আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈদে দেখা হিন্দি সিনেমা রিভিউ-বুডঢা হোগা তেরা বাপ

বিনা যুদ্ধে নাহি দিব ছাড়,সূচাগ্র মেদিনীর অধিকার.... । গা-টা ম্যাজম্যাজ করতাছিলো। ঈদ সময়কালীন দশবাড়ি ভ্রমনপরবর্তী উদর-ঝড়ও মোটামুটি থামছে। টেলিফিল্ম আর টেলিফিল্মে সয়লাব চ্যানেলগুলা দেখার মত রুচি তখনও মুখে ফিরা আসে নাই। সবখানে কাহিনী তো একই,ইনায়া-বিনায়া পয়তাল্লিশোর্ধ কিশোর নায়ক আর পয়ত্রিশোর্ধ স্কুলপড়ুয়া নায়িকার পুতুপুতু প্রেম আর কতভাবে দেখুম !! কি এক আজব জমানা !! বুইড়া হৈলেও সবার মনে কিশোর-কিশোরীর চপলতা ! সবাই জোয়ান থাকতে চায় ! যেইখানে নায়কের মুখের যথার্থ ডায়লগ হইতে পারতো,'' দাদুভাই,একটা পান খাওয়া দিকি'' ........সেইখানে টেলিফিল্মে তার ডায়লগ হয়,'' কি বলছো,এখনি বিয়ে করলে আব্বু ঘর থেকে বের করে দেবে !! '' ..... মহৎ !! জাঝা !! অনেক গুলা ফিল্মের রিভিউ লেখার মহৎ এক উদ্দেশ্য ছিলো, সেই হিসাবে প্রথমতঃ বুডঢা হোগা তেরা বাপ দিয়াই শুরু করি।

নামটাই কেমন জানি আকর্ষক গালি!!বুডঢা হোগা তেরা বাপ। আমার হিন্দি স্টক মোটামুটি,সুতরাং অনুবাদ করলে বঙ্গানুবাদ দাড়ায়,''বাপ,তোর বুইড়া পাছা। dad,your ass is old । বাহ !! অশ্লীল শব্দ দিয়া ছবির নাম হইতে পারে,আমার ধারনায় ছিলোনা। কিন্তু ঐ যে !! মনীষিরা কৈছেন, এক ভাষার বুলি আর অন্য ভাষার গালি।

চুল আর বাল। সুতরাং বেহুদা টাইম নষ্ট না কইরা অমিতাভের বুইড়া হাড়ের ভেলকি দেখি । গ্যাংস্টার কবির ভাই ( প্রকাশ রাজ) মস্ত মাস্তান। উনি শহরে একখনা বোমা বিস্ফোরনের আদেশ জারি করছেন। কথামত তার এক চ্যালা বাজারে গিয়া অর্ডার মত একটা বোমা ফুটাইয়া দিলো।

বোমা ফুটনের সাথে সাথে কিছু মানুষ ব্যস্ত হৈয়া ক্যামেরার সামনে দিয়া কয়েকবার দৌড়াইয়া গেলো। শহরবাসী ভিতসন্ত্রস্ত হৈলো। আগুন দেইখা মনে হৈলো মামুর দোকানের চা বানানোর স্টোভের আগুনও এর চেয়ে বেশি জ্বলে। এসিপি করন মালহোত্রা (সোনু সুদ) জলিল সাহেবের ট্রাম্পকার্ডের মত ঘোষনা দিলেন,২ মাসে উনি পুরা গ্যাং খালি কৈরা দিবেন,পারলে ঠেকাও !সু্তরাং কবির ভাই বুশের লাহান প্রি-অ্যাম্পটিভ অ্যাটাক করা সাব্যস্ত করিলেন। আক্রান্ত হইবার পূর্বেই এসিপির সানডে-মানডে ক্লোজ করিতে বেস্ট শ্যুটার কামে লাগাইতে বলিলেন।

অতঃপর পর্দায় আগমন ঘটলো অ্যাংরি ইয়াং ম্যান বুডঢা অমিতাভের। পিন্দনের কাপর সাদা,বেগুনী রংয়ের চশমা,এরশাদ কাকুর লাহান বাহারী রং ও হইলদা ঢংয়ের গলার স্কার্ফ,দুই হাতে তিন ঘড়ি--সব মিলায়া এক কিম্ভুতকিমাকার বুইড়া !!( আহারে, ঐশ্বরিয়া পোয়াতি হৈয়া সব গুবলেট কৈরা দিছে,পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি যদি শয্যাশায়ী হয়,তাইলে তো এই বুইড়ারেই উপার্জনের জন্য এইসব ছবিতে নামতেই হয় । পোলাডা তো আবার আকাইম্যা,যে ছবি হিট হওয়া মিস নাই,সেই ছবিরেই ফ্লপ না কৈরা ছাড়েনা ) । এয়ারপোর্টের চেকিং লাউন্জে তিনি দাবী করলেন,তিনি যেখানে দাড়ান,সেখানেই লাইন শুরু হয় ! (স্বাভাবিক,শবযাত্রায় সবার আগে তো মৃতদেহই থাকে,আর বাকি সবাই তার পিছনে )। উনি নাকি মুম্বাইয়ের ''বাপ্রে বাপ'' টাইপ গ্যাংস্টার ছিলেন,একইসাথে নারীকূলের নয়নের মনি,সেই কথা প্রমানের নিমিত্তে ছবি শুরু হৈতে না হৈতেই টিপিক্যাল অমিতাভের 'দুই হাত একটু দুলাও,মাজা একটু আগুপিছু করো' -নাচ দিয়া হাপাইতে থাকলেন ( আফটার অল বুইড়া হৈছেন তো ) ।

