সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল
দেশের মানুষের প্রতি রাজনীতিবিদদের আস্থা কোনদিন ছিল কিনা, সেটা একটি মুল্যবান প্রশ্ন হতে পারে। এই সংশয় এজন্য চলে আসলো, কেননা রাজনীতিবিদদের কথার সাথে কাজের মিল খুজে পাওয়া দুস্কর।
১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হবার পর থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত নেতা নেত্রিদের যে কর্মক্ষতিয়ান, তাতে তাদের ভাষণের সাথে মিল খায় না।
ধরছি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমল থেকে। মুক্তিযুদ্ধপুর্ব বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু ছিলেন একচ্ছত্র নেতা।
যার মুখের একটি কথায় সাধারণ মানুষ প্রাণ পর্যন্ত দিতে প্রস্তত ছিল। যার প্রমাণ আমরা পাই ৩০ লাখ বাঙ্গালির আত্মত্যাগের মাধ্যমে। পৃথিবিতে বোধ হয় এটাই একমাত্র দৃস্টান্ত যেখানে সেনাপতির অনুপস্থিতির মধ্যেও একটি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করেছে, এবং স্বাধীনতা লাভ করেছে।
এই সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালির রোষের অনলে পুড়ে মরার ভয় থেকেই, তৎকালিন পাকিস্থানি শাসকরা বঙ্গবন্ধুর উপর ফুলের টোকাটি দেবার সাহস করেনি।
বঙ্গবন্ধু যখন দেশে ফেরৎ আসেন, তখন এই জনগণই তাকে মাথায় করে ক্ষমতার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করেছিল।
সাধারণ মানুষের আশাভঙ্গ হতে বেশি সময় লাগেনি। নিজ সরকারের অদক্ষতা, স্বজন এবং দলীয় লোকদের সীমাহীন দুর্ণীতি সন্ত্রাস এসব রুখতে ব্যার্থ হয়ে তিনি ক্ষমতা হারানোর আতংকে বঙ্গবন্ধু তার চিরচারিত দৃঢ়তা আর জনগণের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেন।
তথাকথিত কিছু প্রভাবশালি ভারতপন্থি বামদের কুমন্ত্রণায় বাকশাল গঠন করেও শেষ রক্ষা হয়নি। এই সব দেশদ্রোহি মতলববাজ বামরা বঙ্গবন্ধুকে বুঝিয়েছিল, বাকশাল গঠন করলে, ভারত আর সোভিয়েত ইউনিয়নের দোয়ায় সব ঠিক হয়ে যাবে। দেশে প্রতিটা কোণায় ভারতের কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা \"র\" এর এজেন্টরা সক্রিয় থাকলেও, তাকে এই অভ্যুত্থানের ব্যাপারে কোন সাবধানবাণী দেয়নি।
জে এন দীক্ষিতের মতে, ভারতের হুকুমকে অমান্য করে ও আই সি তে বঙ্গবন্ধুর যোগদান, এবং বাংলাদেশ থেকে ৩ মাসের মধ্যে ভারতীয় বাহিনীকে প্রত্যাহার করানোতে এমনিতেই ইন্দিরা গান্ধী, বঙ্গবন্ধুর উপরর নাখোস ছিলেন। এর মধ্যে নিজেদের অদক্ষতার কারণে দেশের অবস্থা লেজেগোবরে করে যেহেতু বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা শুন্যের কোঠায় নেমে গিয়েছিল, তাই ঠ্যাং ভাঙ্গা ঘোড়ার উপর বাজি রাখার মত বোকামি করা ইন্দিরা করতে চাননি।
৭৫ এ পট পরিবর্তনের পর তাই দেশে কোনরকম প্রতিবাদ দেখা যায়নি। কারণ এই পরিবর্তন জনগণের কাম্য ছিল। যদিও আজকাল বিভিন্ন কুতুব বিভিন্ন ফতোয়া দিয়ে নতুন প্রজন্মকে বোঝানোর চেস্টা করছে যে, এই অভ্যুত্থান ছিল জনসমর্থনবিহিন একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
এটা একটি জঘণ্য ধরণের
