সবাইকে আমার নিজস্ব ব্লগ ভিজিট করার আমন্ত্রন রইলঃ www.islameraalo.wordpress.com ৯/১১, সংকেতেই সবাই বুঝে যায় । সবাই বুঝতে পারে ৯/১১ এর অর্থ সেই ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী হামলা, যেটা হয়েছিল আমেরিকার বুকে । এর জন্য দায়ি করা হয়েছিল লাদেনকে । আবশ্য তাদের কাছে এ সম্পর্কে কোনো প্রমান ছিল না । সেখানে একটা পাশপোর্ট পাওয়া গিয়েছিল ।
তারপর আমেরিকা বলেছিল এটা লাদেনের কাজ । তবে এই প্রমানটা অযৌক্তিক, হাস্যকর । ঐ ব্লাস্টে দুটি জাহাজ এবং World Trade Centre এর প্রায় পুরো অংশটাই জ্বলে ছাড়খাড় হয়ে গিয়েছিল । অথচ সেই পাশপোর্টটার কিছুই হয়নি । তখন আমেরিকানরাই বলেছিল এখন থেকে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট বানাতে হবে সেই পাশপোর্ট দিয়ে ।
আমেরিকার কাছে কোনো প্রমান ছিল না । তাই আফগানিস্থান সরকার যখন বলেছিল প্রমান দিন আমরা লাদেনকে আপনাদের হাতে তুলে দিচ্ছি । তখন আমেরিকা কোনো প্রমান না দিয়ে হামলা করল আফগানিস্থানে । আর যদি প্রমান থেকেও থাকত তবুও লাদেনের জন্য আফগানিস্থানকে হামলা করা কোনো মতেই উচিত হয়নি ।
আমরা সবাই জানি লাদেনকে তৈরি করেছে আমেরিকা ।
এমনকি আমেরিকা লাদেন ও তার দলকে প্রশিক্ষনও দিয়েছে । তারা নিজ স্বার্থে আফগান যুদ্ধে লাদেনকে কমান্ডার করেছিল । কিন্তু আমেরিকার কুনজর যখন আরবের উপর পড়ল,তা বুঝতে পেয়ে লাদেন তাদের বিরোধিতা করেছিল । তখন লাদেন তাদের বন্ধু থেকে শত্রু হয়ে গেল । ৯/১১ বা বিশ্ব বানিজ্য কেন্দ্র হামলায় যে লাদেনের হাত আছে তার প্রমান এখনও আমেরিকা মিডিয়ার সামনে দেয়নি ।
আমেরিকানদের মধ্যে আনেকের মতে ৯/১১ সরকারের একটা চাল । জজ বুশ ক্ষমতায় থাকার জন্য নিজেই World Trade Centre এ হামলা করিয়ে ছিল, যাতে সরকারের ব্যর্থতার দিক থেকে লোকের ধ্যান সরানো যায় । এ নিয়ে আমেরিকাতে বেশ কয়েকটি বই লেখা হয়েছে । অনেক সেমিনার করা হয়েছে । ইসলামের আলো লাইব্রেরিতেও এমন একটা সেমিনারের ভিডিও ক্যাসেট আছে ।
যেখানে আমেরিকার ৭৫ জন বিষেশজ্ঞের একটা দল যাদের মধ্যে ছিল ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, প্রফেসর ও সমাজসেবীরা । তারা প্রায় ২ ঘন্টার সেমিনারে এটা প্রমান করেছেন যে, ঐ কাজ বাইরের কোনো লোকের পক্ষে সম্ভব না । এটা আমেরিকার ভেতরের লোকই করেছে । সেই বিশেষজ্ঞ দলের একজনও মুসলিম ছিল না । সবাই খৃস্টান ।
আপনারা হয়ত জানেন, পৃথিবীর সকল দেশ তাদের সামরিক বাহিনীতে যত টাকা খরচ করে শুধু আমেরিকা তাদের সামরিক বাহিনীতে তার থেকেও বেশী খরচ করে । FBI দাবি করে তাদের অজান্তে আমেরিকায় একটা মাছিও উড়ে না । অথচ দুটি জাহাজ চুরি হয়ে গেল, কয়েক ঘন্টা উড়ে বেড়িয়ে পেন্টাগনের মতো শহরে হামলা করল আর FBI জানতেও পারল না! এটা কোনো ভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।
আপনারা এমনটা ভাব্বেন না যে আমি লাদেনের হয়ে কথা বলছি । আমিও ডা. জাকির নাইকের মতোই বলব লাদেন আমার বন্ধুও নয় শত্রুও নয় ।
