মানুষ আসে মানুষ যায় কিন্তু সময় যায় চিরতরে একটি কপি পোষ্টঃ-আজকের দৈনিক ইত্তেফাক এ প্রকাশিত সংবাদটি সকল ব্লগার বন্ধুদের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্যই এই কপি করা!
লেখক: বিমল সাহা, ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি | শনি, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১১, ২৬ ভাদ্র ১৪১৮
বিস্তারিতঃ-
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুমড়োবাড়িয়া ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের জহির রায়হান আজ মানুষের কাছে গাছ প্রেমিক বলে পরিচিত। দরিদ্র এ মানুষটির গাছ লাগানো নেশা। মৃত কেয়াম উদ্দিন মোল্লার ছেলে জহির রায়হান পেশায় একজন রং মিস্ত্রি। পরের ঘর রং করা তার কাজ।
ছোট বেলায় বাবার মৃত্যুর পর সংসারের ভার পড়ে তার কাঁধে।
তাই লেখাপড়া করতে পারেননি। কিন্তু তিনি আজ পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে এক বিশেষ অবদান রেখে চলেছেন। জহির রায়হান কোন ধনী ব্যক্তি নন। সংসারে অনটন লেগেই থাকে। নিজে রং মিস্ত্রির কাজ করেন।
স্ত্রী শাহনাজ বাড়িতে সেলাইয়ের কাজ করেন। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ৪ জনের সংসার। দু’ জনের আয়ে সংসার খরচের পর যা অবশিষ্ট থাকে তা দিয়ে বিভিন্ন স্থানে গাছ লাগান জহির রায়হান। বৃক্ষ রোপণ ও সমাজ উন্নয়নে মানুষকে উদ্বুদ্ধকরণে দেয়ালে দেয়ালে সাইন বোর্ড লিখে থাকেন।
জহির রায়হান জানান, ১৯৯০ সালে নিজের মন থেকে বিভিন্ন স্থানে গাছ লাগানো শুরু করেন।
তার এ কাজ দেখে অনেকে উপহাস করত। ঝিনাইদহ সদর, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও হরিণাকুন্ডু উপজেলার স্কুল-কলেজের ফাঁকা মাঠ ও রাস্তার পাশে এ পর্যন্ত ৬ হাজার গাছের চারা লাগিয়েছেন। কবি গুরুর স্মৃতি বিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহতেও গাছ লাগিয়েছেন। তার কথা ’ দেশ আমাকে কি দিল সেটা বড় নয়। আমি দেশ ও মানুষের জন্য কি করলাম সেটাই আমার কাছে বড়’।
তার লাগানো গাছের মধ্যে ফলদ ও বনজ বৃক্ষই বেশি। কিছু ওষুধি বৃক্ষও আছে। লেখাপড়া না জানলেও উপদেশমূলক সাইন বোর্ড লিখেন বিভিন্ন স্থানের দেয়ালে। তিনি কোন প্রতিষ্ঠান থেকে শিল্পকর্মের প্রশিক্ষণ পাননি। প্রথমে মাটিতে লিখে লিখে দেয়ালে সাইন বোর্ড লেখা শিখেন।
বৃক্ষ রোপণে মানুষকে সচেতন করে তুলতে বিভিন্ন স্থানে ৪শ’ সাইন বোর্ড লিখেছেন। একটি সাইন বোর্ড লিখতে ৫শ’ টাকা ব্যয় হয় বলে জানান।
এছাড়াও একজন দরিদ্র ছাত্রকে নিজ খরচে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়িয়েছেন। বর্তমানে একজন ছাত্রীকে পড়ার খরচ চালাচ্ছেন। ৪ প্রতিবন্ধীর বাড়িতে নিজ ব্যয়ে ফলদ ও বনজ বৃক্ষের বাগান তৈরি করে দিয়েছেন।
২০০২ সালে নগরবাথান কুমড়োবাড়িয়া সড়কের পাশে পথচারিদের জন্য একটি বিশ্রামের স্থান তৈরি করে দিয়েছেন। তার লাগানো একটি বকুল গাছের চারপাশে পাকা করে দিয়েছেন। রোদের মধ্যে পথচারিরা এখানে বসে বিশ্রাম নেন। এতে তার ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছিল।
জহির রায়হান গত ৪ সেপ্টেম্বর স্কুলের ছোট ছোট সোনামনিদের নিয়ে এক ব্যতিক্রমী ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করেন।
তাদের পড়াশুনার পাশাপাশি গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ করেন। শিশু-কিশোরদের হাতে বাড়ি ফেরার সময় একটি করে গাছের চারা তুলে দেন। তার এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কুমড়োবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হায়দার আলি। তিনি দরিদ্র জহির রায়হানের বৃক্ষ রোপণ ও সমাজ সেবামূলক কাজের প্রশংসা করে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। কোটচাঁদপুর উপজেলার কুশনা ইউনিয়নের সাবেক চেযারম্যান আলাউদ্দিন লস্কর, গ্রামের কাওসার আলি, লিয়াকত আলি মেম্বার, মশিউর রহমান জোয়ার্দ্দার প্রমুখ তাকে উত্সাহিত করেন।
জহির রায়হানের একটি চোখ নষ্ট হতে চলেছে। অর্থাভাবে ভাল চিকিত্সা করতে পারছেন না। তবু তার গাছ লাগোনোর আন্দোলন থেমে নেই। অতি সমপ্রতি বেশ কয়েকটি বড় এনজিও তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। গ্রামীণ ব্যাংক কর্মীরা ইতিমধ্যে তার কাজ দেখে গেছে।
আশা করা হচ্ছে তিনি তার কাজ অব্যাহত রাখার জন্য এনজিওদের সহায়তা পাবেন।
বাংলাদেশের উন্নয়নে দাতাদের দেওয়া হাজার হাজার কোটি টাকা যে এন জি ও রা সাবাড় করে দিচ্ছে আর মাল্টি কমপ্লেক্স অফিস বানিয়ে ভোগ বিলাসে সময় কাটাচ্ছে সেই এন জি ও রা কি করবে জানি না।
@কিন্তু এই নিঃস্বার্থ সমাজ সেবক মানুষটি-যে নিজে শিক্ষার আলো বঞ্চিত হয়েও সমাজের অবহেলিত শিশুদের নিজ রোজগারের টাকায় শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে চলেছেন সেই মহৎপ্রান গাছ ভাই জহীর রায়হানের,
চোখের আলো ফিরিয়ে দিতে আমরা কি কোনো সরকারী উদ্যোগ
আশা করতে পারি না? জানি এই ব্লগেও অনেক মানুষ আছেন যারা সমাজের কথা মানুষের কথা ভাবেন,যারা সরকারের নীতি নির্ধারক, সেই সমস্ত মানূষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি-অন্তত একটি উদ্যোগ নিয়ে একজন গাছ পাগল মানুষের পাশে দাঁড়ান!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।