তৃতীয় শ্রেণির আওয়ামি মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশে এ পর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় শাসক। তিনি যেহেতু সেনাছাউনির মানুষ, তাকেও জনগণের কাছে যেতে হয়েছিল। ব্যাক্তিগতভাবে যার দুর্ণীতি প্রশ্নাতীত, তাকেও শ্রেফ জনগণের কাছে পৌছানোর জন্য কিছু রাজনীতিবিদের শরণাপন্ন হতে হয়েছিল, যাদের চরিত্র নিস্কলুষ ছিল না। তাছাড়া তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ মাথায় নিয়ে বাংলাদেশ যে ভয়ংকর অর্থনৈতিক দুরাবস্থার মধ্যে ছিল, তা থেকে উত্তরণের জন্য জিয়া আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের সাহায্য গ্রহন করতে হয়েছিল।
এই সেই আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যাদের সমর্থন ছিল বিপরীত পক্ষ্যে। তাদের চাপেই জিয়াকে বাধ্য হয়ে রাজাকার জামাত এ ইসলামিকে আবার রাজনীতিতে পুনর্বাসন করতে হয়েছিল।
৮০এর দশকে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় তৎকালিন নৌবাহিনী প্রধান এ এইচ খানের (বর্তমানে তারেক জিয়ারর শশুড়) একটি সাক্ষাতকারে জানা যায় যে, ভারত যখন নৌবাহিনী পাঠিয়ে দঃ তালপট্টি দখল করে নেয়, তখন জিয়াকে সেটা জানানো হলেও, তিনি বিষয়টি নিয়ে উচ্চবাচ্য করেনি। কারণটা বোধ করি, ভারতকে তিনি চটাতে চাননি। যদিও এর আগেই তার নামে মৃত্যুপরোয়ানায় সই করে রেখেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী।
অর্থাৎ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাস্ট্রনায়ককেও শত্রুভাবাপন্ন হলেও বিদেশি রাস্ট্রকে গোনায় ধরতে হয়েছিল।
জিয়ার মৃত্যুর পর, তৎকালিন সাত্তার সরকারের প্রশাসনে চালানোতে ব্যার্থতার কারণে এরশাদ ক্ষমতায় আসেন। যদিও ভারতে চিরচারিত গণতান্ত্রিক শাসন চলে আসছিল, এর পরেও \"অজানা\" কারণে এই সামরিক শাসককে প্রথম যে বিদেশি রাস্ট্র স্বাগত জানিয়েছিল সে ছিল ভারত।
তবে এরশাদ শাসক হিসাবে, অন্তত গত ২০ বছরের \"গণতান্ত্রিক\" শাসনামলের চেয়ে ভালো ছিল। কিন্ত হাসিনা খালেদার ক্রমাগত গণতান্ত্রিক পিপাসার কারণে, দেশের মানুষের মতের বিরুদ্ধে মার্কিনিদের পক্ষ্যে কুয়েতে বাংলাদেশি সেনা পাঠিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি।
ঢাকা কেন্দ্রিক \"গণ অভ্যুত্থানে\" এরশাদকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়।
৯১ সালে সংসদ নির্বাচনটি ছিল জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিচ্ছবি। তবে সেখানেও বিদেশি রাস্ট্র বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাস্ট্র এবং ভারত নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষায় সচেস্ট ছিল। বি এন পি জেতার ফলে ভারত নাখোশ হয়েছিল। ফলে \"সুক্ষ্ম\" কারপচুপির দোহাই পেরে আঃ লিগ, বি এন পির শাসনামলকে কন্টকাকীর্ণ করে তুলেছিল।
নেপথ্যে ছিল ভারতের ইশারা।
৯৬ সালে ক্ষমতায় আরোহন করে আঃ লিগ বাকশাল আমলের সামান্য ট্রেইলার দেখিয়েছিল। ফলে ২০০১ সালে তাদের চরম ভরাডুবি হয়েছিল।
২০০১ সালে ব্রুট মেজরিটি নিয়ে বি এন পি ক্ষমতায় আসলেও, ভবিষ্যত ক্ষমতারোহন নিস্কন্টক করতে ইঙ্গ মার্কিন ভারতের নেকনজরে থাকার জন্য আমাদের সংস্কৃতি ধবংসি আকাশ সংস্কৃতিকে প্রতিষ্ঠিত এবং মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে মুক্তকচ্ছ অর্থনীতি চালু করে দেয়।
