আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক জোড়া হাই হিল

............................................ জিনি ও সুমি দুই কর্মজীবি বান্ধবী একই ফ্ল্যাটে থাকে। কিছুদিন পর সুমি জানালো এই ফ্ল্যাটে সুমির ছোটবেলার এক বান্ধবী এসে থাকা শুরু করবে। জিনির অনেক আপত্তি সত্ত্বেও মেয়েটা এসে গেল। মেয়েটার নাম জ্যোতি। গ্রাম থেকে আসা জ্যোতি বড়ই সাদামাঠা।

শহরে এসেছে ছোটখাট চাকরির জন্য। এদিকে জিনির বিরক্তির সীমা থাকে না। এইরকম গ্রাম্য-ক্ষ্যাত-আনকালচারড্ মেয়ের সাথে থাকতে হবে ভাবলেই ঘেন্নায় তার গা রি রি করে ওঠে। প্রথমদিনই জিনি সুমিকে জানিয়ে দিলো তার ক্ষ্যাত বান্ধবী যেন তার ওয়াশরুম ইউজ না করে। জ্যোতির অনেক মন খারাপ হলো।

কিন্তু সে কথা সে কাউকেই বলতে পারলো না। সে ভাবলো কিভাবে সে জিনির সাথে এ্যাডজাস্ট করবে। জিনিকে খুশি করার অনেক চেষ্টা সে করলো। ঘর সাজানো থেকে শুরু করে খাওয়াটাও জিনির কাছে এগিয়ে দিতো সে। কিন্তু জিনির মন একটুও গলতো না।

জ্যোতি এ ফ্ল্যাটে উঠেছিল শুধু একটা খাট আর আলমারী নিয়ে। শহরে এসেই কেনা এগুলো। আলমারীটা খুলে প্রথমদিনই সে দেখেছিলো ভেতরে এক জোড়া সুন্দর হাই হিল জুতো। প্রায়ই সে হিল জোড়া পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতো। কেমন যেন অদ্ভুত অনুভূতি হতো।

নিজেকে ভীষণ স্মার্ট মনে হতো। এরই মাঝে সুমি জ্যোতির জন্য একটা রিসিপশনিস্টের চাকরির ইন্টারভ্যুর ব্যবস্থা করলো। এতে জ্যোতি ভীষণ খুশি হলেও জিনির আচরণে সে ভীষণ কষ্ট পেল। জিনি বললো, উফ!! শেষ পর্যন্ত একটা রিসিপশনিস্টের সাথে আমার থাকতে হবে!! সুমি জিনির এ ধরনের কথাবার্তায় সব সময় প্রতিবাদ করতো কিন্তু জিনি শুনতো না। যদিও জ্যোতি লো কনফিডেন্সের জন্য ঐ চাকরিটা পায় না।

সুমির জন্মদিনে ওর সব ফ্রেন্ডরা বাসায় এসে বসে থাকলো সুমিকে সারপ্রাইজ দিবে তাই। সুমির বয়ফ্রেন্ড আকাশ ছেলেটারই আইডিয়া ছিল এটা। ওরা সবাই মিলে ঘর সাজালো। জ্যোতিও অনেক কাজ করেছিলো। কাজ শেষে সে তার মতো সাজগোজ করে সবার মাঝে এলো।

ততক্ষণে দেখে সুমিও এসে পড়েছে। তখন জিনি জ্যোতিকে দেখে টিটকারি মেরে বললো, এটা সুমির বার্থ ডে পার্টি, বুঝেছো!! তোমার সাজপোশাক দেখে মনে হচ্ছে তুমি বিয়ে খেতে এসেছো। হাহাহা জ্যোতি মনের দু:খে নিজের রুমে গিয়ে কাঁদতে লাগলো। হঠাৎ সে দেখতে পেলো ঐ জুতো জোড়া তার বিছানার উপর!! সে বেশ অবাক হয়ে ভাবলো এখানে এটা কি করে! কিন্তু মন এতোটাই খারাপ হয়েছিল যে সে তার বিস্ময়কে খুব বেশি প্রশ্রয় দিলো না। মেঝের উপর জুতা জোড়া রেখে সে পরে নিলো।

তারপরই তার কি হয়ে গেল সে জানেনা। সে বেশ খোলামেলা আধুনিক পোশাক পরে সবার সামনে চলে গেল। সবাই তাকে দেখে অনেক প্রশংসা করলো। শুধু জিনি বাদে। সে সচারচর যেমন কটাক্ষ করে, তেমনই কটাক্ষ উক্তি করে বসলো।

