আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিএনপির শেষ সময়ে নজিরবিহীন দুর্নীতি

অ আ ক খ গ ঙ আড়াই লাখ মার্কিন তারবার্তা ফাঁস করেছে উইকিলিকস। মার্কিন কূটনীতিকদের ভাষ্যে এসব তারবার্তায় বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশের রাজনীতি ও ক্ষমতার অন্দরমহলের খবর বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিগত চারদলীয় জোট সরকার তাদের শেষ সময়ে এসে দৃশ্যত নজিরবিহীন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছিল। অর্থসম্পদের লালসা ছাড়াও পরবর্তী নির্বাচনের খরচ মেটাতে তারা এই দুর্নীতিতে মেতে ওঠে। প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং অন্য জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের পরিবারের সদস্যরা দুর্নীতি করে পার পেয়ে যাচ্ছেন—সর্বব্যাপী এই বিশ্বাস সর্বস্তরে ছোটখাটো দুর্নীতি আরও বাড়িয়ে দেয়। আলোচিত ওয়েবসাইট উইকিলিকসের ফাঁস করা মার্কিন গোপন কূটনৈতিক তারবার্তায় এসব কথা বলা হয়েছে।

ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের ওই তারবার্তায় বলা হয়, বিএনপি সরকারের শেষ সময়ে এসে ২২ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট, ভিসা ও জাতীয় পরিচয়পত্রের সমালোচিত কাজটি আবার চাঙা করা সম্ভবত সবচেয়ে বড় প্রশ্নবিদ্ধ ক্রয়কাজ। এ ছাড়া মন্ত্রিসভার ক্রয় কমিটিতে ২১ আগস্ট ১২ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলারের আরও ১৯টি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য তোলা হয়। এর মধ্যে দুটি বাদে সব কটি প্রকল্পেরই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যদিও এগুলোর বিরুদ্ধে বড় বড় অনিয়মের অভিযোগ ছিল। তারবার্তায় বলা হয়, পাসপোর্ট ও পরিচয়পত্রের কাজটি জার্মান দরদাতা গাইসেকে অ্যান্ড ডেভ্রিয়েন্ট জিএমবিডিকে দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রস্তাব দিলেও ১৭ জুলাই তা নাকচ করে দেয় মন্ত্রিসভার ক্রয় কমিটি। কমিটির বিশেষ আপত্তি ছিল জাতীয় পরিচয়পত্র অংশটি নিয়ে।

জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য একটি আইনি ও বিধানসম্মত কাঠামো দাঁড় করাতে ব্যর্থতা, দরপত্র মূল্যায়নের জন্য আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতামত না নেওয়া এবং এ ধরনের বড় একটি কাজের জন্য একটিমাত্র ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করে ক্রয় কমিটি। এরপর কমিটি শুধু যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট ও ভিসার জন্য আলাদা দরপত্র তৈরির পরামর্শ দিয়ে প্রকল্প প্রস্তাবটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠায়। খবরের বরাত দিয়ে তারবার্তায় বলা হয়, এর পরও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সুপারিশে প্রকল্পটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়। ১৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ডেইলি স্টার পত্রিকাকে এক সাক্ষাৎকারে জানান, প্রকল্পটি আবারও ক্রয় কমিটিতে পাঠানোর জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে তাঁকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ২১ আগস্টের বৈঠকে ক্রয় কমিটি এ কাজটি অনুমোদন করেনি।

তবে আশা করা হয়, পরবর্তী বৈঠকে তা হতে পারে। এ ছাড়া ওই সময় আরও যেসব প্রশ্নসাপেক্ষ ক্রয়কাজ বিবেচনা করা হয় বা পাস হয়, তার মধ্যে ছিল টেলিযোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও পরিবহন অবকাঠামো খাতের প্রকল্প, অনেকগুলো ভূমি চুক্তি, সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণসহ জ্বালানি খাতের অনেকগুলো প্রস্তাব। এর সঙ্গে যোগ হয় চাল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটের সঙ্গে সরকারের কথিত সংশ্লিষ্টতা এবং ভুয়া বিও অ্যাকাউন্ট খুলে আইপিও সংগ্রহের বিধি ফাঁকি দেওয়ার কেলেঙ্কারি। তারবার্তায় বলা হয়, ব্যাপকভাবে মনে করা হয় যে প্রধানমন্ত্রীর দুই ছেলে এবং জ্যেষ্ঠ কয়েকজন মন্ত্রীর আত্মীয়স্বজন বড় ধরনের কমিশনের বিনিময়ে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে ছিল পুলিশের জন্য রেডিও সরঞ্জাম ক্রয়ের দুটি দরপত্র।

মনে করা হচ্ছিল, মার্কিন প্রতিষ্ঠান মটোরোলা তা পেতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর পক্ষে তারেক রহমানের সরাসরি হস্তক্ষেপের কারণে। কোকো কাজ করছিলেন সিঙ্গাপুর টেকনোলজিসের পক্ষে। দূতাবাসের সূত্রমতে, যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট ও পরিচয়পত্র প্রকল্পেও সিঙ্গাপুর টেকনোলসিজের বড় ধরনের ভূমিকা থাকার কথা। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের বরাত দিয়ে মার্কিন তারবার্তায় বলা হয়, এ দুর্নীতি নজিরবিহীন এবং এর আগের আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে যে দুর্নীতি হয়েছিল, তার চেয়ে ভয়াবহ।

এতে বলা হয়, দূতাবাসের একজন কর্মকর্তাকে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতির এমন লাগাম ছাড়া রমরমার একটি বড় কারণ, প্রধানমন্ত্রীর দুই ছেলেসহ শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রীদের আত্মীয়স্বজনের দুর্নীতি। বেশির ভাগ দুর্নীতি হচ্ছে শুধু অর্থের লালসা থেকে। যদিও আগামী নির্বাচনের জন্য তহবিল সংগ্রহ করাও এর একটি উদ্দেশ্য। মার্কিন কর্মকর্তাকে তিনি আরও বলেন, এ মর্মে গুঞ্জন রয়েছে যে ‘রাজপুত্র’ মালয়েশিয়ায় একটি বিনিয়োগে অনেক টাকা খুইয়েছেন, যার একটি বড় অংশ নির্বাচনী ব্যয়ের জন্য রাখা ছিল। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে সিন্ডিকেট তৈরি করা হয় বলে মনে করা হয়।

তিনি রাজনৈতিক চাপের উদাহরণ হিসেবে যেভাবে দ্রুততার সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিন্ডিকেট-বিরোধী উদ্যোগ থামিয়ে দেওয়া হয়, তার উল্লেখ করেন। সমাজের একেবারে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে বলেও জানান ইফতেখারুজ্জামান। তিনি উদাহরণ হিসেবে স্কুলের বৃত্তির অর্থ বা স্বাস্থ্যসেবা পেতে ঘুষ দেওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন তথ্য দেন। ইফতেখারুজ্জামানের বক্তব্য: উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া তথ্য টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানকে জানানোর পর তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুর্নীতিবিরোধী তথ্য ও মন্তব্যের জন্য অনেকেই আমাদের (টিআইবি) কাছে আসে। যেসব তথ্য বলা হয়েছে, তার বেশির ভাগই হয়তো বলে থাকতে পারি।

বলে থাকলে আমাদের গবেষণালব্ধ তথ্য থেকেই বলেছি। তবে ব্যক্তিকেন্দ্রিক যেসব কথা বলা হয়েছে, সেগুলো বলিনি। এটা আমাদের নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত। ’ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।