সবাইকে সাথে নিয়ে এগুতে চাই।
রমজানের রোজা ফরজ রোজা। রমজান ব্যতীত অন্য আরো রোজা আছে যেগুলো সুন্নত। তবে রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান ব্যতীত অন্য সময় মাস ব্যাপী রোজা পালন করেননি। হাদিসে এসেছে— আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে নফল রোজা পালন করতেন যে আমরা ধরে নিতাম তিনি আর বিরতি দেবেন না।
আবার এমনভাবে রোজা পরিত্যাগ করতেন যে আমরা মনে করতাম তিনি আর রোজা পালন করবেন না। রমজান ব্যতীত অন্য কোন মাসে তাকে পূর্ণ মাস রোজা পালন করতে দেখিনি। আর শাবান মাস ব্যতীত অন্য মাসে অধিক পরিমাণে নফল রোজা পালন করতে দেখিনি। ( বোখারি)
এ হাদিস দ্বারা বুঝা যায় যে রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক পরিমাণে নফল রোজা পালন করতেন। তিনি কি কি ধরনের নফল রোজা পালন করতেন তা নিম্নে আলোচনা করা হল :
শাওয়াল মাসের রোজা
عن أبي أيوب الأنصاري رضى الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : من صام رمضان ثم أتبعه ستا من شوال كان كصيام الدهر ( رواه مسلم)
আবু আইয়ুব আনসারী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোজা পালন করল অতঃপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা আদায় করল সে যেন সাড়া বছর রোজা পালন করল।
’ (মুসলিম)
উলামায়ে কেরাম সাড়া বছর রোজা পালনের সওয়াবের ব্যাখ্যা এভাবে দিয়েছেন যে, প্রত্যেক নেক আমলের সওয়াব দশগুণ দেয়া হয়, সে হিসেবে রমজানের এক মাস রোজা পালনে দশ মাস রোজা পালনের সওয়াব পাওয়া যায়। আর শাওয়ালের ছয় রোজা পালনে দু’ মাস রোজা পালনের সওয়া মেলে। এভাবে পুরো বছর রোজা পালনের সওয়াব পাওয়া যেতে পারে শাওয়ালের ছয়টি রোজ পালনের মাধ্যমে। যদি কারো দায়িত্বে রমজানের কাজা রোজা থেকে থাকে তবে তাকে প্রথমে কাজা রোজা আদায় করে নিতে হবে, তারপর শাওয়ালের ছয় রোজা পালন করবে। শাওয়ালের ছয় রোজা একাধারে আদায় করা যায়, আবার বিরতি দিয়েও আদায় করা সম্ভব।
তবে শাওয়াল মাস চলে যাওয়ার পর এ ছয় রোজা কাজা হিসেবে পালনের বিধান নেই।
আরাফা দিবসের রোজা
রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আরাফা দিবসের (জিলহজ মাসের নবম তারিখে) রোজা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন :
صيام يوم عرفة أحتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله والسنة التي بعده (مسلم)
‘আরাফা দিবসের রোজা সম্পর্কে আল্লাহর কাছে আশা করি যে, তা বিগত এক বছর ও আগত এক বছরের পাপের কাফফারা হবে। ’ (মুসলিম)
তবে যারা হজ পালন অস্থায় থাকরে তারা এ দিন রোজা রাখবে না।
মহররম মাসের রোজা
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم أفضل الصيام بعد رمضان شهر الله المحرم، وأفضل الصلاة بعد الفريضة صلاة الليل ( رواه مسلم)
‘রমজান মাসের পর সর্বোত্তম রোজা হল আল্লাহর মাস মুহাররমের রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হল রাতের নামাজ।
’ (মুসলিম)
শাবান মাসের রোজা
হাদিসে এসেছে—
عن عائشة رضى الله عنها قالت : . . ما رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم استكمل صيام شهر إلا رمضان، وما رأيته أكثر صياما منه في شعبان. (رواه البخاري )
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেনে : আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে শাবান মাস ব্যতীত অন্য মাসে অধিক পরিমাণে নফল সিয়াম পালন করতে দেখিনি। (বোখারি)
