" হয়তো সহজ কাছে আসা, তাই কাছে আসি,
হয়তো সহজ ভালোবাসা, তাই ভালোবাসি,
যখন সহজে কিছু পাই, ভাবি- হয়তো সহজ ছিলো পাওয়া,
যখন হারাই, ভাবি- হায়
এমন সহজে চলে যাওয়া শিখেছে মানুষ । "
(God is the Origin of Love )
গুল্লু ধর্মচচা করে না, কিন্তু ধর্মগ্রন্থ পাঠ করে,এখন তার হাতে ভাই গিরিশচন্দ্র সেনের অনুবাদ করা কোরআন শরীফ। গুল্লু পড়তে লাগল, যেমন একটি শস্য বীজ সাতটি শস্য মঞ্জরী উৎপাদন করে, প্রত্যেক মঞ্জরীতে শত শস্য উৎপন্ন হয়, পরমেশ্বরের পথে যাহারা স্বীয় সম্পত্তি ব্যয় করে তাহাদের অবস্থা তদ্রুপ, এবং যাহাকে ইচ্ছা হয় ঈশ্বর দ্বিগুন প্রদান করেন, এবং ঈশ্বর দাতা ও জ্ঞাতা । .
কোনো কিছুর জন্য যদি তীব্র প্রতীক্ষা থাকে, দিনের পর দিন যার জন্য প্রবল অনিশ্চয়তা কুরে কুরে খায়, তারপর সেটা পাওয়া হয়ে গেলেও যেন ঠিক সেরকম আনন্দ হয় না । হিমি বলল, গুল্লু, আমার পাশে এসে একটু বসো।
গুল্লু পাশে গিয়ে বসলো। হিমি বলল, আমি যদি হঠাৎ মরে যাই? হিমিকে চুমু খেতে গিয়েও থেমে গেল গুল্লু। সে গম্ভীর গলায় বলল, মরে গেলে আর কী হবে, হারিয়ে যাবে !আচ্ছা হঠাৎ মরার শখ হলো কেন ? হিমি কোনো উত্তর না দিয়ে গুল্লুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। এরকম সময় কী কথা বলতে হয় গুল্লু জানে না, তার খুব ইচ্ছা করছে একটা ধমক দিতে । কিন্তু গুল্লু একটু জোরে কথা বললেই, হিমি মুখ ভার করে রাখে।
তিন চার দিনের আগে আর ঠিক হয় না। গুল্লু চুপ করে হিমির পিঠে হাত বুলাতে লাগল। এক এক সময় হিমি এতো রহস্যময়ী হয়ে যায়, তখন তার ভাবভঙ্গি কিছুই বুঝা যায় না!
একটু পরে হিমি বাথরুমে চলে গেল। গুল্লু ব্যালকনিতে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালো। সে হিমির হেঁয়ালির কারণ কিচ্ছু বুঝতে পারছে না।
পুরুষরা এরকম পারে না। তারা তাদের প্রত্যেকটি আচরণের একটা না একটা ব্যাখ্যা দিয়ে যায় সব সময়। ভুল বা মিথ্যে হলেও একটা কিছু যুক্তি সাজাবার চেষ্টা থাকে । হয়তো কোনো কারণে হিমির মন খারাপ, গুল্লু তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগলো, তার ব্যবহারে কোনো ভুল ছিল কিনা । আজ সকালেও তো হিমির সাথে তার কথা হয়েছে, তখন তো হিমি ভালো মেজাজেই ছিল।
গুল্লুর ভুরু কুঁচকে গেল, তার হাতের আঙুল চলতে লাগলো চুলের মধ্যে। বাথরুমে অবিরাম কলের পানি পড়ার শব্দ হচ্ছে।
গুল্লুর খুব রাগ লাগছে। তার ক্ষুধা পেয়েছে, তাকে খেতে দিবে তা না, হিমি হেঁয়ালি শুরু করেছে। তার যদি রাগ বা দুঃখের কারণ কিছু ঘটে থাকে, তা হলে সে পরিস্কার করে খুলে বলবে।
গুল্লুর সিগারেট শেষ হওয়ার আগেই হিমি বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো। অনেক টা স্বাভাবিক গলায় বলল, চলো, ছাদে যাই, তোমার সাথে কিছু কথা আছে । হিমি নতুন একটা শাড়ি পড়ল নীল সাদা রঙের্। গুল্লু রান্না ঘরে গিয়ে ফ্রিজ খুলে খানিকটা কোক আর কেক খেলো।
ছাদে গিয়ে গুল্লু বলল, এবার জানতে পারি কি রাজকুমারীর আজ কী জন্য মেজাজ খারাপ ? হিমি তার নরম হাতে গুল্লুর গাল ছুঁয়ে বলল, তোমাকে আমি অনেক অনেক, অনেক ভালোবাসি ! কিন্তু তোমাকে না জানিয়ে আমি একটা অন্যায় করে ফেলেছি।
