আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নকল দাঁত

লেখক/কবি জামাল সালীম নাভীদ (১৯০৬-১৯৯৪) গল্প বলায় দক্ষ লেবাননের এক চিকিৎসকের মেয়ে জামাল স্লিম নাভিদ। মা ছিলেন তুর্কির। খুব কম বয়েসে বাবা-মাকে হারাবার পর ভাইয়ের সঙ্গে সিরিয়া চলে আসেন। তাঁর এই ভাই ছিলেন প্রিন্স ফয়সাল সেনাবাহিনীর এক অফিসার। আরবে অটোম্যানদের পর এই প্রিন্স ফয়সালই ছিলেন প্রথম শাসক।

এরপর ফ্রান্সের কাছে সিরিয়ার পতনের পর ভাইয়ের সঙ্গে এক সময় তাকে সিরিয়াও ত্যাগ করতে হয়। সেই সময় সেনাবাহিনীর অফিসারেরা প্রিন্স আব্দুল্লাহ’র নেতৃত্বে নব্য প্রতিষ্ঠিত পূর্ব জর্ডানে একত্রিত হচ্ছিলেন। সারা জীবনে তিনি অসংখ্য গল্প কবিতা লিখেছেন। কিন্তু অনেকটা নভিৃতচারী হওয়াতে এই সব লেখার খুব কমই তিনি প্রকাশ করতেন। তাঁর আরও অনেক উপন্যাসের মাঝে এযাবৎ: প্রসিশন অব মার্টার (১৯৬৫), এ স্ট্রেনজার ইন ওয়ান’স কান্ট্রি (১৯৮৯), এবং আ উইডিং ইন প্যারাডাইস (১৯৯১) এই তিনটি প্রকাশিত হয়।

১৯৮০ সালের দিকে তিনি প্রোটার (PROTA) জন্য অমূল্য সব রূপকথা লিখতে থাকেন। প্রোটা সেসবের অনুবাদ করে ও ২০০২ এ গল্প সংগ্রহ আকারে আবু জামাল’স ডটার এন্ড আদার স্টোরি নামে ইন্টার লিঙ্ক বুকস এ প্রকাশিত হয়। মৃত্যুর আগে তিনি নিজের জীবন, পরিবার পরিজন নিয়ে লিখে গেছেন। এই লেখাটিতে বিশ শতকে ভূমধ্য এলাকার সমকালীন অনেক সামাজিক, রাজনৈতিক ঐতিহাসিক সত্য প্রতিফলিত হয়েছে। লেখিকার নিজ হাতে লেখা আড়াই হাজার পাতার এই পাণ্ডুলিপি এখনো প্রকাশ ও অনুবাদের অপেক্ষায় রয়েছে।

আধুনিক মধ্যপ্রাচ্যের রূপান্তর বুঝতে তাঁর এই লেখা অবশ্য পাঠ্য। নকল দাঁত অনেক ক্ষণ ধরেই বুকের ভেতরে কী যেন একটা দমবন্ধ করা গুমোট হাওয়া টের পাচ্ছিল সানা। এতে নিঃশ্বাস প্রায় আটকে আসছিল। আর সেটা থেকেই বাঁচতে জানালার পর্দা সরিয়ে দিল সে। যাতে বসন্তের উন্মাতাল হাওয়ার সঙ্গে আলোও ঢুকতে পারে।

চোখে তার কপট চাহনি, চোখের পাতা গুলো ভারি হয়ে আছে। গোপন কোন দুঃখ দুশ্চিন্তা মনে পুষে সারারাত শুয়ে বিছানায় এপাশ ওপাশ করলে ঠিক দেখতে যেনমটা হয় আরকী। হঠাৎ করেই সে বাবার দরাজ গলা শুনতে পেল, বাগানের একটা গাছের পেছনে দাড়িয়ে সে অন্য কোন লোকের সাথে কথা বলছে। বাবার গলার স্বর শুনতে পাবার পরপরই ঠিক বৈদ্যুতিক শক খাবার মত করে জানালার কাছ থেকে সরে আসে সে। এ সময় জানালার সঙ্গে হাতটা যেন আপনা আপনি আটকে যায়।