তিনি শাবান মাসে অধিক পরিমাণে নফল রোজা পালন করতেন। এর কারণ সম্পর্কে উসামা বিন যায়েদ রা. বলেন, আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল ! নফল রোজার ব্যাপারে আমি তো শাবান মাস ব্যতীত অন্য কোন মাসে আপনাকে এত বেশি রোজা পালন করতে দেখি না। তিনি বললেন: ‘শাবান’ রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী এমন একটি মাস যাতে মানুষ রোজা সম্পর্কে উদাসীন থাকে।
প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা
হাদিসে এসেছে—
عن أبي هريرة رضى الله عنه قال : أوصاني خليلي صلى الله عليه وسلم بثلاث : صيام ثلاثة أيام من كل شهر، وركعتي الضحى، وأن أوتر قبل أن أنام ( رواه البخاري)
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বলেন, আমার বন্ধু আমাকে তিনটি বিষয়ের উপদেশ দিয়েছেন : প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোজা রাখা, দ্বি-প্রহরের পূর্বে দু’রাকাত নামাজ আদায় করা ও নিদ্রার পূর্বে বিতিরের নামাজ আদায় করা।
(বোখারি)
এ তিনটি রোজা আদায় করলে পূর্ণ বছর নফল রোজা আদায়ের সওয়াব লাভের কথা এসেছে। একটি নেক আমলের সওয়াব কমপক্ষে দশগুণ দেয়া হয়। তিন দিনের রোজার সওয়াব দশগুণ করলে ত্রিশ দিন হয়। যেমন আবু কাতাদা রা. হতে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে—
صوم ثلاثة أيام من كل شهر ورمضان إلى رمضان صوم الدهر ( رواه مسلم)
প্রত্যেক মাসে তিনটি রোজা ও এক রমজানের পর পরবর্তী রমজানে রোজা পালন পূর্ণ বছর রোজা পালনের সমান। ( মুসলিম)
মাসের যে তিন দিন রোজা রাখা হবে সে তিন দিনকে হাদিসের পরিভাষায় বলা হয় ‘আইয়ামুল বিজ’।
এ তিন দিন হল চান্দ্র মাসের তেরো, চৌদ্দ ও পনেরো তারিখ। বিজ শব্দের অর্থ আলোকিত। এ তিন দিনের রাতগুলো শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চাঁদের আলোতে আলোকিত থাকে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রোজা গুরুত্বসহকারে আদায় করতেন। হাদিসে এসেছে—
عن ابن عباس رضى الله عنهما قال : كان رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يفطر أيام البيض في سفر ولا في حضر (رواه النسائي)
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসাফির ও মুকিম কোন অবস্থাতেই এ রোজা ত্যাগ করতেন না।
( নাসায়ি)
সোমবার ও বৃহস্পতিবারের রোজা
সপ্তাহে দু’দিন সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা পালন সুন্নত। হাদিসে এসেছে—
عن أبي قتادة رضى الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم سئل عن صوم يوم الاثنين، فقال : ذلك يوم ولدت فيه ويوم بعثت فيه أو أنزل علي فيه ( رواه مسلم)
আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ স রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সোমবারে সিয়াম পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন এ দিনে আমার জন্ম হয়েছে এবং এ দিনে আমাকে নবুওয়াত দেয়া হয়েছে বা আমার উপর কোরআন নাজিল শুরু হয়েছে। ( মুসলিম)
হাদিসে এসেছে :—
عن أبي هريرة رضى الله عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: تعرض الأعمال يوم الاثنين والخميس، فأحب أن يعرض عملي وأنا صائم (رواه الترمذي رواه مسلم بغير ذكر الصوم)
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন , ‘সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। কাজেই আমি পছন্দ করি যখন আমার আমল পেশ করা হবে তখন আমি রোজা অবস্থায় থাকব।
’ (মুসলিম ও তিরমিজি)
একদিন পর পর রোজা পালন
রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন—