গুল্লু বলল, কী সেটা ? হিমি বলল, সেটা আমি তোমাকে কিছুতেই বলতে পারব না। হয়তো কোনো দিনই বলতে পারবো না আর। কোনো মেয়েই পুরুষদের সব কথা বলতে পারে না, হাজার ইচ্ছা থাকা সত্বেও। তারা বলতে না পারার কষ্টে একা একা ছটফট করে । হিমি গুল্লুর কাঁধে মাথা রেখে বলল, যদি হঠাৎ মরে যাই, তুমি আমার পাশে থাকবে তো ? গুল্লু দু'হাতে হিমিকে জড়িয়ে ধরে বলল, তোমাকে ছেড়ে আমি থাকতে পারব না।
কোথাও যাবো না তোমাকে ছেড়ে ।
২৬ বছর বয়সের যুবকের তুলনায় গুল্লু সত্যিই খুব কম বোঝে। সে মেয়েদের রুপ দেখে, হিমির মনটাকেও সে বুঝতে চেষ্টা করে, কিন্তু নারী শরীরের কলকব্জা অথবা জন্মরহস্য সম্পর্কে তার ধারণা অস্পষ্ট। গুল্লু হঠাৎ রেগে গিয়ে বলল, আমি তোমাকে খুন করবো! তুমি আমায় চিনো না। হিমি হেসে বলল, আমি তোমায় ভালোই চিনি।
হিমির হাতটা মুচড়ে ভেঙ্গে দেবে, সেইভাবে আঁকড়ে ধরে গুল্লু চিৎকার করে বলল, না ! কিছুতেই না ! হিমি কাতর ভাবে বলল, হাত ছাড়ো, ব্যাথ্যা লাগছে, ছাড়ো প্লীজ।
রাগে গুল্লুর চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। হিমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তার রাগী, গোঁয়ার প্রেমিকটির দিকে । হিমি কাছে এসে গুল্লুর পিঠে হাত রাখল। গুল্লু চিৎকার করে বলল, সারা ঢাকা শহরে আগুন লাগিয়ে দিব।
জীবনে আর একটা লাইনও লিখব না। আমি হারিয়ে যাবো, কেউ আর আমায় খুঁজে পাবে না। আমি একটা বাজে ছেলে, আমার বেঁচে থাকার কোনো মুল্য নেই ! হিমি নিঃশব্দে গুল্লুর মাথায় পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। হিমির দু'হাত ভর্তি অঢেল মায়া। হিমি ঠান্ডা গলায় বলল, এসো গুল্লু আমরা দু'জন এক সাথে মরে যাই ! খুব আগ্রহের সঙ্গে গুল্লু বলল, আচ্ছা।
চলো আজই !
গুল্লু বলল, ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে গ্যাস খুলে দিয়ে আমরা যদি ঘুমের ওষুধ খাই, কোনো কষ্ট হবে না....অথবা এক গ্লাস পানির সাথে গুল মিশিয়ে খেলেই হবে। হিমি আচ্ছন্ন লাগা গলায় বলল, তুমি যদি চাও.....! গুল্লু হিমির দিকে তাকিয়ে বলল, সায়ানাইড । পটাসিয়াম সায়ানাইড। খাওয়া মাত্র সব শেষ । সায়ানাইডে মৃত্যু খুব তাড়াতাড়ি হয়।
কিছু বুঝবার আগেই সব শেষ । বমি, খিচুনী, ছটফটানি কিচ্ছু হবে না। হাসি মুখে খাবো, মৃত্যুর পরও হাসি মুখ থাকবে। মুখের হাসি মুছে যাবে না।
গুল্লুর বুকে মাথা রেখে হিমি বলল, আমি সব সময় তোমার সঙ্গে থাকব।
গুল্লু বলল, আমার মনে হচ্ছে - সমস্ত দুঃখ, সমস্ত গ্লানি, সমস্ত হতাশা পেছনে ফেলে নতুন কোথাও যাচ্ছি, মায়াময় কোনো নক্ষত্রের দিকে। তারপর দু'জনেই চোখের জল মুছে নিলো। আবার কাঁদতে লাগলো। গুল্লু বিড় বিড় করে বলল, এখানে পালঙ্কে শুয়ে কাটিবে অনেকদিন জেগে থেকে ঘুমাবার সাধ ভালোবেসে। কান্না শেষ হতেই দু'জন ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াল !
একদা এমনই বাদল শেষের রাতে - ভালোবাসার জন্য যাদের পতন হয়, বিধাতার কাছে তারা আকাশের তারার মত উজ্জ্বল।
কোথাও গান বাজছে, চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙ্গেছে/ উচ্ছলে উঠে আলো/ ও রজনীগন্ধা তোমার/ গন্ধসুধা ঢালো। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।