প্রদীপ হালদার,জাতিস্মর। ভূত এবং আমি দুজনে এক সাথে আছি । ভূত তার জীবনের কথা বলে । আর আমি বলি আমার জীবনের কথা । ভূত আমার মুখ দিয়ে তার জীবনের কথা বলে ।
তার আশা আকাঙ্ক্ষা আমার মাধ্যমে প্রকাশিত হয় ।
আমার ভেতরে তিনটি ভূত আছে । হরিদাস মুখার্জী মৃত্যুর পর ভূত হয়ে মণীন্দ্র চন্দ্র নন্দীর রাজপরিবারে কোন এক মায়ের গর্ভে থাকা শিশু মি.নন্দীর শরীরে প্রবেশ করে। মি. নন্দী ভূমিষ্ঠ হবার পর আশে পাশের সাথে পরিচিতি লাভ করে।
হরিদাস মুখার্জী ভূত হয়ে নন্দীর শরীরে থাকলেও হরিদাস মুখার্জী তার জীবনের কোন কথা নন্দীর মুখ দিয়ে বলায় নি ।
নন্দীও তিন বছরের মধ্যে পুকুরের জলে ডুবে মারা যায় ।
হরিদাস মুখার্জী মৃত্যুর পরের কোন কথা নন্দীর মুখ দিয়ে বলায় নি ।
নন্দী মৃত্যুর পর ভূত হলো এবং উড়ে চললো । এই ধারণা নিয়ে সে ডলি সাহার শরীরে থাকা রমেশের শরীরে ঢুকলো ।
রমেশের জন্ম হলো ।
ধীরে ধীরে বড় হলো । মাকে বলতে লাগলো - ' আমি এইভাবে জলে ডুবে মারা যাবো । '
রমেশ এই দুটো ভূত নিয়েও পুকুরের জলে ডুবে মারা গেলো ।
মারা যাবার মুহূর্ত থেকে ভূত হওয়া পর্যন্ত এবং সেই ভূত কিভাবে ঊর্মিলার শরীরের ভেতরে থাকা প্রদীপের শরীরে ঢুকলো , সব ধারণা রমেশের রয়েছে ।
এখানেও প্রদীপের মৃত্যু ছিল পুকুরের জলে ।
কিন্তু আমার ভেতরে থাকা ভূতগুলো কথা ব'লে আমাকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিল ।
আমরা জানি , কাউকে ভূতে ধরলে , সেই মানুষটি ভূতকে জব্দ করতে পারে না । বরং ভূতটি সেই মানুষকে জব্দ করে । ডাক্তার কিছু করতে পারে না । ওঝারা এসে অত্যাচার করে ।
ভূতে ধরা এবং মানুষের ভর হওয়া - সত্য ।
রমেশ তার বাবা মায়ের কাছে যেতে চেয়েছিল । আমি প্রদীপ । আমি রমেশের কথা রেখেছিলাম । আমি কষ্ট করে রমেশের বাবা মায়ের ঠিকানা খুঁজে পেলাম ।
আমাকে পেয়ে রমেশের মা ডলি বললো -'তুমি ঠিক সময়ে এসেছো , প্রতিষ্ঠিত হয়ে তারপর মাকে দেখতে এসেছো , কেউ বলবে না তুমি সম্পত্তির লোভে এসেছো । '
রমেশের মা রমেশকে ঠিক কথাই বলেছিল ।
এরপর রমেশ অনেকদিন যোগাযোগ করে নি । আবার ইচ্ছা হলো রমেশের ।
আমি প্রদীপ , রমেশের ইচ্ছাপূরণের জন্য আবার রমেশের বাড়ীতে গেলাম ।
রমেশের বাবা কমল সাহা । সেদিন রমেশের বাবা ঘরে ছিল । বাবা বাবা বলে ডাকলাম । আমার ডাক শুনে খোকা খোকা বলে ডাকতে লাগলো । আমি দেখলাম , দরজা বাইরে থেকে তালা দেওয়া ।
দরজার ফাঁক দিয়ে বাবার হাতে মিষ্টির প্যাকেট দিলাম। মায়ের সাথে দেখা হলো না । আমি বাড়ী ফিরে এলাম । রমেশ আবার মায়ের সাথে দেখা করার জন্য আমাকে নিয়ে গেলো । আমাকে দেখে মা কাঁদতে লাগলো , বললো -' খোকা , ডাক্তার বলে দিয়েছে , তোর বাবা আর বাঁচবে না ।
কথা বলতে পারতো না তোর বাবা । সেদিন ঘরে এসে দেখি তোর বাবা কথা বলছে আর বলছে খোকা এসেছে । '
রমেশের বাবা আজ আর বেঁচে নেই । মৃত্যুর সময় রমেশকে জানায় নি । সেটা রমেশের দুঃখ হতে পারে ।
রমেশ আমাকে নিয়ে তার মায়ের কাছে যেতে চায় না ।
হরিদাস মুখার্জী আমাকে নিয়ে তার বাড়ীতে গেলো । আমকে পেয়ে দাদা কৃষ্ণদাস মুখার্জীর সে কি কান্না ? গিয়ে শুনি মা উমাদেবী মারা গেছে । বাবা দ্বি্জপদ অনেক আগেই মারা গেছে । মায়ের বাৎসরিক কাজ করলাম ।
তাদের ভালবাসায় হরিদাস ধন্য ।
হরিদাস দাদার কাছে পৈতে চেয়েছিল । দাদা দিতে চেয়েছিল । বললো , মন্দিরে গিয়ে নিতে । হরিদাস আর মন্দিরে যেতে চায় নি ।
পৈতে নেওয়া আর হয়ে ওঠে নি । হরিদাস আমাকে আর নিয়ে যেতে চায় না ।
নন্দীও আমাকে নিয়ে গিয়েছিল তার রাজবাড়ীতে । সেখানে আজ আর কেউ নেই । সবাই লণ্ডনে থাকে ।
নন্দীর আর ইচ্ছা হয় নি তাদের সাথে যোগাযোগ করতে ।
আমি প্রদীপ । আমি বেঁচে আছি । তাদের প্রত্যেকের ইচ্ছা আমি পূরণ করবো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।