The Inner Side of Every Cloud is Bright and Shining. So I Turn My Clouds About and Always Wear Them Inside Out, to Show the Lining... [এই গল্পের সমস্ত চরিত্র ও ঘটনা কাল্পনিক। কারও সাথে মিলে গেলে তা নিতান্তই কাকতাল মাত্র]
১
অনেক উঁচু একটা পাহাড়। তার ঠিক নিচে হালকা নারকেল গাছের জঙ্গল। জঙ্গল বললে আসলে ভুলই বলা হবে। সমুদ্রপারের নারিকেল গাছের সারিকে কি আর জঙ্গল বলা চলে? তবে জঙ্গল হোক আর যাই হোক, নারিকেল গাছেরই কেন হবে? সেটা নিয়ে চিন্তা করছে সমুদ্র! আশ্চর্য তো! মানুষ তাহলে স্বপ্নেও চিন্তা করতে পারে? বড়ই আজিব! স্বপ্নেই সামনের রক্তাক্ত-নীলাভ সমুদ্রটার দিকে তাকালো সমুদ্র! রক্তাক্ত-নীলাভ! কী অদ্ভুত নামকরণ! ঘুমের মাঝেই স্বপ্নে আপনমনে হাসলো সমুদ্র।
আচ্ছা, ওরই বা কী দোষ? সমুদ্র তো নীলাভই হয়! আর সূর্যাস্তের সময় যে একটু রক্তাক্ত লাগে, এতেও অবাক হবার কিছু নেই।
দোতলা ডুপ্লেক্স বাড়িটার দোতলার জানালা দিয়ে সূর্যাস্ত দেখছিলো সমুদ্র। সমুদ্রের বুকের সূর্যাস্ত… হঠাৎ আনমনা হয়ে ওঠে সমুদ্র। আসলেই তো, কত একা সে। মনের কথা বলার মতো কেউ নেই তার।
থাকবেই বা কোত্থেকে? তেমন কেউ জীবনে আসেনি যে এখনো! খুলনার একটা ইউনিভার্সিটিতে শেষ বর্ষে পরে সে। খুলনা? স্বপ্নে খুলনা আসলো কথা থেকে?! সমুদ্রপারে আবার ফিরে এল সমুদ্র। যে ঘরটাতে আছে, সেটাতে একটু চোখ বুলিয়ে নিতে চাইলো। সে বসে আছে একটা ওকে কাঠের রাইটিং ডেস্কের চেয়ারে। সামনে বিশাল টেবিলের উপরে একটা টেবিল ল্যাম্প, একটা পেন-স্ট্যান্ড আর একটা রাইটিং প্যাড! আর কিছু নেই।
চেয়ারের ঠিক পেছনের জানালা। সেখান থেকেই অনেক দূরের সূর্যাস্ত দেখা যায়। রুমটা বড়ির সামনের দিকে। জানলা দিয়ে তাকালে বাড়ির সামনের লনটাও চোখে পড়ে। সাজানো গোছানো একটা বাগান।
অনেক নাম না জানা রঙবেরঙ-এর ফুল ফুটে আছে সেখানে। কাঠের একটা দোলনা আছে একপাশে। কে জানে, হয়তো বুড়ো বয়েসের অলস বিকেলে নিজের বুড়ির সাথে সময় কাটানোর জন্যে বানিয়ে দিয়েছে তার অবচেতন মন!
পুরো রুমটাতে আর আছে অসংখ্য বই… থরে বিথরে সাজানো… পাশ কাটিয়ে দরজা দিয়ে নিচে নামলো সে। সদর দরজা খুলে বাইরে এলো। একটা ছোট্ট ঘন্টা লাগানো দরজায়।
খুলতেই টুং টুং করে বেজে উঠলো! নিশ্চয়ই তার দুষ্টু ছেলেটার কাজ! ছেলেটা এত দুষ্টু আর মিষ্টি হয়েছে না! আরে আরে! ছেলে আসলো কোত্থেকে? সমুদ্র তো এখনো বিয়েই করেনি! অবশ্য স্বপ্নে সবই সম্ভব। আপনমনে মুচকি হাসতে হাসতে লন পেরিয়ে বাইরে এলো সে। চশমাটা খুলে হাতে নিয়ে শার্ট এর কোনা দিয়ে মুছে নিল! ও আচ্ছা, সমুদ্র তাহলে এখন চশমা পরে! রাস্তার দিকে হাঁটতে লাগলো সে। হঠাৎ মনে হল, দরজায় তালা লাগানো হয়নি। “ধুর!”, মনে মনে ভাবলো সে, “স্বপ্নে আবার এসব ভয় কি? এখানে আমি নিজেই রাজা!” নিশ্চিন্তে হাঁটতে লাগলো সে।
হঠাৎ করে মনে হলো, কেন হাঁটছে সে? ও আচ্ছা! মনে পড়েছে! তার ছেলের এখন স্কুল থেকে ফিরে আসার কথা! “বাহ্! স্বপ্নটাতো বেশ!”, আপনমনেই বললো সমুদ্র।
দূরে “আব্বু!” ডাক শুনে সামনে তাকালো সমুদ্র। ছোট্ট ছোট্ট দু’টো হাত বাড়িয়ে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো ছোট্ট ছেলেটা! তাকে জড়িয়ে ধরেই প্রথম কথা, থমথমে অভিমান ভরা কন্ঠে, “আব্বু! আম্মুটা অনেক পঁচা! কত করে বললাম, তবু একটা আইসক্রীম কিনে দিল না!”
