আমরা বন্ধুরা বসে আড্ডা দিচ্ছি। এমন সময় আমাদের এক বন্ধু এসে বলে,
“দোস্তরা তোদের সাথে অনেক ভুল করেছি, দয়া করে তোরা আমাকে ক্ষমা করে দিস। ”
তার চেহারায় এক ধরনের অসহায়ের ছায়া দেখতে পেলাম। আমরা ভাবলাম রমজান মাস, হয়তো বা সে তাবলীগে যোগ দিয়েছে। ভাল নিষ্পাপ হতে চাচ্ছে।
আমরা বললাম, “আচ্ছা ঠিক আছে। মাফ করব। তবে একটা ইফতার পার্টি দিতে হবে। কি বলিস দোস্ত। ”
আমার এক বন্ধু বলে উঠল, “মামা কাহিনী কি?”
বন্ধু বলল, “আর বলিস না মামা, girlfriend এর যন্তণায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।
”
তার জ্বালায় আমি আত্নহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আরেক বন্ধু বলল- না মামা করিস না। তুই আমাদের একটাই মামা। তুই চলে গেলে কাকে মামা বলে ডাকব?
সবাই আমরা তাকে জড়িয়ে ধরলাম। বললাম তুই খুলে বল তোর কি হয়েছে?
কি হয়নি সেটাই বল, মান সম্মান যা ছিল তা সব চলে গিয়েছে।
সিমা আমাকে পার্কে সবার সামনে কান ধরে উঠ-বস করায়ছে। সে লজ্জাতে আমি বাইরে মুখ দেখাতে পারছিনা। তোরা আমার জানের টুকরা তাই তোদের সামনে আসলাম। মাফ করে দিস। তারপর সে ব্যাগ থেকে বিষের বোতল দড়ি বের করে।
এই দেখ মামা বিষের বোতল আর দড়ি, দড়ি দিয়ে ঝুলমু- আর বিষ খেয়ে মরে যামু।
আমরা তারে বললাম, মামা খোলাসা করে বল-
তারপর তার কাহিনী শুরু করল-
মামা যখন ক্লাশ ৮ পড়ি, তখন সান্তারে আমার খুব পছন্দ হইত। কিন্তু কিছুই করতে পারতাম না । কারণ-পাতলা, শুকনা ছিলাম-তো, স্বাস্থ্যবান ছেলেদের সাথে টেক্কা দিতে পারতাম না। দেহের জোর দিয়া তারা সান্তার পিছনে ঘুরত আর আমি মনের জোর দিয়ে ঘুরতাম।
কিছুইতো করতে পারতাম না তোরাতো জানিস।
শুধু একটা কাজ করতে পারতাম, ঘরের ছাদে তাকাইয়া থেকে শুধু তার চিন্তা করতে পারতাম। শুধু চিন্তা শুধু চিন্তাই থাকলো, কিন্তু সান্তার সাথে প্রেম নামে রোমান্টিক ভাবটা হলো না। যাই হোক মামা স্কুলের প্রেম সেখানে কবর দিয়ে দিলাম।
গোন্ডেন A+ নিয়ে বের হলাম।
কলেজে ভর্তি হলাম। ভাবলাম সবাইতো কলেজে প্রেম শুরু করে, আমিও শুরু করতে চাইলাম।
দুই সপ্তাহ যেতে না যেতে দেখলাম জোড়ায় জোড়ায় সবাই চলা ফেলা করে। আর যেটাই হবার ছিল সেটাই হলো- আমার কলিজার মধ্যে আঘাত লাগলো।
কয়েকদিন পরে ‘দিনা’ নামে মেয়ের পেছনে ঘুরতে লাগলাম।
দামি দামি ঈদ কার্ড দিতাম। তোদেরতো এখনও সেই ২ টাকার ঈদ কার্ড ছাড়া কিছুই দেই নাই। তারপরেও তোদের সাথে আমার ভালবাসা কমে নি। কিন্তু সেই শালীর সাথে আমার কুসুম কুসুম প্রেমও হলো না। হইলো কি রসায়নের আসগারের পোলার লগে প্রেম করে এক সময় ফুইট্টা গেল।
