আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রিয় কিছু সহিহ হাদিস

1. আবূ যর আল-গিফারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বরকতময় ও সুমহান রবের নিকট হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ্ বলেছেন: "হে আমার বান্দাগণ! আমি যুলুমকে আমার জন্য হারাম করে দিয়েছি, আর তা তোমাদের মধ্যেও হারাম করে দিয়েছি; অতএব তোমরা একে অপরের উপর যুলুম করো না। হে আমার বান্দাগণ! আমি যাকে হেদায়াত দিয়েছি সে ছাড়া তোমরা সকলেই পথভ্রষ্ট। সুতরাং আমার কাছে হেদায়াত চাও, আমি তোমাদের হেদায়াত দান করব। হে আমার বান্দাগণ! আমি যাকে অন্ন দান করেছি, সে ছাড়া তোমরা সকলেই ক্ষুধার্ত। সুতরাং তোমরা আমার নিকট খাদ্য চাও, আমি তোমাদের খাদ্য দান করব।

হে আমার বান্দাগণ! তোমরা সবাই বিবস্ত্র, সে ব্যতীত যাকে আমি কাপড় পরিয়েছি। সুতরাং আমার কাছে বস্ত্র চাও, আমি তোমাদেরকে বস্ত্রদান করব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা রাতদিন গোনাহ্ করছ, আর আমি তোমাদের গোনাহ্ ক্ষমা করে দেই। সুতরাং আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা কখনোই আমার ক্ষতি করার সামর্থ রাখ না যে আমার ক্ষতি করবে আর তোমরা কখনোই আমার ভালো করার ক্ষমতা রাখ না যে আমার ভালো করবে।

হে আমার বান্দাগণ! তোমরা পূর্বাপর সকল মানুষ ও জিন যদি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মোত্তাকী ও পরহেযগার ব্যক্তির হৃদয়ের মত হয়ে যায়, তবে তা আমার রাজত্বে কিছুই বৃদ্ধি করবে না। আমার বান্দাগণ! তোমাদের পূর্বাপর সকল মানুষ ও জিন যদি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে পাপী ব্যক্তির হৃদয়ের মত হয়ে যায়, তবে তা আমার রাজত্বে কিছুই কমাতে পারবে না। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের পূর্বের ও তোমাদের পরের সকলে, তোমাদের সমস্ত মানুষ ও তোমাদের সমস্ত জিন যদি সবাই একই ময়দানে দাঁড়িয়ে আমার কাছে চায় এবং আমি সকলের চাওয়া পূরণ করে দেই তবে আমার নিকট যা আছে তাতে সমুদ্রে এক সুঁই রাখলে যতটা কম হয়ে যায় তা ব্যতীত আর কিছু কম হতে পারে না। হে আমার বান্দাগণ! আমি তোমাদের আমলকে (কাজকে) তোমাদের জন্য গণনা করে রাখি, আর আমি তার পুরোপুরি প্রতিফল দিয়ে দেব। সুতরাং যে ব্যক্তি উত্তম প্রতিফল পাবে তার আল্লাহর প্রশংসা করা উচিত, আর যে তার বিপরীত পাবে তার শুধু নিজেকেই ধিক্কার দেয়া উচিত।

" [মুসলিম ] 2. আবূ আব্বাস আব্দুল্লাহ্ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেছেন- একদিন আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পিছনে ছিলাম, তিনি আমাকে বললেন: "হে যুবক! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শেখাবো- আল্লাহকে সংরক্ষণ করবে তো তিনি তোমাকে সংরক্ষণ করবেন, আল্লাহকে স্মরণ করলে তাঁকে তোমার সামনেই পাবে। যখন কিছু চাইবে তো আল্লাহর কাছেই চাইবে; যখন সাহায্য চাইবে তো আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে। জেনে রাখ, সমস্ত মানুষ যদি তোমার কোন উপকার করতে চায় তবে আল্লাহ্ তোমার জন্য যা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, তা ব্যতীত আর কোন উপকার করতে পারবে না। আর যদি সমস্ত মানুষ তোমার কোন অনিষ্ট করতে চায় তবে আল্লাহ্ তোমার জন্য যা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তা ব্যতীত আর কোন অনিষ্ট করতে পারবে না। কলম তুলে নেয়া হয়েছে এবং পৃষ্ঠা শুকিয়ে গেছে।