“আচ্ছা, বাবা, আমি কিনে দেব!”, ছেলের চুলে হাত বুলিয়ে আদর করে দিল সমুদ্র। হঠাৎ চমকে উঠলো সমুদ্র! এখুনি ছেলেটার আম্মুর সাথে তার দেখা হবে, মানে তার স্ত্রী! চমকে ওঠাই স্বাভাবিক! স্বপ্ন হলেই বা কি? ভালোবাসার মানুষ তো ভালোবাসার মানুষই! আচ্ছা, মেয়েটার নাম যেন কি?! কি আশ্চর্য! নিজের স্ত্রীর নাম মনে পড়ছে না! অবাক হয়ে ভাবছে সমুদ্র কি হতে পারে মেয়েটার নাম! ছেলেটাকে কোলে নেবার পরে উল্টোদিকে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল সমুদ্র! হঠাৎ করে পেছন থেকে দম্কা ঠান্ডা বাতাস এসে লাগলো যেন তার গায়ে, আস্তে আস্তে ঘুরে তাকালো সে… পেছনে টকটকে লাল সূর্য… তাকে পেছনে রেখে হেঁটে আসছে মেয়েটা… বাতাসে উড়ছে তার কালো মেঘের বান ভাসানো চুল… থম্কে গেল সমুদ্র… মেয়েটাকে কি কোথাও দেখেছে সে আগে? খুব চেনা চেনা লাগছে তার… আসলে স্বপ্নের এই এক দোষ! কোত্থেকে কাকে যেন ধরে এনে কোথায় যেন বসিয়ে দেয়, আর সারাটা মন উত্থাল-পাত্থাল… মেয়েটাকে হাত নাড়তে দেখে স্বপ্ন-বাস্তবে ফিরে গেল সমুদ্র… অবাধ্য এলো চুলটা নেড়ে যেন শাসন করার ব্যর্থ চেষ্টা চালালো মেয়েটা… ডান হাতটা চুলগুলোকে পেছনে সরিয়ে আস্তে আস্তে পেছন দিয়ে নিচে নামছে… চেহারাটা এখনো দেখা যাচ্ছেনা মেয়েটার… আলোর উল্টোদিকে আছে মেয়েটা… দেখে যেন অলৌকিক কোন অতিমানবী মনে হয় মেয়েটাকে… অলৌকিক… অলৌকিক… “আরে তাই তো!”, বিদ্যৎপৃষ্টের মতো চমকে ওঠে সমুদ্র, জানে সে মেয়েটা নাম! মেয়েটার নাম ঐশী!
“সমুদ্র! সমুদ্র! এই সমুদ্র…!”
“উম্…?!” ঘুম ঘুম কন্ঠে সমুদ্রের জবাব।
“সমুদ্র! উঠলি? নাকি পানি ঢেলে দেব?!” বিপদ বুঝে চোখ মেলে তাকালো সমুদ্র।
সামনে সত্যি সত্যি এক বোতল পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার ছোট বোন স্নিগ্ধা! পিঠাপিঠি ভাই-বোন তারা! তাহলে কি হবে?! দুইজনে যেন পৃথিবীর দুই মাথার মানুষ! সমুদ্র যেমন শান্ত-শিষ্ট, স্নিগ্ধা তার ঠিক উল্টো! যা বলে তাই করে ছাড়ে! আগেও বেশ কয়েকবার বোতল বোতল ঠান্ডা পানি ঢেলে ভাইয়ার ঘুম ভাঙিয়েছে কি না! আজকের কথা অবশ্য ভিন্ন! সমুদ্র নিজেই বাসায় বলে রেখেছে যাতে তাকে সকাল সকাল তুলে দেয়া হয়। ঢাকা যাবে সে। ফরিদপুরে থাকে সে। কিছু বই কিনতে হবে, সামনে পরীক্ষা! আসল কথা হল, ঐশীর সাথে দেখা করতে যাবে সে! সেটা তো আর সবাইকে বলা যায় না! ঐশীর কথা মনে পড়তেই মনটা ফ্রেশ হয়ে উঠলো তার।
“সমুদ্র! তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা খেয়ে নে।
আম্মু নাস্তা বানিয়ে রেখেছে। তুই নাকি কই যাবি?”, বলেই ভাইয়াকে ঠেলে-ঠুলে রুম থেকে বের করে ভাইয়ার রুম গোছাতে লেগে গেল সে!
ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে আয়নার দিকে তাকালো সমুদ্র। নিজের চেহারা দেখলো। খোঁচা খোঁচা দাড়ি সারা মুখে। নাহ্, শেভটা আজকে করতেই হবে।
প্রথমদিনও ঐশীর সাথে যখন দেখা হয়, তখন এমনি খোঁচা খোঁচা দাড়ি ছিল তার। গত বছরের কথা। খুলনা শহরে বই কিনতে গিয়েছিল সে। সেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই হঠাৎ করে চোখ পরে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে। একা একা দাঁড়িয়ে আছে সে।
মেয়েটার চোখের দিকে তাকাতেই থম্কে গেল সে। মানুষের চোখ এতটা সুন্দর হয়? হঠাৎ করে কোত্থেকে যেন বাতাসের ঝাপটায় মাথা থেকে ঘোমটা পড়ে গেল মেয়েটার! উড়ে বেড়ানো চুলের দিকে তাকিয়ে আরেকবার থমকে গেল সে! তখনই চোখাচোখি হল মেয়েটার সাথে। মেয়েটাও যেন থম্কে গেছে তার চোখে চোখ পড়তে! হঠাৎ পেছন থেকে আসিফের খোঁচা খেতেই সম্বিত ফিরে পেল সে! “শালা, সুন্দরীর দিকে পরে তাকাস, আগে সামনে যা, নইলে আবার লাইন ছাড়া হয়ে যাবি…”, বলেই সরে গেল আসিফ। সামনে এগিয়ে গেল সমুদ্র।
হঠাৎ করে কি মনে হতে পিছনে আসিফকে খুঁজতে গিয়ে আবার থম্কে গেল সে! মেয়েটার সাথে কথা বলছে সে! রাগে নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করলো তার।
কেন কেন কেন সে নিজে লাইনে দাঁড়ালো?! আসিফ হারামজাদাকে দাঁড় করিয়ে দিলেই হতো! রাগতে ফুঁসতে ফুঁসতে ঝট করে মুখ ফিরিয়ে নিল সে। সিদ্ধান্ত নিল। এই জীবনে আর কোনওদিন আসিফের সাথে কথাই বলবে না! আরে বাবা, তোর প্রেমিকার অভাব পড়েছে?! সপ্তাহে সপ্তাহে গার্লফ্রেন্ড চেঞ্জ করিস তো এই একটাকে ছেড়ে দিলে কি এমন ক্ষতি হয়?! অবশ্য পরক্ষনেই মন হল, এই মেয়েটাকে দেখলে স্বয়ং বাবা রাম পর্যন্ত সীতাকে রাবণের হাতেই ছেড়ে দিত, “নে বাবা, তুই সীতাকেই রাখ, আমি আরেকটাকে পেয়ে গেছি!” তাহলে আর রাম-রাবণের যুদ্ধটাও হতো না, খামাখা বিভীষন-কেও গালি খেতে হত না, মহাভারতের মত এত বিশাল একটা কাহিনীও লিখতে হত না! “মামা, কি বই লাগবো?”, হঠাৎ করে দোকানদারের কথায় চিন্তায় বাঁধা পড়লো সমুদ্রের। এই একটা সমস্যা তার, যেখানে সেখানে মনের মাঝে কোথায় যেন হারিয়ে যায় সে…
“দোস্ত, এই বইগুলোও নিয়ে দিস তো! সিরিয়াল যেহেতু তোর…”, কোনও কথা না বলে লিস্টটা নিলো সমুদ্র। আসিফের সাথে কথা বলার প্রশ্নই আসেনা, লিস্টটা কার, জানতে চাইবারও প্রশ্নই ওঠেনা! ব্যাপারটা মনে হয় কিছুটা আঁচ করতে পারলো আসিফ! একটু দূরে গিয়ে কিছু না বলে বেনসন ধরালো সে! মেয়েটা তখনও তার সাথে।
চোখের কোণা দিয়ে খেয়াল করলো সমুদ্র। কি নিয়ে যেন ওরা হাসাহাসি করছে। আপাদমস্তক রাগে যেন ধোঁয়া বের হচ্ছে তার…
বইগুলো কিনে আসিফের কাছে গেল সে। “দোস্ত, ক্ষিধে পেয়েছে, চল্ না, একটু খেয়ে নিই আমরা? আপনিও চলুন না আমাদের সাথে?”, পাশের মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো আসিফ। কিছু বললো না সমুদ্র।
চুপ সে! মেয়েটা কিছুক্ষন ভদ্রতা দেখালো, তারপর কি মনে করে রাজি হয়ে গেল! পাশেই মীনা বাজার। সেখানে গিয়ে হালকা খাবার খেলো ওরা। খেতে খেতেই অনেক কিছু নিয়ে মেয়েটার সাথে গল্প করলো আসিফ! বাহ্! মেয়েটার বাচনভঙ্গি তো চমৎকার! আসিফের মতো ঘাঘু ছেলেও কথার মারপ্যাঁচে ওকে আটকাতে পারছে না! অবশেষে বাস ধরার সময় হয়ে এল। এই যাহ্! মেয়েটার নামই তো জানা হলো না! ধেৎ! জেনে হবেই বা কি? ঐ মেয়ে এখন আসিফের নতুন গার্লফ্রেন্ড! অবশ্য আড়চোখে যে মেয়েটার চোখের দিকে তাকাচ্ছে না সমুদ্র, তা নয়! তার আর দোষ কি?! মেয়েটার চোখে যেন কীসের একটা মায়া! কীসের যেন একটা অবাস্তব আকর্ষণ! কোথায় যেন একটা… একটা… আবার হারিয়ে গেল সমুদ্র!
“শ্রীমাণ ভাবুক দাস, আপনি যদি দয়া করে খাবার বিলটা দিতে পারেন, তাহলে আমরা রওয়ানা দিতে পারি!”, আসিফের অন্যায় দাবী!