ফলাফল আজকের এমন একটি প্রজন্ম, যাদের না আছে দেশের ইতিহাস সমন্ধে জ্ঞান, না আছে দেশপ্রেম, না আছে ভাষা সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা।
জাতিগতভাবে সচেতনা আর আত্মসম্মানবোধের কথা নাই বা বললাম।
যত কিছুই ঘটুক, সরাসরি ভারতের স্বার্থ সংরক্ষণে \"ব্যার্থতার\" কারণে বি এন পি র বিরুদ্ধে আঃ লিগ আবারো মাঠে নামে। এর পরেও সুবিধা করতে না পারার কারণে ওয়াশিংটন আর দিল্লির যৌথ প্রযোজনাইয় ৩ মাসের অন্তর্বর্তিকালিন সরকার ২ বছর বিনা প্রশ্নে ও বিরোধিতায় অবৈধভাবে বাংলাদেশ শাসন করে যায়।
ফকরুদ্দিন ছিল বিশ্ব ব্যাংকের চাকুরে। আর মইন ইউ আহমেদকে যেভাবে ভারত সরকার বিশেষ সম্মান দিয়েছে, তাতে তো একথা স্পস্ট যে কাদের আশির্বাদে গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে লাখ লাখ নিরপরাধ মানুষকে হত্যাকারিরা স্বৈরতন্ত্রকে দুবছর শাসন করাতে ভেতর বাইরে সমর্থন দিয়ে গিয়েছে।
ওয়াশিংটন আর দিল্লির বেদিতে মাথা ঠুকার যথাযোগ্য ফল হাসিনা পেয়েছেন। তাই তিনি এবার ক্ষমতায় এসেছেন ব্রুট মেজরিটি নিয়ে। আর তার যোগ্য প্রতিদান দিতেই দিল্লির প্রতিটা চাওয়া পাওয়ায় অনুগত ভৃত্যের মত সায় দিয়ে চলেছেন। তা দেশ ও দেশের মানুষ উচ্ছন্নে যাক, তিনি কোন পরোয়া করছেন না।
এই দেখে বি এন পি ও মনে হয় ওই গোলামির দিকে ঝুকতে চলেছে।
নইলে স্বাধীনতার পর প্রতিটা পদক্ষেপে বাংলাদেশের চিহ্নিত শত্রুদের আগমনে কি করে স্বাগত জানাচ্ছে? কি করে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফকরুল ইসলাম আলমগির নির্লজ্জের মত বলতে পেরেছেন, তারা ভারতের বন্ধুত্ব চান?
এসব দেখে বলতে ইচ্ছা করছে, বন্দু কেডা, বন্দু কেডা? দিমু চটকানা। ক্ষমতার লোভে আজ শত্রুদেরও বন্ধুত্ব কামনা করা? তাহলে আর দেশের মানুষের কথা বলেন কোন মুখে?
এই যে জনগণের উপর রাজনীতিবিদদের আস্থার অভাব, এর কারণ কি এই যে শুধু দুর্বৃত্তরাই রাজনীতি করে? আমরা যারা সাধারণ জনগণ, এই অবস্থার জন্য কি আমাদের দায় নেই? আমরা কি নিজেদের কলুর বলদ বলে নিজেদেরই উপস্থাপন করি না? যার ফলে রাজনীতিবিদরা আমাদের নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরায়? আমরা কি কাপুরুষত্বের চুড়ান্ত সীমায় পৌছে যাইনি, যার কারণে পেশিসর্বস্ব গুটি কয়েক সন্ত্রাসি আমাদেরই নেতা হয়ে গিয়েছে? আমাদের দেশপ্রেম কি প্রশ্নাতীত, যার কারনে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে নেতারা যা খুশি করবে, বিদেশের আশির্বাদ নিয়ে নির্বাচনে জয়ি হবে আর আমরাও জয় আর জিন্দাবাদ বলে খুশিতে বগল বাজাবো। আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে যে উদাসীনতা আর বিদেশি কুকুর দেখলেও আনন্দে গদগদ হয়ে যাবার কারনেই কি আমরা স্বকীয়তা হারাতে বসিনি?
উত্তর যদি হ্যা হয়, তাহলে আপনিই বলুন, যে চটকানা রাজনীতিবিদদের মুখে মারতে ইচ্ছা করে, সেই থাপ্পড়টি আমাদেরই গালে আগে পড়া উচিত কি না? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।