বিশ্বের নিপীরিত মানুষের শত্রু একটাই এবং তদের ধরন একই, এরা রয়েছে অনেক দূরে। এই শত্রুরা রয়েছে যেখানে থেকে পুঁজিবাদী এলিটদের জন্ম, যেখান থেকে এরা সরকার প্রধানদের ব্যাবহার করে তাদের শক্তি প্রেরণ করে, আর ঐ সরকাররা তাদের তাঁবেদারি করে লাভবান হয়। আলোচনা করছিলাম সুলতান সালাহ্উদ্দিনকে বাতেনী সম্প্রদায় কতৃক হত্যার চেষ্টা করা হয় এই নিয়ে। সে ঘটনা তো পঠক পড়েছেনই।
প্রতি শতাব্দীতে একজন করে বীর দেখার সৌভাগ্য হয় পৃথিবীর মানুষদের।
বারো ও তেরোশ শতাব্দীতে চারজন বীর দেখতে পেয়েছিলো পৃথিবীবাসী এক এই সুলতান সালাহ্উদ্দিন, অপর তিনজনের একজন সিংহ হৃদয় সম্রাট রিচার্ড, বিশ্বত্রাশ চেঙ্গিস, আর গরিবের বন্ধু রবিন হুড। শেষের দুজন আমাদের ক্রুসেড প্রসঙ্গের ভেতরে পড়েননা।
১১৭৭ সালে সুলতান সাল্লহ্উদ্দিন প্যালেস্টাইনের মার্জিয়ান নামক স্থানের যুদ্ধে ক্রুসেডার খ্রীষ্টানগণকে পরাজিত করেন। এর পরপরই সুলতান সালহ্উদ্দিনের আহ্বানে সান্জা নদীর তীরে পশ্চিম এশিয়ার মুসলিম রাজন্যবর্গের এক সম্নেলন অনুষ্ঠিত হয়। ইকনিয়াম, আর্মেনি, মৌসল, জর্জিয়া, আরবাল, কায়ফা মার্দিন প্রভৃতি স্থানের নরপতিরা ঐ সন্মেলনে উপস্থিত হয়ে (২রা অক্টোবর, ১১৮০সাল), দুই বছর পর্যন্ত পরস্পর বিবাদ থেকে নিবৃত্ত থাকার প্রতিশ্রুত হন।
খ্রীষ্টান ক্রুসেডারদের সঙ্গে যুদ্ধে মসৌল বাদশাহ আতাবুক সয়েফউদ্দিন নিহত হন। তার ভাই আয়েজউদ্দিন মসুদ মসৌলের রাজপদে অধিষ্ঠত হন। আলেপ্পো-রাজ মালেক সালেহ ইসমাঈলের মৃত্যু হলে(ডিসেম্বর, ১১৮১ সাল) তার অন্তিম ইচ্ছানুসারে তার পিতৃব্য পুত্র মৌসলপতি আয়েজউদ্দিন মসউদ আলেপ্পো রাজ্যলাভ করেন। আয়েজদ্দিন মসউদ সুলতান সালাহ্উদ্দিনের বিরুদ্ধবাদী হন।
পশ্চিম এশিয়ার মুসলিম রাজ্যনবর্গের সন্মেলনের দুই বছর পর সুলতান সালহ্উদ্দিন আরব,সিরিয়া, মিশর ও নিউবিয়ার স্বাধীন সুলতান বলে ঘোষিত হন।
ওদিকে প্যালাস্টাইনের খ্রীষ্টান ক্রুসেডারগণ পূর্ব সন্ধি লঙ্ঘন করায় সুলতান সালহ্উদ্দিন মিসর থেকে সিরিয়া উপস্থিত হন। এই যুদ্ধে তার ভায়ের ছেলে ফররুখ শাহ তাকে সাহাজ্য করেন। তাদের সন্মিলিত যুদ্ধে খ্রীষ্টান ধর্মযোদ্ধানগণ পরাজিত হয়। এরপর সুলতান সাল্লহ্উদ্দিন ইরাকের ইর্ষাপরায়ণ মুসলিম নেতাগণদের দমন করার জন্যে অগ্রসর হন। ক্রমেই তিনি এডেসা, রাক্কা, কারকিসিয়া, নসিবিন প্রভৃতি শহর অধিকার করেন এবং সবশেষে তিনি মৌসল অবরোধ করেন ১১৮২ খ্রীষ্টাব্দে।