আর তাতে করে খুব সহজেই সে বুঝতে পারে খানিক বাদে কী ঘটতে যাচ্ছে, প্রচণ্ড হতাশায় বিছানায় শুয়ে কান্না শুরু করে দেয়। সে জানতো বাবার সঙ্গে আসলে কে কথা বলছে। লোকটা খুবই অহংকারী, প্রচণ্ড ধনীও, বাবাকে হাজার পাউন্ড দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মন্দা ব্যবসা টিকিয়ে দেবার লোভ দেখিয়ে এই লোকটাই তার যৌবনের সব উচ্ছলতা কেড়ে নিয়েছে। সেই থেকে সব যাতনার শুরু। সামান্য এই টাকার বিনিময়ে মেয়েটাকে শেষমেশ এই বুড়োধাড়িটার হাতে তুলে দিতে হয়, এমন একটা মেয়ে যে কিনা তার রূপ আর গুনের জন্য সবার কাছ থেকে প্রশংসা পেয়ে আসছে।

তার বাবা, ‘আবদ আল-ইফেন্ডি, শেষ পর্যন্ত দর কষাকষি করে ইয়াহিয়া বেক এর কাছে মেয়ে দিতে রাজি হয়ে যান, চল্লিশের কোঠা কেবলই পার করেছেন এমন দাবি করলেও, লোকটিকে দেখলে সহজেই বোঝা যায় তার বয়স আসলে এরচেয়েও ঢেঁড় বেশী। কিন্তু অধিক সম্পদ থাকায় আরাম আয়েসের কারণে চালচলনে ভারিক্কিভাব ধরে রাখতে সামর্থ্যের দিক দিয়ে লোকটার কোন কমতি ছিলনা। কিন্তু কাজ শেষে বিছানায় আসার পর তার সেই শিকারি চোখ অন্যকথা বলে। দাঁতহীন হা করা মুখটাকে দেখতে পাহাড়ি গুহার মতো লাগে, স্ফীত লালচে চোখ গুলো কোঠর থেকে যেন বাইরে বেরিয়ে আসতে চায়। আর কাশতে কাশতে নিজেকে নিজেকে প্রচন্ড পীড়ন করতে থাকে।

তাকে ভাল করে চেনেন এমন কেউ এই দৃশ্য দেখে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারবেন না এটাই সেই ইয়াহিয়া বেক, যে তার বন্ধু-বান্ধবদের সামনে সব সময় মার্জিত হাসি খুশি প্রাণোচ্ছল তারুণ্যে ভরপুর থাকেন। শুরুথেকেই, সেই বাগদানের দিন থেকেই বিয়ে করবেনা বলে সানা প্রচণ্ড বেকে বসেছিল। তাঁর বাবা, ছিলেন একজন জ্ঞানী আর অভিজ্ঞ লোক, তিনি মানুষের মনের গোপন কথাটি জানতেন আর এদের সাথে কেমন করে কথা বলতে হবে সে ব্যাপারেও তিনি ছিলেন খুবই সতর্ক। লোক জনের সঙ্গে তাই তিনি খুবই নম্র আর ভদ্র ব্যবহার করতেন। সে যাই হোক, নিজের মেয়েকে তিনি খুবই ভাল বাসতেন।

আর তাই মেয়ের সুখ স্বচ্ছন্দ সম্বন্ধে সে ছিল অত্যন্ত সচেতন। সে খুব ভাল করেই জানতেন এতে করে তার মেয়ে আরাম আয়েসে জীবন কাটাতে পারবে। তাছাড়া নিজের অতীত অর্থনৈতিক শান সৈকত পুনরুদ্ধারেও তিনি খুবই মরিয়া হয়ে উঠে ছিলেন, আর এত সবের কারণেই সে ইয়াহিয়া বেকের হাতে মেয়েকে তুলে দিতে রাজি হন। অন্যদের মত সেও ইয়াহিয়ার নকল চেহারায় মজে গিয়েছিলেন। এই ঝঞ্ঝা তার পক্ষে মোকাবেলা করা অতটা সহজ ছিলনা, কেননা এধরনের একটা লোককে সানা নিজের জন্য পছন্দ করে রাখেনি।