"[তিরমিযী,আহমদ ] 3. আবূ হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর যতক্ষন না তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা গড়ে উঠবে ততক্ষন পর্যন্ত প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদের এমন একটি কাজ বলে দেব না, যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালোবাসতে লাগবে ? (তা হচ্ছে) তোমরা আপোসের মধ্যে সালাম প্রচার করো। [মুসলিম] রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) 'সালাম দেয়া' কে ইসলামের সর্বোত্তম কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন [সহীহ বোখারী ও মুসলিম] রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপর এক হাদিসে বলেন, লোকদের মধ্যে সবচেয়ে আল্লাহ্র নিকটবর্তী সেই, যে লোকদেরকে প্রথমে সালাম দেয়। [আবূ দাঊদ] 4. "যে বান্দাই অন্য বান্দার দোষ-ত্রুটি এ পার্থিব জগতে গোপন রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন" [মুসলিম,রিয়াদুস সালেহীন ] 5. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোন মুমিনের দুঃখ দূর করে দেয়, আল্লাহ্ কেয়ামতের দিন তার দুঃখ দূর করে দিবেন।

যে ব্যক্তি কোন বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির বিপদ দূর করে দেয়, আল্লাহ্ দুনিয়াতে ও আখেরাতে তার বিপদ দূর করে দিবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে, আল্লাহ্ দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। যে বান্দা আপন ভাইকে সাহায্য করবে, আল্লাহ্ সে বান্দাকে সাহায্য করবেন। যে ব্যক্তি জ্ঞান লাভের জন্য কোন রাস্তা গ্রহণ করে, তার অসীলায় আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দিবেন। যেসব লোক আল্লাহর ঘরসমূহের মধ্যে কোন ঘরে (অর্থাৎ মসজিদে) সমবেত হবে, কুরআন পড়বে, সকলে মিলিত হয়ে তার শিক্ষা নেবে ও দেবে, তাদের উপর অবশ্যই প্রশান্তি অবতীর্ণ হবে, রহমত তাদের ঢেকে নেবে, ফিরিশ্তাগণ তাদের ঘিরে থাকবে আর আল্লাহ্ তাদের কথা এমন সকলের মধ্যে উল্লেখ করবেন যারা তাঁর কাছে উপস্থিত।

যে ব্যক্তি তার আমলের কারণে পিছিয়ে পড়বে, তার বংশ পরিচয় তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না। [মুসলিম] 6. আবু হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেনঃ"যে ব্যক্তি আল্লাহকে ও আখেরাতকে বিশ্বাস করে, তার হয় উত্তম কথা বলা উচিত অথবা চুপ থাকা উচিত। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ও আখেরাতকে বিশ্বাস করে,আপন প্রতিবেশীর প্রতি তার সদয় হওয়া উচিত। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ও আখেরাতকে বিশ্বাস করে, আপন অতিথিকে তার সম্মান করা উচিত। "[বোখারী, মুসলিম ] 7. আবু হুরাইরা (রা)বলেন, রাসুল্লাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেনঃ প্রকৃত বলবান ও বীর সে নয়, যে শক্তিতে কাউকে হারিয়ে দেয়।

আসল বীর হলো সেই ব্যক্তি যে রাগের সময় নিজকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। – [বোখারী ] 8. সাওবান থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল্লাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামাজ শেষ করে তিনবার ইসতিগফার করতেন এবং বলতেন "আল্লাহুম্মা আন্তাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারাকতা যাল-জালালী ওয়াল ইকরাম"-"হে আল্লাহ্ ! তুমিই শান্তি, কল্যাণময় এবং সন্মান ও প্রতিপত্তির অধিকারী"। হাদিস বর্ণনাকারী ওয়ালীদ বলেন, আমি আওযায়ী কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুল্লাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে ইসতিগফার করতেন ? তিনি বললেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন, আসতাগফিরুল্লাহ্- আসতাগফিরুল্লাহ্। [মুসলিম ] 9. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি স্বপ্নে দেখেছি, আমার মাথা কেটে ফেলা হয়েছে।

এ কথা শুনে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে ফেললেন। আর বললেন : ঘুমের মধ্যে শয়তান তোমাদের কারো সাথে যদি দুষ্টুমি করে, তবে তা মানুষের কাছে বলবে না। [ মুসলিম ] 10. নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐসব পুরুষকে লা'নত (অভিশাপ) করেছেন যারা নারীর বেশ ধারণ করে আর ঐসব নারীকে যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে। [বোখারী ] 11. বুরায়দা (রা) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, অন্ধকারে পায়ে হেঁটে মসজিদের দিকে আগমনকারীদের কে কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ আলোর সুখবর দাও। [আবূ দাঊদ, তিরমিযী] 12. নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কতিপয় স্ত্রীর কাছে থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ভবিষ্যৎ বক্তার কাছে যায় এবং তাকে কোন বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করে, তার চল্লিশ দিনের নামায কবুল হয় না।