মৌসলরাজ আয়েজউদ্দিন মসউদ আলেপ্পো শহর সুলতানকে প্রদান করে সন্ধি স্থাপন করেন।
ক্রুসেডার খ্রীষ্টান সেনাপতি রেজিনাল্ড (Reginald of Chatillon) (আরব রা রেজিনাল্ডকে ‘আরনাত’ বলে ডাকতো) সুয়েজের দক্ষিনে অবস্থিত আকাবা উপসাগরের তীরবর্তি আইলা বন্দর অবরোধ করে সেখানে আরব-বণিকদের বারোটি জাহাজ লুটপাট করার পর পুড়িয়ে ফেলে এবং আরব বণিকদের হত্যা করে। অতঃপর রেজিনাল্ড মদীনায় অবসস্থিত হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সমাধি উৎখাত করতে মদিনা যাত্রা করেন।
সুলতান সালাহ্উদ্দিনের নৌ সেনাপতি এই সংবাদ শুনে অবিলম্বে হেজায যাত্রা করেন। লোহিত সাগরের তীরবর্তী রাবেগ বন্দরের নিকটবর্তী পার্বত্য পথে ১১৮৪ সালে মিসরীয় বাহিনী ক্রুসেডার খ্রীষ্টানদের গতিরোধ করে।
রেজিনাল্ড পরাজিত হয়ে প্যালেস্টাইনে পালিয়ে যান। অধিকাংশ সৈন্য নিহত অথবা বন্দিভাবে মিসরে আনিত হয়। সউলতান সালাহ্উদ্দিন প্রতিজ্ঞা করেন স্বহস্তে তিনি রজিনাল্ডকে হত্যা করবেন।
সুলতান সালহ্উদ্দিন আশি হাজার আশ্বারোহী সৈন্যসহ তিবরিয়া হৃদের (Sea of Gallile) তীরবর্তী হিত্তিন প্রান্তরে খ্রীষ্টান ক্রুসেডারদের সাথে যুদ্ধ করেন এবং যুদ্ধে জয় লাভ করেন(৩-৪ঠা জুলাই, ১১৮৭ খ্রীষ্টাব্দ)। এই যুদ্ধে ত্রিশ হাজার খ্রীষ্টানযোদ্ধা নিহত হয় এবনহ জেরুজালেমের রাজা গুই (Guy de Lusignau)।
রোজিনাল্ড ও অন্যান্য প্রধান প্রধান খ্রীষ্টান সেনানায়করা সুলতানের হাতে বন্দী হয়। সুলতান সালাহ্উদ্দিন পূর্ব প্রতিজ্ঞানুযায়ী রেজিনাল্ডকে হত্যা করেন। সুলতানের বিজয়ী সেনাদল ক্রমে আক্কা, নাজারেথ, হাইফা, সিজারিয়া, জাফ্ফা, সিডন, বৈরুত প্রভৃতি নগর অধিকার করে। সুলতান স্বয়ং জেরুজালেম আবরোধ করেন (২৩ সেপ্টেম্বর, ১১৮৭ খ্রীষ্টাব্দ) কয়েকদিন পরেই নগরবাসী সুলতানের কাছে আত্নসমর্পন করে (২রা অক্টোবর, ১১৮৭ খ্রিষ্টাব্দ)।
Kingdom of Heaven চলচিত্রটিতে যে কাহীনি উপস্থাপন করা হয়েছে তা মনগড়া মাত্র।
আসলে খ্রীষ্টানগন কোন প্রতিরোধই গঠন করতে পারে নাই। সুলতানের সমস্থ মহানুভবতা কল্পিত নায়কের গলায় দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র। সুলতানের আদেশে প্রত্যেক খ্রীষ্টান দশ হাজার স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করে স্ব-স্ব ধনসম্পদসহ নগর পরিত্যাগের অনুমতি লাভ করে। মুক্তিপণ প্রদানের সময়ে দুইজন স্ত্রীলোক ও দশজন শিশু একজন পুরুষ সমান বিবেচিত হয়েছিল (Hitti’s History of Arabs)। চল্লিশ দিন পর্যন্ত খ্রীষ্টানরা এইভাবে মুক্তিপণ দিয়ে অন্যত্র প্রস্থান করতে থাকে।
