আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

They lived for sports, they died for sports.

কিছু মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে। কিছু মানুষ স্বপ্নটা সত্যি করার জন্য ঘুম থেকে জেগে উঠে। জীবন আপনার কাছে সেভাবেই ধরা দিবে আপনি যেরকম থাকবেন। খেলার ভক্ত হিসেবে খেলা দেখি। যেদিন থেকে খেলা দেখা শুরু করেছি সেদিন থেকে এই ৩ জনের কথা আমার মনে ছাপ রেখে গেছে।

তারা খেলার দুনিয়ায় প্রবাদ পুরুষ ছিল ব্যাপারটা তা না। কিন্তু খেলার জন্য তারা নিবেদিত প্রাণ সেই খেলা খেলতে গিয়েই তাদের জীবন দিতে হয়েছিল। ভুমিকা সংক্ষেপ রেখে তাদের কথায় চলে যাই। আন্দ্রে এসকোবার আন্দ্রে এসকোবার ছিলেন কলম্বিয়ার ডিফেন্ডার। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ যারা দেখেছেন তাদের সবার আন্দ্রে এসকোবারের কথা মনে থাকার কথা।

সেবার কলম্বিয়াকে নিয়ে আশা অনেক ছিল। বাছাই পর্বে ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনাকে ৫-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকে তাদের জানান দেয়। পেলে বলেই ফেলেন ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ জিতবে কলম্বিয়া। কিন্তু প্রথম খেলাতেই তারা হোচট খায়। রুমানিয়ার কাছে হারে ৩-১ গোলে।

রুমানিয়া সেই টুর্নামেন্টে সারপ্রাইজ প্যাকেট। বলকান অঞ্চলের ম্যারাডোনা খ্যাত জর্জ হাজি তখন দুরন্ত ফর্মে। সেই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে বিদায় করা দলার নামও রুমানিয়া। কলম্বিয়ার পরের খেলা ছিল স্বাগতিক আমেরিকার সাথে। বাঁচা মরার লড়াইয়ে হারলেই বাদ।

খেলা বাংলাদেশ সময় ভোর ৬ টা বেজে ৩০ মিনিট। সকালে ঘুম থেকে উঠে টিভির সামনে যাওয়ার সাথে সাথেই আমি আমার জীবনে দেখা প্রথম আত্মঘাতী গোল দেখলাম। গোলটির ভিডিও লিঙ্ক দিচ্ছি। আপনারা ভিডিওতে আত্মঘাতী গোলটি দেখলেন এই ডিফেন্ডারের নামই আন্দ্রে এসকোবার। আমেরিকার ফরওয়ার্ডের করা ক্রসটি ক্লিয়ার করতে গিয়ে ভুলে নিজ জালেই বল ঠেলে দেয় আন্দ্রে এসকোবার।

আর শুধুমাত্র এই কারনেই পরে তার নিজের জীবনটাকেই দিতে হয়। এই গোলের কারনে ২-১ গোলে হেরে যায় কলম্বিয়া। শেষ খেলায় সুইজারল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারিয়েও তাই লাভ হয়নি। বিপুল পরিমান প্রত্যাশার চাপে দল প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায়। এখন কথা হল আন্দ্রে এসকোবারের সাথে কি হয়েছিল? দেশে ফিরার পরেই এক আততায়ীর কাছে প্রাণ দিতে হয়।

তাও বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার আগেই। কলম্বিয়া দল দেশে ফিরে যায়। জুলাই ২, ১৯৯৪ তারিখে রাতে এক কিছু বন্ধু-বান্ধব নিয়ে বারে যায়। সেখান থেকে বের হওয়ার পর বাইরের কিছু লোকের সাথে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পরে। তারপর একজন তাকে ১২ টা গুলি করে আর প্রত্যেকবার গুলি করার সময় একবার করে বলে গোও ও ও ও ও ল।

এটা একজন কমেন্টেটারের নকল ছিল আর বিদ্রুপ করে এভাবে বলে। যে গুলি করে তার ক্ষোভের কারন ছিল কলম্বিয়া ঐ ম্যাচ হেরে যাওয়ার কারনে বাজিতে সে অনেক টাকা হেরে যায়। এসকোবারের হত্যাকারী ১১ বছর জেল খাটার পর এখন মুক্ত। রমন লাম্বা এখন ঢাকা প্রিমিয়ার লীগের খবর কয়জন রাখে জানিনা ১৯৯৮ সালের দিকে কিন্তু সবাই রেডিওতে খেলা শুনত। আবাহনী মোহামেডানের সেই খেলাটা আমিও শুনছিলাম।

বোলার ছিল সম্ভবত সাইফুল্লাহ জেমী। ব্যাটিং এ মোহামেডান। টার্গেট চেজ করতে হবে ১৯০ এর মত। মোহামেডান ৪৯ রানে ২ উইকেট ব্যাটিং এ মেহরাব হোসেন অপি ২৯ বলে ২১ রানে অপরাজিত। সাইফুল্লা জেমী লেগ স্পিনার ছিল।