উনি সবকিছু করতে রাজি,তয় শর্ত প্রযোজ্য একটাই-বুইড়ারে বুইড়া কওন যাইবো না । একটা জিনিস খোলাসা করি। আমার মনে হৈছে,গলায় স্কার্ফ বান্ধা পাব্লিকগুলা একটু লুল হয়। এরশাদ কাকুরে দেখছেন,এই ছবিতে অমিতাভের কান্ড-কারখানাও দেইখেন। উনি এরশাদ কাকুর মতই কৈছেন,মাইয়া মানুষ আমার কাছে আসলে আমি কি করুম !! প্রেমে ব্যর্থ পুরুষেরা গলায় হইলদা স্কার্ফ বাইন্ধা দ্যাখতে পারেন ।

ঐদিকে এসিপি সাব গ্যাংস্টার কি খুইঁজা বাইর করবেন,নিজেই এক মাইয়ার পিছনে ঘুইড়া মরতাছেন। মাইয়ার নাম তানিয়া (সোনাল চৌহান)। তার নাম্বার খুইঁজা পাইতেই ওস্তাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলার দশা। সেই মাইয়ার আবার একটা বান্ধবী আছে,অমৃতা (চারমী কাউর)। এই অমৃতা আবার রেস্টুরেন্টে গিয়া কারে বিয়া করবো,তা দেইখা বেড়ায়,বয়স জিগাইলে কয় ২০ !! দুইজনের বয়সের মাঝে ব্যবধান বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময়কাল অতিক্রম করলেও ''সেক্সি''- ''পাল্টা সেক্সি'' বাক্য বিনিময়ের কারনে বন্ধুত্ব হৈয়া গেলো ।

পরেরদিন নায়িকা আর তার বান্ধবী রাস্তায় বইসা ছিলেন,হুট কৈরা দু-তিনটা পরিমল টাইপ লোক আইসা তাদের সেক্সি-সম্ভাষনপূর্বক চোখের সামনে ছুরি নাচাইতে লাগলো। অমিতজি আইসা তাদের শায়েস্তা করলে নায়িকার সাথেও তার বন্ধুত্ব গাঢ় হইলো। (শিক্ষনীয় বিষয় ১: সেক্সি বলার সময় হাতে ছুরি থাকা বাঞ্ছনীয় নয়)। অমৃতা (বান্ধুবী) অমিতজিরে তার বাসায় দাওয়াত দিলেন,মা হইলেন রাভিনা ট্যান্ডন। অমিতজি বাসায় আসার সাথে সাথে আবিষ্কার হৈলো,রাভিনার একতরফা প্রেমিকপুরুষ ছিলেন এই অমিতাভ।

রাভিনা তার হারানো প্রেম খুইজাঁ পাইয়া বেগুন হাতে তুইলা নেত্য শুরু করলেন (খোদার কসম,এত্ত বড় আর মোটা বেগুন এখন আর ঢাকার বাজারে নাই সব বেগুনী হৈয়া ঢাকার মানুষের পেটে চালান হইয়া গেছে)। কারন ? কারন... অমিতজির বেগুন খুবই পছন্দের খাবার। আরও আবিষ্কার হইলো,রাভিনা আর তার স্বামী বেগুন না খাইলেও অমৃতার আবার বেগুন পছন্দ। সুতরাং অমৃতা ভাবলো,অমিতাভই তার বাপ!অমিতাভরে বান্ধুবী অমৃতা চাইপা ধরলেন,আসলেই উনি তার বাপ কিনা? অমিতজি কইলেন,যার তার লগে প্রেম করলেও সবার সাথে শুইতেন না (ঠিক যেমন বাজারে বাহারী স্কার্ফ পাওয়া গেলেও হইলদা ছাড়া উনি পড়েন না)। অতঃপর তিনি গেলেন সখি সমেত আলবালে পাগলা জল সেচনে---বারে গিয়া উন্মুক্ত উরূর মেয়েদের সাথে একপাক নেত্য ও ডিজে সঙ্গীত বাজাইয়া আরেকবার কাহিল হৈলেন।

