আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের ছোট মামু ...

~ ভাষা হোক উন্মুক্ত ~ অনেক অনেকদিন আগের কথা। আমরা তখন ছোট। ছোট বোনটা মাত্র জন্মেছে বোধ হয় সে সময়। ড্রয়িংরুমে আমি, মামা আর ছোট বোনটা আছি, মা রান্না ঘরে। টিভিতে রাতের খবর দেখছিলাম।

এমন সময় টিভিতে বলল - "এরপর প্রেসিডেন্ট জিয়া বন থেকে হেগে এলেন"। শুনে মামা খেপে গেলেন। "কোন দেশে গেছে জিয়া? শালার ফকিরা দেশ। প্রেসিডেন্টের জন্যেও বাথরুম বানায় নাই। বেচারাকে বনে যাইয়া বাতরুম করা লাগলো।

আর টেলিভিশনের খবরে সেইটা না বললে কি হইতো? এই কথা বলাই লাগবে? যত্তোসব। টিভিই দেখবোনা আর" ... উঠে পাশের ঘরে চলে গেলেন মামা। এই হলো আমাদের মামা। ভাগ্নে ভাগ্নিদের সবচেয়ে প্রিয় ছোট মামা। বিয়ে করেননি জীবনে।

কাজকর্মও কিছু করেন না। মাথায় খুব সামান্য সমস্যা আছে। আমরা বলি "সাইড টাল", মানে ... মাঝে মাঝে দেখবেন রিক্সার চাকা ঘুরছে ঠিকই, কিন্তু একটু হেলে দুলে, সামান্য বাঁকা হয়ে। মামার মাথার চাকা সেভাবে ঘোরে বলে আমাদের ধারনা। তার জীবনের বেশীরভাগ সময় কেটেছে আমাদের সবার বাসায় ঘুরে ঘুরে।

আজ এর বাসায়, তো কাল ওর বাসায়। ছোট মামা ইলেক্ট্রনিক্স করতেন, ঘরের ইলেকট্রিকের জিনিসপত্র ঠিক করে দিতেন। আমার ইলেক্ট্রনিক্স এর শখটাও তার কাছ থেকে পাওয়া। সেই মামার কিছু ঘটনা বলছি। একবার ঈদের সময় নানাবাড়ি গিয়ে মামার কাছে একটা সুপার গ্লু টাইপ জিনিস দেখেছিলাম, নাম কুইক ফিক্স।

একটা টিউবে থাকে। সেটা দিয়ে নিমিষেই ভাঙ্গা জিনিস জোড়া লাগানো যায়। আমরা তো অবাক। এই জিনিস আমাদের চাই ই চাই। মামার কাছে চাইলাম, মামা দেবেননা।

কারণ টিউব থেকে বের করলেই এটা জমে যাবে। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করিনি। এক ফাকে বেরিয়ে গিয়ে আমি আর রিজু, মানে আমার কাজিনটা, হোমিওপ্যাথির দোকান থেকে খালি শিশি চেয়ে আনলাম। কিন্তু মামা দিলেনই না। বাসায় এসে ভুলে গেছিলাম সেই কথা।

কিছুদিন পরে মামা এলেন বেড়াতে। এসে আব্বা আম্মাকে পড়তে দিলেন একটা চিঠি। সবাই তো হেসেই কুটিকুটি। পরে শুনলাম, দুর্দান্ত দুষ্টু রিজু চিঠি লিখেছে মামার কাছে ... গাট্টা শালা, কুইকফিক্স দিলিনা। মোমেন্সিং (ময়মনসিংহ) আয় খালি, তরে এক্কেরে কুইট্টাল্বাম (কুইট্টা ফেলবো) এই ভয়ঙ্কর হুমকির পরেও মামা তাদের বাসায় গেলে এক রাতে রিজু ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা পানির বোতল নিয়ে ঘুমন্ত মামার গায়ে ঢেলে দিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছিল।

আমি তখন স্কুলে পড়ি। ছোট বোনটা আধো আধো বোলে কথা বলতে পারে। মামা এলেই প্রতিদিন বিকেলে আমাদের নিয়ে কমলাপুর রেল স্টেশনের ধারে বেড়াতে যেতেন। সেদিনও গেলেন, আর মামার এক বন্ধুও সাথে ছিলেন। উনারা গল্প করলেন, আমি আর সীমা খেললাম, বাদাম খেলাম।

মামারা সিগারেট খেলেন লুকিয়ে লুকিয়ে। আমাকে আসার পথে চকলেট ঘুষ দিয়ে বুঝিয়ে বললেন যেন সিগারেটের কথা কাউকে না বলি। বাসায় এলাম ঘুরে ফিরে। নানা নানী মা খালারা সবাই বসে ছিলেন বারান্দায়। আমাকে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলেন না, জিজ্ঞেস করলেন সীমাকে "কোথায় কোথায় গেছিলে, কি করেছো" এইসব।

সে বলে দিলো - আমি আর ভাইয়া খেললাম, বাদাম খেলাম, চকলেট খেলাম, আর মামা দুইটা সিগারেট খেলো ...। ধুপধাপ করে দৌড় আর দরজার খোলার শব্দে বুঝলাম মামা পালিয়েছেন। এই গল্পটা মামার বন্ধুর মুখে শোনা। মামা লেখাপড়ায় বরাবরই ভাল ছিলেন, কাজেই ইন্টারমিডিয়েট ২ বারে পাশ না করাতে নানা উনাকে উচ্চশিক্ষার্থে গ্রামের কলেজে পাঠালেন। সেখানে পরীক্ষার দিন তার বন্ধুরা তাকে নকল সাপ্লাই দিয়ে গেছেন।

সেদিন ছিল বাংলা পরীক্ষা। পরীক্ষা শুরু হবার কিছুক্ষণ পরেই প্রশ্ন বাইরে চলে এলো। মামার বন্ধুরা বেশ গুছিয়ে নকল পাঠিয়ে দিলেন ভেতরে। কলেজের বাথরুমের দেয়াল ছিল বাইরের দিকে। একঘণ্টা পর না কি মামা বাইরে বেরিয়ে হাতের ইশারায় বন্ধুদের ডাকেন।

বাথরুমের ভেতর থেকে বলেন নকল না কি ঠিক মত দেয়া হয়নাই। ছবি বাদ গেছে, মামা আগে ছবি আঁকবেন পরে লিখবেন। তাড়াতাড়ি ছবি দিতে বলছেন। সবাই তো হা, বাংলা পরীক্ষায় ছবি আঁকে না কি কেউ? জানতে চাইলেন কোন প্রশ্ন। মামা বিরক্ত হয়ে বললেন - "কাদম্বিনীর চরিত্র অঙ্কন করতে বলছে না, সেইটার ছবি দে তাড়াতাড়ি"।

অনেকদিন চলে গেছে তার পর। মামা বুড়ো হয়ে গেছেন। আমরাও সবাই বড় হয়ে গেছি। কিন্তু এখনও ছোট মামা আমাদের সবচাইতে প্রিয় মামা। এখন মাঝে মাঝে মামাকে ফোন দিলে এই সব কথা চলেই আসে আর দুজনে হেসে গড়াগড়ি খাই সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ সুন্দর থাকবেন ...  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।