তাকে আমি চিনিও না । আমি এটা বলছি না যে লাদেন খুব ভালো লোক বা নির্দোষ আবার এটাও বলছি না যে সে খারাপ লোক কারন আমি প্রমান পায়নি । তবে আমি এটা বলব যে মিডিয়া যেখানে লাদেনের ব্যপারে এত কিছু বলছে, তার সমালোচনা করছে, তাকে পৃথিবীর এক নম্বর সন্ত্রাসী বলছে, সেখানে আমেরিকার ব্যাপারে চুপ কেন ? ৯/১১ এর পর সারা বিশ্বে বিশেষ করে আমেরিকায় মুসলমানদের উপরে আকাশ ভেঙে পড়েছে । তারা বিভিন্ন জায়গায় হেনস্থ হয়েছে, চাকরি খুইয়েছে, বিনা বিচারে জেলে গিয়েছে, তাদের বাইরে চলা-ফেরা অসম্ভব হয়ে গিয়েছিল । একটু চিন্তা করে দেখুন, একটা লাদেনের জন্য আফগানিস্থানের লাখ লাখ নিরিহ লোককে মেরে ফেলা, হাজারো লোককে হেনস্থ করা, সন্ত্রাসবাদী বলে সন্দেহ করা এটাই কি বাহাদুরি ? একজন দুই হাজার লোককে মারল, আর একজন লক্ষ লক্ষ লোককে মারল এখনও মারছে তাহলে সন্ত্রাসী কে ? আমেরিকা সন্ত্রাসবাদী বানাচ্ছে তারপর তারা নিজেরাই আবার তাকে মারছে ।
তারসাথে লাখ লাখ নিরিহ মা, ভাই, বোন কেও মারছে । তাহলে দোষী কে ? এটা আমেরিকার দাদাগিরি । যা সারা মুসলিম জাহান ও সারা বিশ্ব অসহায়ের মত মাথা পেতে মেনে নিচ্ছে ।
যদি মেনেও নেওয়া যায় যে, লাদেন এমন করেছে তাহলেও এক জন বা কয়েকজন মুসলমানের জন্য সারা মুসলিম জাহানের সাথে এমন ব্যবহার কি মনুষত্বের পরিচয় ? যদি কোনো মুসলমান অপরাধ করে থাকে তাহলে অবশ্যই তার বিচার হওয়া উচিত এবং উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া উচিত । আর লাদেন কে ? সে কি মুসলিম জাহানের ধর্মগুরু নাকি আমরা তাকে মুসলিমদের প্রতিনিধি করেছি ? তাহলে কেন তার জন্য মুসলিমরা লাঞ্চিত হবে ?
হিটলার ষাট লক্ষ ইহুদিকে হত্যা করেছিল তাই বলে আমরা খৃস্টানদের সাথে অত্যাচার করতে পারব না ।
অথবা খৃষ্ট ধর্মকে দায়ি করতে পারব না । প্রত্যেক ধর্মেই কিছু খারাপ লোক থাকবে কিন্তু তাদের দিয়ে আমরা সেই ধর্মকে বা তার অনুসারীদের বিচার করতে পারব না । আমেরিকা সারা মুসলিম জাহানের উপর অত্যাচার করছে । সাদ্দাম হুসেনের সাথে কি করল ? কে আমেরিকাকে অধিকার দিয়েছে ইরাকের ব্যাপারে নাক গলাবার । কয়েক বছর আগে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে জজ বুশ স্বীকার করেছেন ইরাকে হামলা করা ভুল হয়েছিল ।
তারা ভুল ইনফরমেশন পেয়েছিল । চিন্তা করুন, একটা পুরো দেশকে ছাড়খাড় করে বলছে ভুল হয়েছে ।
পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে, আমেরিকা অত্যাচার করছে মুসলিম জাহানের সাথে । আন্তর্জাতিক মিডিয়া মুসলিম এবং ইসলামের সমালোচনা করে থাকে, অথচ আমেরিকা আফগানিস্থান, ইরাক ও লিবিয়ার লক্ষ কোটি লোকের উপর অত্যাচার করছে, মেরে ফেলছে, মা বোনদের ধর্ষন করছে, ছোট ছোট শিশুদের পৃথিবী দেখার আগেই পৃথিবী থেকে বিদায় করছে আর মিডিয়া চুপ । মনে হয় কিছু জানেই না ।
আর দিন রাত নিউস চ্যানেলে লাদেন…লাদেন….লাদেন…। আমেরিকা যা করছে তাতেই সমর্থন করছে মিডিয়া । তাহলে মিডিয়াকে কি আমরা আমেরিকার দালাল বলব না ?