[মুসলিম] 13. আবু সাঈদ খুদরী (রা) বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্র কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ সেই ব্যক্তি হবে, যে স্ত্রীর সঙ্গে মিলন করে এবং স্ত্রী তার সঙ্গে মিলন করে, অতঃপর সে তার (স্ত্রী'র) গোপন কথা প্রকাশ করে দেয়। [মুসলিম] 14. রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি আমার (সন্তুষ্টির) জন্য তার দু'চোয়ালের মধ্যবর্তী বস্তু (জিহ্বা) এবং দু'রানের মধ্যবর্তী বস্তু (লজ্জাস্থান) কে হিফাজত করবে আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করি। [বোখারী] 15. আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সূর্য উদিত হওয়া দিনগুলোর মধ্যে জুমুআর দিন সর্বোত্তম। এই দিন আদম (আ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিন তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এই দিন তা থেকে তাঁকে বের করে দেওয়া হয়েছে, জুমুআর দিনই কিয়ামত সংঘটিত হবে। [মুসলিম] 16. রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, জুমু'আর দিন তোমরা আমার উপর বেশী বেশী দরূদ পড়।

কেননা তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়। [নাসাঈ] 17. আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন: যে ব্যক্তি দিনে এক শতবার ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি (আমি প্রশংসার সাথে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি)’ পড়ে, তার গুনাহসমূহ সমুদ্রের ফেনারাশির সমান হলেও মাফ করে দেয়া হয়। [বোখারী] 18. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দু’ শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামী হবে- যারা গরুর লেজ সদৃশ বেত দ্বারা মানুষকে প্রহার করে এবং যে সব নারী এত পাতলা পোশাক পরিধান করে যে তার ভেতর দিয়ে শরীরের অংশ দেখা যায় এবং অহংকারীর বেশে হেলে দুলে পথ চলে। এ নারী জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না, যা বহুদূর থেকে পাওয়া যায়।

” [মুসলিম] 19. রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, 'তোমরা বেশী বেশী করে কুরআন পাঠ কর,কেননা কাল ক্বিয়ামতের দিন কুরআন তার পাঠকের জন্য সুপারিশ করবে'। [ মুসলিম ] 20. হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করিম (সা) বলেনঃ বান্দার প্রতিদিন ভোর হওয়া মাত্রই দুইজন ফিরিস্তা অবতীর্ন হন। তাদের একজন বলেন, "হে আল্লাহ! খরচকারীকে তার বিনিময় দান করুন। "অপরজন বলেন, "হে আল্লাহ! কৃপণের ধন ধ্বংস করে দিন।

"[বোখারী , মুসলিম ] 21. আবু হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেনঃ "অনর্থক অপ্রয়োজনীয় বিষয় ত্যাগ করাই একজন ব্যক্তির উত্তম ইসলাম। " [ তিরমিযী, ইবনে মাজাহ ] 22. হযরত ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (স) বলেছেনঃ "তোমরা তোমাদের কাপড়গুলি থেকে সাদা কাপড় পরিধান কর। কারণ তোমাদের কাপড়গুলির মধ্যে এটাই সর্বোত্তম। আর সাদা কাপড়েই তোমাদের মৃতদেহ দাফন দিয়ো। " [আবু দাঊদ , তিরমিযী ] 23. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:“আমি কি তোমাদের এমন জিনিসের খবর দেব না যার দ্বারা আল্লাহ্ গোনাহ্ মাফ করেন এবং তোমাদের মর্যাদা উন্নত হয়? সাহাবাগণ বললেন: অবশ্যই বলুন হে আল্লাহর রাসূল!তিনি বললেন: তা হচ্ছে- কষ্টের সময়ে সুন্দরভাবে অযূ করা, মসজিদের দিকে বেশী বেশী পদচারণা করা এবং এক নামাযের পর অন্য নামাযের জন্য অপেক্ষা করা।