খ্রীষ্টানদের শহর পরিত্যাগের পর সুলতান সাল্লহ্উদ্দিন মহাসমারহে জেরুজালেম শহরে প্রবেশ করেন(২৭শে রজব, ৫৮৩ হিজরি)। প্রিয় পাঠক, ১০৯৯ খ্রীষ্টাব্দে গডফ্রে কতৃক জেরুজালেম অধিকার সময়ের ঘটানা এবং সুলতান সালহ্উদ্দিনের ঐ শহর বিজয় কালের ঘটনার ভেতরে পার্থক্য বিচার করুন। [link|http://www.somewhereinblog.net/blog/russellhappy/29448115|[প্রথম খন্ড দ্রষ্টব্য]]
পৃথিবীর অপরপ্রান্তে ইংল্যান্ড সম্রাট দ্বিতীয় হেনেরীর মৃত্যু হয়। তার ছেলে সিংহ হৃদয় রিচার্ড (Richard the Lion-hearted) সিংহাসনে আরোহণ করেন ১১৮৯ খ্রীষ্টাব্দে। সম্রাট রিচার্ডের আদেশে ক্রুসেড যুদ্ধের ব্যায় স্বরূপ প্রত্যেক ইংল্যান্ড বাসীর আয়ের দশমাংশ ‘Saladin Tax’ নামে সংগ্রহীত হত।
এই সময়ে পবিত্র ভূমি জেরুজালেমের পতন ও সিরিয়া-প্যালেস্টাইনে খ্রিষ্টানদের শোচনীয় পরাজয়-বার্তা শুনে ইংল্যান্ড রাজ সিংহ হৃদয় রিচার্ড, ফরাসী-সম্রাট দ্বিতীয় ফিলিপ্স ও জার্মান রাজ ফ্রেডারিক বার্বারোসা অগনিত সৈন্যসহ জেরুজালেম উদ্ধারার্থে যাত্রা করেন। পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ও ঘৃনিত তৃতীয় ক্রুসেড শুরু হয়।
খ্রীষ্টান ধর্মযোদ্ধাগণ দলে দলে সিরিয়ার সুমদ্রকূলবর্তী টায়র ও আক্কা নগরে সমবত হতে থাকে। এই যোদ্ধাদের ভেতরে বহু যুবতি সৈনিক বেশে সিরিয়ায় আগমন করেছিল। তাদের শিবিরে পুরুষ ও নারী সৈন্যরা একত্রে সমাবেশে ব্যাভিচার স্রোত অবাধে চলতে লাগলো।
ইংল্যান্ডের আর্চবিশপ বল্ডউইন ঐ বিভৎস ব্যাভিচার ও মদপানের প্রাবল্য দেখে হতাশ হলেন এবং এক রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ভবের মায়া ত্যাগ করলেন।
সুলতান সালাহ্উদ্দিন স্বয়ং অক্কা নগর আক্রমন করেন (২৭শে আগস্ট, ১১৮৯)
ভীষন যুদ্ধে খ্রীষ্টানরা পরাজিত হয় সেই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর। এই যুদ্ধে ৪ হাজার খ্রীষ্টান ক্রুসেডার নিহত হয়। এই সময় সম্রাট রিচার্ড ও ফিলিপ সসৈন্য আক্কার নিকটবর্তি হলে খ্রীষ্টান ক্রুসেডাররা বিপুল উৎসাহে পুনঃ আক্কা অবোরধ করে।
জার্মান রাজ ফ্রেডারিক নিজ সৈন্যসহ ঈজিয়ান সাগরে সলিল সমাধি হন।
সিরিয়ার বিভিন্ন যুদ্ধে খ্রীষ্টানরা বার-বার পরাজিত হতে থাকলেও ইউরোপ থেকে নতুন নতুন যোদ্ধা সিরিয়ায় আসতে থাকলে ক্রুসেডারদের সাহস ও উৎসাহ বারতে থাকে। দুই বছর আক্কা শহরের অবরোধ ধরে রাখার পর সুলতান সালাহ্উদ্দিন পিছু হটতে থাকেন। এরই মধ্যে সম্রাট রিচার্ড আক্কা উপস্থিত হন।
