তিন লীগের কাণ্ড : পাঁচ জেলায় তাণ্ডব!
প্রধানমন্ত্রীর ধমক খেয়ে কিছুদিন থমকে থাকলেও ফের স্বরূপে আবির্ভূত হয়েছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের তকমাধারীরা। এবার বিশেষ কোনো ক্যাম্পাস নয়, টেন্ডারবাজির কার্যালয় নয়, নয় কোনো চাঁদাবাজির স্পট—পাঁচ জেলায় একযোগে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালিয়েছে তারা। এদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যোগসাজশও ছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ ধরনের বিস্তর হানাহানি ও সংঘর্ষে শামিল হয়েছে আলোচ্য তিন লীগরে নেতাকর্মীরা। এমনকি গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়ে ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষেরও ঢের নজির রেখেছে।
আশা করা গিয়েছিল প্রতিপক্ষ অর্থাত্ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো এসব অবাঞ্ছিত কর্মকাণ্ড থেকে গা বাঁচিয়ে চলবে। দলীয় নির্দেশও তেমনই ছিল, কিন্তু কিছু কিছু নেতাকর্মীর দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করে চলতে ভালো লাগেনি। তারাও দলের ভেতরে গ্রুপ সৃষ্টি করে পরস্পর হানাহানির দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে কসুর করেনি। উপজেলা কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি বিএনপির দু’পক্ষ মারামারিতে লিপ্ত হয়েছে। জের হিসেবে সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও, মেহেরপুরের গাংনী, শরীয়তপুরের গোসাইরহাট এবং বাগেরহাট ও পটুয়াখালী জেলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নামধারী সন্ত্রাসীরা বিএনপি ও ছাত্রদলের দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে। এ সময় অন্তত ১০ জন বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এদের কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পটুয়াখালীতে হামলাকারীরা ভাড়ায় চালিত পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করেছে। সোনারগাঁও, বাউফল ও বাগেরহাটে ছাত্রদল নেতাকে কুপিয়েছে, এমনকি মহিলা বিএনপি কর্মীও আহত হয়েছেন শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে।
অভিযোগ আছে, গোসাইরহাটের ঘটনায় মামলা গ্রহণ করেনি শরীয়তপুর থানা পুলিশ। সবক’টি ঘটনা ঘটেছে একই দিনে—৫ সেপ্টেম্বর। এদিকে ৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির দু’গ্রুপে সংঘর্ষ হয়েছে কিশোরগঞ্জের করিমপুর উপজেলায়। নবগঠিত কমিটিকে সাবেক কমিটি মেনে না নেয়ায় দু’ঘণ্টা ধরে তারা মারামারিতে লিপ্ত থাকে।
অভিযোগে প্রকাশ, পুলিশ যথাসময়ে উদ্যোগ নিলে সংঘর্ষ এড়াতে পারত।
অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি, বিশেষ করে দেশের দু’টি বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলো কোনো ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনায় জড়িয়ে গেলে উচ্চ স্তরের নেতৃত্ব থেকে বলা হয়, এত বড় দলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই পারে। এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। দু’দিন বাদেই মিটে যাবে। কিন্তু দু’দিন বাদে যে মিটে যায় না আওয়ামী লীগ তা এরই মধ্যে টের পেয়েছে হাড়ে হাড়ে। ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে নাখোশ হয়ে যথেষ্ট কড়া কথা বলতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে।
ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেও নেতারা তাদের সতর্ক না করে পারেননি। তবে গ্রুপ কোন্দলে দু’দল সমান সরেসই বলতে হবে।
সত্য যে, সব গণতান্ত্রিক দেশেই ছোট-বড় রাজনৈতিক দলগুলোতে গ্রুপিং-লবিং চলে। তবে তা কথা এবং আচরণে সীমাবদ্ধ থাকে, কদাচিত্ সংঘর্ষে রূপ নেয়। আমাদের দেশে এসব ঘটনা অনেকটা ডাল-ভাত।
রক্তারক্তি পর্যন্ত না গড়ালে কোনো পক্ষের মাথা ঠাণ্ডা হতে চায় না। পরমতসহিষ্ণুতা-সহাবস্থান এবং রাজনৈতিকভাবে বিরোধের মোকাবিলা করার সংস্কৃতিই আমরা যেন ভুলতে বসেছি। দল করার চেয়ে দলাদলি করাই যেন নেতৃত্ব অর্জনের প্রথম পাঠ। কাজেই বাস্তব অবস্থা দাঁড়িয়েছে, কোন দলে কোন্দল নেই? কারও কম, কারও বেশি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা শুধু অভব্য পর্যায়েই চলে যায় না, রীতিমত ত্রাস-সন্ত্রাসে রূপ নেয়।
আলোচ্য ঘটনাগুলো তারই নজির। ‘আদর্শ’ দূরের কথা, ‘কাক কাকের মাংস খায় না’ এই বহুল প্রচলিত প্রাচীন প্রবাদটি থেকেও এরা শিক্ষা নিতে চায় না। এতে ব্যক্তি ও দলের ক্ষয়ক্ষতি হোক বা না হোক গণতন্ত্রচর্চার পথে কাঁটা পড়ে, সরকার ও বিরোধী দল অবাঞ্ছিত কর্মকাণ্ডকে গণতান্ত্রিক অধিকার বলে চালিয়ে দেয়ারও প্রয়াস পায়। আখেরে হতাশ ও বঞ্চিত হয় দেশের আপামর জনগণ। সুশৃঙ্খল দল ছাড়া যে সুশাসন দুরস্ত তা তো আজকাল কারও অজানা নেই।
অহঙ্কার পতনের মূল—এ কথা ব্যক্তির বেলায় প্রযোজ্য, তেমন রাজনৈতিক দলের বেলায় পতনের মূল হচ্ছে বিশৃঙ্খলা। এটা ইতিহাসের শিক্ষা। দলীয় নেতৃত্ব নিজের স্বার্থে, দলের স্বার্থে সর্বোপরি দেশ ও জাতির স্বার্থে যার যার দলকে এসব উপদ্রব থেকে যথাসম্ভব মুক্ত রাখবেন—তাদের প্রতি আমাদের এই সনির্বন্ধ অনুরোধ ।
সত্র; Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।