রমন লাম্বা ফিল্ডিং করছিলেন শর্ট লেগে। সাধারনত এই জায়গায় সবাই হেলমেট পরে ফিল্ডিং করে এবং উইকেট কিপার খালেদ মাসুদ পাইলট নাকি জিজ্ঞেসও করে রমন লাম্বার হেলমেট লাগবে কিনা? লাম্বা বলেন তিনি রঞ্জি ট্রফিতে এই জায়গায় হেলমেট ছাড়াই অনেকবার ফিল্ডিং করেছেন। (রমন লাম্বা) রেডিওতে খালি এটাই শুনেছিলাম মেহরাব হোসেন অপি আউট। বল রমন লাম্বার গায়ে লেগে উইকেট কিপারের কাছে যায় এবং পাইলট ক্যাচ ধরেন। এমনকি তখন ব্যাপারটা এমন সিরিয়াস কারও কাছেই মনে হয়নি।

নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তে ছিলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। বুলবুল রমন লাম্বাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, " তুমি ঠিক আছ?"। রমন লাম্বা কৌতুক করে বলেন, " বুলি মে তো মার গায়া ইয়ার" রাতের বেলা টিভিতে খবরে দেখলাম রমন লাম্বাকে হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে। একজন নিউরো সার্জনকে ভারত থেকে আনা হয় কিন্তু তখন কিছুই করার ছিলনা। লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নেওয়া হয় রমন লাম্বার আইরিশ বঊয়ের অনুমতিতে।

রমন লাম্বা ব্রেনের বাম দিকে রক্ত জমাট বেধে গিয়েছিল। আমিনুল ইসলাম বুলবুলের এক সাক্ষাতকারে শুনেছিলাম তিনি বলেছেন, " আজ বাংলাদেশ টেস্ট খেলছে এটা দেখলে লাম্বা খুব খুশি হত"। ১৯৮৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার সাথে লাম্বা ওয়ানডেতে তার একমাত্র সেঞ্চুরী করেছিলেন। মার্ক ভিভিয়ান ফো ২০০৩ সালের কনফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালের কথা। ক্যামেরুন বনাম কলম্বিয়া খেলার আগে ক্যামেরুনের এক ডিফেন্ডার বলে- বন্ধুরা, মৃত্যুর বিনিময়ে হলেও দেশের জন্য আমাদের খেলাটা জিততে হবে।

নিয়তির পরিহাস, খেলার ৭০ মিনিটে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সেই ফুটবলার। কেউ ফাউল করেনি। বল তখন তার ধারে কাছেও নেই। টিভিতে লাইভ দেখলেও বুঝে উঠার কোনো জো নেই হচ্ছেটা কি? খালি দেখলাম একজনকে স্ট্রেচারে করে বাইরে নিয়ে গেল। তার নাম মার্ক ভিভিয়ান ফো।

ফুটবল বিশ্বে সব থেকে আলোড়ন সৃষ্টিকারী মৃত্যু। মাঠে লুটিয়ে পড়ার পর স্ট্রেচারে যখন নেওয়া হয় তাকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের চেষ্টা করা হয়, অক্সিজেন দেওয়া হয় কিন্তু তার জ্ঞান আর ফিরেনি। কোন কারনে তার হৃতপিন্ডের স্বাভাবিক কর্মকান্ড থেমে গিয়েছিল। যেটাকে বলা হয় hypertrophic cardiomyopathy। (মাটিতে পড়ে থাকা ভিভিয়ান।

কলম্বিয়ান খেলোয়াররা তাড়াতাড়ি স্ট্রেচার আনার কথা বলছে) মার্ক ভিভিয়ান ফো'র মৃত্যুতে ফুটবল বিশ্বে শোকের ছায়া নেমে আসে। ক্যামেরুনে তাকে জাতীয় বীরের মর্যাদা দেওয়া হয়। ভিভিয়ান একসময় অলম্পিক লিওতে খেলত আর কনফেডারেশন কাপও হচ্ছিল ফ্রান্সেই তাই শোকের ছায়ায় আচ্ছন্ন ছিল পুরা টুর্নামেন্ট। ঐদিন রাতেই আরেকটা সেমিফাইনাল ছিল ফ্রান্স আর তুরস্ক। থীয়েরী ওরি গোল দেওয়ার পর আকাশের দিকে হাত তুলে বলেন, তোমার জন্য ভিভিয়ান।

ফাইনাল ছিল ফ্রান্স আর ক্যামরুনের। নিরবতা পালনের সময় সবার কান্নার দৃশ্য ইউটিউব লিঙ্ক থেকে তুলে দিলাম। ফ্রান্সের গোলকিপারের কান্নার এরকম দৃশ্যের কারন মার্ক ভিভিয়ান ফো আর সে একই ক্লাবে খেলেছিল আর তারা ভাল বন্ধু ছিল। মার্ক ভিভিয়ান আগের বছর ধারে ম্যানচেষ্টার সিটিতে খেলতে যায়। তার পরিধেয় ২৩ নম্বর জার্সিটাকে অমর করে রাখা হয়েছে।

কেউ আর এই নম্বরের জার্সি কখনো পড়বেনা। ফুটবল জগতে এরা কেউ মেসি, ম্যারাডোনা, পেলের মত মহাতারকা না। কিন্তু হৃদয়ে তারা স্থান করে ঠিকি আছে। They lived for sports, they died for sports. ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।