আলোচনা করছিলাম সুলতান সালাহ্উদ্দিনকে বাতেনী সম্প্রদায় কতৃক হত্যার চেষ্টা করা হয় এই নিয়ে। সে ঘটনা তো পঠক পড়েছেনই।
প্রতি শতাব্দীতে একজন করে বীর দেখার সৌভাগ্য হয় পৃথিবীর মানুষদের। বারো ও তেরোশ শতাব্দীতে চারজন বীর দেখতে পেয়েছিলো পৃথিবীবাসী এক এই সুলতান সালাহ্উদ্দিন, অপর তিনজনের একজন সিংহ হৃদয় সম্রাট রিচার্ড, বিশ্বত্রাশ চেঙ্গিস, আর গরিবের বন্ধু রবিন হুড। শেষের দুজন আমাদের ক্রুসেড প্রসঙ্গের ভেতরে পড়েননা।
১১৭৭ সালে সুলতান সাল্লহ্উদ্দিন প্যালেস্টাইনের মার্জিয়ান নামক স্থানের যুদ্ধে ক্রুসেডার খ্রীষ্টানগণকে পরাজিত করেন। এর পরপরই সুলতান সালহ্উদ্দিনের আহ্বানে সান্জা নদীর তীরে পশ্চিম এশিয়ার মুসলিম রাজন্যবর্গের এক সম্নেলন অনুষ্ঠিত হয়।
ইকনিয়াম, আর্মেনি, মৌসল, জর্জিয়া, আরবাল, কায়ফা মার্দিন প্রভৃতি স্থানের নরপতিরা ঐ সন্মেলনে উপস্থিত হয়ে (২রা অক্টোবর, ১১৮০সাল), দুই বছর পর্যন্ত পরস্পর বিবাদ থেকে নিবৃত্ত থাকার প্রতিশ্রুত হন।
খ্রীষ্টান ক্রুসেডারদের সঙ্গে যুদ্ধে মসৌল বাদশাহ আতাবুক সয়েফউদ্দিন নিহত হন। তার ভাই আয়েজউদ্দিন মসুদ মসৌলের রাজপদে অধিষ্ঠত হন। আলেপ্পো-রাজ মালেক সালেহ ইসমাঈলের মৃত্যু হলে(ডিসেম্বর, ১১৮১ সাল) তার অন্তিম ইচ্ছানুসারে তার পিতৃব্য পুত্র মৌসলপতি আয়েজউদ্দিন মসউদ আলেপ্পো রাজ্যলাভ করেন। আয়েজদ্দিন মসউদ সুলতান সালাহ্উদ্দিনের বিরুদ্ধবাদী হন।
পশ্চিম এশিয়ার মুসলিম রাজ্যনবর্গের সন্মেলনের দুই বছর পর সুলতান সালহ্উদ্দিন আরব,সিরিয়া, মিশর ও নিউবিয়ার স্বাধীন সুলতান বলে ঘোষিত হন। ওদিকে প্যালাস্টাইনের খ্রীষ্টান ক্রুসেডারগণ পূর্ব সন্ধি লঙ্ঘন করায় সুলতান সালহ্উদ্দিন মিসর থেকে সিরিয়া উপস্থিত হন। এই যুদ্ধে তার ভায়ের ছেলে ফররুখ শাহ তাকে সাহাজ্য করেন। তাদের সন্মিলিত যুদ্ধে খ্রীষ্টান ধর্মযোদ্ধানগণ পরাজিত হয়। এরপর সুলতান সাল্লহ্উদ্দিন ইরাকের ইর্ষাপরায়ণ মুসলিম নেতাগণদের দমন করার জন্যে অগ্রসর হন।
ক্রমেই তিনি এডেসা, রাক্কা, কারকিসিয়া, নসিবিন প্রভৃতি শহর অধিকার করেন এবং সবশেষে তিনি মৌসল অবরোধ করেন ১১৮২ খ্রীষ্টাব্দে। মৌসলরাজ আয়েজউদ্দিন মসউদ আলেপ্পো শহর সুলতানকে প্রদান করে সন্ধি স্থাপন করেন।