অন্যসময় জিনির কটাক্ষ উক্তি শুনে জ্যোতি মন খারাপ করে কেঁদে ফেলে। কিন্তু এইবার প্রথম তার প্রচন্ড রাগ হয়। ইচ্ছা করে কেক কাটার ছুরিটা দিয়ে জিনিকে গেঁথে ফেলতে। সে অনেক কষ্টে নিজেকে সামলালো। সামলাতে গিয়ে সে রাগে ক্রোধে পড়ে যাচ্ছিলো।

তখন আকাশ তাকে এসে ধরলো। সেই সময় থেকে জ্যোতির আকাশের প্রতি মনে একটা বিশেষ ধরনের ভালো লাগা কাজ করতে লাগলো। আকস্মিক একটা ঘটনা ঘটলো। বাসার মেইন দরজার সামনে সুমি তার মায়ের দেওয়া যে চাইমটা টানিয়েছিল সেটা আচানক ভেঙ্গে পড়লো। সুমি এটাতে বেশ চিন্তিত হয়ে গেল।

সবাই বললো, এটাতে এতো চিন্তিত হবার কী আছে। নতুন একটা কিনে লাগিয়ে দিলেই হবে। সুমি বললো, আমার মা বলেছিল যখন বাড়িতে কোনো অশুভ কিছু হবে তখন ওটা আপনা আপনি ভেঙ্গে যাবে। সুমিকে সবাই তিরস্কার করলো এই যুগেও এই টাইপ কুসংস্কার বিশ্বাস করার জন্য। কিন্তু সুমি ব্যাপারটা ফেলে দিতে পারলো না।

আকাশ প্রায়ই বাসায় আসতো। জ্যোতির চোখে পড়তো সুমির সাথে আকাশের ঘনিষ্ঠতা। অনেক কষ্ট হতো ওর। লুকিয়ে লুকিয়ে ওদেরকে দেখতো আর চোখে পানি পড়তো। এদিকে জিনি জ্যোতির আকস্মিক পরিবর্তন দেখে বেশ অবাক হলো।

জ্যোতিকে সে ফলো করতো। প্রায়ই দেখতো জ্যোতি ঘুমানোর সময় ঐ হিল জোড়াকে সাথে নিয়ে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। আর জেগে থাকলে তো কথাই নাই। সে ঐ হিল জোড়া পরেই বসে থাকতো। জ্যোতি যে সুমি আর আকাশকে লুকিয়ে দেখে সেটাও চোখ এড়ালো না জিনির।

একদিন হাতেনাতে ধরে আচ্ছা মতো শাসিয়েও দিলো সে জ্যোতিকে। ঐ হিল জ্যোতির ভেতরে এমন পরিবর্তন এনে দিয়েছিল যে নিস্পাপ-নিরীহ-নিশ্চুপ জ্যোতি মেয়েটা হয়ে গেছিল বন্য পশুর মতো প্রচন্ড হিংস্র। প্রায়ই তার ইচ্ছা করতো জিনিকে খুন করে ফেলে। বিশেষ করে যখন আকাশের প্রতি তার ভাললাগা বুঝতে পেরে শাসিয়েছিল জিনি, তখনই জ্যোতি জিনির জন্য একটা পার্মানেন্ট ব্যবস্থা করবে ভেবে রেখেছিল। একদিন জিনি বাসায় বসে একা ছুটি কাটাচ্ছিল।

টেলিভিশন দেখতে দেখতে হঠাৎ অফ হয়ে গেল। জিনি আবার অন করলো। কিন্তু আবারও সেটা অফ হয়ে গেল। এভাবে সে যতবার টেলিভিশন অন করে ততোবার সেটা অফ হয়ে যায়। একটা সময় দেখে টেলিভিশন আপনা আপনি একবার অন, একবার অফ হচ্ছে।

সে বেশ ভয় পেয়ে যায়। মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফোন করতে যায়। কিন্তু দেখে কোনই নেটওয়ার্ক নাই। ভয়ে ওর অনেক তেষ্টা পেয়ে যায়। খাবার টেবিলে ছুটে যায় পানি খেতে।

সেখানেও দেখে অদ্ভুত অবস্থা। পুরো টেবিলটা ঠকঠক করে কাঁপছে। জিনি ভাবে সে বাসা থেকে বাইরে বের হয়ে যাবে। কিন্তু যতবার সে ছুটে যেতে চায় ততোবার একটার পর একটা ফার্নিচার তার সামনে এসে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। সন্ধ্যার সময় সুমি অফিস করে বাসায় ফেরে।

