আমি অনেক ছোট একটা মানুষ। এই ব্লগটা লেখার অনুপ্রেরনা আমি পাইসি প্রিয় একজন ব্লগার নাফিস ইফতেখার ভাইয়ের কাছ থেকে। আমি সামুব্লগের নতুন একজন মেম্বার। এইখানে এসে নানাজনের ব্লগ পড়তাম মাঝে মাঝে, সেইখান থেকে নাফীস ভাইয়ের ‘আমার পর্নবেলা’ নামের পোস্টের উপরে চোখ পড়ে। সাথে সাথে পইড়া ফালাই, এবং পইড়া বিয়াফক আমোদ অনুভব করি।
নাফীস ভাইরে স্যালুট, এইরকম একটা সাহসী, আর মজার পোস্ট আমাগো লগে শেয়ার করার লাইগা।
আসলে এই জিনিসটা, মানে পর্ন দেখার ব্যাপারটা মনে হয় সবচেয়ে কমন একটা ব্যাপার। ১২-১৩ বছর বয়েসে পা দিয়া এই জিনিসের রস লইতে যায় নাই এইরকম আঁতেল খুইজা পাওয়া যাইব কিনা তাতে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আর সেই রস লওয়ার অভিজ্ঞতাও যে কারো থিকা কারো কম রসাল না- এইডা আমি বাজি ধইরা কইতে পারি। আর নাফীস ভাইএর পোস্ট টা পড়ার পর থিকাই আমি একটা খচখচানি ফিল করতাসিলাম, মনে হইতাছিল আমার শৈশব থিকা কৈশোরে পদার্পন করার সফরনামা সবাইরে ইকটু শুনাই।
ভবিষ্যতে যদি আপনাদের কাছ থিকা সবুজ সিগন্যাল পাই তাইলে পরবর্তি জীবনের কাহিনি কওয়ারও ইচ্ছা আছে।
ছোটবেলার থিকা আমার একটা অভ্যাস তৈরি হইছিল, সেইডা হইল পড়ার নেশা। আমার একটা সৌভাগ্য যে আমি আমার আশে-পাশে বেশ কিছু বড় ভাই পাইছিলাম, যারা ছিল পুরা বইএর পোকা। তাগো বদৌলতে আমি পড়তে শিখার সাথে সাথেই হাতের কাছে মেলা গল্পের বই পাইসি। বড় ভাইরা বই আইনা পড়ত, আর আমি সেইগুলি চুরি কইরা নিয়া আসতাম।
বুঝি না বুঝি, গোগ্রাসে গিলতাম। নতুন নতুন পড়তে শিখছিলাম, তাই আজকেই পইড়া দুনিয়া উদ্ধার কইরা দিমু-এইরকম একটা ভাব ছিল মনের মইধ্যে।
বড় ভাইরা ছিল মাসুদ রানার পাড় ভক্ত। ফলে ক্লাস থ্রী-ফোর থিকাই আমি ওই রসে ডুবছি। আর মাসুদ রানার ভক্ত যারা তারা তো জানেনই, ওই খানে একবার ঢুকলে বাইরায়া আসা কত কঠিন! ওই বয়সে মাসুদ রানার অনেক কিছুই বুঝতাম না, তাও পড়তাম।
পড়ার লাইগা যে কত মাইর খাইসি আব্বা-আম্মার কাছে, তার ঠিক নাই। আমি বুঝতাম না, আমার হাতে মাসুদ রানার বই দেখলেই সবাই বইটা কাইরা নিয়া একটা থাবড়া লাগায়া দিত ক্যান। এখন অবশ্য যখন ওই বয়সি কোনও পিচ্ছির হাতে মাসুদ রানারে দেখি, আমার একই কাজ করতে ইচ্ছা করে। তাও নিজেরে সামলাই নিজের ওই সময়ের কথা চিন্তা কইরা। আর ভাইয়েরা বুঝতেই পারতেছেন, পর্নের দুনিয়ায় আমার প্রথম উকিঝুকি মারা ওই মাসুদ রানার হাত ধইরাই।
যদিও কিছুই বলতে গেলে থাকে না, কিন্তু তখন ওই ছোটখাটো অংশ গুলি পড়তেই জটিল রকমের মজা পাইতাম। আর এখন পড়তে গেলে সেই সময়ের কথা চিন্তা কইরা হাসি পায়।
তো এমনে চলল বেশ কয়েক বছর। ইতিমধ্যে আমি বড় হইতেসি, নাকের নিচে গোঁফ উঠতে শুরু করতেছে, আর মনটাও ধীরে ধীরে পরিপক্ক হইতেছে। এখন অনেক কিছুই বুঝি, আর নিজেরে বেশ বড় বড় বইলা মনে করি, নিজের মনেই মজা পাই।
যদিও আমার ক্লাসের অনেক পোলাপান ওই বয়সেই আমার থিকা অনেক বেশি পাইকা একেবারে ঝুনা নারিকেল হয়ে গেছে আমি জানতাম না। সেইটা বুঝছি অনেক পরে।
