আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সময় ছুটে উল্টো পথে [ছোটগল্প]

ঝর্ণার পাশে বাড়ি/ জলের তেষ্টায় মরি/ জীবনের খেলাঘর/ বেঁধে যাই নিরন্তর। আগামীর মুফাস্সিরে কুরআন আলিফ। কুরআন বিষয়ক যে কোন বই তার প্রথম ভাল লাগা। এখন তাঁর হাতে আছে ‘কুরআনের গল্প’ নামক একটি বই। প্রচন্ড ক্লান্তিকর এক জার্নি শেষ করেও অক্লান্ত আলিফ।

কারণ হাতে যে কুরআন বিষয়ক বই। মানুষের বই হাতে ঘুম আসে। কিন্তু আলিফ তার উল্টো। বই মানেই ঘুমের ছুটি। প্রতিটি বই তার কাছে, এক একটা নতুন জগৎ।

বয়স আর কতই বা চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। কিন্তু বই পেলেই এই কিশোরটি আর কিশোর থাকে না। হারাতে তাকে পাঠ ও পাঠোদ্ধারের এক স্বপ্নীল ভুবনে। হয়ে যায় বয়সের তুলনায় অনেক ধীর। অনেক পরিণত।

আজও... ‘কুরআনের গল্প’ বইটি পড়তে পড়তে আলিফ নিজেকে হারাতে থাকে। মিশে যেতে থাকে গল্পের প্রতিটি চরিত্রে। নিজেই হয়ে উঠতে থাকে ইতিহাসের এক একটি চরিত্র। কল্প জগতের এক নিঃসীম জগতে শুরু হয় তার পথ চলা... পৃথিবীর ধর্ম এগিয়ে যাওয়া। কিন্তু! আজ পৃথিবীর ইতিহাসে অবিশ্বাস্য এক ঘটনা ঘটে চলেছে।

আলিফের পৃথিবী পিছিয়ে যাচ্ছে। পিছিয়ে যাচ্ছে সময়। ঘন্টা-দিন-সপ্তাহ-মাস-বছর-যুগ-শতাব্দী-সহস্রাব্দ করে পেছাতে পেছাতে আলিফের অতি প্রাকৃত পৃথিবী পিছিয়ে যায় হাজার হাজার বছর। চোখ ভেসে ওঠে প্রাগৈইতিহাসিক কাল। আলিফ দেখে তার চার পাশের সব কিছুই কেমন যেন অস্বাভাবিক।

হঠাৎ তার মনে হয় সে এসেছে পৃথিবীর সূচনায়। সুতরাং একটু তফাত তো থাকবেই। শুরু হয় নতুন ভাবনা ... আলিফ ভাবতে থাকে এত বিশাল বৃক্ষ, পাহাড়, নদী, মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। তিনি কত মহান! তার কত শক্তি! সে চরম নিবেদনে লুটিয়ে পড়ে সিজদায়। সিজদা থেকে উঠে দাঁড়াতেই চেয়ে দেখে সামনে বিশাল দুই বৃক্ষ।

চমকে উঠে আলিফ। একটু ভাল করে চেয়ে দেখে, আরে এতো গাছ নয় মানুষের পা। ওপরের চোখ তোলে দেখে বিশালাকার এক মানুষ। তার মাথা যেন আকাশ ছুয়েছে। আলিফ আবার সিজদায় লুটিয়ে পড়ে।

কৃতজ্ঞতা জানাতে মহা প্রভুর দরবারে ; ইতিহাস তার চোখে বাস্তব হওয়ার জন্য। ধন্যবাদ আমাকে মেনে নেয়ার জন্য। বিশাল লোকটি বলে ওঠে। আলিফ বলে মেনে নেয়া! মানে? এই যে সেজদা করলে। এই সেজদা পাওয়ার জন্যই তো আমি এলাম।

তুই দেখিসনি তুই কত ক্ষুদ্র আর আমি কত বড়। তুই জেনে রাখ আমি ‘নমরুদ’। আমি তোর ‘রব’। মুহুর্তেই আলিফ নিজেকে সামলে নেয়। বলে ওঠে, একি! এক ক্ষুদ্র মশার কামড়ে জীবন দিয়েও আপনার খয়েশ মেটেনি।

এখনো উল্টা পাল্টা বকেন। চলুন আপনাকে পাবনা হেমায়েতপুরে ভর্তি করে দেই। মাথাটা ঠিক হয়ে যাবে। পাগলামীটাও সেরে যাবে। আবার খায়েশটাও মিটতে পারে।

আলিফের কথা শুনে নমরুদ বেশী শয়তান মনে মনে ভাবে, ‘এতো দেখি আমার ইজ্জত প্লাস্টিক কইরা দিবো। ’ পালাই...। এখনো কেউ জানে না। আমার আসল পরিচয়। ভাবতে ভাবতে দৌড়ে পালাতে থাকে নমরুদ।

আরে আরে যান কোথায়? বলে, আলিফ। কিন্তু কে শুনে কার কথা মুহুর্তেই উধাও হয়ে শয়তান... ইতিহাসের গল্পের বাঁক ঘুরে ঘুরে আলিফ এবার মিশরে। এখানেও ফিরআউন। আলিফ বন্দি হয়। চিড়িয়া খানায় প্রাণীর মত আলিফকে দেখতে আসে বিশাল বিশাল মানুষ।