বাসায় ঢুকেই জিনির পড়ে থাকা লাশ দেখে। তারপর পুলিশকে খবর দেয়। সুমি তার বান্ধবীর রহস্যজনক মৃত্যুতে বেশ ভেঙ্গে পড়ে। জ্যোতি তাকে সান্ত্বণা দিতে থাকে। জিনির লাশের পোস্টমর্টেম রিপোর্টে দেখা যায়, তাকে খুন করা হয়েছে।

আর তার খুন হয়েছে এক জোড়া হাই হিল জুতা দিয়ে। আর দুর্ভাগ্যবশত সেই জুতাটা সুমির থাকে। এজন্য পুলিশ সুমিকে এ্যারেস্ট করে নিয়ে যায়। জ্যোতি কেঁদে ফেলে। সুমিকে আশ্বাস দেয় যে সে যেন কোনো চিন্তা না করে।

আকাশকে বলে সবকিছু ঠিক করে ফেলবে। এরপর আকাশ ঐ ফ্ল্যাটে এসে জ্যোতির কাছে সব ঘটনা শুনে। সেও ভীষণ আপসেট হয়ে যায়। জ্যোতি কাঁদতে কাঁদতে আকাশের খুব কাছে চলে যায়। আকাশকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

আকাশের জ্যোতিকে কেমন যেন অস্বাভাবিক মনে হতে থাকে। সে এক ঝাঁটকায় জ্যোতিকে সরিয়ে দেয়। জ্যোতি অবাক হয়ে যায়। পাগলের মতো বলতে থাকে সে তাকে ভালোবাসে। আকাশ রেগে গিয়ে বলে, তুমি সুমির বান্ধবী বলেই তোমার সাথে আমার এতো ঘনিষ্ঠতা।

তুমি এমন আমি আগে বুঝিনি। ছি...তুমি তোমার বান্ধবীর অনুপস্থিতিতে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে....!! তুমি এমন আগে আমার জানা ছিল না। এরপরেই আকাশ বের হয়ে যায়। সুমি পুলিশের কাছে ছাড়া পেয়ে প্রথমেই বাসায় যায়। এরপর আকাশকে ফোন দেয়।

আকাশ বলে, তুমি জানোনা জ্যোতি মেয়েটা কত্ত বড়...! আমার তো এখন ধারণা জিনিকে ও-ই খুন করেছে! সাক্ষাতে তোমাকে সব বলবো, তুমি দয়া করে ঐ বাসা থেকে ওর থেকে দূরে থাকো। সুমি জ্যোতিকে জানায় সে খুব শীঘ্রই আকাশকে বিয়ে করবে, এজন্য সে যেন অন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা দ্রুত করে ফেলে । এটা শুনে জ্যোতি ভীষণ রেগে যায়। সুমি অবাক হয়ে বলে জানতে চায় কেন সে তার বিয়েতে খুশি না! দুইজনের কথা কাটাকাটি হয়। সুমি বাসা থেকে বের হয়ে যাবে বলে এবং বের হবার আগেই জ্যোতি তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে মারতে থাকে।

এরপরই সুমি বুঝতে পারলো তার সামনে বিপদ। সে দৌড়ে নিজের বেডরুমে ঢুকে গেল। জ্যোতি দরজা ধাক্কিয়ে বলতে লাগলো, সুমি সোনাপাখিটা প্লিজ দরজা খোল। তুমি লক্ষী মেয়ের তো দরজা খুললে আমি আস্তে করে তোমার জানটা নিয়ে নেবো। কিন্তু তুমি যদি এমন করতে থাকো তাহলে কিন্তু আমি তোমার ওপর ভীষণ টর্চার করবো, অনেক অনেক টর্চার করে করে তোমাকে মেরে ফেলবো!! হেহেহহে এর কিছুক্ষণ পর জ্যোতি কিচেন থেকে চাপাতি নিয়ে দরজা কোপাতে লাগলো।

সুমি দরজা আটকে দিয়ে ভেবেছিল সে বেঁচে গেছে। কিন্তু না। সে দেখলো জ্যোতি নিমিষেই দরজা খুলে ফেললো কোপাতে কোপাতে। সুমি ভয়ে আলমারির পেছনে লুকিয়ে পড়লো। জ্যোতি রুমে ঢুকে সুমিকে কোথাও খুঁজে পেল না।