অন্যদিকে এসিপি সাব খালি প্রেম করতাছেন,মাগার নায়িকা হ্যারে পাত্তা দ্যায়না। ঘটনাক্রমে আবিষ্কার হইলো এই এসিপি সাবের বাপ আমাগো গ্যাংস্টার অমিতাভ। হেমা মালিনির লগে বিয়া কইরা পুতের জন্ম দিয়া প্যারিসে ফুটছিলেন। নিজের পুলারে তো আর খুন করা যায় না, তাই পটকা মাইরা সাবধান করতাছিলেন--পুলার উপরে ''সুপারী'' নাযিল হইছে। কিন্তু দেখলেন পুলা আরো বেকুব,প্রেমও করতে পারেনা।

তাই নায়িকার লগে তিনি তার পুলার সিস্টেমও কইরা দিলেন। (পাঠককূল!! অভিষেকের সাথে ঐশ্বরিয়ার বিয়ার কোনো মিল পাইলেন ? )। এসিপি সাবের ব্যাপারে কিছু ব্যাপার খোলাসা না করলেই না। উনি এসিপি হইলেও তেনার রিফ্লেক্স এখনো আমাগো মহল্লার চৌকিদারের চেয়ে খারাপ। পটকার শব্দ পাইয়া যেইভাবে খোলা বাতাসের নিচে বারবার পজিশন নিতাছিলেন,দেইখা পশ্চাৎদেশ বাইর কইরা বালুর নিচে উটের মাথা লুকানের কথা মনে পইড়া গেছিলো।

অন্যদিকে তার বাপ অমিতাভের শ্যুটিং-ক্ষমতা অসাধারন,গুল্লি করলে গুল্লি দেয়াল ঘুইড়া দেয়ালের পিছের বোতল ফাটায়া দ্যায়( ফিজিক্সের কোন সূত্র ফলো করলো,বুঝলাম না)!!তিনি সব্যসাচী --- তার দুই হাত ও মুখ সমানভাবে চলে । এই কান্ড দেইখা স্বয়ং কবির ভাই এসিপিকে মারার জন্য অমিতাভরে নিযুক্ত করলেন। কিন্তু কবির ভাইয়ের জোয়ান চ্যালারা এসিপি সাবরে গুল্লি মাইরা দিলে উনি দিলে বহুৎ সদমা পাইলেন। হাসপাতালে নিজের পুতেরে ভর্তি করাইয়া কবির ভাইয়ের আড্ডায় গিয়া হাজির হৈলেন। সেইখানে তিনি গিয়া কৈলেন,পুলিশ এই বিল্ডিয়ের বাইরে দাড়াইয়া আছে।

এইটা শুইনাই হাস্যকারভাবে কবির ভাই তার চ্যালা সমেত বিল্ডিংয়ের বাইরে গুল্লি করা শুরু করলেন। আর এই গ্রাম্য গুটিবাজিতে সফল হৈয়া অমিতজি বিল্ডিংয়ের বাইরে গুল্লি করার পাশাপাশি দুই একটা কৈরা বিল্ডিংয়ের ভিতরের গুন্ডাও মারা শুরু করলে। এইভাবে একটা একটা কৈরা ৫০-৬০টা গুন্ডা মাইরা সবার শেষে কবির ভাইয়ের কপালে একখান গুল্লি মাইরা তার ধরাধাম ত্যাগ নিশ্চিত করলেন। অতঃপর? বুকে ৪টা গুল্লি খাইয়াও নায়ক তো মরবো না,সেইটা আগেই জানতাম,দেখতাছিলাম কতদুর যায়। অমিতাভের বুঝা উচিৎ তার বয়স হৈছে,চাইলেই কসরৎ কৈরা নাচা যায় না,বরং বুইড়া ভামের মতো লাগে।

একটা নির্দিষ্ট বয়সে আইসা হয় ফিলিম করা ছাইড়া দেন,নাইলে আপনার বয়স অনুযায়ী অ্যাক্টো করেন। এই কৈরা নিজের ইজ্জতের পাশাপাশি পুলাডার ক্যারিয়ারও খাইছেন। এখন পুলাডার ছবির বদলে ৩জি'র অ্যাড রিলিজ হয় !! তাও বন্ধু আদিত্য বিড়লার কোম্পানী বইলা অ্যাডে নেয়। বুঝলাম ঐশ্বরিয়া প্রেগন্যান্ট বৈলা আয় কইমা গ্যাছে,তাই বইলা আপনার এই বুইড়া হাড়েই এই কসরৎ দেখাইতে হৈবো ?? আর শয়তান ডিরেক্টরগুলা না !! মানবিকতা বৈলা কিছু নাই,এই বুড়া লোকটারেই নায়ক করবি কর,নাচায়া-দুলায়া হাড়ের ক্ষয় তরান্বিত কেন যে করে,প্রভুই জানেন ! সর্বোপরি বলি, হিন্দি ছবিতে অশ্লীলতামুক্ত টাইটেল চাই। সবশেষে একটি বঙ্গানুবাদ,আরেকবার মনে করায়া দিতে চাই।

বুডঢা হোগা তেরা বাপ= dad,your ass is old ! ঠিক কইছি?নাকি ভুল হৈছে ?? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।