أحب الصيام إلى الله صيام داود، وكان يصوم يوما ويفطر يوما. (رواه مسلم)
‘আল্লাহর কাছে (নফল রোজার মধ্যে) সবচেয়ে প্রিয় রোজা হল দাউদ আ.-এর রোজা । তিনি একদিন রোজা রাখতেন ও একদিন ভঙ্গ করতেন। ’ ( মুসলিম)
আশুরার রোজা
হাদিসে এসেছে—
عن أبي قتادة رضى الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم سئل عن صيام يوم عاشوراء، فقال يكفر السنة الماضية ( رواه مسلم والترمذي)
আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে আশুরার রোজা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল, তিনি বললেন : ‘তা বিগত এক বছরের গুনাহের কাফফারা। ’ ( মুসলিম, তিরমিজি)
অন্য বর্ণনায় এসেছে—
عن أبي قتادة رضى الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : . . . . . صيام يوم عاشوراء احتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله ( رواه مسلم)
‘আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ...আশুরা দিনের রোজাকে আল্লাহ তাআলা বিগত এক বছরের গুনাহের কাফফারা হিসেবে গ্রহণ করবেন বলে আশা। ’ (মুসলিম)
হাদিসে আরো এসেছে—
عن ابن عباس رضى الله عنهما أنه قال: حين صام رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم عاشوراء وأمر بصيامه، قالوا إنه يوم تعظمه اليهود والنصارى. فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم ( فإذا كان العام المقبل إن شاء الله صمنا اليوم التاسع) قال : فلم يأت العام المقبل حتى توفى رسول الله صلى الله عليه وسلم ( رواه مسلم)
ইবনে আব্বাস রা. বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার রোজা পালন করলেন ও অন্যকে পালন করার নির্দেশ দিলেন তখন সাহাবাগণ বললেন : ‘এটা তো এমন এক দিবস যাকে ইহুদি ও খ্রিস্টানরা সম্মান করে থাকে।
’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : ‘আগামী বছর এলে আমরা ইনশাআল্লাহ নবম তারিখে রোজা পালন করব। ’ ইবনে আব্বাস রা. বলেন : ‘পরবর্তী বছর আসার পূর্বেই রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করলেন। ’ (মুসলিম)
হাদিসে এসেছে—
عن ابن عباس رضى الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : صوموا يوم عاشوراء وخالفوا فيه اليهود، وصوموا قبله يوما أو بعده يوما )رواه أحمد(
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ‘তোমরা আশুরা দিবসে রোজা পালন করো ও এ ক্ষেত্রে ইহুদিদের বিরোধিতা করো। তোমরা আশুরার একদিন পূর্বে অথবা একদিন পরে রোজা পালন করবে। (আহমদ)
আশুরার রোজা পালনের পদ্ধতি
(ক) মহররম মাসের নবম ও দশম তারিখে রোজা রাখা।
এ পদ্ধতি অতি উত্তম। কারণ রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবেই আশুরার রোজা পালনের সংকল্প করেছিলেন। ইতিপূর্বে আলোচিত ইবনে আব্বাস রা.-এর হাদিস এর প্রমাণ।
(খ) মহররম মাসের দশম ও একাদশ দিবসে রোজা রাখা। এ পদ্ধতিও হাদিস দ্বারা সমর্থিত।
যদি কেউ নবম তারিখে কোন কারণে রোজা রাখতে না পারে তা হলে সে এ পদ্ধতিতে রোজা রাখবে।
(গ) শুধু মহররম মাসের দশম তারিখে রোজা রাখা। এ পদ্ধতি মাকরূহ। কারণ এটা ইহুদিদের আমলের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ । (ইকতেজাউ সিরাতিল মুস্তাকীম: ইমাম তাইমিয়া) ও (রদ্দুল মুহতার : ইবনে আবেদীন)
নিষিদ্ধ সিয়াম :
রোজা রাখার নিষিদ্ধ দিনগুলো হল
এক. ঈদুল ফিতরের দিন।
দুই . ঈদুল আজহার দিন (জিলহজ মাসের দশ তারিখ)
তিন. জিলহজ মাসের এগারো তারিখ।
চার. জিলহজ মাসের বার তারিখ।
পাঁচ. জিলহজ মাসের তেরো তারিখ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।