সংসার চললেও স্বামী-স্ত্রীর মিলনকে হারাম বলছেন ওই মৌলভী। রাগের মাথায় কিছু বললেও তিন সন্তান নিয়ে সাজানো সংসার ভাঙতে নারাজ হারুন। স্ত্রী সাবিনারও একই কথা।

কিন্তু সমাজপতিরা ফতোয়াকে সামনে ধরে হিল্লা বিয়ের কথা বলে স্বামী ও স্ত্রীকে আলাদা করে রেখেছে আজ এক মাস। নিরূপায় হয়ে ওই পরিবার গত শনিবার গায়ে কেরোসিন ঢেলে ৩ সন্তানসহ আত্মহত্যার চেষ্টা করে। সাবিনার পারিবারিক সূত্র জানায়, ১০ বছর পূর্বে সদর উপজেলার মালিহাতা গ্রামের মৃত আবদুস সামাদ মিয়ার পুত্র হারুন মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় সাবিনার। সাবিনার বাড়ি সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের মধ্যপাড়ায়। তাদের দাম্পত্য জীবন ভালই চলছিল।

বন্যা (৮), আরিফা (৫) ও জান্নাত (০১) নামের তিন কন্যা সন্তানের জনক-জননী তারা। অভাব অনটনের সংসারে মাঝে মধ্যে স্বামী-স্ত্রী কথা কাটাকাটি হয়। গত ১৯শে আগস্ট তাদের ঝগড়ার এক ফাঁকে প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামী হারুন তার স্ত্রী সাবিনাকে তালাক বলে ফেলে। পরক্ষণেই আবার ভীষণ অনুতপ্ত হন হারুন। বিষয়টিকে লুফে নেন গ্রাম্য কিছু সর্দার।

সর্দারি পাকাপোক্তভাবে জাহির করতে উঠেপড়ে লেগে যা তারা। সর্দার ও সাবেক ইউপি সদস্য মো. জিল্লুর রহমান (৬০), আবদুল আহাদ (৬৫) ও তাজুল ইসলাম (৫০) ছুটে যান গ্রামের মালিহাতা মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মাওলানা মো. আবিদুর রহমানের কাছে। তিনি বিষয়টি জেনে সাদা কাগজে লিখিত ফতোয়া দেন। ফতোয়ায় লিখেন- ‘হারুন মিয়ার স্ত্রীর উপর তিন তালাক ‘মুগাল্লাজা’ পতিত হয়ে গিয়াছে। ওই স্ত্রী তার জন্য চিরতরে হারাম হয়ে গিয়াছে।

শরিয়ত মতে হিল্লা ব্যতিত ওই স্ত্রী তার জন্য কোনভাবেই হালাল হবে না’। ফতোয়া পেয়ে বিষয়টিকে চেপে ধরেন সর্দাররা। হারুন মিয়া ও সাবিনা একই বাড়িতে চলাফেরা করেন। রাতে হারুন মিয়া থাকেন তার মায়ের ঘরে আর স্ত্রী সাবিনা তিন সন্তানসহ থাকেন স্বামীর ঘরে। হারুন মিয়া অন্য লোক মারফত বাজার পৌঁছান স্ত্রীর কাছে।

এভাবে তাদের সংসার চলছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে সরজমিনে মালিহাতা গ্রামে গেলে দৌড়ে আসেন হারুন মিয়া ও সাবিনা। দু’জনেই ইচ্ছা পোষণ করেন ঘর সংসার করার। কিন্তু বাধা এখন ফতোয়া ও গ্রাম্য সর্দাররা। সাবিনা বলেন, আমি এই ফতোয়া মানি না।

হিল্লা বিয়ে না করে মরে যাবো। স্বামী ও তিন সন্তানের ওপরে পৃথিবীতে আমার কেউ নেই। স্বামীর ভুলের জন্য কাফফ্‌ারা দিয়ে সংসার করতে চায়। আমার স্বামীর সঙ্গে প্রায়ই মুঠোফোনে কথা হয়। মনের দুঃখে গত শনিবার রাতে গায়ে কেরোসিন ঢেলে তিন সন্তানসহ আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলাম।

হারুন মিয়া বলেন, সংসার ভাঙার চিন্তা আমার মাথায় নেই। রাগের মাথায় কি বলেছি জানি না। মৌলভী ও সর্দাররা হিল্লা বিয়ের কথা বলছেন। এটা আমি বুঝি না, মানি না। আমি স্ত্রী সন্তান ও সংসার চাই।

মালিহাতা গ্রামের সালিশকারক তাজুল মিয়া, আবদুল আহাদ, জিল্লুর মেম্বার ও বর্তমান মেম্বার মো. জাকির হোসেন ফতোয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, হিল্লা বিয়ে ছাড়া তাদের দাম্পত্য জীবন ইসলাম সমর্থন করে না। সাবিনাকে তিন মাস ১০ দিন অপেক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে আরও বড় মাওলানার সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিবো। এ ব্যাপারে লিখিত ফতোয়া প্রদানকারী মাওলানা মো. আবিদুর রহমান লিখিত ফতোয়া দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি সরকার নিযুক্ত মুফতি নই। কিছু সর্দার বাড়িতে এসেছিল।

তাই এ বিষয়ে ফতোয়া দিয়েছি। স্বামী-স্ত্রীর পুনর্মিলনে হিল্লা বিয়ে প্রয়োজন। তা না করলে বিষয়টি শুদ্ধ হবে না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।