আর এ হলো জিহাদে প্রতিরক্ষার কাজের ন্যায়। ” [মুসলিম ] 24. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ "অশোভনীয় কাজ পরিহার করা মানুষের ইসলামের সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত। "[তিরমিযী ] 25. আবু মুহাম্মাদ হাসান ইবনে আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ কথাগুলো মুখস্থ করেছিঃ "যা তোমাকে সন্দেহে ফেলে দেয় তা ছেড়ে দিয়ে যা তোমাকে সন্দেহে ফেলে না তা গ্রহণ কর। সত্যনিষ্ঠা অবশ্যই প্রশান্তিদায়ক, আর মিথ্যা সন্দেহ সৃষ্টিকারী। " [তিরমিযী] 26. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,"আল্লাহ তাআলা (বান্দার ব্যাপারে) আত্মমর্যাদা বোধ করেন।

মানুষের জন্য আল্লাহ যা হারাম করেছেন যখন সে তাতে লিপ্ত হয় তখনই আল্লাহর আত্মমর্যাদা জেগে উঠে। " [বোখারী ও মুসলিম] 27. "আল্লাহর স্মরণ ও তার সম্পর্কে কিছু বলা ছাড়া কথা বাড়িও না, কেননা আল্লাহর স্মরণ ও তার সম্পর্কে কিছু কথা বলা ছাড়া কথা বাড়ানো মনকে কঠিন বানিয়ে দেয়। মনে রেখো যার মন কঠিন, সেই আল্লাহর কাছ থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থিত" -- [তিরমিযী, বায়হাকী] 28. হযরত আবূ হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, মহানবী (স) ইরশাদ করেছেন-যখন মানুষ মারা যায়, তখন মানুষের আমলের (সাওয়াবের) ধারা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিন ধরনের আমলের সাওয়াব সদা-সর্বদা অব্যাহত থাকে। ১.সাদকায়ে জারিয়াহ ২. এমন ইলম,(বিদ্যা) যার দ্বারা মানুষের উপকার সাধিত হয় এবং ৩.সুসন্তান, যে তার পিতা-মাতার জন্য দু’আ করে।

[তিরমিযী, নাসায়ী ] 29. আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, চারটি গুণ যার মধ্যে একত্র হবে, সে সত্যিকার মুনাফেক। আর যার মধ্যে এ তিনটি গুনের যে কোন একটি থাকবে সে যতদিন পর্যন্ত তা পরিহার না করবে তার মধ্যে নেফাকের একটি গুণ অবশিষ্ট থাকল। যখন কথা বলে মিথ্যা বলে। আর যখন কোন বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেয়, তখন তা লঙ্ঘন করে,আর যখন ওয়াদা করে তা খিলাফ করে,যখন ঝগড়া-বিবাদ করে, সে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করে। [বোখারী ,মুসলিম ] 30. আতা' বলেন আমি ইবনে আনাস (রা) কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর রাসুল (সা) একদিন এক আন্সারি মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেন (ইবনে আব্বাস (রা) নাম বলেছিলেন কিন্তু আতা' ভুলে গিয়েছিলেন), "কি তোমাকে আমাদের সাথে হাজ্জ করতে বাধা দিল?" আনসারি মহিলা উত্তর দিলেন, "আমাদের একটা উট আছে, অমুকের বাবা ও সে তা চালাত এবং তা আমাদেরকে সেচ দেওয়ার জন্য রেখে গিয়েছিল"।

রাসুল (সা) বলেন, "উমরাহ আদায় কর রমাদান মাসে, কারণ রমাদানের উমরাহ সওয়াবের দিক থেকে হাজ্জ এর সমান" [বোখারী ] 31. হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, "একটি লোক অপর একটি গ্রামে তার ভাইকে দেখতে গেল। আল্লাহ তায়ালা একজন ফেরেশতাকে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি লোকটির জন্যে রাস্তায় অপেক্ষা করতে থাকলেন। যখন লোকটি আসল, তখন ফেরেশতা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, 'তুমি কোথায় যেতে মনস্থির করেছ?' লোকটি বলল, 'আমি আমার এক ভাইকে দেখতে যাচ্ছি যে এই গ্রামে থাকে'। ফেরেশতা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ' তুমি কি তার প্রতি কোন অনুগ্রহ করেছ(যার কারণে তুমি প্রতিদান আশা কর)?' ।