বাবাকে না জানিয়েই সে অন্য আরেক জনকে কথা দিয়ে রেখেছিল, যার সঙ্গে তার সুখ স্বচ্ছন্দ আর সব আশা আকাঙ্ক্ষা জড়িয়ে ছিল। তবে অনেক দিন ধরেই সে এসব কথা গোপনে মনের মাঝে অতি সঙ্গোপনে জমিয়ে রেখেছে। সেই দিনটির অপেক্ষায় যেদিন সেই তরুণ এসে তার বাবার সামনে দাড়াতে পারবে, মেয়ের পানি প্রার্থণার যোগ্য হয়ে উঠবে। সেই যুবকটি ছিল একজন লেখক, আর তার শিল্প মনন আর মানসিকতাই তাকে ব্যবসা বাণিজ্য করে টাকার পাহার গড়ে তোলা হতে বিরত রেখেছিল। আর এই কারণে সে এমন কিছু একটা আশ্চর্য ঘটনা ঘটে যাবার জন্য অপেক্ষা করছিল, যার পর সে অনেক ধনী হয়ে উঠবে এবং সানার বাবার সামনে এসে দাড়িতে তার ভালবাসার পাত্রীকে হাতে তুলে দেবার জন্য জোর দাবি জানাতে পারবে।

কিন্তু ঠিক কি করে ভালবাসা এই দু’ই তরুণ মনকে এক সুতোয় বেধেছিল ? ভালবাসা আসলে বাতাসের মত, ভালবাসা পেতে চায় এমন কোন হৃদয়ের গহীনে এর প্রবেশ পথে কোন বাধাই সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। এই ব্যাপারে এটুকুই কেবল ধারনা করা সম্ভব যে সানা এবং নাবীল প্রথম দর্শনেই একে অপরের প্রতি মনে মনে সাংঘাতিক ধরনের এক আকর্ষণ অনুভব করতে থাকে। ইয়াহিয়া বেকের সঙ্গে বিয়ের সব আয়োজন সম্পন্ন হয়ে যাবার পর সানা সে কথা নাবীলকে জানাবার একটা উপায় খুঁজে বের করলো, যে কাজের লোকটা নবীলের হাতে চিঠি পৌঁছে দিত সেই এখন একমাত্র ভরসা। দেখতে দেখতে বাগদানের দিন এসে হাজির, খুব জাঁকজমক করে সব কিছুর আয়োজন চলছে, শহরের নামীদামী সব লোক দাওয়াত পাবার পর অনুষ্ঠানে এসে হাজির। পুরুষদের বসবার কামরায় বিচারক, ধনী বণিক, এবং গুণীজনে গিজগিজ করছে; আর মহিলাদের বসবার জায়গাটিতে শহরের সব সুন্দরীদের ভীর।

কেবল বর ছাড়া এই বাগদান অনুষ্ঠানে বাকী সবাই এসে হাজির। সঠিক সময়ে সে সবার সামনে হাজির হতে পারেনি। লোকজন সেই যে কখন থেকে এসে বসে আছে। আর তাই ‘আব্দ আল-সালাম ইফেন্ডি তার এই সৌভাগ্যবান হবুজামাইয়ের অনুপস্থিতিতে মনে মনে প্রচণ্ড শঙ্কা অনুভব করতে লাগলো। সময় যতই গড়িয়ে যাচ্ছিলো, চঞ্চল হয়ে উঠছিল, কেউ কেউ অধৈর্য হয়ে অনুষ্ঠান ছেড়েও চলে যায়।

ভাব গতিক ভাল না ঠেকায় ঘটনা বুঝে উঠতে এক পর্যায়ে ‘আব্দ আল-সালাম ইফেন্ডি ইয়াহিয়া বেকের বাড়ির দিকে রওনা হন। সেখানে গিয়ে তিনি ইয়াহিয়াকে তার ঘরে দরজা বন্ধ অবস্থায় আবিষ্কার করেন, কারো কথাতেই তিনি বের হয়ে আসতে রাজি হচ্ছিলেন না। অবশেষে, অনেক বালার পর তিনি দরজা খুলেন, এবং ‘আব্দ আল-সালাম ইফেন্ডি, ভেতরে প্রবেশ করেন, আর সম্পূর্ণ অবাক করা দৃশ্য দেখতে পান। সেখানে, তার সামনে, অন্য এক ইয়াহিয়া বেক দাঁড়ানো। তার এই পরিবর্তন সম্পর্কে সরাসরি কিছু জিজ্ঞেস করা ঠিক হবেনা বুঝতে পেরে, সে খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে এত দেরি করার কারণ জানতে চান।