“সে কী, আসিফ ভাইয়া! আপনি না আমাদের খাওয়াতে নিয়ে আসলেন? বিল তো আপনার দেবার কথা?!”, মেয়েটা হাসতে হাসতে বলে উঠলো! হঠাৎ করে যেন বলার মতো একটা কিছু খুঁজে পেল সমুদ্র। তাড়াতাড়ি বলে উঠলো, “না না! ঠিক আছে, আমি সাথে থাকলে এমনিও আসিফের সাথে মানিব্যাগ থাকেনা!” কিছুটা যেন ঝাল ঝাড়লো সমুদ্র!
“তাই নাকি, ভাইয়া?! বেশ তো! তাহলে তো আপনার সাথে আমার জমবে ভালো! আসলে যাদের আশেপাশে থাকলে মানিব্যাগ নিয়ে চিন্তা করা লাগেনা, তাদের সবার সাথেই আমার জমে ভালো!”, বলেই হাসতে লাগলো মেয়েটা! আশ্চর্য! কারও হাসি এত সুন্দর হয়?! লজ্জায় যেন লাল হয়ে উঠলো সমুদ্র! কিছু না বলে বিলটা দিতে উঠে পড়লো সে!
“সমুদ্র ভাইয়া কি রাগ করলেন নাকি?”, ফিস্ ফিস্ করে আসিফকে জিজ্ঞেস করলো মেয়েটা।
“আরে ধুর! ওর মধ্যে রাগ বলতে কিছু নেই! বেচারা লজ্জায় মরে যাচ্ছে!”, হাসি হাসি মুখ করে ষড়যন্ত্রী ভঙ্গিতে আসিফের উত্তর, “কিছুক্ষনের মাঝেই ঠিক হয়ে যাবে!” বলে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপলো আসিফ! মেয়েটার খানিক চিন্তিত মুখে যেন আবার হাসি ফিরে এল!
বাস স্টপেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তিনজনে। সমুদ্রের চেনা জানা অনেকেই সামনে দিয়ে হেঁটে যাবার সময় অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে। ব্যাপারটা দেখেও না দেখার ভান করলো সমুদ্র। কেন যেন অসহ্য রাগ লাগছে তার… অসহ্য… অসহ্য… অসহ্য…!
“এক্সকিউজ মি! সমুদ্র ভাইয়া! শুনছেন?!”, মেয়েটার ডাকে চোখ ফেরালো সমুদ্র, ”আমাকে যে এখন যেতে হয়?!”, মেয়েটা বললো।
“বেশ তো!”, সমুদ্র ভ্যাবাচ্যাকা গলায় উত্তর দিলো, “আপনার সাথে দেখা হয়ে বেশ ভালো লাগলো।
ভালো থাকবেন!”
“কতটুকু যে ভালো লাগলো, সে তো দেখতেই পাচ্ছি! একটা কথাও তো বললেন না আমার সাথে!”, বলেই হাসতে লাগলো মেয়েটা! এই কথার কোনও উত্তর না দিয়ে ফ্যাল-ফ্যাল করে মেয়েটার হাসির দিকে মুগ্ধ চোখে চেয়ে থাকলো সমুদ্র। হঠাৎ করে মেয়েটা খেয়াল করলো সমুদ্রের চোখের ভাষা! একটু যেন লাল হলো সে! গলাখাঁকারি দিয়ে বলে উঠলো, “তো আমাকে বিদায় দিন, আমাকে যেতে হবে। নাহলে বাস মিস করবো!”, যেন পালাতে পারলে বাঁচে!
“বেশ তো! ভালো থাকবেন!”, বলার কিছু খুঁজে পাচ্ছে না সমুদ্র। মেয়েটা কি কিছু চাচ্ছে?!
“বাবা ভাবুক দন্দ্র দাস, তুই যদি বেচারির বইগুলো না দিস, তাহলে তো সে যেতে পারছে না! খামাখা কেন মেয়েটাকে আটকে রেখেছিস, বল?!”, ইচ্ছে করেই যেন টিটকারী মারলো আসিফ!
“ও হ্যাঁ, তাই তো!”, ভুলেই গিয়েছিল আসিফ তার হাতের বইগুলোর কথা! তাড়াহুড়ো করে বই আলাদা করতে গিয়ে সবগুলো বই ফেলে দিল সে! গুছাতে গিয়ে আরো তালগোল পাকিয়ে ফেললো সমুদ্র। তখনই সমুদ্র খেয়াল করলো মেয়েটা তাকে সাহায্য করতে ঝুঁকে আসছে! কেন আসলো? না আসলে কি হতো? না আসলে হয়তো অসাবধানতাবশত তার হাতে ছোঁয়া লাগতো না! মেয়েটাও লাল হতো না! সমুদ্রও আবার অন্য জগতে হারিয়ে যেত না!