সে বলল, 'না। আমি কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যেই তাকে ভালোবাসি। ' ফেরেশতা তাকে বললেন, 'আমি আল্লাহর পক্ষ হতে তোমার নিকট প্রেরিত একজন দূত, তিনি(আল্লাহ) তোমাকে ভালোবাসেন যেরকম তুমি তোমার ভাইকে তাঁর জন্যে ভালোবাসো, আমি তোমাকে এটা বলার জন্যই প্রেরিত হয়েছি। " [মুসলিম ] 32. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ "আল্লাহর শপথ! আমি একদিনে সত্তরবারের অধিক তওবা করি এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি। " [বোখারী ] 33. "যে রমজানে ঈমান এবং এহতেসাবের সাথে সিয়াম পালন করবে, আল্লাহ তার পূর্বের গোনাহ মাফ করে দেবেন।

" [বোখারী,মুসলিম ] 34. আবু হুরায়রা রা. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় দুটি জিনিস খরচ করবে তাকে জান্নাতের দরজাসমূহ দিয়ে ডাকা হবে এই বলে: হে আব্দুল্লাহ ইহা তোমার জন্য কল্যাণকর। যে নামাযী হবে তাকে নামাযের দরজা দিয়ে ডাকা হবে এবং যে জিহাদকারী হবে তাকে জিহাদের দরজা দিয়ে ডাকা হবে আর যে রোজাদার হবে তাকে রাইয়ান দরজা দিয়ে ডাকা হবে আর যে দানশীল হবে তাকে দানের দরজা দিয়ে ডাকা হবে। আবু বকর রা. বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আমার মাথা পিতা আপনার প্রতি উৎসর্গিত হোক তার কি হবে যাকে অবশ্যই এই সমস্ত দরজাসমূহ থেকে এক যোগে ডাকা হবে? কাহাকেও কি এই সমস্ত দরজা থেকে এক যুগে ডাকা হবে? আল্লাহর রাসূল বললেন: হ্যাঁ আর আমার প্রত্যাশা তুমি তাদের মধ্য থেকে হবে। [বোখারী , মুসলিম ] 35. আবূ সাঈদ আলখুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত,তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাআহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: “যে বান্দা আল্লাহর রাস্তায় একদিন মাত্র রোযা রাখবে সেই বান্দার চেহারাকে আল্লাহ্ (ঐ রোযার বিনিময়ে) জাহান্নাম থেকে সত্তর বছরের পথ পরিমাণ দূরত্বে রাখবেন। ” [বোখারী , মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ] 36. রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি জুমু'আর দিনে মাথা ও শরীর উত্তমরূপে ধুয়ে গোসল করে জুমু'আর সময়ের প্রথম সময়েই মসজিদে যায়, কোন বাহনে আরোহণ না করে পায়ে হেঁটেই মসজিদে যায় এবং ইমামের নিকটবর্তী হয়ে বসে, নিশ্চুপ হয়ে খুতবা শুনে ও কোন অনর্থক কাজ না করে, তার জন্য প্রতি পদক্ষেপে এক বছর আমল করার সওয়াব লেখা হয়।

[নাসাঈ ] 37. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,তিনি বলেছেন: “যখন সালাত আরম্ভ হয়ে যায়, তখন দৌড়ে গিয়ে তাতে শামিল হয়ো না । বরং ধীরস্থিরভাবে হেঁটে এসে তাতে শামিল হও। যতটুকু পাও আদায় করে নাও এবং যতটুকু ছুটে যায় পরে পূরণ করে নাও। ”[বোখারী, মুসলিম ] 38. যে কোন মুসলমান কোন বৃক্ষ রোপণ করল, অত:পর উহা হতে কোন পশু বা মানুষ কিছু অংশ খেল, তাতে ঐ ব্যক্তি দান-খয়রাত করার সওয়াব লাভ করবে।