কিছু দিন আগে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আবুল কালামের জুতো পর্যন্ত খুলে চেক করে আমেরিকার এয়ার ডিপার্টমেন্টের অফিসাররা । ভেবে দেখুন, একটা দেশের রাষ্ট্রপতি যিনি বহু বার আমেরিকায় গিয়েছেন তাকে নাকি চিন্তেই পারেনী আমেরিকান অফিসাররা । শাহরুখ খান, পৃথিবী বিখ্যাত অভিনেতা ।
টাইম ম্যাগাজিনের মতে তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা । আমেরিকার একটা বিখ্যাত নিউস চ্যানেলের সমীক্ষায় তাকে পৃথিবীর দশ জন পাওয়ারফুল মানুষের একজন বলা হয় । তার নামের সাথে ‘খান’ থাকার কারনে তাকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে চেক করে আমেরিকার অফিসাররা । আশেপাশের সকলে শাহরুখের অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি করছিল অথচ অফিসাররা তাকে চিন্তেও পারেনি । এটাকে কি বলবেন ? এটা আমেরিকার দাদাগিরি ।
তারা বুঝাতে চাচ্ছে সব মুসলমানই সন্ত্রাসী । যদি শাহরুখ এবং আবুল কালামের সাথে এমন হয় তাহলে সাধারণ মানুষের সাথে কি ব্যবহার হবে তা সহজেই অনুমেয় ।
আসলে সন্ত্রাস তৈরির কারখানা হচ্ছে আমেরিকা । ইজ্রায়েলের মতো একটা ছোট্ট দেশ বছরের পর প্যালেস্তাইনের উপর অত্যাচার করছে । কারন আমেরিকা টাকা দিয়ে, অস্ত্র শস্ত্র দিয়ে ইজ্রায়েলকে সাহায্য করছে ।
অনেকের মতে আফগানিস্থান ও ইরাক যুদ্ধের পর সন্ত্রাসী অনেক বেড়েছে, যেমন ভারতে শিখ দাঙ্গার পর শিখ সন্ত্রাসী বেড়েছিল । যাদের বাবা, ভাইকে খুন করা হয়, মা বোনকে চোখের সামনে ধর্ষন করা হয় তারাই রাগে, ক্ষোভে সন্ত্রাসী হয় । তাই সন্ত্রাসী দূর করতে হলে আমেরিকার দাদাগিরি বন্ধও করতে হবে । ইসলামে সন্ত্রাসের কোনো স্থান নাই । জিহাদ আর সন্ত্রাস এক নয় ।
দিল্লিতে সাড়ে ছয় হাজার উলেমা মিলে ফতোয়া দেন যে ইসলাম কোনো ধরনের সন্ত্রাসকেই সমর্থন করে না । ইসলামে সন্ত্রাসের কোনো স্থান নাই । এই প্রসঙ্গে আরও একটা কথা বলি কোথাও সন্ত্রাসবাদী হামলা হলে মিডিয়া বার বার সেই খবরটা ছাপায় বা দেখায় । অথচ কোনো মাদ্রাসা, ইসলামী চিন্তাবিদ বা উলেমাগন যখন ফতোয়া দেন যে ইসলাম সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে না তখন মিডিয়া এক বার দেখায় কখনো আবার দেখাই না । আমি প্রশ্ন করি আপনাদের কোন খবরটা মানুষের মধ্যে শান্তি আনতে পারে ।
আজমল কাসবকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় কেন এ পথে এলে ? সে বলেছিল আমাদের বলা হয়েছে এতে আমাদের নেকি হবে এবং আমরা জান্নাতের হুর পাবো । আর আমার মনে আছে আমি ইন্ডিয়া টুডে তে দিল্লি ব্লাস্টের অপরাধিদের ইন্টারভিউ পরেছিলাম । তাদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কোনো মলে (বাজারে) যদি আপনার মা বাজার করে তাহলে কি সেই মলে হামলা করবেন ? তারা বলেছিল হ্যাঁ, এক্ষেত্রে আমার মা জান্নাতে যাবে । এই সব সন্ত্রাসীরা কি ধর্মীয় বিষয়ে পড়াশোনা করেছে?- না । এদের যা বলা হয়েছে তাই এরা অন্ধের মতো মেনে নিয়েছে ।
আমি আপনাদের একটা প্রশ্ন করি, যদি এই সন্ত্রাসীরা যারা কিছু লোকের ভুল ধর্মীয় উস্কানীতে এই সকল কাজ করেছে তারা যদি নিউস চ্যানেলে দেখত যে সারা বিশ্বের সাড়ে ছয় হাজার ঊলেমা ফতোয়া দিয়েছে যে ইসলাম নিরিহ লোক মারা কে সমর্থন করে না বরং কুরানে বলা হয়েছে, যে একজন মানুষকে মারল সে যেন সারা মনুষত্বের খুন করলো তাহলে কি তারা সেই হামলা গুলো করত? না কখনো না । তাই মিডিয়ার কাছে আমার অনুরোধ আপনারা এই ধরনের খবর বেশী বেশী করে দেখান । তাহলে অনেক উপকার হবে সমাজের ।
আর একবার বলছি, ইসলাম শান্তির ধর্ম, কোনো ধরনের অশান্তি, বিশৃংখলাকে ইসলাম সমর্থন করেনা । কোনো মুসলমানের পক্ষে সম্ভব নয় কোনো নিরিহ লোককে হত্যা করা ।
যারা নিরিহ লোককে হত্যা করে তারা মুসলমান নয় । আর এই নামধারী মুসলিমদের জন্য সত্যিকারের মুসলিমদের উপর অত্যাচার বন্ধ হওয়া উচিত । আল্লাহ আমাদের সকলকে হেদায়ত দিন । আমীন!
আমার আরও লেখা পড়তে দেখুন-- http://islameraalo.wordpress.com/ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।