মাথা নেই। একটিও হাত নেই। দুই পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে বাকি অংশটুকুও নেই। শরীরের অবশিষ্ট অংশে কোনো মাংস নেই। কিন্তু পরনের লাল প্যান্টটা ঠিকই রয়েছে।
প্যান্টের নীল বর্ডার দেখামাত্রই ডুকরে কেঁদে ওঠেন মা আমেনা বেওয়া। এটাই তো তাঁর একমাত্র ছেলে মিজানুর রহমান ।
গত ঈদের দুই দিন আগে ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় মাংস আনতে যাওয়ার কথা বলে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর আর ফেরেনি। দীর্ঘদিন পর গত বৃহস্পতিবার ছেলের লাশ শনাক্ত করেন মা।
আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর ময়নাতদন্ত শেষে পবার হড়গ্রাম গোরস্থানে মিজানের লাশ দাফন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মিজানুর রহমানের মা আমেনা বেওয়া বাদী হয়ে আজ সকালে নগরীর মতিহার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। কারো নাম দিয়ে এজাহার করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হরেন্দ্রনাথ বর্মন প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তের স্বার্থে আপাতত এটা তারা বলতে চাচ্ছেন না।
মিজানুর রহমানের বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের বড়শি গ্রামে। তার বাবা মৃত এরশাদ আলী।
মা আমেনা বেওয়া অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়কের পাশে খাস জমিতে একটি ঘর করে তাঁরা বাস করেন। তাঁর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মিজানুর রাজশাহী নগরীর বুলনপুর ইউসেফ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে সে নিয়মিত বিদ্যালয়ে যেতে পারত না। এজন্য শিক্ষকদের পরামর্শে হাতের কাজ শেখার জন্য সে ইউসেফ রাজশাহী টেকনিক্যাল স্কুলে ভর্তি হয়েছিল।
প্রতিবেশীরা বলেন, ইদানীং সে ভারত থেকে নিয়ে আসা গরুর রাখালি করত। ব্যবসায়ীরা ভারতের সীমান্ত থেকে বিএসএফ এর নজর এড়িয়ে কলার ভেলায় ছোট ছোট গরু তুলে ছেড়ে দেয়। স্রোতের টানে ভেলা ভাসতে ভাসতে বাংলাদেশের সীমানায় এলেই রাখালেরা নৌকা থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে গরু ধরে নিয়ে আসে। একটা গরু ধরলে এক হাজার টাকা দেওয়া হয়। মিজানুর রহমান ইদানীং এলাকার গরু ব্যবসায়ী আজগর আলীর সঙ্গে এই কাজ করছিল।
মিজানুরের বোন আঁঁখি আক্তার বলে, ঈদের দুই দিন আগে মিজান চর থেকে সস্তায় গরুর মাংস কিনতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। পরের দিন মিজানুর বাড়ি ফিরে না আসলে আঁঁখি ও তার মা পদ্মা নদীর ঘাটে যান। ঘাঁটিয়ালেরা তাদের বলেন, মিজান গরু ধরতে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিল। তারপর তাকে আর পাওয়া যায়নি। ব্যবসায়ী আজগর আলী চর মাজাড়দিয়াড় এলাকায় থাকেন।
তিনি তাদের ফোনে বলেন, মিজানকে বিএসএফ ধরে নিয়ে গেছে। সে বহরামপুর জেলে আছে। আঁখি বলে, ঈদের পরও দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও মিজান ফিরে না আসায় তারা বিচলিত হয়ে পড়েন। আঁখি ও তার মা স্থানীয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ক্যাম্পে যান। তারা বলেন, তারা দুটি চিঠি দিয়েছেন।
কিন্তু ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) জানিয়েছে যে তারা কোনো বাংলাদেশিকে আটক করেনি। আঁখি আরও বলে, তাদের এক প্রতিবেশীর আত্মীয়ের বাড়ি ভারতে। ফিরে এসে তিনিই খবর দেন যে, পবা উপজেলার চরখিদিরপুরে পানির ঢেউয়ে একটা লাশ ভেসে এসে আটকে রয়েছে। খিদিরপুরের লোকজন জানিয়েছে, গত চার-পাঁচ দিন আগে লাশটি সেখানে ভিড়েছে। প্রথম দিন সবই ছিল।
চিবুকে একটা বড় তিল ছিল। বাম বাহুতে কী যেন একটা লেখা ছিল। গত কয়েকদিনে মাথাসহ শরীরের অন্যান্য অংশ হারিয়ে গেছে। আঁখি বলেন, তার ভাইয়েরও চিবুকে তিল ছিল। বাহুতে এসিড দিয়ে ‘জে’ লেখা ছিল।
এই বিবরণ শুনেই মোটামুটি তারা নিশ্চিত হন। গত বৃহস্পতিবার আঁখি ও তার মা সেখানে ছুটে যান। ওর পরনের প্যান্ট দেখেই তারা শতভাগ নিশ্চিত হন যে এটা মিজান। আঁখি বলেন, যেটুকু কঙ্কাল পাওয়া গেল তার সঙ্গে পোকা লেগে ছিল। মা প্যান্টটা খুলে পরিষ্কার করলেন।
তার কঙ্কালটা পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করে একটা ব্যাগের ভরে নেন। ওইদিন রাত সাড়ে নয়টার দিকে তারা মিজানের কঙ্কাল নিয়ে বাড়ি ফেরেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।