এই প্রশ্নে ইয়াহিয়া বেক কান্নায় ভেঙ্গে পরেন আর গলা চড়িয়ে বিলাপ করতে থাকেন। “আমার দাঁত !” সে প্রায় আর্তনাদ করে বলে ওঠেন, “আমার দাঁতগুলো কে নিয়েছে ?” তার এই দেরিতে ‘আব্দ আল-সালাম ইফেন্ডির বাগদান অনুষ্ঠানে বসে বসে কান্না করা ছাড়া আর কোন গতি নেই, এই কথা বুঝতে পারার পরেও ভারের মত তার সামনে দাড়িয়ে হাসা ছাড়া লোকটার আর কিছুই করার ছিল না: দাঁত ছাড়া এই বর, তার সেই বিদঘুটে চেহারা নিয়ে হবু শ্বশুরের সামনে দাড়িয়ে একটানা বিলাপ করেই যাচ্ছিলো, “ আমার দাঁত ! আমার দাঁত ! কোন বদ নচ্ছার আমার দাঁত চুড়ি করেছে ?” হঠাৎ করেই, বাড়ির অন্য পাশ থেকে, এক যুবকের গলা শুনতে পাওয়া গেল। “কী হয়েছে, মামা ? আপনার দাঁতের আবার কী হলো ?” ‘আব্দ আল-সালাম ইফেন্ডি পেছন ফিরে তাকালো আর সুদর্শন একজন যুবকের দেখা পেল, জীবনে প্রথম বারের মত এমন একটা যুবক তার সামনে পড়লো, ছেলেটার গলার স্বর যেমন নম্র তেমনি মুখের হাঁসিও চমৎকার। আত্নবিশ্বাস আর আচার-আচরণও চোখে পড়ার মত। এর আগে কখনো এই যুবকের সঙ্গে তার দেখা হয়নি কিন্তু এটা বুঝতে কোন অসুবিধা হয়নি যে সে ইয়াহিয়ার ভাগ্নে।

“যাদু সোনা নাবীল,” ইয়াহিয়া বেক জবাবে বলেন, “আমি আমার আলগা দাঁতগুলো খুঁজে পাচ্ছিনা। আমি সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি, তার পরেও সেগুলো খুঁজে পেলাম না। আজকে আমার বাগদানের অনুষ্ঠান, অতিথিরা সেই কখন থেকে আমার জন্য বসে আছে। দাঁত ছাড়া কিকরে আমি তাদের সামনে মুখ দেখাবো ?” অনুষ্ঠানে যাবার জন্য তার মন তখনো আনচান করছিল। নাবীল ঘরের মাঝামাঝি দাড়িয়ে ছিল, ঠোঁটে তার বাঁকা কৌতুকের হাঁসি।

সে মামাকে ভাল করে দেখেনিয়ে তারপর বলল, “মামা, আমার কথা একটু শুনুন, তারপর আপনার মনে যা ইচ্ছে হয় তাই করবেন। আমি আপনার সামনে উপস্থিত এই বিজ্ঞ লোকটিকে সাক্ষী রেখে বলছি আমার কথা একটু মন দিয়ে শুনুন, নিজের আলগা দাঁতের কথা না ভেবেই আপনি এই ভদ্র লোকের মেয়েকে বিয়ে করবেন বলে ঠিক করেছেন, আর দুর্ঘটনা বসত এখন আবার সেই দাঁত খুঁজেই পাচ্ছেন না। মামা, আপনি একজন ধনী লোক, খুবই ধনী লোক, আর আমি হচ্ছি আপনার ভাগ্নে, যার জীবিকা চলে এমন একটা কলমের ওপর ভর করে যেটা কখনই শুকিয়ে যায়না এবং যার রয়েছে এমন একটা হৃদয় যেখানে আজ পর্যন্ত একটি বারের জন্য নৈরাশ্য ভর করতে পারেনি। কিন্ত আজকাল আর সেই কালি ও কলম থেকে রুটি মাখন আসছে না। আমি অনেকবার আপনার কাছে একথা বলে সাহায্য চেয়েছি, যাতে করে জীবনে একটু নিজের পায়ে দাড়াতে পারি।

