*****
আমি আমার ছাদের জমানো বিষাক্ত জল নিষ্কাশনের জন্য নালা বের করে দেবো আপনার সাজানো ভিটের দিকে, আপনার জানমালের ক্ষতি করে যাবো দিনের পর দিন, আর আপনি আমার মতো অসভ্য প্রতিবেশীকে শুধু ক্ষমাই করে যাবেন, প্রকাশ্যে কখনো কোনো ক্ষতিপূরণ দাবি করবেন না কিম্বা সুযোগ খুঁজে নিয়ে গোপনে আপনি আমার সর্বনাশ করার চেষ্টা চালাবেন না, --এমনটা হতেই পারে না এজন্যেই যে, আমি জানি, শয়তানিতে কোনো অংশেই আপনি আমার চেয়ে বেশি বৈ কম নন। আজ শয়তানি করছেন না জন্যেই যে আগামীতেও করবেন না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
আমার নরম স্যাঁতসেঁতে ছাদ আমারি মাথার ওপরে ধ্বসে পড়বে না, কিম্বা আমাদের উভয়ের কুশপুত্তলি উভয় প্রতিবেশীর প্রজন্মরা অদূর ভবিষ্যতে তাদের আবৃত এবং অপাবৃত অঙ্গনিক্ষিপ্ত মুত্রধারায় ভাসিয়ে দেবে না, কিম্বা আমাদের উত্তরসূরিরাই আমাদের কোন্দলপ্রবণ নাম-ধাম জ্বলিয়ে পুড়িয়ে নিঃচিহ্ন করে দেবে না, --এমন কোনো নিশ্চয়তা যেখানে নেই, সেখানেই আগেভাগে উভয়ের সভ্য ভদ্র হওয়ার অনিবার্যতা।
অতিবৃষ্টিতে, পাহাড়ি ঢলে, জলোচ্ছ্বাসে প্রাকৃতিকভাবে বন্যা হতে পারে এবং নদীর ভাঙ্গনে জনবসতি, জনপদ, স্থাপনাসমূহ নদীতে মিশে নদীর গভীরতা কমিয়ে দিতে পারে। এ নিয়ে কোনো বোঝাপড়া করতে হলে, সেটা হতে পারে প্রকৃতির সঙ্গে।
কিন্তু খরা মৌশুমে নদীর পানি সরিয়ে নিয়ে বর্ষাকালে জলমগ্নতার যন্ত্রণা
নিষ্কাশনের জন্য স্লুইস গেইট খুলে দিয়ে প্রতিবেশী দেশকে বন্যায় ভাসানো যেমন কোনো সভ্য প্রতিবেশীর কাজ হতে পারে না, তেমনি ক্ষতিগ্রস্তও যদি আত্মরক্ষার অধিকারে সীমানা বরাবর উঁচু প্রাচীর দিয়ে বন্যা ঠেকায়, সেটাও কাম্য নয় এজন্যেই যে, ক্রমাগত বাড়ন্ত জলের তলে ডুবে যাবে উজানের জনবসতিগুলো, যেখানে বিবেকবান মানবসন্তানও বাস করে।
নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ভিন্নমুখীকরণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে উভয় পক্ষের কারোই যেখানে মুক্তি নেই, উভয়ের আত্মরক্ষার জন্যে সেখানেই উভয়ের স্বার্থ থেকে কিছু কিছু ছাড় দেওয়ার অনিবার্যতা। বিবেকী আলাপচারিতার মাধ্যমেই সংকট থেকে মুক্তি মিলতে পারে, আলাপ আলোচনাই যেকোনো চুক্তিকে মেলাতে পারে।
যেকোনো চুক্তিতে, চুক্তিবদ্ধদের প্রত্যেকের জন্য সমান স্বার্থ সুরক্ষার ব্যবস্থা না-রেখে যদি কোনো অসমচুক্তি করা হয়, তবে সেই চুক্তি কখনোই টেকসই হয় না সকলেই জানি।
নদী বিষয়ক আলোচনায় সব নদী-ই প্রসঙ্গক্রমে আসতে পারে এবং আসাটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু আমরা বুঝতে পারিনি, সাম্প্রতিক ট্রানজিট বিষয়ক চুক্তি-আলোচনায় নদী এসে ঢুকলো কিভাবে !..
কুটিলতামুক্ত সাধারণ জ্ঞানে সকলেই চায় যে, নিজের এবং অন্য দেশের সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রেখে ট্রানজিট নিয়ে যদি কোনো আলোচনা হয়, সেখানে কয়টি দেশের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত স্থলপথে যাতায়াত স্থাপন করা সম্ভব, রাস্তাঘাটের অবকাঠামোগত উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতা, রাষ্ট্রের অতিথির মর্যাদায় ভিনদেশিদের নিরাপত্তায় স্বদেশিদের দায়বদ্ধতা, কেউ ভিনদেশে কোনো অপরাধ করলে তার বিচার ব্যবস্থা, ট্রানজিট ব্যবহারকারীদের পক্ষের অভিযোগ গ্রহণের কার্যকরী ব্যবস্থা ইত্যাদি খুঁটিনাটি বিষয় নিয়েই যেন আলোচনা হয়। সকলেই চায়,তড়িঘড়ি করে জোড়াতালি দিয়ে এমন কিছু যেন না-করা হয় যা টিকবে না।
এখানে স্পষ্ট যে, ট্রানজিট চুক্তি পণ্ড করার জন্য যারা কৌশলে লিপ্ত, তারা
সজ্ঞানে কিম্বা অজ্ঞানে বিচ্ছিন্নতাবাদীর প্রকাশ্য অনুসারী।
যেকেউ খোঁজ নিলেই দেখবেন যে, প্রকাশ্যে তারা যে পরিচয়েই পরিচিত হোক না কেন, চোরাচালান তাদের পেশা অথবা আয়ের উৎস। ওদের নামে বা বেনামে যেসকল কারখানা, প্রতিষ্ঠান, সম্পত্তি যতকিছুই আপনি দেখবেন, সবকিছুর মূল উৎস ঐ চোরাচালান।
কাউকে পড়িয়ে শিখিয়ে বোঝাতে হবে না, সকলে না-বুঝলেও ঐ চোরাচালানকারীরা ঠিকই জানে যে, ট্রানজিট চুক্তি বাস্তবায়িত হলে চোরাচালানী সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাবে।
তাই তারা ঐ চুক্তি-আলোচনা পণ্ড করার চেষ্টা চলাতেই থাকবে।
জঙ্গলময় পাহাড়ি অঞ্চলে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষীরা নিজেরাই সুরক্ষিত নয় জন্যে বাধ্য হয়েই ওরা সন্ত্রাসী আর চোরাচালানকারীদের দাসত্বে লিপ্ত হতে বাধ্য হয়েছে। সকলেই জানি যে, ছিটমহলগুলো যেমন সন্ত্রাসীদেরকে অন্ধকারে নিরাপদ আশ্রয় দিচ্ছে, তেমনি কাঁটাতারের বেড়া থাকাতে তালিকাভুক্ত সুনির্দিষ্ট কিছুসংখ্যক চোরাচালানকারী বিশেষভাবে সুবিধা পাচ্ছে। ট্রানজিট চুক্তি-আলোচনাকে কখনো আলোকিত হতে দেখলে বরাবরের মতোই নীরব আঁধারে ওরা আত্মগোপন করে থাকবে।
রঙ্গপুর : ১০/০৯/২০১১
করণিক : আখতার ২৩৯
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।