খবর টি শোনা মাত্রই মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। গত কাল রাত প্রায় ২ টা। দল ছুট ব্যান্ড এর ম্যানেজার ও গীতিকার শাহান কবন্ধর ফোন এলো আমার সেল ফোনে। ভাবলাম মগবাজারের বাপ্পা মজুমদারের স্টুডিও তে ওরা হয়তো কোন ভয়েস রেকর্ড করছে। বেশ মজায় আছে।
তাই আমাকে ফোন দিয়ে একটু জ্বালাবে শাহান। প্রথমে ফোন ধরতে চাইনি। কিন্তু কি মনে করে ধরে ফেললাম। ফোন রিসিভ করেই বলে উঠলাম কিরে আর কত জ্বালাবি? তোদের জন্য কি ঘুমানো ও যাবেনা? বল কি বলবি? আমার কথা শুনেই শাহান কাতর কণ্ঠে বলল ভাইয়া ব্যাড নিউজ আছে? আমি ভাবলাম ও ফান করছে। আমি বললাম কি চাঁদনির বাচ্চা কাচ্চা হয়েছে কি? ( চাঁদনী বাপ্পা মজুমদারের স্ত্রী)।
শাহান বলল ভাই জয়নুল ভাই আর নেই!!
জয়নুল আলম আমার অত্যন্ত প্রিয় একজন মানুষ সঙ্গীত শিল্পী ফাহমিদা নবীর স্বামী। আমি শাহান কে বললাম তুই কি ঠিক বলছিস। ও বলল হা আমি ঠিক বলছি। আমার সারা শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছিল। ঈদের আগে জয়নুল ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল আমার।
ফাহমিদা আপা এবার নিজের লেখা ও সুরে একটি অডিও এ্যালবাম বের করবে। মূলত এই ব্যাপারে অনেক কথা হয় জয়নুল ভাই এর সঙ্গে। আমি উনাদের বাসায় গিয়েছিলাম। ওই দিন ফাহমিদা আপা বাসায় ছিলেন না। দেশ টি ভি তে একটি প্রোগ্রাম থাকায় তিনি দেশ টি ভীর কার্যালয়ে ছিলেন।
আমি তাকে ফোন দিতেই( ফাহমিদা নবী) বললেন তুমি বাসায় যেতে থাকো। আমি তাড়াতাড়ি ফিরবো। আন মোলের জ্বর ( আন মোল ফাহমিদা নবীর একমাত্র মেয়ে)। বাসায় যেয়েই আমি কলিং বেলে চাপ দিতেই দরজা খুললেন আন মোল। ও আমাকে আগে থেকেই চেনে।
ভিতরে গিয়ে বসতেই আমার সামনে এলেন জয়নুল ভাই। ওনাকে আমি আগে দেখিনি। কিন্তু জয়নুল ভাই যেই ভাবে কথা বলা শুরু করলেন আমার সাথে মনে হল উনি হাজার বছরের পরিচিত। অত্যন্ত সাদামাটা মানুষটির সঙ্গে অনেক কথা হয়েছিল সেইদিন।
সেই জয়নুল ভাই নেই ভাবতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
গত ১৭ই সেপ্টেম্বর জয়নুল ভাই তার ব্যক্তি কাজে দেশের বাড়ি বগুড়াতে যান। ১৮ই সেপ্টেম্বর যেদিন ভূমিকম্প হয় সেই সময় তিনি রাস্তা দিয়ে হাটছিলেন। ভূমিকম্পের তাণ্ডবে তিনি ভীষণ ভয় পেয়ে যান। এবং বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করতে থাকেন। এক পর্যায়ে স্থানীয়রা তাকে একটি ফার্মেসিতে নিয়ে যান।
কিন্তু অবস্থা বেগতিক দেখে পরে তাকে পাশের ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণেই সব শেষ! চির বিদায় নেয় জয়নুল ভাই। ভূমিকম্পের এমন প্রহসন কেড়ে নিলো আমাদের মাঝ থেকে জয়নুল ভাইকে।
ফাহমিদা আপার সেল ফোনে অনেকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। আসলে তাকে সান্ত্বনা দেবার কোন শব্দ আমি খুঁজে পাচ্ছিনা।
আর এমন সময় আমিও ঢাকার বাইরে। কি অবস্থায় আছেন তারা আমি নিজের চোখে এখনও দেখিনি। তবে এই মুহূর্তে কি ভাবে ভাল থাকবেন আমার নোমা আপা। আর আন মোল এর কথাও ভীষণ মনে পড়ছে। ছোট্ট মেয়েটি বা কি করছে?
মহান সৃষ্টিকর্তা তাদের শোক সইবার শক্তি দিন।
শোক কাটিয়ে তারা যেন আবারো ফিরে আসতে পারে স্বাভাবিক একটি জীবনে। জয়নুল ভাই এর আত্মা যেন শান্তিতে থাকে এই চাওয়া মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে। [/sb
প্রথম আলো ব্লগে প্রকাশিত।
বি ডি ব্লগে প্রকাশিত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।