আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট ঃ বেলা দুইটায়ই কাউন্টারে ‘টিকিট নাই’ সাইনবোর্ড

বেলা দুইটা। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের অগ্রিম টিকিটের কাউন্টারগুলোতে ঝুলছে ‘টিকিট নাই’ সাইনবোর্ড। কাউন্টারগুলোর সামনে তখনো টিকিট না পাওয়া অনেক মানুষের ভিড়; যাঁদের অনেকে এসে সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেহিরর পর। ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির দ্বিতীয় দিন গতকাল সোমবারের দৃশ্য এটি। গতকাল বিক্রি হয় ২৭ আগস্টের বিভিন্ন ট্রেনের প্রায় ১৫ হাজার টিকিট।

অধিকাংশ কাউন্টারেই টিকিট শেষ হয় বেলা একটার মধ্যে। তাই দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও টিকিট না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে। কেউ বা ফিরে গেছেন আজ মঙ্গলবার টিকিট পাওয়ার চেষ্টার আশা নিয়ে। বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, সড়ক-মহাসড়কের বেহাল অবস্থার কারণে এবার রেলের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়েছে। অগ্রিম টিকিটের চাহিদা সাধারণ সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ।

রেলে জনবল-সংকটের কারণে অগ্রিম টিকিট বিক্রির জন্য স্বাভাবিক সময়ের টিকিট বিক্রির কাজ কিছুটা অগোছালো হয়ে পড়েছে। গতকাল সকাল নয়টায় অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। তখনই প্রতিটি কাউন্টারের সামনে টিকিট-প্রত্যাশীদের দুটি করে সারির প্রান্ত রাস্তায় চলে গেছে। সারিতে দাঁড়ানো মানুষের চার ভাগের এক ভাগ ছিলেন ভাগ্যবান, যাঁরা টিকিট পেয়েছেন। তবে তাঁদেরও কেউ কেউ চাহিদার পুরো টিকিট পাননি।

এঁদের একজন মো. মহিউদ্দিন। চট্টগ্রামগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেসের আটটি টিকিট কিনতে কলেজপড়ুয়া ছেলে সফিউদ্দিনকে নিয়ে সেহিরর সময় থেকে সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। কারণ, একজন সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কিনতে পারবেন। কাউন্টার বন্ধ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে মহিউদ্দিন তিনটি টিকিট পান। এর পরই টিকিট শেষ।

পেছনে দাঁড়ানো ছেলে টিকিট পায়নি। মহিউদ্দিন আক্ষেপ করে বললেন, এবার আর পুরো পরিবারের একসঙ্গে যাওয়া হবে না। তাঁর কথা শুনে ওই তিনটি টিকিট দ্বিগুণ দামে কিনতে জটলা লেগে যায় সেখানে। টিকিট নেওয়ার জন্য কারও কারও হাত চলে যায় মহিউদ্দিনের পকেটে। অনেক কষ্টে এক হাতের মুঠোয় টিকিটগুলো এবং অন্য হাতে বাবার হাত ধরে ভিড় ঠেলে বেরিয়ে যান সফিউদ্দিন।

সেহিরর পর থেকে সারিতে দাঁড়িয়েও টিকিট না পাওয়া পোশাককর্মী রেহানা খাতুন জানান, রাজশাহীর টিকিটের জন্য আজ (সোমবার) রাত ১০টার মধ্যেই তিনি আবার এসে সারিতে দাঁড়াবেন। ১০-১২ ঘণ্টা সারিতে দাঁড়িয়েও টিকিট না পাওয়ায় ক্ষোভ জানান রাশেদ আহমেদ, জয়নাল মিয়া, আলী আব্বাস, নয়নসহ অনেকে। অনেকের অভিযোগ, কাউন্টারে টিকিটপ্রতি ২০-৩০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছে। তবে তাঁরা চান না, এটি গণমাধ্যমে প্রচারিত হোক। তাঁদের আশঙ্কা, বিষয়টি প্রচারিত হলে হয়তো টিকিটই পাওয়া যাবে না।

কেউ কেউ অভিযোগ করেন, রেলওয়ে ইচ্ছা করে কম টিকিট বিক্রি করছে, যাতে অবশিষ্ট টিকিট ঈদের আগ মুহূর্তে বেশি দামে বিক্রি করা যায়। ঢাকা-রংপুর কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা রাসেল জানান, চাহিদামতো টিকিট না থাকায় এবং মানুষের ক্ষোভে যেন না পড়েন, তাই টিকিট শেষ না হতেই কাউন্টার বন্ধ করে দেন। সারা রাত অপেক্ষা করেও যাঁরা টিকিট পান না, তাঁদের জন্য খারাপ লাগে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা-চট্টগ্রাম কাউন্টারের এক টিকিট বিক্রেতা জানান, কিছু টিকিট শেষ মুহূর্তে অবস্থা বুঝে ‘ভিআইপিদের’ জন্য রাখা হয়েছে। স্টেশন মাস্টার সিতাংশু দেবনাথ প্রথম আলোকে জানান, ১৩টি বুথ ও তিনটি মোবাইল বুথের মাধ্যমে অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে।

রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাজমুল হাসান বলেন, দুপুরের মধ্যেই দূরপাল্লার বেশির ভাগ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। স্বল্প দূরত্বের ও কোটার কিছু টিকিট রয়েছে। তিনি জানান, রেলে বিভিন্ন গন্তব্যে স্বাভাবিক সময়ে দিনে গড়ে সাড়ে ১৫ হাজার যাত্রী বহন করা হয়। ঈদে বাড়তি ট্রেন দেওয়া হয়। এবার ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক খারাপ থাকায় রেলের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়েছে।

এ চাপ সামলাতে নিয়মিত ২৭৮টি ট্রেনের পাশাপাশি আরও ১৪টি ট্রেন ও ১০৭টি বগি সংযুক্ত করা হবে। আজ বিক্রি করা হবে ২৮ আগস্টের অগ্রিম টিকিট। কাল ২৯ আগস্টের এবং শেষ দিন ২৫ তারিখে বিক্রি হবে ৩০ আগস্টের টিকিট। বিলম্ব: এদিকে ট্রেনের সময়সূচিতে হেরফের হচ্ছে। অনেক ট্রেন নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা পর গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে।

বিষয়টি স্বীকার করে স্টেশনমাস্টার সিতাংশু দেবনাথ জানান, গতকাল সুবর্ণ এক্সপ্রেস প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা, দিনাজপুর থেকে একতা এক্সপ্রেস প্রায় ছয় ঘণ্টা, রাজশাহী থেকে ধূমকেতু সাড়ে চার ঘণ্টা, চিত্রা প্রায় আট ঘণ্টা, মহানগর প্রায় সাত ঘণ্টা দেরিতে কমলাপুরে পৌঁছায়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, লোকবলের অভাবে অনেক স্টেশন বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না। সূত্র ঃ প্রথম আলো ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।