[বোখারী ] 39. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ "দোযখকে লোভনীয় জিনিস দিয়ে আড়াল করে রাখা হয়েছে এবং জান্নাতকে দুঃখ-কষ্টের আড়ালে রাখা হয়েছে। " [বোখারী ও মুসলিম ] 40. যদি তোমাদের কারো বাড়ির দরজায় একটি পুকুর থাকে আর তাতে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে, তার শরীরে কোন ময়লা আবর্জনা অবশিষ্ট থাকে ? সাহাবিরা উত্তরে বললেন, না। রাসূল সা. বলেন-অনুরূপ ভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ; আল্লাহ তাআলা দৈনিক পাঁচবার সালাত আদায় করা দ্বারা গুণাহ-পাপাচারগুলো ধুয়ে মুছে ফেলেন। [মুসলিম ] 41. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ বলেন, "যখন আমার বান্দার কোন প্রিয়জনের মৃত্যু হয় এবং সে এতে ধৈর্য ও সংযম অবলম্বন করে, তখন জন্নাত ব্যতীত তাকে দেয়ার মত আর কোন প্রতিদান আমার কাছে থাকে না। " [বোখারী] 42. রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা প্রতি রাতের শেষাংশে – শেষ তৃতীয়াংশে- নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হয়ে আহবান জানাতে থাকেন ‘এমন কেউ কি আছে যে আমাকে ডাকবে আর আমি তার ডাকে সাড়া দেব? এমন কেউ কি আছে যে আমার কাছে কিছু চাইবে আর আমি তাকে দেব? আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করে দেব?” [বোখারী, মুসলিম ] 43. হারিসা ইবনে ওহব(রা থেকে বর্ণিত| তিনি বলেন, আমি নবী(সাকে বলতে শুনেছি: “আমি কি তোমাদের দোজখীদের বিষয়ে জানাব না? তারা হলো : প্রত্যেক অহংকারী, সীমালংঘনকারী, অবিনয়ী ও উদ্ধত লোক|” [বোখারী, মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীন ] 44. আবূ যার জুনদুব ইবন জুনাদাহ্ এবং আবূ আব্দুর রহমান মু'আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা হতে বর্ণিত আছে, তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:তুমি যেখানে যে অবস্থায় থাক না কেন আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রত্যেক মন্দ কাজের পর ভাল কাজ কর,যা তাকে মুছে দেবে; আর মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহার কর।

[তিরমিযী ] 45. আবূ হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন-রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:পরস্পর হিংসা করো না, একে অপরের জন্য নিলাম ডেকে দাম বাড়াবে না, পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ করবে, একে অপর থেকে আলাদা হয়ে যেও না,একজনের ক্রয়ের উপর অন্যজন ক্রয় করো না। হে আল্লাহর বান্দাগণ! পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও। মুসলিম মুসলিমের ভাই, সে তার উপর যুলুম করে না এবং তাকে সঙ্গীহীন ও সহায়হীনভাবে ছেড়ে দেয় না। সে তার কাছে মিথ্যা বলে না ও তাকে অপমান করে না। তাকওয়া হচ্ছে- এখানে, তিনি নিজের বুকের দিকে তিনবার ইশারা করেন।

কোন মানুষের জন্য এতটুকু মন্দ যথেষ্ট যে, সে আপন মুসলিম ভাইকে নীচ ও হীন মনে করে। এক মুসলিমের রক্ত, সম্পদ ও মান-সম্মান অন্য মুসলিমের জন্য হারাম। [মুসলিম ] 46. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সাঃ) বলেছেন:“ঐ সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হয় না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা ও তার সন্তানের চেয়েও প্রিয়তর হই”[বোখারী: ১৪] 47. আনাস(রা থেকে বর্ণিত, নবী(সা বলেন, মৃত ব্যক্তিকে তিনটি জিনিস অনুসরণ করে: তার পরিবার, তার মাল এবং তার আমল| তারপর দু’টি ফিরে আসে, আর একটি রয়ে যায়| ফিরে আসে তার পরিবার ও মাল, আর রয়ে যায় তার আমল|[বোখারী, মুসলিম. রিয়াদুস সলিহীন ] 48. আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন:যে ব্যক্তি রোজা না রেখে মারা গেল, তার পক্ষ থেকে তার অভিভাবক রোযা রাখবে। [বোখারী , মুসলিম ] 49. হযরত আবু সাইদ আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল (রা) বর্ণনা করেনঃ "রাসুল (সা) শাহাদাত আঙ্গুল ও বৃধাঙ্গুলের মাঝখানে পাথর খন্ড রেখে নিক্ষেপ করতে বারণ করেছেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন এ কাজে কোনো শিকারও মারা পড়ে না, শত্রুও নিপাত হয় না; বরং এটা চোখ ফুঁড়ে দেয় এবং দাঁত ভেঙ্গে দেয়। "[বোখারী ও মুসলিম ] 50. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারা ইবনে ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেন: “যখন তুমি তোমার শয্যা গ্রহণের ইচ্ছা করবে, তখন সালাতের ন্যায় অযূ করে ডান কাত হয়ে শয়ন করবে। ”[বোখারী,মুসলিম ] 51. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ "তোমরা ক্ষণকাল বিলম্ব না করে সৎকাজের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে যাও। কারণ, শীঘ্রই অন্ধকার রাতের অংশের মত বিপদ-বিশৃঙ্খলার বিস্তার ঘটবে। তখন মানুষ সকালবেলা মুমিন থাকবে, সন্ধ্যায় কাফের হয়ে যাবে, আবার সন্ধ্যায় মুমিন থাকবে, সকালে কাফের হয়ে যাবে।

