বিদেশে পড়ালেখা করবার পরও চাকরি-টাকরি কিছু না করে ঘরে বসে আছি বাচ্চার জন্য। আমার সবসময় মনে হয় এবং হয়েছে যে একটি ছোট বাচ্চার সবচাইতে বেশি প্রয়োজন তার মাকে। (এটি একটি ব্যক্তিগত মতামতও হতে পারে। ) কিন্তু বিদেশে যেসব মায়েদের ছোট বাচ্চা আছে তাদের বাচ্চা রেখে চাকরি করাটা অনেক সময়ই কঠিন হয়ে পড়ে বাচ্চাকে কে দেখবে সেটার কথা চিন্তা করে। দেশে অনেক মায়েরাই বলে যে ডে কেয়ার থাকলে অনেক সুবিধা হত তাদের।
বিদেশেতো ডে কেয়ার আছে, তারপরও কেন কিছু মা কাজ করেন না?
সবার কথাতো বলতে পারব না তাই নিজের কথাই বলছি। আমার আম্মু আমাকে প্রায়ই প্রশ্ন করে কেন আমি কাজ করতে চাই না। কেন চাই না তার সবচেয়ে বড় কারণ আমি বাচ্চাকে অন্য কারও কাছে দিয়ে মনে শান্তি পাব না। আমার সামনের ফল সেমেস্টার থেকে পিএইচডি শুরু করবার কথা ছিল কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি করব না। কারণ? এক, বাচ্চাকে ডে কেয়ারে লম্বা সময় কাটাতে হবে আমি পিএইচডি করলে।
দুই, বাচ্চা বড় করবার পাশাপাশি এত পড়ালেখা আর কাজের চাপ হয়তো অনেকে সামলাতে পারবেন, আমি পারতাম না। পিএইচডিতে যাকে বলে আনডিভাইডেড এটেনশন দিতে হয়। বাচ্চা কোলে নিয়ে আর যাই হোক রিসার্চ পেপার লেখা যায়না!
পারতাম কোন চাকরি করতে কিন্তু বাচ্চাকে ডে কেয়ারে রাখতে হবে দেখে সেটা করছিনা। যত ভাল ডে কেয়ারই হোক, মায়ের মত করে বাচ্চার যত্ন কেউ করবে না। আর ভাল ডে কেয়ারগুলো কি পরিমাণ টাকা নেয় তার একটা উদাহরণ দেয়া ভাল - আমার বাসার কাছে যে ডে কেয়ারটি আছে সেটিতে সপ্তাহে নেয় $৩৫০, মানে মাসে আপনাকে গুনতে হবে $১৪০০! চিন্তা করি, এত টাকা ডে কেয়ারকে দিয়ে দিলে আমারতো নিজের কাছে তেমন কিছুই থাকবে না।
কি দরকার তাহলে এত কষ্ট করে চাকরি করবার?
অনেকে বাসায় বেবি সিটার বা ন্যানি রাখেন। অভিজ্ঞ, ফার্স্ট এইড এবং CPR ট্রেনিংপ্রাপ্ত ন্যানিরা কিন্তু কম টাকা নেন না, ঘন্টায় তাদের দিতে হতে পারে $১৫ থেকে $২০ পর্যন্ত। $১০/ঘন্টাতেও পাওয়া যায় কিন্তু বাচ্চা পালনে তাদের তেমন কোন অভিজ্ঞতা থাকে না।
আমার যেমন স্বভাব আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি বাচ্চাটাকে সাধ্য অনুযায়ী ভালটা দিতে। কিন্তু ভাল জিনিষ ব্যয়সাধ্য।
হ্যাঁ, চাকরি করলে হয়তো আমার হাতে কিছু টাকা হতো, হাত খুলে খরচ করতে পারতাম কিন্তু বাচ্চার অবহেলা হতো। আমি তাকে যেভাবে যত্ন করে খাওয়াই, ঘুম পাড়াই, গান গেয়ে বা বই পড়ে শোনা্ই সেটা অন্য কেউ করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। আর তাই তো অনেক কিছু ছেড়ে দিয়েছি সন্তানের দিয়ে তাকিয়ে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।