অবশেষে উঠে দাঁড়ালো তারা! মেয়েটাই নীরবতা ভাঙল, “সমুদ্র ভাইয়া, আমি জানিনা আমাকে দেখে আপনি খুশি হয়েছেন কি না, তবে আমার আজকে একটা ভালো বিকেল কেটেছে আপনাদের সাথে!”, বলে সমুদ্রের দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিলো সে, “আমার নাম ঐশী! আপনার সাথে পরিচিত হতে পেরে আনন্দিত!” কেমন যেন দুষ্টুমীমাখা হাসি ছিলো মেয়েটার চোখে! কাঁপা কাঁপা হাতে হাত বাড়িয়ে দিলো সমুদ্র, ঠিক তখুনি কে যেন ডাক দিলো ঐশীকে! সেদিকে তাকিয়েই আবার ঘুরে ঐশী বলে উঠলো, “আচ্ছা, আজ তবে যাই?!”, উত্তরের অপেক্ষা না করেই ঘুরে হাঁটা ধরলো সে! পুরো বেকুব বনে গেল যেন সমুদ্র! সামনে বাড়িয়ে রাখা হাতটার দিকে তাকিয়ে নিয়ে হাঁটতে থাকা মেয়েটার দিকে চোখ ফেরালো সে!
“বাবা ভাবুক চন্দ্র! মেয়েদের দিকে ওভাবে তাকাতে হয় না! লোকে বাজে বলবে! চলো আমরা বাসে উঠি?!”, আসিফের কথায় আবার বাস্তবে ফিরলো সমুদ্র! বিরস বদনে বাসে উঠে পড়লো।
সারাটা পথে শুধু মেয়েটার চোখ দু’টো ভাসছিলো তার মনে!
কল্পনার বাস্তব থেকে বাস্তবের বাস্তবে ফিরে এলো সমুদ্র। নিজের বাসায় আছে সে এখন! শেভ করা শেষ! নাস্তার টেবিলে যাবার আগে কাপড় পরতে হবে। ঘরে গিয়ে দেখলো খুব সুন্দর করে রুমটা গুছিয়ে দিয়ে গেছে স্নিগ্ধা! নতুন চাদরে বেশ লাগছে আছ রুমটা! ক্লোজেট থেকে সবচেয়ে সুন্দর শার্টটা বের করে গায়ে চড়ালো সে। জিন্স পরলো একটা। চুলে হালকা ব্রাশ করলো।
মোবাইল নিলো। নাস্তা করতে গেল। নাস্তা করতে করতেই হঠাৎ করেই ফোনটা বেজে উঠলো। আসিফ ফোন করেছে। ওকেও কিছু বই কিনে দিতে হবে! সেদিনও ঠিক এভাবেই ফোন এসেছিল! শুধু একটাই পার্থক্য, ফোনটা এসেছিলো রাতের বেলাতে!
সেদিনেরই কাহিনী, রাতে খাবার টেবিলে বসে সেইরকম কথা শুনতে হলো সমুদ্রকে।
সবাই মেয়েটার সাথে ওকে দেখে ফেলেছে। সবার প্রশ্ন, মেয়েটা কে? কি করে? বয়ফ্রেন্ড আছে কি না? আশ্চর্য কথা! সমুদ্র কেমন করে জানবে মেয়েটা কে? জানবে হলো আসিফ। ও শালা আবার আজকে বাইরে খেতে গেছে! নিশ্চয়ই বিপদ বুঝে কেটে পড়েছে! কত্ত বড় হারামী… নিজের মনে গজ গজ করতে করতে কোনওমতে ডাইনীং শেষ করে রুমে ফিরে এসে দেখলো আসিফ কার সাথে যেন খুব মজা করে ফোনে কথা বলছে! তাকে দেখে হঠাৎ করেই যেন একটু আড়ালে চলে গেল সে! এমনি এমনি চটে গেল সমুদ্র। কিছু বললো না। তার যখন সব কিছু অসহ্য লাগে, তখন সে তার রুমটাকে আলাদা একটা রাজত্ব বানিয়ে ফেলে।
চারিদিক দিয়ে পর্দা দিয়ে ঘিরে ফেলে সে পাশটায়। ঐ সময় তাকে বিরক্ত করা যাবে না। সবাইকে বলে দেয়া আছে, দুই হাতের মধ্যে নিউক্লিয়ার বোমা পড়ার মত জরুরী না হলে ডাকা যাবে না! অবশ্য হলের ছেলেদের কিছু বলা আর না বলা সমান! সমুদ্র পর্দা ফেলে দিলেই সবাই যেন একেকজন নিউক্লিয়ার সায়েন্টিস্ট হয়ে যায়, জোর করে নিউক্লিয়ার বোমা বানিয়ে তার দুই হাতের মাঝে ফেলতে থাকে! মানে কারও কোনও চ্যাপ্টার বুঝিয়ে দিতে হবে, অথবা কারও গেম ইন্সটল হচ্ছে না, কারও সার্কিট কানেকশন ঠিক হচ্ছে না, ব্লা ব্লা ব্লা…
আজকে কেন যেন কেউ এমন কিছু করছে না! অবশ্য সে খেয়াল করেনি যে আসিফ বেশ খানিকখন আগেই বাইরে থেকে দরজায় তালা মেরে চলে গেছে! আসলে চলে সে যায়নি, রুমের বাইরেই একটা ছোট্ট ছাদের মতন আছে, সেখানে গিয়ে চুপটি করে বসে চাঁদটাকে দেখছে। আজকে তার মন অনেক অনেক অনেক ভালো। কিছু একটা সে করতে পেরেছে অবশেষে তার প্রিয় বন্ধুটার জন্যে।
অনেক অনেক অনেক দেনা ছিল তার কাছে! এতদিন তাকে একা থাকতে দেয়নি সমুদ্র ছেলেটা। সবসময়ই তার সাথে ছিল। প্রথম যে মেয়েটাকে ভালোবাসতো, সে যখন চলে গেল, তখন থেকে সমুদ্র ধরে রেখেছে তাকে। আসিফ অনেক মেয়ের সাথে সময় কাটিয়েছে তারপরে, কিন্তু সবার চোখেই সে শুধুও ছলনা দেখতে পায়। দেখতে পেলেই সরে আসে।
সবার আড়ালে তার যে একটা একাকীত্ব আছে, সেটা জানে শুধু সমুদ্র। তাকেও সে আজ থেকে আর আগের মত করে পাশে পাবেনা। কিছু কিছু মানুষের জীবন এত নিঃসঙ্গ হয় কেন? হঠাৎ করে আসিফের দু’চোখ থেকে এক ফোঁটা নোন্তা পানি ঝড়ে পড়লো যেন। দূরের ঐ চাঁদটা ছাড়া আর কেউ সেটা দেখলো না। সবাইকে অবশ্য সবকিছু দেখতেও হয় না।
মানুষের জীবনে অতিপ্রাকৃত কিছু ঘটনা থাকে। সেগুলো অতিপ্রাকৃতই থাকুক না?!