সে তার দ্বীনকে পার্থিব স্বার্থের বদলে বিক্রয় করবে। " [মুসলিম ] 52. "তোমাদের মধ্যে কেউ কোন অন্যায় দেখলে তা সে তার হাত দ্বারা প্রতিহত করবে, যদি তা সম্ভব না হয় তবে মুখ দ্বারা প্রতিহত করবে, তাও যদি না করতে পারে তাহলে অন্তর দিয়ে তা ঘৃণা করবে। আর এ হচ্ছে (অন্তর দিয়ে প্রতিহত করা) দুর্বলতম ঈমান। " [মুসলিম ] 53. হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :৭ শ্রেণীর লোকদের মহান আল্লাহ সেদিন তাঁর সুশীতল ছায়াতলে স্থান দিবেন, যেদিন তাঁর ছাড়া অন্য কোন ছায়াই থাকবে না।

তাঁরা হলেন  ন্যায়বিচারক শাসক বা নেতা  মহান আল্লাহর ইবাদতে মশগুল যুবক  মসজিদের সাথে সম্পর্কযুক্ত হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তি  যে দুজন লোক একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরস্পর বন্ধুত্ব করে এবং এ জন্যেই আবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়  এরুপ ব্যক্তি যাকে কোনো অভিজাত পরিবারের সুন্দরী নারী খারাপ কাজে আহবান করেছে, কিন্তু সে বলে দিল, আমি আল্লাহকে ভয় করি  যে ব্যক্তি এতো গোপনভাবে দান-খয়রাত করে যে, তার ডান হাত কি দান করলো, বাঁ হাতেও তা জানতে পারলো না  এরুপ ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহর যিকির করে এবং দু’চোখের পানি ফেলে (কাঁদে)। [বোখারী ও মুসলিম] 54. সাহল বিন সা’দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমি ও ইয়াতীমের তত্ত্বাবধানকারী এভাবে একত্রে থাকব। ” এ বলে তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে দেখান এবং দু’টোর মাঝখানে ফাঁক করেন। [বোখারী ] 55. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: কেয়ামতের দিন লোকদেরকে তিনটি দলে বিভক্ত করে একত্রিত করা হবে। (প্রথম দল- আল্লাহর রহমতের) আশাবাদী এবং (তাঁর আযাবের) ভয়ে ভীত।

(দ্বিতীয় দল-সেসব লোক) যাদের দু’জন থাকবে এক উটের উপর, কোন উটের উপর তিনজন, কোনটির উপর চারজন, আর কোনটির উপর সওয়ার হবে দশ জন। (তৃতীয় দল হবে) অবশিষ্টরা, আগুন যাদেরকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে। তারা যেখানে শয়ন করবে আগুনও তাদের সাথে থাকবে, তারা যেখানে রাত্রি যাপন করবে আগুন তাদের সাথে রাত কাটাবে, যেখানে তাদের সকাল হবে আগুন তাদের সাথে থাকবে, আর যেখানে তাদের সন্ধ্যা হবে একই সাথে আগুনও তাদের সাথে সাথে থাকবে। ” [বোখারী ] 56. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন: “কোন ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যায় যতবার মসজিদে যাতায়াত করে, আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতে ততবারে মেহমানদারীর সামগ্রী তৈরী করে রাখেন। ” [বোখারী ] 57. নু’মান ইবনে বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত।

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ “কেয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্যে সবচাইতে লঘু শাস্তি প্রাপ্ত ব্যক্তির শাস্তি হবে এই যে, তার দুই পায়ের তালুর নিচে আগুনের দু’টি অংগার রাখা হবে এবং তাতে তার মস্তিষ্ক সিদ্ধ হতে থাকবে। সে মনে করবে, তার চাইতে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি আর কেউ হয়নি। অথচ সে-ই জাহান্নামীদের মধ্যে সবচাইতে হালকা/কম শাস্তিপ্রাপ্ত। ” [ইমাম বোখারী: ৬৫৬২ ও ইমাম মুসলিম: ২১৩ এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন) 58. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ্ বলেন: কেয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির প্রতিপক্ষ হব। যে ব্যক্তি আমার নামে ওয়াদা ও চুক্তি করে তা ভঙ্গ করেছে, যে ব্যক্তি মুক্ত-স্বাধীন মানুষ বিক্রি করে তার মূল্য ভক্ষণ করেছে এবং যে ব্যক্তি কাউকে মজুর নিয়োগ করে পুরোপুরি কাজ আদায় করে নিয়েছে কিন্তু তাকে মজুরী প্রদান করেনি।

