নিজের দিকে যখন তাকাই তখন একটা প্রশ্নই করি যে কোন কাজটা আমি অনেক ভালো পারি। আসলে অনেক কাজই করতে পারি কিন্তু প্রশ্নটার ভিতর যখন সবচেয়ে অথবা অনেক শব্দটার যোগ হয় তখন উত্তরটি একটু কঠিন হয়ে যায় আমার জন্য, কারন অনেক ভালো পারা মানে হলো যে অন্য আট দশ জনের চেয়ে ভালো পারা। এই দৃস্টিকোণ থেকে দেখলে একটা উত্তরই আসে সেটা হল রান্নাবান্না অথবা ভোজন সংক্রান্ত বিষয়গুলি এবং টেস্টসেন্সের প্রয়োগের ব্যাপারে আমার দখল একটু বেশিই। এটা অন্তত আমার কাছের কিছু মানুষ দ্বারা স্বীকৃত। আবার এমন অনেকেই আছে যারা আমার সামনে কিছু না বললেও নিজেদের প্রয়োজনে আমার কাছ থেকে রেসিপি অথবা রান্নার টেকনিকটা শিখে নিতে চায়, তা থেকেই বুঝতে পারি তারা আমার রান্নাতে সন্তুষ্ট আর বিভিন্ন উসিলায় যেসব বারবিকিউ পার্টি হয় তার নেতৃত্বপদটা নিশ্চিত ভাবেই আমার জন্য খালি করা থাকে।
বাজার করা থেকে প্লেটে খাবার উঠিয়ে দেয়া পর্যন্ত পুরোপুরি আমার নিয়ন্ত্রনে থাকে। খাবার উঠিয়ে দেয়ার পরে আমার ক্ষমতার অবসান ঘটে.........পাঠক ভুলেও ভাববেন না যে যা রান্না করি তার সবকিছুই সবসময় বেস্ট টেস্ট হয়। বারবিকিউ এর কথাই বলি, সদাইপাতি ছাড়াও এটা করতে গেলে দুই তিন দিনের একটা প্ল্যানের প্রয়োজন হয়। ৫/৬ জনের বন্দুদের একটা দল লাগে। নিরব এবং নিরাপদ একটা পরিবেশ লাগে।
এবং সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন যেটা সেটা হল সবার অংশগ্রহন। আমার বন্ধুদের ক্ষেত্রে যেটা হয় সেটা হল আমি সবার মধ্যে কাজ ভাগাভাগি করে দিই। কাউকে বাজার করার সময় সাথে নেই, কাউকে কয়লা ভাংতে দেই। কাউকে কয়লাতে আগুন জ্বালাতে দেই, কাউকে কয়লা কে সারাক্ষন জৃলন্ত রাখার জন্য পাখা দিয়ে বাতাস করার দায়িত্ব দেই, আনাড়ি কেউ থাকলে তাকে কাজটা শিখিয়ে দেই এবং তাকে করার স্বাধীনতা দেই, সে ঠিক ঠিক কাজটি সম্পন্ন করে ফেলে অতি উৎসাহের সাথে। এরমধ্যে মুরগী ধোয়া বা মসলার পরিমান অথবা মসলার মিশ্রনের দায়িত্বটা আমি নেই অত্যন্ত আত্ববিশ্বাসের সাথে।
সব আয়োজন সম্পন্ন হতে হতে অনেক রাত হয়ে যায় ততক্ষনে সবাই ক্লান্ত ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ে, তখন তাদের পাতে যে খাবার তুলে দেয়া হয় তাতে সবার পরিশ্রমের ভাগ আছে তো সেই খাবার তো তাদের কাছে অসাধারন লাগবেই....আর সাথে যদি পরিবেশটা মনমতো হয় তখন খাবারের স্বাদ কমপক্ষে তিনগুন বেড়ে যায়। তখন খেতে খেতে যখন কোন বন্ধু বলে যে "দোস্ত খাইতে চরম লাগতেছে" ঠিক তখনই আমি আমার মুখটাকে একদিকে ছড়িয়ে তেরা একটা হাসি দিয়ে বলি "চুপচাপ খা" ঠিক তখনই খাবারের স্বাদের পুরো কৃতিত্ব নিজের পকেটে চলে আসে। ( কাজটা করি অনেকটা ইচ্ছাকৃত ভাবেই )।
আমার নিজের শখগুলির মধ্যে রান্নাটা অন্যতম। টিভিতে রান্না বা রেসিপি সংক্রান্ত প্রোগ্রাম গুলি খুব আগ্রহ নিয়ে দেখি।
কারো রান্না ভালো লাগলে মাথায় রেখে দিই পরে ট্রাই করবো বলে। আর কারো রান্না খারাপ হলে মুখের অভিব্যাক্তি টা ঠিক সেরকম হয় যেরকমটা হয় কোন প্রিয় ক্রিকেটার প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হলে। ইউটিউবে অন্যান্য ভিডিওর পাশাপাশি রান্নার ভিডিও গুলিও নিয়মিত দেখি
অনেকে রান্না খেয়ে বলে তোর বউয়ের তো কোনো কষ্টই করতে হবে না, তোর বউতো অনেক সুখী হবে। বলা বাহুল্য পারতপক্ষে ঐসবে কান না দেয়ার চেষ্টা করি। আমার রান্নার যে বিষয়টা তে আমি জোর দেই সেটা হল যে যেটাই বলুক আমার রান্নার সবচেয়ে বড় সমালোচক আমি নিজে।
আমার একটা রান্নাতে আমি যতক্ষন পর্যন্ত আমি নিজে না সন্তূস্ট না হই ততক্ষন আমি চেস্টা চালাতে থাকি।
যেকোনো খাবার জিভে ছোয়া লাগানোর সাথে সাথে মাথায় চলতে থাকে রান্নার প্রক্রিয়া এবং মশলার বিশ্লেষণ। সাথে চলতে থাকে ভোজন সংগীর সাথে খাবারের স্বাদের গুনাগুন বিচার। কোনো খাবার যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে সেটাকে নিজের রান্নাঘরে এসে নিজের আয়ত্বে নিয়ে আসার চেস্টা সেটা চকবাজারের নুরানী লাচ্ছি ই হোক আর রেডিসনের পাস্তা উইথ হোয়াইট সস ই হোক....নিজের সবটুকু দিয়ে চেস্টা করি হুবহু স্বাদ নিয়ে আসার। তারপর গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করি কাছের মানুষদেরকে যারা অত্যন্ত উৎসাহের সাথেই আমার অত্যাচার গুলি হজম করে এবং পরবর্তী যেকোনো প্রজেক্টের জন্য গিনিপিগ হওয়ার আশাব্যক্ত করে..........আর আমি আমার গিনিপিগ দের চোখে মুখে যে পরিতৃপ্তির ঝিলিক দেখি তাতেই আমার সন্তুষ্টি..........আর ব্লগে কেন বেশিরভাগ সময়ে ফুড পোস্ট দেই?? কারন আর আমি নিজে অত্যন্ত ভোজন রসিক একজন মানুষ এবং মানুষকে রেধে খাওয়াতে অনেক পছন্দ করি কিন্তু ব্লগে তো আর রান্না করে খাওয়াতে পারবনা তাই পোস্ট ই সই
(সংক্ষিপ্ত ও পরিমার্জিত)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।