দুই দিন সিগারেট খাইলাম আর কাশলাম, আর বাপের কাছে ধরা খাইলাম আর তোরা তো জানিস এক মাস ধরে আমার বাপ আমাকে কি করছে। যাই হোক কলেজ থেকেও বের হলাম গোন্ডেন A+ নিয়া। কোচিং করতে গেলাম সেখানে এক মাইয়া আমারে দেখে পছন্দ করছে। দুই দিন ঘুরলাম তার সাথে এক সাথে প্রাইভেট,কোচিং করতাম- টি-বাদে ঘুরা আর একসাথে রিক্সাই একটু রোমান্টিক ভাব নিয়ে একসাথে চলা। তবে ভাড়াটা আমাকে বহন করতাম।
কারণ নতুন জীবনে প্রেম বলে কথা। কিন্তু বেশ কিছু দিন যেতে না যেতে জানলাম তার নাকি বয়ফ্রেন্ড আছে, মেডিক্যাল স্টুডেন্ট। ভাল আমি আর কি করব। তারপর সেখানের প্রেম সেখানেই শেষ। বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে মনে করলাম ব্যাচমেটের সাথে প্রেম করব।
তুলি নামে এক মেয়ে কে খুব পছন্দ হলো- তার হাসি দেখে আমার রাতে আর ঘুম আসেনা। নতুন নতুন পোশাক-আসাক কিনলাম, মাস না যেতে বাবার কাছে টাকা নিতাম। কপালের কি দোষ এক সিনিয়র ভাই তার সাথে প্রেম শুরু করল। আমারতো আবার মন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। এক বছর আগের মত বিরহ মন নিয়ে থাকলাম।
ভাবলাম আর জীবনে প্রেমই করবো না। কিন্তু একটা ঘটনা হলো কি জানিস- এক সিনিয়র ভাই যাওয়ার আগে তার বোনের দেখা-শোনার দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। বয়সে মেয়েটি জুনিয়র। তার দেখা শোনা করতে করতে চোখে চোখে কথা হলো, মন দেয়া নেয়া হলো,তারপর তোমরা জানলা মেয়েটির নাম সিমা,আমার girlfriend, সেদিন পার্কে নিয়ে যেয়ে আমাকে সবার সামনে কান ধরে উঠ-বস করালো, তোরাই বল এই লজ্জা কোথায় রাখি।
পরে পরে তাকে মোবাইল করে বললাম-তোমার সাথে আমার সম্পর্ক রাখা সম্ভব না।
তারপর সে আমাকে উত্তরে বলে- তুমি যদি আমার সাথে সম্পর্ক না রাখো, তাহলে আমি বিষ খেয়ে আত্নহত্যা করব। আর চিরকুটে তোমার নামটা লিখে যাবো। বুঝতেই পারতেছো কি হবে ?
আমিতো পুরা থো-মেরে গেলাম। ভাবলাম আমর কি হবে রে। আমার কান্না চলে আসল।
এটা তো পুরাই ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল।
সারা রাত চিন্তা করতে করতে ভাবলাম বিষ খাবো না গলায় দড়ি দেবো। কিন্তু তোদের চেহারাটা ভেসে উঠলো। তাই তোদের কাছে আসলাম।
কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করলাম।
ঠিক সেই সময় বন্ধুটির ছোট ভাই আসলো । আমাদের সালাম দিয়ে তার ভাইকে বলল- ভাইয়া আব্বা যে- তোমাকে দড়ি ও আম গাছে দেয়ার জন্য ঔষুধ কিনতে বলল- কিনেছো?
তার পর আমাদের আর কিছুই বলার নাই। তবে হ্যা- girlfriend এর জন্য মাঝে মাঝে আত্নহত্যা করতে ইচ্ছা হয়।
আমাদের দেশে অনেক ছেলে শুধু মাত্র girlfriend এর কারণে মাদকাসক্ত হয়। মাঝে মাঝে দুই-একটা আত্নহত্যা করে।
girlfriend কি আমাদের এতই আপন, যে তাদের জন্য আমাদের খারাপ পথ বেছে নিতে হবে?
এটা কি পুরুষ নির্যাতন নয়? এর অভিযোগ কার কাছে দিব? কে শুনবে এসব সরল মনের অসহায় ছেলেদের কথা?
আপনাদের কাছে প্রশ্ন রাখলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।