” আর প্রতিবারই আপনি আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন, আর আমার জীবন জীবিকা ও কাজকর্ম নিয়ে হাসিঠাট্টা করেছেন। একদিন আমি আপনাকে একথাও বলেছিলাম আমি ভাল একটি পরিবারের মেয়ের সঙ্গে ভালবাসার বাঁধনে জড়িয়েছি এবং তাকে বিয়ে করতে চাইÑআপনি আমার সেই কথাকেও অবজ্ঞা করেছেন। আপনি বলেছিলেন আমার মতন এমন ফকির মিসকিন ছেলে কিকরে বিয়ের কথা ভাবতে পারে ? কিন্তু মামা, যখন আপনার মতন এমন থুড়থুড়ে বুড়োই বিয়ে করার কথা ভাবতে পারছেন তখন কেন একজন যুবক প্রেম আর বিয়ে করার কথা ভাববে না, কেবল টাকার জোরেই আপনি সব কিনে নেবেন ? আমি যে মেয়েটার প্রেমে পড়েছি সেই মেয়েটাকেই শুধুমাত্র টাকার জোরে আপনি আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবেন সেটা কখনই আমি নিজের চোখে বসে বসে দেখতে পারবো না। সহ্যও করতে পারবো না। যে করেই হোক এই বিয়ে আমাকে থামাতেই হবে।

আর সেটা থামাবার একমাত্র উপায় ছিল আপনার সেই আলগা দাঁতগুলো সরিয়ে নেয়া। সেগুলো এখন আমার জিম্মায় রয়েছে। আপনি নিজের বদলে আমাকে বর হিসেবে মেনে না নেওয়া পর্যন্ত সেগুলো আর ফেরত পাচ্ছেন না। আর বাগদানের অনুষ্ঠানটা এখনো প- না করার এটাই একমাত্র উপায়। ” এরপর নাবীল ‘আব্দ আল-সালাম ইফেন্ডির দিকে তাকালো এবং দৃঢ় কণ্ঠে কিন্তু মিনতির স্বরে কথা বলতে শুরু করলো।

“জনাব” সে বলল, “আমি আমার নিজের মামাকে রাজি করাবার আগে আপনাকে কিছু কথা বলে নিতে চাই। যদি আপনার কাছে শরতের থেকে বসন্ত বেশী আনন্দের হয় তাহলে আমি বর হিসেবে মামার বদলে আমাকে বেছে নিতে বলবো। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, বয়সে সে, আমার আমার মতই গরিব, আর টাকার কথা বলবেন, টাকা সবার জীবনেই কেবল আসে আর যায়। মানুষ তার পরিশ্রম আর মেধা দিয়ে সেটা যখন তখন কামিয়ে নিতে পারে। ” এতসব শুনে ‘আব্দ আল-সালাম ইফেন্ডির মুখে হাসি চলে এলো, সে অন্তর থেকে কেতাদুরস্ত এই যুবকের জন্য অকৃত্রিম একটা মায়া অনুভব করছিলেন।

“বাবা” তিনি বললেন, “আমি তোমার এই সম্পদের আর যে কৌশল তুমি বেছে নিয়েছ তার সম্মান করছি। যদি তোমার মামা তার সেই আশা পরিত্যাগ করে, তাহলে সানন্দে আমি তোমাকে আমার ভাবি জামাই হিসেবে মেনে নেব। ” ইয়াহিয়া বেক হতবুদ্ধি হয়ে চেয়ে রইলো কিন্তু তারপরেও সে তার ভাগ্নের জন্য অকৃতিম এক ¯স্নেহ অনুভব করছিলো। শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধে সে হার স্বীকার করে নিলো, সেই সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়েনিল এমন ঘৃণ্য কাজ আর জীবনেও করবে না। সে ভোজের সব খরচাদি বহন করা সহ, নিজের জন্য যে দেনমোহর ঠিক করে রেখেছিলেন সেই পরিমাণ দেনমোহর পরিশোধ এবং নব বর-বধূকে সাজানো গোছানো একটি বাড়ি লিখে দেবার প্রতিশ্রুতি দিল।

আর এইভাবেই একটি দুর্বিষহ রাত আতশবাজির আলোর রঙ্গিন স্বপ্নে ঝলমল করে উঠলো। যায়যায়দিন ঈদ সংখ্যা-২০১১ তে প্রকাশিত ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।