” [বোখারী ] 59. আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি হেবা (দান, উপহার) করে তা ফেরত নেয় সে এমন কুকুরের সমতুল্য যে বমি করে তা পুনরায় গলাধঃকরণ করে। ” [ বোখারী , মুসলিম ] 60. আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সাদকা'র কারণে সম্পদ হ্রাস পায় না, ক্ষমা দ্বারা আল্লাহ্ তাআলা ব্যক্তির সন্মানই বৃদ্ধি করে থাকেন, আল্লাহ্র জন্য যদি কেউ বিনয় প্রকাশ করে থাকে তবে আল্লাহ্ তাআলা অবশ্যই তার মর্যাদা সমুচ্চ করেন। [তিরমিযী ] 61. আবূ বাকারাহ্ নুফাই’ বিন হারেস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় ও মারাত্মক গোনাহ্ সম্পর্কে বলবো না? এ কথাটা তিনি তিনবার বললেন। আমরা বললাম: অবশ্যই বলুন, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন: আল্লাহর সাথে শির্ক করা, পিতামাতার অবাধ্যতা; তিনি হেলান দিয়ে ছিলেন, অতঃপর (সোজা হয়ে) বসে বললেন: সাবধান! মিথ্যা কথা বলা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।

এ কথাটি তিনি বার বার বলতে ছিলেন, এমনকি আমরা বলতে লাগলাম- আহা! যদি তিনি থেমে যেতেন। ”[ বোখারী,মুসলিম ] 62. আবূ হুরায়রা (রা) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এমন এক যুগ আসবে, যখন মানুষ পরোয়া করবেনা যে, সে কোথা থেকে অর্জন করল, হালাল না হারাম থেকে [বোখারী] 63. রাসূল (সঃ) এরশাদ করেন, যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে এবং রমযানের রোযা রাখবে স্বীয় গুপ্তস্থানকে হেফাজত করবে ( পর্দা রক্ষা করে এবং ব্যভিচার থেকে বিরত থেকে) আর স্বামীর আনুগত্য করবে। এমন নারীর জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে, যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা মত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। [ তিরমিযী ] 64. একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি শুষ্ক গাছের নিচে উপবেশন করেন। ঐ গাছের একটি শাখা ধরে নাড়া দিলে ওর শুষ্ক পাতাগুলি ঝরে পড়ে।

তখন তিনি বলেন, "দেখো, এভাবেই 'লা ইলাহা ইল্লালাহ', 'আল্লাহু আকবার', 'সুবহানাল্লাহ' এবং 'আলহামদুলিল্লাহ' বলার পর মানুষের পাপরাশি ঝরে পড়ে। হে আবু দারদা ! (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এগুলো তুমি পাঠ করতে থাকো ঐ সময় আসার পূর্ব যখন তুমি এগুলি পাঠ করতে পারবে না। এটা হচ্ছে স্থায়ী সৎ কর্ম এবং এটাই হচ্ছে জান্নাতের ধন ভাণ্ডার। " এটা শুনে হযরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহুর এই অবস্থা হয়েছিল যে, যখনই তিনি এই হাদীসটি বর্ণনা করতেন, তখনই বলতেনঃ "আল্লাহর কসম ! আমি এই কালেমাগুলি পাঠ করতেই থাকবো এবং কখনো এগুলো পাঠ করা হতে যবানকে বন্ধ করবো না, যদিও মানুষ আমাকে পাগল বলতে থাকে। " [ইবনে মাজাহ ] 65. যে লোক রোগ-অসুখ ও শরীয়তসম্মত ওযর ছাড়া রমযান মাসের একটি রোজাও ত্যাগ করবে, সে যদি তার পরিবর্তে সারা জীবন রোযা রাখে, তা হলেও সে যা হারিয়েছে তা কখনো পরিপূর্ণ হবে না।

[তিরমিযী, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ] ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।