একটা ব্যাপার মনে আছে, ছোটবেলায় আমার শখ ছিল ডাকটিকেট জমানো। তো ক্লাস সিক্স-এ আমি যেই স্কুলে পড়তাম তার পাশে ছিল একটা ছোট ছাপরা টাইপের দোকান। কাগজ-কলম, বইখাতা, টুকটাক খাবার-টাবার বিক্রি হইত।
অইখান থেকে মাঝে মাঝে ডাকটিকিট কিনতাম, এক টাকায় দুইটা। দোকানদার ডাকটিকেটরে কইত স্টিকার। একদিন গেছি ডাকটিকেট কিনতে, দোকানদার কইল, ভিতরে আস, তোমারে আরও সুন্দর স্টিকার দেখাইতেছি। আমি আবুলের মত ঢুইকা গেলাম ভিতরে। দোকানদার একটা পলিথিনের ভিতর থিকা বাইর করল কতগুলি পকেট ক্যালেন্ডার টাইপের জিনিস।
হাতে নিতেই দেখি সবগুলি ওইসব পিকচার। লগে লগে অইগুলি ফালায়া দৌড় দিয়া বাইরায়া আসলাম! এখনও যখন ভাবি, হাসতে হাসতে পেট ফাইটা যায়।
তারপরে আরও কয়েকদিন কাটল। ক্লাস এইটে উইঠা বৃত্তি পাইলাম, আর সেই সুবাদে চান্স পাইলাম আমাদের এলাকার একখান অপেক্ষাকৃত ভাল স্কুল এ ভর্তি হওয়ার। আমি আগে যেই স্কুল এ পড়তাম সেইখানে আমার সব বন্ধুরা ছিল শান্ত-শিস্ট গোবেচারা টাইপের।
আমরা সবাই একজন আরেকজনরে তুমি কইরা কইতাম! তুই ওয়ার্ড টা মনে হইত ভালগার।
তো ওই স্কুল থিকা আমার আরেকটা বন্ধু, মনে করেন তার নাম কুদ্দুস, আমার সাথে বৃত্তি বাগাইছিল। এবং তারেও ওই ভাল স্কুলএ ভর্তি করা হইছিল। সে অবশ্য ভর্তি হইছিল আমার কয়েকদিন আগে। তো প্রথমদিন সে ক্লাস কইরা আসার পরে আমি তারে ধরলাম, ক্যামন ক্লাস করলা কুদ্দুস? স্কুল ক্যামন?
সে চোখ-মুখ শুকনা কইরা কইল, বন্ধু, যেইখানে আছ সেইখানেই থাকো।
ওইটা স্কুল না, দোজখ। আমি শুইনা অবাক হয়া গেলাম। ক্যান দোস্ত, কি হইসে? কিন্তু অনেক চেষ্টা কইরাও তার মুখ থিকা আর কিছু বাইর করা গেল না।
যাই হোক, কুদ্দুসের কথায় কান না দিয়া আমি মহা উৎসাহে ওই স্কুল এ ভর্তি হয়া গেলাম। এবং স্কুলে গিয়া, ভদ্র-শান্ত-গোবেচারা আমার কইলজা শুকায়া গেল, ইয়া মাবুদ, এইডা আমারে কই আইনা ফালাইলা?! পোলাপানের ফাইজলামি, চিল্লাচিল্লি আর মারামারি করনের সিন-সিনারী দেইখা আমার ইচ্ছা করতেসিল ডাক ছাইরা কান্দি।
কিন্তু কান্দি নাই, অন্তত ক্লাসে কান্দি নাই। তবে বাসায় আইসা ঠিকই চিল্লাচিল্লি শুরু করলাম, ওই স্কুলে যামু না। আম্মা আমারে অনেক কইরা বুঝাইল, যে এইসব কিছু না। নতুন নতুন, তাই খারাপ লাগতেছে। আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়া যাইব।
এতদিন পরে আইসা বুঝি, আম্মা কি খাটি কথা কইছিল সেদিন। ওই স্কুলেই আমি আমার কিছু প্রানের দোস্ত পাইছি, আর তার থিকা বড় কথা, বাইরের দুনিয়ায় ক্যামনে চলতে হয় তার প্রথম সবক আমার ওইখানেই।
মেইন কথা থিকা একটু দূরে সইরা গেলাম মনে হয়। আবার ফেরত আসি।
আমার যেই বন্ধুর কথা কইতাছিলাম, কুদ্দুস, ও ছিল আমাদের এলাকার মোস্ট ওয়ান্টেড গুড বয়।
আমাগো মত পোলাপানের আব্বাআম্মারা আমাগোরে শাসন করার জন্যে ওরে উদাহারন হিসেবে ব্যাবহার করতেন। এই যেমন, কুদ্দুসের মত হ, ওর মত হইলে জীবনে উন্নতি করতে পারবি, ইত্যাদি ইত্যাদি। মজার কথা কি জানেন? এহেন গুড বয় কুদ্দুসই হইল আমার প্রথম পর্ন দেখানোর পথপ্রদর্শক। ঘটনা টা খুইলা কই।
স্কুলে ভর্তি হইছি মাসখানেক হইল।