ক্রুসেডার খ্রীষ্টান সেনাপতি রেজিনাল্ড (Reginald of Chatillon) (আরব রা রেজিনাল্ডকে ‘আরনাত’ বলে ডাকতো) সুয়েজের দক্ষিনে অবস্থিত আকাবা উপসাগরের তীরবর্তি আইলা বন্দর অবরোধ করে সেখানে আরব-বণিকদের বারোটি জাহাজ লুটপাট করার পর পুড়িয়ে ফেলে এবং আরব বণিকদের হত্যা করে। অতঃপর রেজিনাল্ড মদীনায় অবসস্থিত হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সমাধি উৎখাত করতে মদিনা যাত্রা করেন।
সুলতান সালাহ্উদ্দিনের নৌ সেনাপতি এই সংবাদ শুনে অবিলম্বে হেজায যাত্রা করেন।
লোহিত সাগরের তীরবর্তী রাবেগ বন্দরের নিকটবর্তী পার্বত্য পথে ১১৮৪ সালে মিসরীয় বাহিনী ক্রুসেডার খ্রীষ্টানদের গতিরোধ করে। রেজিনাল্ড পরাজিত হয়ে প্যালেস্টাইনে পালিয়ে যান। অধিকাংশ সৈন্য নিহত অথবা বন্দিভাবে মিসরে আনিত হয়। সউলতান সালাহ্উদ্দিন প্রতিজ্ঞা করেন স্বহস্তে তিনি রজিনাল্ডকে হত্যা করবেন।
সুলতান সালহ্উদ্দিন আশি হাজার আশ্বারোহী সৈন্যসহ তিবরিয়া হৃদের (Sea of Gallile) তীরবর্তী হিত্তিন প্রান্তরে খ্রীষ্টান ক্রুসেডারদের সাথে যুদ্ধ করেন এবং যুদ্ধে জয় লাভ করেন(৩-৪ঠা জুলাই, ১১৮৭ খ্রীষ্টাব্দ)।
এই যুদ্ধে ত্রিশ হাজার খ্রীষ্টানযোদ্ধা নিহত হয় এবনহ জেরুজালেমের রাজা গুই (Guy de Lusignau)। রোজিনাল্ড ও অন্যান্য প্রধান প্রধান খ্রীষ্টান সেনানায়করা সুলতানের হাতে বন্দী হয়। সুলতান সালাহ্উদ্দিন পূর্ব প্রতিজ্ঞানুযায়ী রেজিনাল্ডকে হত্যা করেন। সুলতানের বিজয়ী সেনাদল ক্রমে আক্কা, নাজারেথ, হাইফা, সিজারিয়া, জাফ্ফা, সিডন, বৈরুত প্রভৃতি নগর অধিকার করে। সুলতান স্বয়ং জেরুজালেম আবরোধ করেন (২৩ সেপ্টেম্বর, ১১৮৭ খ্রীষ্টাব্দ) কয়েকদিন পরেই নগরবাসী সুলতানের কাছে আত্নসমর্পন করে (২রা অক্টোবর, ১১৮৭ খ্রিষ্টাব্দ)।
Kingdom of Heaven চলচিত্রটিতে যে কাহীনি উপস্থাপন করা হয়েছে তা মনগড়া মাত্র। আসলে খ্রীষ্টানগন কোন প্রতিরোধই গঠন করতে পারে নাই। সুলতানের সমস্থ মহানুভবতা কল্পিত নায়কের গলায় দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র। সুলতানের আদেশে প্রত্যেক খ্রীষ্টান দশ হাজার স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করে স্ব-স্ব ধনসম্পদসহ নগর পরিত্যাগের অনুমতি লাভ করে। মুক্তিপণ প্রদানের সময়ে দুইজন স্ত্রীলোক ও দশজন শিশু একজন পুরুষ সমান বিবেচিত হয়েছিল (Hitti’s History of Arabs)।