আলিফ হঠাৎ সুরা বনী ইসরাইল তেলাওয়াত শুরু করে। এই তিলাওয়াত শুনে ফিরাউনের বুকে কাঁপন ওঠে। সে নির্দেশ দেয় ‘ওকে ছেড়ে দাও। ও তো আমার সব গোমর ফাঁস করে দিচ্ছে। ’ আলিফ বলে লোহিত সাগরে ডুবে মরেও তোমার শিক্ষা হয়নি।

এখনো তোমার অহংকার। তুমি মমি হয়ে পিরামিডে বাস করো। ভাবো তুমি অমর। ছিঃ ছিঃ তুমি এত বেঈমান! অকৃতজ্ঞ। ফিরাউন লজ্জায় ক্ষোভে চিৎকার করে ওঠে।

ডাকতে থাকে প্রহরী, প্রহ...রী, প্র... ... ... । আলিফ বলে, মমির ডাকে কেউ আসবে না। এক বিংশ শতাব্দীতে তোমার চেলারা জীবিত থাকলেও তারা তোমার ডাক শুনবে না। তোমার কোন কাজে আসবে না। ফিরাউন জ্ঞান হারায় ...।

আলিফের কল্প ভ্রমন চলতেই থাকে। কুরআন বর্ণিত প্রতিটি ঐতিহাসিক স্থানে তার পরিভ্রমন শুরু হয়। এর মাঝে সাদ্দাদের আগমন ঘটে। শাহী ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে আলিফের সামনে এসে দাঁড়ায় সাদ্দাদ। বলে এসো! এসো! আমার জান্নাত তোমার অপেক্ষায় আছে।

তোমার মত এমন স্বপ্নবাজ কিশোরদের জন্যই আমার জান্নাত। তুমি কুরআনে ভাষ্যকার হবে। আমার জান্নাতে তোমার আগমন ঘটবে। এটা আমার চরম সৌভাগ্য। আলিফ ভাবনায় পড়ে যায়।

কী করবে সে। বুঝতে পারে না। সাদ্দাদ কেমন জান্নাতটা বানালো দেখে গেলে মন্দ হয় না। কিন্তু ! জান্নাতের বর্ণনা তো মহান আল্লাহ কুরআন দিয়েছেন...। বিপাকে পরে আলিফ।

আচমকা চেয়ে দেখে সাদ্দাদ নেই। উর্ধ:শ্বাসে দৌড়ে পালাচ্ছে। আলিফ চেয়ে দেখে পেছনে দাড়িয়ে আছেন ইসলামিয়াতের স্যার। স্যার! আপনি? আলিফের প্রশ্নটা শেষ না হতেই স্যারকে আর পাওয়া যায় না। শুধু শোনা যায় সময় অল্প, দ্রুত শেষ করো আলিফ...।

আলিফ অসংখ্য বার ‘বড়াপ্পির’ কাছে আসহাবে কাহাফের গল্প শুনছে। কত ভেবেছে সে। আহ যদি আসহাবে কাহাফের সদস্য হতাম। যদি ক্বিতমীর ও হতে পারতাম! জীবনটা ধন্য হতো। সরাসরি জান্নাত।

কী মজা! এবার সে ছুটতে থাকে আসহাবে কাহাফের গুহার দিকে। দ্রুত আরো দ্রুত তার কল্পঘোড়া ছুটতে থাকে। এক সময় সে গুহার দোরগোড়ায় এসে যায়। একটা ছায়া মূর্তি এসে পথ রোধ করে। বলে কোথায় যাও বৎস! দাড়াও! আমার অনুমতি ছাড়া এখানে প্রবেশ নিষেধ।

আপনি কে? আপনার অনুমতি লাগবে কেন ? বলল আলিফ। আমি আল্লাহ্ কর্তৃক নিয়োজিত পাহারাদার। আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তোমাকে এখানে প্রবেশ করতে হবে। আলিফ ও ছায়ামূর্তির মাঝে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর। ছায়ামূর্তি একটার পর একটা প্রশ্ন করে।

আলিফ উত্তর দেয়। আলিফ যতই যুক্তি দেয় ছায়ামূর্তি ততই পাল্টা যুক্তি দিয়ে আলিফকে কাবু করে ফেলে। ছায়ামূর্তি তাওহীদ অস্বীকার করে। রিসালাত অস্বীকার করে। অস্বীকার করে আল কুরআন।

আল হাদীস। এবার আলিফ ভয় পেয়ে যায়। সে ভাবে আমি কার পাল্লায় পড়েছি। শেষ পর্যন্ত আমার কী হবে! চট করে আলিফের মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। সে বলে, ঠিকাছে আমি একটা বাক্য বলার পর তুমি যদি এর অর্থ বলতে পারো; তবে তোমার সব যুক্তি আমি মেনে নেব।

ছায়ামূর্তি খুশি হয়ে বলে, বলো। আলিফ বলে-আউযু বিল্লাহি মি................। আর বলতে পারেনা। ছায়ামূর্তিটি পালাতে থাকে। বলতে থাকে আলিফ কাজটা ঠিক করোনি।

যুক্তির জবাব আক্রমণে দিলে। আমি প্রতিশোধ নিবো। আবার আসবো...। আজান ভেসে আসে মিনার হতে। শয়তানের গায়ে আগুন জ্বলে ওঠে।

আলিফ চিৎকার করে বলে ইবলিশ আমার ফজরের নামায কাযা করতে চাও...। তখনো দুর দিগন্তে আলিফ দেখতে পায় দাউ দাউ আগুনে জ্বলছে শয়তান। এবং দৌড়াচ্ছে। চিৎকার করছে আর আওয়াজটা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে। যুক্তির জবাবে আক্রমন...।

প্রতিশোধ ...। আবার আসবো...। ছবি: গুগল। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।