ঠিক সেই মুহূর্তে সমুদ্র তার নিজের বানানো অন্ধকারের রাজত্বে বসে আছে! বার বার কেন যেন মেয়েটার কথা মনে পড়ছিল তার। কি যেন নাম বলেছিল মেয়েটা? ও হ্যাঁ, ঐশী! আসলেই যেন স্বর্গ থেকে পাঠানো! এত মায়াবী চোখ… দূর্বোধ্য সে চোখের ভাষা বোঝা… কেন যেন তার হঠাৎ মনে হল মেয়েটা তাকে কিছু বলতে চাইছিলো!
মোবাইলটা নিয়ে আনমনে নাড়াচাড়া করছিলো সে। কেন যেন বুকের পাশটায় একটা চিনচিনে ব্যথা! একটা না পাওয়ার কষ্ট। কষ্ট… কিসের কষ্ট? আশ্চর্য! সমুদ্র আজ কিছুতেই কিছু বুঝে উঠতে পারছে না! ঠিক তক্ষুনি প্রচন্ড শব্দে মোবাইলটা বেজে উঠলো তার! চম্কে উঠে আর একটু হলে ফেলেই দিয়েছিলো সে ফোনটা! ভাগ্যিস ঠিক শেষ মুহূর্তে ধরে ফেলেছিল! হাতে নিয়ে দেখলো অপরিচিত নাম্বার।
“হ্যালো?!”, ফোন রিসিভ করলো সমুদ্র।
“সমুদ্রের বুকে নাকি অনেক কষ্ট, আপনি জানেন নাকি কিছু?!”, ওপাশ থেকে একটা মিষ্টি নারীকন্ঠ বলে উঠলো!
“দেখুন, আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি না। আপনি কে বলছিলেন?”, একটু রাগত স্বরেও কথাটা বললো সমুদ্র। ঐশী মেয়েটাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেই তার বেশি ভালো লাগছে! আপরিচিত কারও সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
“আমি? আমি হচ্ছি আমি! সমুদ্র সাহেব, আপনি কি আমার জন্যে আরেকটু কষ্ট করতে পারবেন?”, রহস্য ভরা কন্ঠ মেয়েটার।
“আমি আসলে অপরিচিতদের সাথে কথা বলি না। আপনি কিছু মনে না করলে আমি রাখছি। ”
“না না! শ্রীমাণ ভাবুক চন্দ্র দাস, প্লীজ রাখবেন না! আপনি আমার কাছে এখনো পাওনা আছেন!”, মেয়েটার কথায় একটু বিষমই খেলো সমুদ্র। আসিফ তাকে যে নামে ডাকে, সেটা মেয়েটা জানলো কীভাবে? এটা তো আর কেউ জানেনা? আসিফের গার্লফ্রেন্ড একটাও স্থায়ী হয় না, তাই সেরকম কেউ না। আবার আসিফের কোনও বোনও নেই! পুরোই বোকা বোকা লাগছে নিজেকে! আরও বড় কথা হচ্ছে মেয়েটার থেকে নাকি সমুদ্র কি পাওনা আছে, সেটা কীভাবে সম্ভব? সে তো কোনও মেয়ের সাথে অতটা ঘনিষ্ঠই না! দ্রুত চিন্তা করছে সমুদ্র।
“হ্যালো! আপনি আছেন, সমুদ্র সাহেব?”, মেয়েটার কন্ঠে খানিকটা হতাশা লক্ষ্য করলো যেন সমুদ্র। আরও চিন্তা বাড়লো তার। অবশ্যই এই মেয়ে তাকে চেনে। কে হতে পারে?
