পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে..
‘নানকের ছেলে নয় নানক মরলেই খুশী হতাম’
আমরা এমন একটি দেশে বাস করি যেখানে ট্রেন দুর্ঘটনায় ৬ জন বিএনপি কর্মী মারা গেলে বিরোধী দল হরতাল দেয় আর সড়ক দুর্ঘটনায় ৪২ জন সাধারণ ছাত্র মরলেও একইদল হরতাল তো দূরের কথা নিরাপদ সড়ক কিংবা অদক্ষ চালকদের লাইচেন দেয়া বন্ধের দাবিতে একটা মিছিলও বের করেনা। সত্যিই সেলূকাস বড় বিচিত্র এই দেশ!
কয়েকদিন আগে এলজিআরডি প্রতি মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের একমাত্র সন্তান সায়েম সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। এতে নিশ্চয় মূষড়ে পড়েছেন তিনি। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে যখন প্রতিদিন গড়ে ২০ জন করে বাংলাদেশি নিহত হচ্ছিলেন, ২০ জন করে বাবারা তাদের সন্তান হারিয়ে একইভাবে মূষড়ে পড়ছিলেন, তখন তিনি যদি এখনকার ১০ ভাগের ১ ভাগও বিচলিত হতেন তাহলে হয়তো সন্তান হারানোর এই কষ্ট তাকে পেতে হতোনা।
পত্রিকায় শোকাহত নানকের ছবি দেখে আমার চোখে পানি এসে গিয়েছিল, কিন্তু তখন আমি তাকে কেবল পিতা হিসেবে দেখেছিলাম।
পরক্ষণে যখন ভাবলাম মহাসড়ক গুলো দুই লেনে উন্নীত না করে, কিংবা টাকার বিনিময়ে অদক্ষ চালকদের লাইচেন দিয়ে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ হন্তারক হয়ে উঠেছে যে মন্ত্রীসভা-নানক তারই একটি অংশ, তখন আমার মনে হল সায়েমসহ লাখো মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের একজন হিসেবে পুত্রের বদলে তারই মৃত্যু হওয়া উচিত ছিল।
সম্প্রতি বিবিসির খবরে শুনলাম, বাংলাদেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় যে হারে মানুষ মারা যায়, চলমান লিবিয়া যুদ্ধেও প্রতিদিন এত মানুষকে প্রাণ দিতে হয়না। কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদরা কতটা মাথা ঘামিয়েছেন এটা নিয়ে? নানকরা কি কষ্ট পেয়েছিলেন অনাহারে-অর্ধাহারে মানুষ হওয়া কৃষক বাবার একমাত্র সন্তানের মৃত্যুতে? অথচ পদ্মা সেতু নিয়ে উনারা কত পেরেশান!
মাথা ঘামাবেনই বা কেন? পদ্মা সেতু করলে কমিশন পাওয়া যায় কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবন বাচাতে পদক্ষেপ নিলে তো কোন লাভ নেই। তাছাড়া উনাদের তো দুর্ঘটনার ভয় থাকেনা, চালক প্রশিক্ষিত; সাথে গাড়িবহর , সামনে পুলিশের সিকিওরিটি। এতকিছু ভেদ করে ‘বিপরীত দিক থেকে আসা যাত্রীবাহী বাসের’ সাধ্য কই মন্ত্রির গাড়িকে ধাক্কা দেয়ার? এসবতো সাধারণ মানুষের জন্য।
একথা সবাই জানে (এমনকি বিদেশিরাও) এদেশে ড্রাইভিং লাইচেন্স পাওয়া একেবারে পান্তা ভাত। সামান্য ঘুষ দিলে অথবা মন্ত্রীর সুপারিশেই পাওয়া যায়। কিন্তু এ অনিয়মের সংস্কৃতি চালুর জন্য দায়ি কারা? গত ২০ বছর যারা দেশ চালিয়েছেন তারা যদি সিদ্ধান্ত নিতেন, কিংবা এখনও নেন ‘ঘুষ দিয়ে লাইচেন্স দেয়া আমরা বন্ধ করলাম’ তাহলে কি এটি বন্ধ হয়না?অন্তত একজন মন্ত্রিও কি নেই যিনি এর জন্য কাজ করবেন?একজন বিরোধীদলীয় নেতাও কি নেই যিনি সাধারন মানুষের মৃত্যু বন্ধের জন্য আন্দোলনে নামবেন?
সবসময় আমাদেরকে শুনতে হয় রাজনীতি নাকি মানুষের জন্য । কিন্তু গত আড়াই বছরের হরতালের তালিকাটি দেখুন, সেখানে বাড়ি রক্ষার জন্য হরতাল আছে, ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি রক্ষার জন্য (কেয়ারটেকার সরকার)হরতাল আছে কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষার জন্য হরতাল আছে কি?
আসলে আমাদের রাজনীতিবিদদের কাছে এদেশের সাধারণ মানুষরা কুকুর বিড়াল ছাড়া ভিন্ন কিছু নয়। ৫ বছর পরপর পশুগুলো হয়ত একবার মানুষ হয় ।
কিন্তু যে দেশের ৬০ ভাগ মানুষকে অশিক্ষিত করে রাখা হয়েছে তারা আর কতটুকুইবা আত্ন-অধিকার সচেতন মানুষ হয়ে ভোট দিতে পারে? ধিক! এই রাজনীতি ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।