খাটের তলায় দেখলো, সেখানেও নাই। তারপর আদরমাখা গলায় বললো, সুমি এমন পাগলামো করে না লক্ষীসোনা। তাড়াতাড়ি আমার হাতে ধরা দাও তুমি। আস্তে করে জানটা আমাকে দিয়ে দাও। জ্যোতি সুমিকে খুঁজে না পেয়ে চলে যাচ্ছিলো ঠিক তখনই সুমি আস্তে করে খাটের তলায় এসে ঢুকে পড়লো।

তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলো, যাক বাঁচা গেল!! এর কিছুক্ষণ পরেই খাটের তলায় এসে জ্যোতি ওকে সেই অস্ত্রটা দিয়ে আঘাত করতে গেল। সুমি গায়ের জোরে ওকে একটা ধাক্কা দিয়ে ফেলে ওখান থেকে বের হয়ে পড়লো। কিন্তু সে বের হয়ে আর যাবে কোথায়!! বাইরে যাবার রাস্তা পর্যন্ত যাওয়ার আগেই জ্যোতি সেই অস্ত্র নিয়ে আবার ওর উপর হামলা করতে চলে এলো। সুমিকে ধরতে যায় আর বলে, ময়নাপাখি দেখো, তোমাকে কিন্তু অনেক সময় দিয়েছি। আর দিবো না।

তুমি বেঁচে থাকলে আকাশ আমাকে কখনোই আপন করে নিবে না। তাড়াতাড়ি আমার হাতে ধরা দিয়ে জানটা দাও। আমাকে আর কষ্ট দিও না খামোখা। এরপরই জ্যোতি সুমিকে ধরে ফেলে। যেই না সুমিকে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতে যাবে, ঠিক তখন সুমি ওর হাতে থাকা ফুলদানীটা দিয়ে জ্যোতির মাথায় আঘাত করে।

জ্যোতি জ্ঞান হারায়। সুমি কাঁদতে থাকে। সে ভাবে জ্যোতি বোধহয় মারা গেছে। তার সাথে এগুলো কি হচ্ছে, কেন হচ্ছে এগুলো ভেবে আরও কান্না আসে তার। হঠাৎ জ্যোতির চোখ খুলে যায়।

সে হিংস্র হয়ে উঠে পড়ে। পশুর মতো গর্জন করতে থাকে। সুমিকে ধরে ফেলে সে। ওর ঠিক মাথা বরাবর সে অস্ত্রটা দিয়ে কোপ দিতে যাবে, ঠিক এমন মুহূর্তে আকাশ আর সুমির মা ঢুকে পড়ে। সুমির মা ঢুকেই জ্যোতির উপর পানির ছিটা দেয়।

এতে করে জ্যোতি কেমন যেন একটা ঝিটকা মেরে দাঁড়িয়ে পড়ে। এরপর সুমির মা লাল সুতা দিয়ে জ্যোতির শরীরে পেঁচিয়ে দিতে থাকে। এতে আরো একটা ঝিটকা মেরে মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে যায়। তারপর একটা লাল ওড়না তার গায়ে জড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে আরো একটা ঝিটকা মারে এবং তার পা থেকে সেই হিল জোড়া খুলে যায়।

সুমির মা বলে, এখন আর কোনো ভয় নেই। এই হিল জোড়াই হলো সব নষ্টের মূল!! এটা এমন জায়গায় ফেলে এসো যাতে এটা আর কেউ ব্যবহার করতে না পারে!! এর কিছুদিন পর জ্যোতি তার দেশের বাড়ি চলে যায়। আকাশ আর সুমি বিয়ে করে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে থাকে। .................................................................................................................................................... [সম্প্রতি আমি একটা ভৌতিক নাটক দেখেছি। সেটার কাহিনীই এটা।

এটা নাকি সত্যি ঘটনা। কোনো পাগলেও বিশ্বাস করবে? আমি অবশ্য হুবুহু লিখিনি। নিজের মতো করে লিখেছি। নাটকটা দেখার সময় খুবই হাসি পাচ্ছিল। এটা লেখার সময়-ও প্রচন্ড হাসি পেয়েছে।

দয়া করে... নাটকের নাম জানতে চেয়ে আমাকে লজ্জা দিবেন না। এটা এমনই একটা নাটক যা মনেহয় কোনো পাগলেও দেখে না ] ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।