“জ্বী, আছি। দেখুন, আপনি আমার ব্যাপারে এত কিছু কীভাবে জানেন আমি জানিনা, কিন্তু অপরিচিতদের সাথে আমি কথা বলিনা।
আপনি পরিচয় না দিলে আমি ফোন রেখে দিতে বাধ্য হব। ”, শেষ চেষ্টা সমুদ্রের।
“তাহলে তো সোজা-সাপ্টা কথা বলাই ভালো!”, হেসে দিলো মেয়েটা, “আপনি আমাকে আজকে কিছু বই কিনে দিয়েছিলেন। আমি সেগুলোর দাম দিতে ভুলে গেছি। তো আপনি যদি আরেকটু কষ্ট করে আরেকটা দিন আমাকে সময় দিন, তো আপনার পাওনাটা আমি মিটিয়ে দিতে পারি…”, হাসতে হাসতে বললো মেয়েটা!
“ঐশী!”, অস্পষ্ট স্বরে বললো সমুদ্র! নিজের কানকেও সে বিশ্বাস করতে পারছে না! এ কীভাবে সম্ভব? তা সে যাই হোক, সেরাতে যে তারা কেউ ফোন রাখবে না, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়! ছাদের কোণে বসে আসিফও তখন একই কথা ভাবছিলো…
“এক্সকিউজ মি! আমার নাম আসিফ! আপনার সাথে পরিচিত হতে পারি?”, হঠাৎ করেই আচমকা একা দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করে বসে আসিফ।
মেয়েটা চমকে যায় যেন!
“আমি… আমি আসলে… মানে আমি…”, কথা হারিয়ে ফেলেছে যেন মেয়েটা। এতক্ষন কোঁকড়ানো চুলের ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ছিল সে। একটু আগে ছেলেটাও তাকিয়ে ছিল তার দিকে। চোখাচোখি হতেই কীসের টানে আটকে যায় সে ঐ চোখ দু’টোতে!
“আপনি যে ছেলেটার দিকে এতক্ষন তাকিয়ে ছিলেন, সে আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। আসলে ছেলেটা আপনার সাথে কথা বলতে চায়, কিন্তু নিজে মুখ ফুটে সেটা বলবে না।
একটু বেশি লাজুক ছেলে তো! তাই ভাবলাম…”, কৈফিয়ত দেবার ভঙ্গিতে কথাগুলো বললো আসিফ। অজানা একটা ছেলের কাছে এভাবে ধরা পরে লজ্জায় যেন লাল হয়ে গেল মেয়েটা।
“ঐশী, আমার নাম ঐশী! ফার্স্ট ইয়ার। ”, আসিফের দিকে অবশেষে তাকিয়ে বললো সে। নিজেকে সামলে নিয়েছে সে।
মেয়েদের অনেক কিছু অনেক দ্রুত সামলে নিতে জানতে হয়। আর তাছাড়া কোঁকড়া চুলের ছেলেটার প্রতিও কীসের যেন একটা আকর্ষণ অনুভব করছে সে!
“আসিফ হাসান। অলমোস্ট ফোর্থ ইয়ার। ”, হাসিমুখে বললো আসিফ। নিজের পরিচয় দেবার এমন ভঙ্গিমা দেখে হেসে ফেললো ঐশী! “আর ঐ ছেলেটার নাম, যে এইমাত্র আমাদের দিকে তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল, তার নাম সমুদ্র! আমার বন্ধু!”, আবার হেসে ফেললো ঐশী!
“আপনার বন্ধুর সাথে পরোক্ষভাবে পরিচিত হতে পেরে খুশি হলাম!”, হাসতে হাসতে বললো ঐশী! তারপরে তারা দুইজনে মিলে অনেক কথা বললো।
আসলে কথা বললো আসিফই, ঐশী শুধু শুনে গেল। সমুদ্র সম্পর্কে একগাদা কথা বলে গেল সে। বাসা কোথায়, কি করে, কেন করে, কীভাবে করে, এই, সেই সবকিছু বলে গেল সে! আর ঐশী একনিষ্ঠ ভক্তের মতো শুনে গেল তার কথা। তারপরে দুইজনে মিলে প্ল্যান করলো সমুদ্রকে খ্যাপানোর! আর প্ল্যানমতোই রাতে ঐশী আসিফকে ফোন করে জেনে নিল সমুদ্র রুমে ফিরেছে কি না।
“নাহ্, আজ রাতে ঘুমটা আমার গেছে!”, নিজের মনেই নিজেকে ভেংচি কাটলো আসিফ।
রাত যখন অনেক গভীর হলো, তখন চুপি চুপি দরজা খুলে ভেতর থেকে লাগিয়ে দিয়ে পা টিপে টিপে নিজের বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো সে। অবশ্য এত সাবধানতার কোনও দরকার ছিল না, সমুদ্র তখন এ জগতে নেই। অন্য জগতের মানুষ সে এখন। সে জগতে এখন মানুষ মাত্রে দু’জন। সমুদ্র আর ঐশী।
ঐশী আর সমুদ্র।
২
“বাবা, তুই না আজকে ঢাকায় যাবি?”
“হ্যাঁ, আম্মু! একটা বই কিনতে হবে। খুলনায় পাওয়া যায় না। ”
“ফিরবি কবে? থাকবি কই? খাবার দাবারের কি অবস্থা?”