নতুন নতুন বান্দর বন্ধুবান্ধব পাইছি, তাদের সাথে বাদরামি করতেছি, মজা লাগতেছে প্রচুর। তবে এইখানে আইসাও দেখলাম, পর্ন জিনিসটারে একটা ত্যাবু হিসাবে দেখা হয়। মানে সবাই দেখে অথবা পড়ে, কিন্তু লুকায়া লুকায়া। কেউ ধরা খায়া গেলে তার আর প্রেস্টিজ থাকে না, যদিও জিনিসটা সবারই প্রিয়। আজিব না? বন্ধুগো কাছে মাঝে মাঝে দুই একটা পিকচার দেখতাম, ওই পর্যন্তই।
মোবাইল জিনিষটা তখনও সবার কাছে নাই, আর মাল্টিমিডিয়া মোবাইল তো স্বপ্নের ব্যাপার। যেই দুইএকজনের কাছে ছিল তারা নিজেগোরে হিরো হিরো ভাবত, আর মাইয়াগো কাছে সেইরকম পার্ট লইত। মাঝে মাঝে পোলাপানগোরে দেখতাম চাইর-পাচ জন মিলা জটলা পাকায়া মোবাইলএ কিছু একটা দেখতেছে, বুঝতাম কি হইতেছে অইখানে।
একদিন এইরকম এক জটলার মধ্যে উকিঝুকি মারনের চেষ্টা করতেছি, কুদ্দুস আইসা আমারে পিছন থিকা ডাক দিল। কইল, আজকে আমার লগে যাবি চল একজায়গায়।
আমি কইলাম, কই? ও কইল, আছে।
স্কুল ছুটির পরে দুইজন গেলাম একসাথে। ও আমারে যেইখানে নিয়ে গেল সেইটা হইল একটা সাইবার ক্যাফে। আমি তখনও কিছুই বুঝতেছি না, পুরাই ভ্যাবাচেকা খায়া দেখতেসি কুদ্দুস কি করে। কুদ্দুস মিচকা একটা হাসি দিয়া কইল, এক বড় ভাইয়ার পিসি থিকা বাগাইছি এই অ্যাড্রেসটা।
ও ওয়েবসাইটএর অ্যাড্রেসটা টাইপ করল, আর তারপরে কম্পিউটার স্ক্রীনএ যেই পিকচার গুলি ভাইসা উঠল সেইগুলান দেইখা আমার হৃৎপিণ্ডটা ৩-৪ বার ডিগবাজি খায়া উঠল! হায় হায় রে, এইগুলি আমি ই দেখতেছি! ওয়েবসাইটটা ছিল অনেক পরিচিত একটা পর্ন সাইট, আপনেরা সবাই আশা করি চিনেন। তাই আর লিঙ্ক দিলাম না!!
সংক্ষেপে এই হইল আমার কাহিনি। বুঝতেই পারতেছেন ভাইয়েরা, ক্যামনে পর্নের বিশাল দুনিয়ায় আমার মত নাদানের পদার্পন ঘটছিল। তারপরে অনেক ঘুরাঘুরি করছি সেই দুনিয়ায়, অনেক কিছু শিখছি, জানছি, বুঝছি, বুঝাইছি। কিন্তু এখন না আর আগের মত মজা পাই না।
কম্পিউটারএ ইচ্ছা করলে সারাদিন দেখতে পারি। হলএ থাকি, ঠেকানোর বা শাসন করার তো কেউ নাই। তারপরেও দেখার ইচ্ছা জাগে না। তার চাইতে সামুব্লগ ঘাটতেই বেশি মজা পাই। স্কুলের সেই মজার দিন গুলি খুব মিস করি।
সেই পুরান দোস্তগুলি সব এদিকওদিক ছড়ায়ে গেছে, কারো সাথে আর আগের মত যোগাযোগ হয় না। এখন যখন দুই ঈদএ সবাই একসাথে হই, পুরান ঘটনা নিয়া হাসাহাসি করি।
শেষ একটা ঘটনা বলি। তখন আমি কলেজএ পড়ি। একদিন গুলিস্তান গেছি কি একটা কাজে।
আপনারা অনেকেই মনে হয় দেখছেন, গুলিস্তান আণ্ডারপাসের গেটের পাশে মামুরা জিনিস লয়া দাড়ায়ে থাকে। কেউ পাশ দিয়া গেলেই ধরায়া দিতে চায়। তো এইরকম এক মামু, তার পাশ দিয়া যাওয়ার সময় আমারে মধুর কণ্ঠে ডাক দিয়া কইল, মামু, জিনিস লাগব নাকি? তার সেই ডাক শুইনা আমার মাথার মধ্যে পোকা নইরা উঠল। দামাদামি কইরা ৫০ টাকা দিয়া দুইটা সিডি কিনলাম। বাসায় আইনা চালায়া দেখি, একটার মধ্যে হানিফ সংকেতের ইত্যাদি, আরেকটা ব্ল্যাংক!! মনডায় কইতাছিল একটা সিডি আমার মাথায় ভাঙ্গি, আরেকটা ওই মামুর মাথায়!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।