চল্লিশ দিন পর্যন্ত খ্রীষ্টানরা এইভাবে মুক্তিপণ দিয়ে অন্যত্র প্রস্থান করতে থাকে। খ্রীষ্টানদের শহর পরিত্যাগের পর সুলতান সাল্লহ্উদ্দিন মহাসমারহে জেরুজালেম শহরে প্রবেশ করেন(২৭শে রজব, ৫৮৩ হিজরি)। প্রিয় পাঠক, ১০৯৯ খ্রীষ্টাব্দে গডফ্রে কতৃক জেরুজালেম অধিকার সময়ের ঘটানা এবং সুলতান সালহ্উদ্দিনের ঐ শহর বিজয় কালের ঘটনার ভেতরে পার্থক্য বিচার করুন।
পৃথিবীর অপরপ্রান্তে ইংল্যান্ড সম্রাট দ্বিতীয় হেনেরীর মৃত্যু হয়। তার ছেলে সিংহ হৃদয় রিচার্ড (Richard the Lion-hearted) সিংহাসনে আরোহণ করেন ১১৮৯ খ্রীষ্টাব্দে।
সম্রাট রিচার্ডের আদেশে ক্রুসেড যুদ্ধের ব্যায় স্বরূপ প্রত্যেক ইংল্যান্ড বাসীর আয়ের দশমাংশ ‘Saladin Tax’ নামে সংগ্রহীত হত।
এই সময়ে পবিত্র ভূমি জেরুজালেমের পতন ও সিরিয়া-প্যালেস্টাইনে খ্রিষ্টানদের শোচনীয় পরাজয়-বার্তা শুনে ইংল্যান্ড রাজ সিংহ হৃদয় রিচার্ড, ফরাসী-সম্রাট দ্বিতীয় ফিলিপ্স ও জার্মান রাজ ফ্রেডারিক বার্বারোসা অগনিত সৈন্যসহ জেরুজালেম উদ্ধারার্থে যাত্রা করেন। পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ও ঘৃনিত তৃতীয় ক্রুসেড শুরু হয়।
খ্রীষ্টান ধর্মযোদ্ধাগণ দলে দলে সিরিয়ার সুমদ্রকূলবর্তী টায়র ও আক্কা নগরে সমবত হতে থাকে। এই যোদ্ধাদের ভেতরে বহু যুবতি সৈনিক বেশে সিরিয়ায় আগমন করেছিল।
তাদের শিবিরে পুরুষ ও নারী সৈন্যরা একত্রে সমাবেশে ব্যাভিচার স্রোত অবাধে চলতে লাগলো। ইংল্যান্ডের আর্চবিশপ বল্ডউইন ঐ বিভৎস ব্যাভিচার ও মদপানের প্রাবল্য দেখে হতাশ হলেন এবং এক রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ভবের মায়া ত্যাগ করলেন।
সুলতান সালাহ্উদ্দিন স্বয়ং অক্কা নগর আক্রমন করেন (২৭শে আগস্ট, ১১৮৯)
ভীষন যুদ্ধে খ্রীষ্টানরা পরাজিত হয় সেই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর। এই যুদ্ধে ৪ হাজার খ্রীষ্টান ক্রুসেডার নিহত হয়। এই সময় সম্রাট রিচার্ড ও ফিলিপ সসৈন্য আক্কার নিকটবর্তি হলে খ্রীষ্টান ক্রুসেডাররা বিপুল উৎসাহে পুনঃ আক্কা অবোরধ করে।
জার্মান রাজ ফ্রেডারিক নিজ সৈন্যসহ ঈজিয়ান সাগরে সলিল সমাধি হন। সিরিয়ার বিভিন্ন যুদ্ধে খ্রীষ্টানরা বার-বার পরাজিত হতে থাকলেও ইউরোপ থেকে নতুন নতুন যোদ্ধা সিরিয়ায় আসতে থাকলে ক্রুসেডারদের সাহস ও উৎসাহ বারতে থাকে। দুই বছর আক্কা শহরের অবরোধ ধরে রাখার পর সুলতান সালাহ্উদ্দিন পিছু হটতে থাকেন। এরই মধ্যে সম্রাট রিচার্ড আক্কা উপস্থিত হন।
চলবে...
পূর্বের খন্ড
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।