“ফিরবো কালকে। থাকবো বন্ধুর বাসায়।
খাবার দাবারের ব্যাবস্থাও হয়ে যাবে। ”, তবু আম্মু কেন যেন নিশ্চিন্ত হতে পারেন না। কেমন যেন খচ্ খচ্ করছে ভেতরটা। কিন্তু ছেলের উপর তার অগাধ আস্থা। কিছু না কিছু একটা ব্যবস্থা সে নিশ্চয়ই করে রেখেছে।
“সমুদ্র, আমার জন্যে কি আনবি?!”, স্নিগ্ধা হঠাৎ করে জানতে চায়।
“বল্ তোর কি লাগবে?”, ছোট বোনটাকে অনেক আদর করে সে। বাবা মারা যাবার পর আম্মু নিজেই চাকুরী করেন সারাদিন। বোনটাকে সেই দেখে শুনে রাখে।
“জানিনা তো! তোর যা ইচ্ছা নিয়ে আসিস! তবে খালি হাতে আসলে কিন্তু…”, কথা শেষ করে না সে।
টেবিল থেলে ঠান্ডা পানির বোতলটা নিয়ে গ্লাসে ঢালে সে। তাতেই যা বোঝার বুঝে নেয় সমুদ্র!
“না না, ঠিক আছে! আনবো অবশ্যই কিছু একটা!”, তাড়াতাড়ি বলে ওঠে সমুদ্র।
আম্মু চলে যাবার একটু পরে গুছিয়ে নেয় সে। আজ ঐশীদের ঈদের ছুটির শেষ দিন। তার আরোও দুই দিন বাকি।
ঐশী ঢাকায় থাকে। ঐ বলেছে ওকে ঢাকা থেকে নিয়ে আসতে। অনেকদিন দু’জনের দেখা হয় না। তাই সমুদ্র ঠিক করে ঢাকায় যেয়ে বই কিনতে কিনতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। রাতের কোচে ঐশীর সাথে খুলনা ফিরে যাবে।
তারপরে সেখানে আসিফদের বাসায় গিয়ে উঠবে। দুপুরে খেয়ে দেয়ে আবার ফরিদপুরে ফিরে আসবে। সেই মতো রাস্তাত বেরিয়ে পড়ে সে। বাস পেতে খুব একটা ঝামেলা হয় না। ফেরি পার করার পর বাসে বসে থাকতে থাকতে খুব ঘুম পায় তার! ঝিমাতে ঝিমাতে ছুটির ঠিক আগের দিনের কথা মনে পড়ে তার…
সমুদ্র আর ঐশী একসাথে বসে আছে জাতিসংঘ পার্কে।
সামনে পিচ্চিরা ক্রিকেট খেলছে। তাকিয়ে তাকিয়ে তাই দেখছে দু’জনে। ঐশী শক্ত করে সমুদ্রের একটা হাত ধরে রেখেছে।
“জানো, সমুদ্র, মাঝে মাঝে আমার খুব ভয় করে। ”, নীরবতা ভাঙে ঐশী।
“কেন?”, খুব অবাক হয়ে ঐশীর দিকে তাকায় সে।
“সমুদ্র অনেক বিশাল, তার অনেক কষ্ট। আমি যদি তোমার ঐ বিশালতার মাঝে তোমার কষ্টগুলো খুঁজে না পাই?!”, কেমন যেন কান্না কান্না কন্ঠে বলে ওঠে ঐশী।
“তাই, না?!”, হঠাৎ হেসে ফেলে সমুদ্র! হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে ঐশীকে জড়িয়ে ধরে রাখে সে শক্ত করে। ঐশীর মুখটা থাকে সমুদ্রের গলার ঠিক নিচে, বুকটার কাছে।
হঠাৎ করে কেন যেন ঐশীর নিজেকে খুব শান্ত শান্ত মনে হয়! মনে হয় যেন তার মাঝে আর কোনও অনিশ্চয়তা নেই। আসলে সমুদ্রকে নিয়ে আগের রাতে সে খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখেছে। সে কিছুতেই সেটা সমুদ্রকে বলবেনা। বললে নাকি অমঙ্গল হবে।
“ঐশী, তুমি আমার কাছে স্বর্গ থেকে পাঠানো ডানাকাটা পরী! তোমার অস্তিত্ব আমার সাথে থাকা মানেই আমার আর কোনও কষ্ট নেই!”, সমুদ্র বলে।
সে খেয়াল করে না ঐশীর চোখের কোণে দু’ফোঁটা জল গড়িয়ে পরে। সবকিছু অবশ্য দেখতে নেই। কিছু কিছু বিষয়ের স্বাক্ষী থাকতে হয় শুধুই উপরে যিনি আছেন, তিনি! সেদিন অনেকখন একসাথে থাকে দু’জনে। শেষে ঐশীকে হলে দিয়ে এসে নিজের হলে ফিরে যায় সমুদ্র। ফিরে আসার আগে কথা দেয় ছুটি শেষ হলে সে নিজে গিয়ে ঐশীকে নিয়ে আসবে।
আসলে তাই সে ঢাকা যাচ্ছে, বই-টই কোনও ঘটনাই না! ঐশীর কথা ভাবতে ভাবতে গভীর ঘুমে তলিয়ে পড়ে সে।
(চলবে…)
[প্রথম প্রকাশঃ আমার ব্লগার একাউন্টে] ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।